বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি by মোরসালিন মিজান
রাজধানী ঢাকাকে বলা হয় কংক্রিটের শহর। যন্ত্রের শহর। এখানে খোলা জায়গা নেই। কিছুমাত্র গাছপালা। তবে মানুষ আছে। অগুনতি মানুষ। গায়ে গা লেগে থাকে। রাজনীতির গরম হাওয়াও সবচেয়ে বেশি বয় এ শহরেই।
এই এখনও চলছে বক্তৃতা, আন্দোলন, সংগ্রাম, হরতাল, ভাংচুর। ফলে এই শহরে শীত আর তেমন সুযোগ করতে পারে না। মোটামুটির মধ্য দিয়ে পার পেয়ে যান নগরবাসী। তবে এবার অবস্থা ভিন্ন। শীত যেন পেয়ে বসেছে। দখলে নিয়েছে গোটা শহর। বিশেষ করে গত কয়েক দিনের শীতে জবুথবু অবস্থা। ঢাকার সহনীয় তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। অথচ তা কমে হয়েছে ৭.২। স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৫ ডিগ্রী কম হওয়ায় ভুগতে হচ্ছে নগরবাসীকে। তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বদলে দিয়েছে জীবনযাত্রা। দিনের বেলায় সুয্যিমামার দেখা পাওয়া কঠিন এখন। আর রাতের কথা তো বলাই বাহুল্য। রাত যত বাড়ছে এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীত। ভারি লেপ-কম্বল গায়ে জড়িয়েও কুলাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর পর গ্যাসের চুলায় হাত সেঁকে নিচ্ছেন। অনেকেই আবার শীতপ্রধান দেশগুলোর মতো রুম হিটার লাগিয়েছেন। সকালে গোসল করার কাজেও ব্যবহার করছেন গরম পানি। এর পর বাড়তি জামা কাপড় গায়ে চাপিয়ে বাইরে বের হচ্ছেন। হাতের আঙ্গুল অবধি মোড়ানো। নাক-মুখ গরম কাপড়ে ঢাকা। অনেক সময় পরিচিত মানুষটিকেও ঠিক চেনা যাচ্ছে না। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, শৈত্যপ্রবাহের কারণেই শীতের এমন বাড়াবাড়ি। হাড়সুদ্ধ কেঁপে উঠছে। আরও কয়েক দিন এ অবস্থা চলতে পারে বলে ধারণা করছে অধিদফতর। আর তা হলে দারুণ বিপর্যস্ত হবে নগর জীবন।
তবে এ সময় বিশেষ করে বলতে হবে ফুটপাথের মানুষগুলোর কথা। খোলা আকাশের নিচে কী যে মানবেতর জীবনযাপন করছে তাঁরা! হতভাগ্য মানুষগুলো একেবারে হাঁটার পথটিকে বিছানা করছে। কিন্তু ঘুমোতে পারছে না। তাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় একটু কান পাতুন শোনা যাবে, কোঁকানোর শব্দ। সামান্য যেটুকু শীতবস্ত্র তাতে পুরোটা শরীর ঢাকছে না তাদের। পুরো রাত জেগে কাটাচ্ছে অনেকে। প্লিজ, তাদের দিকে চোখ তুলে তাকান। মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান।
আরও একটি বিষয় নিয়ে ভাবার আছে। প্রায় সকলেই জানেন, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মতো কিছু দুঃখজনক, জাতির জন্য লজ্জাজনক ঘটনা মাঝে মধ্যেই ঘটছে। এসব ঘটনা এত নির্মম-নিষ্ঠুর যে, বলে বোঝানো যাবে না। বিশেষ করে গত কিছু দিনের ঘটনায় বাকরুদ্ধ মানুষ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এমনকি যে শিশুটি পৃথিবীর কোন কিছুই এখনও বুঝে ওঠেনি, সে শিশুটি রক্তাক্ত। ক্ষতবিক্ষত। এ লজ্জা কোথায় রাখবে বাংলাদেশ? তাই এ বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হবে। কাজ করতে হবে। যে কোন মূল্যে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ এমন অন্যায় কখনো মেনে নেয়নি। ইতোমধ্যে অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে তারা। বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করা হচ্ছে। মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্বের বোধ জাগিয়ে তোলার কাজ করছে। অনেকে বলার চেষ্টা করেন, সম্প্রতি ধর্ষণের প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠা দিল্লীর দিকে তাকিয়ে প্রতিবাদ শিখেছে রাজধানী ঢাকা। আসলে একদমই তা নয়। বরং বহু আগে ধর্ষণের শিকার কিশোরী ইয়াসমিনের পাশে প্রবল শক্তি নিয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। পূর্ণিমা নামের যে মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছিল নরপশুরা তাদের ক্ষমা করেনি বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রেও প্রবল প্রতিবাদ গড়ে উঠেছিল। বাংলাদেশের মানুষের এটাই মূল চরিত্র। এ চরিত্রটি ধরে রাখার ওপর এখন নতুন করে জোর দিচ্ছেন নগরবাসী। একই যুক্তি তুলে ধরে বিশিষ্টজনরা বলছেন, একাত্তরে যারা আমাদের মা-বোনদের সম্ভ্রমহানি করেছিল, পাকিস্তানীদের হাতে তুলে দিয়েছিল তাদের বিচার হচ্ছে। এগিয়ে চলেছে। এ বিচারও সুসম্পন্ন করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের জন্য এর কোন বিকল্প নেই। তাই বিচারের বিরুদ্ধে চলমান যে কোন ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
No comments