গল্পসল্প- ঠাকুর ঘরে কে রে...! by আলী হাবিব

ডিসেম্বর বিজয়ের মাস। এ মাসটা রাজাকারদের নয়। এ মাসটি এলেই রাজাকাররা নিজেদের গুটিয়ে ফেলে। যেভাবে গুটিয়ে ফেলেছিল একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের পর। রাজাকারদের নিয়ে অনেক প্রশ্ন। অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনো মেলে না। যেমন, অস্ত্রের প্রশ্ন। একাত্তরে রাজাকাররা অস্ত্র ধরেছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। যুদ্ধ করেছিল। অনেকে এই বলে সমাধান দিতে চান যে সেটা ছিল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। কাজেই সেই সিদ্ধান্তের পক্ষে গিয়ে রাজাকাররা ভুল করেনি।
বরং নিজেদের রাজনৈতিক বিশ্বাসের প্রতি তাদের আস্থার প্রকাশ ঘটেছিল ওই রাজাকারিত্বের ভেতর দিয়ে। সব শব্দের মতো রাজাকার শব্দেরও একটা আভিধানিক অর্থ আছে। কিন্তু অঞ্চলভেদে, ব্যবহারভেদে অনেক শব্দের অর্থ বদলে যায়। বদলে গেছে রাজাকার শব্দের অর্থও। বাংলাদেশে রাজাকার শব্দের অর্থ কী, সেটা বোধ হয় কোনো শিশুকেও বলে দিতে হয় না। অনেকে বলে থাকেন, স্বাধীনতার পর তিন দশক গিয়ে চার দশকে পা রেখেছে বাংলাদেশ_এখন আর রাজাকার, আলবদর, আলশামস নিয়ে প্রশ্ন তুলে কী হবে? কিন্তু কথা হচ্ছে, রাজাকার, আলবদর, আলশামস তো আর কেবল একেকটি শব্দ নয়। এটা এখন একটা স্বভাব। ওই যে গান আছে, 'থাকিলে ডোবাখানা/হবে কচুরিপানা/বাঘে-হরিণে খানা এক সাথে খাবে না/স্বভাব তো কখনো যাবে না।' একবার কেউ রাজাকার, আলবদর, আলশামস হয়ে গেলে সমস্যাটা এখানেই। স্বভাব যায় না ম'লে_রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের স্বভাবও যাওয়ার নয়। ইন্টারনেটে রাজাকারদের নিয়ে একটা-দুটো জোক পাওয়া গেছে। শোনানো যাক_
দুই বন্ধুর একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করছে, চাঁদে একজন রাজাকার_এর মানে কী?
অপর বন্ধুর জবাব, এটা একটা সমস্যা।
আগের বন্ধু আবার প্রশ্ন করে, চাঁদে দুজন রাজাকার। এর মানে কী?
এই বন্ধুর উত্তর, এটা হচ্ছে মহাসমস্যা।
প্রশ্নকারী বন্ধু এবার মরিয়া হয়ে তৃতীয় প্রশ্নটি করে, গোটা রাজাকার সমাজ_অর্থাৎ রাজাকার, আলবদর, আলশামস_সবাই চাঁদে গিয়ে আবাসন গেড়েছে। এর মানে কী?
উত্তরদাতা বন্ধুর জবাব, বাংলাদেশের সব সমস্যার সমাধান!
