আশা-নিরাশার দোলায় ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ পাকিস্তান

স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে দোষীয় সাব্যস্ত হয়ে ক্রিকেট থেকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কৃত হয়েছেন সালমান বাট, মোহাম্মদ আসিফ ও মোহাম্মদ আমির। এ তিন খেলোয়াড়ের অনুপস্থিতি বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলকে যে অনেকটাই দুর্বল করে দেবে, তা বলার জন্য বিশেষ কোনো বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। এ তিনজনই ছিলেন পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অপরিহার্য সৈনিক। একাদশ নির্বাচনে তিনজনই ছিলেন নির্বাচকদের ‘স্বয়ংক্রিয় পছন্দ’।
কেবল স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিই নয়, বিশ্বকাপ দল ঘোষণা ও পরে অধিনায়ক নির্বাচন নিয়ে পিসিবির সময়ক্ষেপণ পাকিস্তান দলের বিশ্বকাপ প্রস্তুতিকে করেছে দারুণভাবে ব্যাহত। প্রথমে স্পট ফিক্সিংয়ের সন্দেহের তালিকায় থাকা উইকেটরক্ষক কামরান আকমল, শোয়েব মালিক ও দানিশ কানেরিয়াকে দলে নেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে চলেছে বিস্তর টানাপড়েন। শেষ পর্যন্ত নির্বাচকেরা কামরান আকমলকে দলে নিলেও শোয়েব ও কানেরিয়া বাদই পড়েছেন বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দল থেকে। এরপর, অধিনায়ক কাকে করা হবে—আফ্রিদি নাকি মিসবাহকে সেটা নিয়ে পিসিবির সময়ক্ষেপণ পাকিস্তানের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি থেকে কেড়ে নিয়েছে মূল্যবান কিছু সময়। একেবারে অগোছালো অবস্থায় থাকলেও সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিরঙ্কুশ ব্যবধানে সিরিজ জয়, পাকিস্তান দলের আত্মবিশ্বাসের পারদ অনেকটাই ওপরে তুলে দিয়েছে।
পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও ক্রিকেট কিংবদন্তি ইমরান খান অবশ্য বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলের সম্ভাবনা নিয়ে আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে চান না। তিনি এ ব্যাপারে কিছুদিন অপেক্ষা করারই পক্ষপাতি। তিনি বোলিং লাইনআপে আসিফ ও আমিরের অনুপস্থিতিকে আলাদা দৃষ্টিতেই দেখছেন। বলেছেন, ‘আসিফ ও আমিরের অনুপস্থিতি পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণকে অনেকটাই দুর্বল করে দেবে।’ এবারের বিশ্বকাপে ভালো কিছু করতে হলে পাকিস্তান দলকে যে ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপের মতো বিশেষ কিছু করে দেখাতে হবে, তা তিনি মনে করে দিয়েছে সবাকেই।
এত কিছুর পরেও পাকিস্তান দলের ওপর থেকে বিশ্বাস সরে যায়নি ইমরান খানের। তিনি পাকিস্তান দলকে একটি ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ দল হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, ‘এ দলটির পক্ষে অসাধারণ কিছু করে ফেলা একেবারেই অসম্ভব কিছু নয়।’
ইমরান খান বিশ্বকাপ দলের অধিনায়ক নির্বাচনে পিসিবির কালক্ষেপণের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘আমি জানি না, অধিনায়ক নির্বাচন করতে পিসিবি এত সময় নিল কেন।’ তিনি অধিনায়ক আফ্রিদি সম্পর্কে বলেন, ‘দলের অধিনায়কত্বে আফ্রিদির কোনো বিকল্প নেই। সেই পারে একজন খেলোয়াড় ও অধিনায়ক হিসেবে পুরো দলকে একসূত্রে গেঁথে রাখতে।’
আরেক সাবেক ক্রিকেটার ইকবাল কাশিম একটু রসিকতা করেই বলেছেন, ‘পাকিস্তান এমনই একটি দল, যারা বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে সব হিসাব উল্টে দিতে পারে, আবার বাজে খেলে দর্শক-সমর্থকদের ৪৪০ ভোল্টের বৈদ্যুতিক শকও দিতে পারে।’
ওয়াসিম আকরামের মতে, পাকিস্তান দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই খেলোয়াড় হচ্ছে আফ্রিদি ও আবদুল রাজ্জাক। তিনি আরও বলেন, ‘দলের বাকি খেলোয়াড়দের কাছে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে এ দুজনই নিজেদের পারফরম্যান্স দিয়ে পুরো দলের চেহারা পাল্টে দিতে পারে।’
তবে দলের অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি জানিয়েছেন, এ মুহূর্তে তাঁদের মাথায় বিশ্বকাপ ছাড়া আর অন্য কোনো চিন্তা নেই। তাঁরা বিশ্বকাপের প্রতি পুরোমাত্রায় মনোযোগী রয়েছেন। আফ্রিদি বলেন, ‘পাকিস্তান একটি ব্যালেন্সড দল। এই দলের খেলোয়াড়েরা নিজেদের মান অনুযায়ী খেলতে পারলে যেকোনো কিছু ঘটানো সম্ভব।’

No comments

Powered by Blogger.