ঠিক এ রকমই আরেকটা জোক। এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে প্রশ্ন করছে, রাজাকার আর এক বালতি গোবরের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
অপর বন্ধুর জবাব_ঐ বালতিটা।
আরেকটি জোক শোনানো যাক। জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি এবং আর একটি রাজনৈতিক দলের তিন কর্মী নৈতিক স্খলনের দায়ে বিদেশে কোথাও ধরা পড়ে। সে দেশে প্রকাশ্যে ওই কাজটি করা অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ, এর শাস্তি হচ্ছে ২০ দোররা। সেখানকার প্রশাসক বা বিচারক যখন এই তিন কর্মীকে শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা নিচ্ছিলেন, তখন তিনি বললেন, 'আজ আমার প্রথম বউয়ের জন্মদিন, তাই আমি তোমাদের প্রত্যেককে চাবুক মারার আগে একটা করে আর্জি জানাবার অনুমতি দিলাম এবং তোমাদের আর্জি মঞ্জুর করা হবে।'
লাইনের প্রথমে দাঁড়ানো অভিযুক্ত একজন কর্মী বলল, 'তুমি যদি চাবুক মারার আগে পিঠের সঙ্গে একটা বালিশ বেঁধে দিতে, ভালো হতো।' তার আর্জি মোতাবেক বালিশ বেঁধে চাবুক মারা শুরু হলো। বালিশ চাবুকের বাড়ি ১০টা পর্যন্ত নিল, তারপর বালিশ গেল ফেটে। ব্যথায় কুঁচকে গেলে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে সরানো হলো ২০ দোররার পর।
এরপর লাইনে ছিল বিএনপির কর্মী। সে ঐক্যজোটের কর্মীর বেহাল অবস্থা দেখে আর্জি জানাল দুটি বালিশ বাঁধার। তার আর্জি মোতাবেক দুটি বালিশ বেঁধে চাবুক মারা শুরু হলো। বালিশ চাবুকের বাড়ি ১৫টা পর্যন্ত নিতে পারল, তারপর বালিশ গেল ফেটে। ব্যথায় কুঁচকে গোঙাতে শুরু করল সে। এ অবস্থায় বিএনপি কর্মীকে সরানো হলো ২০ দোররার পর।
সবার শেষে লাইনে ছিল জামায়াতকর্মী। সে কোনো কিছু বলার আগেই বিচারক জামায়াতকর্মীকে বললেন, 'তুমি হচ্ছ গোলাম আযমের দলের লোক। তাই তুমি দুটি আর্জি রাখতে পার।' জামায়াতকর্মী খুশিতে গদগদ হয়ে বলল, 'হুজুর, আমি নাদানের মতো কাজ করেছি, তাই তুমি আমাকে চাবুকের ২০ দোররা না, ১০০ দোররা মার।' বিচারকের চোখ আনন্দে জ্বলজ্বল করে উঠল। বললেন, 'তার পরের আর্জি?' জামায়াতকর্মী ব্যথায় কুঁকড়ানো বিএনপির কর্মীকে আঙুলের ইশারায় দেখিয়ে বলল, 'বালিশটালিশ না, তুমি ওই লোকটিকে আমার পিঠে বেঁধে দাও।' এরপর বিএনপির কর্মীর ভাগ্যে কী ঘটেছিল সেটা বলাই বাহুল্য। রাজনীতিতে এসে বিএনপিকে পিঠে বেঁধে জামায়াত যে এ রকমই সুবিধা নিয়েছে, সেটা নতুন করে আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরেকটা জোক দিয়ে বিষয়টি একটু খোলসা করে বলা যাক। মহাসড়কে গাড়ি দুর্ঘটনা। মুখোমুখি দুই প্রাইভেট কারের সংঘর্ষ। গাড়িতে অন্য কোনো যাত্রী ছিল না। একটি গাড়ির চালক এক তরুণ। অন্য গাড়ির চালক এক তরুণী। দুর্ঘটনায় গাড়ি দুটি দুমড়েমুচড়ে গেলেও দুজনই অক্ষত। প্রথমে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে তরুণ। এরপর তরুণী। মেয়েটি বেরিয়ে এসে ছেলেটিকে বলল, 'থ্যাঙ্ক গড। আমাদের কিছুই হয়নি। অথচ গাড়ি দুটির অবস্থা একেবারেই করুণ। আমার মনে হচ্ছে আমাদের দেখা হবে, সে জন্যই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এটাই ছিল আমাদের ভবিতব্য।' ছেলেটি নিজের পরিচয় দিয়ে মেয়েটির দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। মেয়েটি ছেলেটির সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে বলল, 'আসুন আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার দিনটি সেলিব্রেট করি আমরা। আমার গাড়িতে শ্যাম্পেন আছে। পান করি।' সে গাড়ি থেকে শ্যাম্পেনের বোতল বের করল। তাদের কারো সঙ্গেই গ্লাস ছিল না। মেয়েটি বলল, 'অসুবিধা নেই। আমরা বোতল থেকেই পান করি।' প্রথমে ছেলেটি শ্যাম্পেন পান করল। সে অভ্যস্ত ছিল। পান শেষে সে বোতলটি মেয়েটির হাতে ফেরত দিল। মেয়েটি বোতলটি এক পাশে রেখে দিল। ছেলেটি বলল, 'আপনি পান করবেন না?' মেয়েটি বলল, 'না, আমি পুলিশ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করব।'
একসময় বিএনপির রানিং মেট জামায়াতের সঙ্গে আজকের বিএনপির সম্পর্কটা যেন ঠিক এ রকমই। জামায়াত বিএনপির ওপর ভর করে ছিল। বিএনপিকে পুরোপুরি রাজাকারনির্ভর একটি দল বানিয়ে এখন দলটির শেষ পরিণতি দেখার জন্য অপেক্ষা করছে। এখন জামায়াতের পাশাপাশি বিএনপির বিপক্ষেও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ চলে এসেছে। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তবে তাঁর স্ট্যামিনা প্রশংসার দাবি রাখে। বাঁকা কথার কারিগর সাকা চৌধুরী। নিজের পক্ষ নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে তাঁর মতো দক্ষ আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। একাত্তরে কাদের সঙ্গে তাঁর সখ্য ছিল, সেটা দেশের মানুষ জানে। চট্টগ্রামের মানুষের সেটা আরো বেশি করে জানা। কিন্তু তিনি অনেক কেরামতি জানেন। সেই কেরামতি দেখিয়ে অতীতের ক্ষত মেরামতির কাজটাও বেশ ভালোভাবে করে ফেলেন সাকা চৌধুরী। কিন্তু মানুষের মনে একাত্তরের যে দুঃসহ স্মৃতি আঁকা আছে, সেটা তো সহজে মুছে যাওয়ার নয়। কাজেই সাকা যতই নিজের দিকে ঝোল টেনে কথা বলুন না কেন, তাঁর সে বচনামৃত সার ভেবে সংসারে কেউ চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে পারে না। একাত্তরে বাংলাদেশবিরোধীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল আ@ি@@@ক। বিএনপিতে যোগ দিয়ে তিনি হয়ে যান তাত্তি্বক। সত্যকে আড়াল করে তত্ত্ব দিতে থাকেন। তত্ত্ববিলাসী সাকা এখন পুলিশি হেফাজতে। তবে তিনি ফুলিশ নন। সেখানেও সময়কে কাজে লাগিয়েছেন তিনি। পুলিশি হেফাজতে যে কক্ষে তাঁকে রাখা হয়েছিল, সেই একই কক্ষে ছিল আরো ছয় গাড়িচোর। সাকা তাদের সেবা নিয়েছেন। গাড়িচোররাও তাঁকে সেবা থেকে বঞ্চিত করেনি। ছয় গাড়িচোরকে দিয়ে শরীর ম্যাসাজ করিয়েছেন তিনি। আগের মতো টিভি ক্যামেরার সামনে বসে বডি ল্যাংগুয়েজ প্রকাশ করতে পারছেন না। কাজেই শরীরটা ম্যাজম্যাজ করতেই পারে। সেটা তিনি হতে দেবেন কেন।
সাকা চৌধুরীর এই শরীর ম্যাসাজ করিয়ে নেওয়ার ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র। খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার রাতে একই হাজতে ছয় গাড়িচোরকে রাখা হয়েছিল সাকা চৌধুরীর সঙ্গে। পরে ওই গাড়িচোরদের দিয়ে রাতভর শরীর ম্যাসাজ করান তিনি।
হাজতখানায় থাকা সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওচিত্রে নাকি দেখা গেছে যে একসঙ্গে ছয়জনই সাকার শরীর ম্যাসাজ করছে। চোরদের কেউ হাত, কেউ পা, আবার কেউ তাঁর শরীর ম্যাসাজ করছিল। এ সময় তিনি শুয়ে শুয়ে সিগারেট টানছিলেন। ডিবি কর্মকর্তারা বিষয়টি জানার পর গত শনিবার সকালে সাকা চৌধুরীকে হাজতখানা থেকে সরিয়ে পাশের ছোট একটি কক্ষে নিয়ে যান। প্রকাশিত খবরে আরো বলা হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সালাহউদ্দিন কাদেরের কাছে যুদ্ধাপরাধ বা স্বাধীনতাযুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে চট্টগ্রামে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এ সময় তিনি নাকি হাসতে হাসতে বলেছেন, 'এগুলো তো বহু পুরনো অভিযোগ। এসবের মাত্রা কখনো বাড়ে আবার কখনো কমে।' তাহলে অভিযোগ কি সত্য? এমন প্রশ্নের জবাবে সাকা চৌধুরী নাকি জোরে হাসতে হাসতে বলেছেন, 'সময়ের সঙ্গে সত্য-মিথ্যার গতি পরিবর্তন হয়।' তার মানে দাঁড়াচ্ছে এই যে ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে সাকা চৌধুরী তাঁর বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলোর গতি বদলে দিয়েছিলেন। তাঁর কথাবার্তা থেকে মনে পড়ে যায় সেই পুরনো প্রবাদ, 'ঠাকুর ঘরে কে রে?...আমি কলা খাইনি!'
==================================
ষড়যন্ত্র নয়, ক্ষুধা ও বঞ্চনাই আন্দোলনের ইন্ধন  বাহাত্তরের সংবিধানের পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বাধা কোথায়?  ড.ইউনূসের দুঃখবোধ এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা  গীতাঞ্জলি ও চার্লস এন্ড্রুজ  গল্প- তেঁতুল  একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের পুস্তক প্রকাশনা  গল্প- বট মানে গরুর ভুঁড়ি  গল্প- কিশলয়ের জন্মমৃত্যু  গল্প- মাকড়সা  দুর্নীতি প্রতিরোধে আশার আলো  জাগো যুববন্ধুরা, মুক্তির সংগ্রামে  ঢাকা নগর ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন প্রয়োজন  মারিও বার্গাস য়োসার নোবেল ভাষণ- পঠন ও কাহিনীর নান্দীপাঠ  লন্ডন পুলিশ জলকামানও নিল না  রাষ্ট্রের চ্যালেঞ্জ ও যুদ্ধাপরাধী বিচারের দায়বদ্ধতা  পোশাক শিল্পে অস্থিরতার উৎস-সন্ধান সূত্র  বাতাসের শব্দ  গোলাপি গল্প  বজ্র অটুঁনি অথবাঃ  উদ্ভট উটের পিঠে আইভরি কোস্ট  আনল বয়ে কোন বারতা!  ফেলানীর মৃত্যুতে পশ্চিমবঙ্গ- নিজ ভূমেই প্রশ্নবিদ্ধ ভারতের মানবিক চেহারা  বাজার চলে কার নিয়ন্ত্রণে  উঠতি বয়সের সংকট : অভিভাবকের দায়িত্ব  বিকল্প ভাবনা বিকল্প সংস্কৃতি  অন্ধত্ব ও আরোগ্য পরম্পরা  খুলে যাক সম্ভাবনার দুয়ার  কক্সবাজার সাফারি পার্কঃ প্রাণীর প্রাচুর্য আছে, নেই অর্থ, দক্ষতা  জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের গুপ্ত জীবন  ছাব্বিশটি মৃতদেহ ও একটি গ্রেপ্তার  ৩৯ বছর পরও আমরা স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি  সাইবারযুদ্ধের দামামা  সরলতার খোঁজে  সেই আমি এই আমি  আমেরিকান অর্থনীতি ডলারের চ্যালেঞ্জ  বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ইশতেহার- আশানুরূপ সুফল নেই এক বছরেও  ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও রাজনীতি  মাস্টারদা সূর্যসেন ও যুব বিদ্রোহ সাতাত্তর  রসভা নির্বাচন ২০১১: একটি পর্যালোচনা  ড. ইউনূস অর্থ আত্মসাৎ করেননি  প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ৩৯ বছর  স্বাধীনতাযুদ্ধের 'বিস্মৃত' কূটনৈতিক মুক্তিযোদ্ধারা


দৈনিক কালের কন্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ আলী হাবিব
সাংবাদিক


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.