এবার আইএসের বাংলায় বার্তা: আলোচনায় জঙ্গি ‘হুমকি’
শ্রীলঙ্কায়
ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর দেশে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনী। দেশে সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা হচ্ছে বলে সরকারের শীর্ষ
পর্যায় থেকেও তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। সর্বশেষ আইএস এর একটি বাংলা বার্তা
ভারত ও বাংলাদেশে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যমে এই
বার্তাকে পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশে হামলার হুমকি হিসেবে দেখছে।
যদিও বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা বলছেন, ঝুঁকি থাকলেও এ ধরনের হামলার কোন শঙ্কা এই মুহূর্তে নেই। আর শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশে হামলার মতো সামর্থও কোন গোষ্ঠির নেই বলে মনে করছেন তারা। বাংলাদেশে কোন ধরনের শঙ্কা না থাকলেও ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে সতর্ক রয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অনেক জায়গায় বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা, বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিও।
এদিকে, গোয়েন্দা ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, তুর্কি ভাষার ভিডিও গানগুলোকে (নাশিদ) বাংলা ও ইংরেজি ভাষার সাবটাইটেলসহ প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) সংগঠনটির কথিত অনুবাদ বিভাগ ‘আল-মুরসালাত’ এক টুইট পোস্টে বৃহস্পতিবার রাতে এমন ঘোষণা দেয়।
আইএসের পোস্টারটিতে বাংলায় লেখা হয়েছে, ‘শীঘ্রই আসছে ইনশাআল্লাহ....’। এছাড়া তাতে আল মুরসালাতের আরবি ক্যালিগ্রাফি করা লোগো এবং তার নিচে একটি স্লোগানও বাংলায় লেখা রয়েছে। এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয়, পোস্টারটি বাংলাদেশে অথবা ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হামলার পরিকল্পনার ইঙ্গিত বহন করছে।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে তারা এমন আশঙ্কার কথা জানায়। বাংলায় প্রকাশিত ওই পোস্টারটি আইএস’র প্রকাশিতব্য কোন ভিডিও’র হতে পারে বলেও সিটিটিসি’র কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে। ইউনিটটির একজন কর্মকর্তা জানান, শ্রীলঙ্কায় হামলার পর থেকে আরো সতর্ক অবস্থানে আছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। সূত্র জানায়, শ্রীলঙ্কায় হামলার পর বাংলাদেশেও অ্যাক্টিভ যেসব জঙ্গি সংগঠন রয়েছে, তারা অনুপ্রাণিত হয়েছে। জঙ্গিদের নিজেদের প্রপাগান্ডা চ্যানেলগুলোতে বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছে। তবে তাদের নতুন করে হামলা চালানোর মতো শক্তি ও সামর্থ্য কোনোটাই নেই বলেও দাবি সিটিটিসি ইউনিট কর্মকর্তাদের। আরেকটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে যারা আইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে ইরাক-সিরিয়াতে গিয়েছিল, সেই সব দেশ ফেরৎ কেউ দেশে থাকলে তাদের নজরদারিতে রাখা হবে। এরকম অন্তত ৪২ জনের নামের তালিকা বিভিন্ন ইমিগ্রেশনে দেয়া হলেও তারা নামে-বেনামে বা অবৈধ পথে দেশে প্রবেশ করতে পারে কিনা, সে বিষয়েও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, নিরপত্তা বিশ্লেষক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন গতকাল রাতে মানবজমিনকে বলেন, ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরটির সত্যতা কিংবা সে দেশের গোয়েন্দাদের কোন মেসেজ আছে কিনা সেটা ভাবনার বিষয়। তবে, কোন ধরনের তথ্যকেই উড়িয়ে দেয়া ঠিক নয়। শ্রীলঙ্কা মানে আমাদের একেবারে দোরগোড়ায় হামলার পর এক ধরনের ঝুঁকি বা আশঙ্কা তৈরি হতেও পারে। তবে সবক্ষেত্রেই যে হামলার ধরণ ও আবহ এক রকম হবে বিষয়টা তাও নয়। গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের এমন বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে। তবে, আমি মনে করি গণমাধ্যমের খবর হোক আর অন্য কোন গোয়েন্দা সূত্রের খবর হোক আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দাদের জোর প্রস্তুতি থাকতে হবে। শ্রীলংকার ঘটনায়ও যেটা দেখা গেছে সে দেশের গোয়েন্দাদের কাছে হামলার আগাম সতর্কতা ছিল। আমি মনে করি একেবারে কোন সম্ভাবনা না থাকলেও বাংলাদেশেও সর্বোচ্চ সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেয়া উচিত।
বাংলায় আইএসের বার্তা
মানবজমিন ডেস্ক: বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গে হামলার পরিকল্পনা করে থাকতে পারে জঙ্গি সংগঠন আইএস। আইএস টেলিগ্রামপন্থি চ্যানেলের একটি পোস্টারের ওপর ভিত্তি করে এমন ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে বলে দাবি করছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। পশ্চিমবঙ্গে এরই মধ্যে একটি পোস্টার বিতরণ করা হয়েছে। তাতে লেখা ‘শিগগিরই আসছি, ইনশাআল্লাহ’। গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত করেছে এমন পোস্টার বিলি করা হয়েছে এবং তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া।
বৃহস্পতিবার রাতে ওই পোস্টার বিলি করা হয়। পোস্টারে আল মুরসালাত নামে একটি গ্রুপের লোগো আছে। তাই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পোস্টারটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। কারণ, মাত্র এক সপ্তাহ আগে শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। আইএস এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। যদিও সেদেশের সরকার মনে করে এর জন্য দায়ী স্থানীয় ইসলামপন্থি সংগঠন ন্যাশনাল তাওহিদ জামায়াত।
টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, আইসিস সেন্ট্রালের সঙ্গে সম্পৃক্ত জামা’আতুল মুজাহিদীন (জেএমবি) নামের স্থানীয় সন্ত্রাসী সংগঠনের মাধ্যমে আইএসের শক্তিশালী উপস্থিতি আছে বাংলাদেশে। কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য স্থান ও অন্য প্রতিবেশী রাজ্যে জেএমবি বেশ পরিচিত। তারা আত্মগোপন করে আছে। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে কলকাতার বাবুঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জেএমবি অপারেটিভ আরিফুল ইসলামকে। বোধগয়া বিস্ফোরণে জড়িতদের মধ্যে সে অন্যতম। এর আগে আসামে একটি মডিউল গড়ে তুলেছিল জেএমবি। গ্রেপ্তার করা ওই অপারেটিভ প্রকাশ করেছে যে, লোয়ার আসাম বলে পরিচিত এলাকার চিরাংয়ে তাদের ছিল একটি প্রশিক্ষণ সেন্টার।
বর্ধমান রেলস্টেশন থেকে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি মোহাম্মদ মুসিরুদ্দিন ওরফে মুসা নামে আইসিস-জেএমবি সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই। মুসা অনেক দিন তামিলনাড়ুর তিরুপুর জেলায় পালিয়ে ছিল। স্বীকার করেছে জেএমবি’র একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আমজাদ শেখের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। আমজাদ শেখকে ২০১৪ সালে গ্রেপ্তার করা হয় খাগড়া বিস্ফোরণে। তিন বছর আগে স্থানীয় জেএমবি’র কয়েকজন স্লিপার সেল পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে পোস্টার লাগিয়েছিল। এতে সাধারণ তরুণদেরও জেএমবিতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশের কথা মাথায় রেখেই কি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) বাংলায় লেখা একটি পোস্টার প্রচার করেছে। নাকি পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা-সহ পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বাঙালিপ্রধান রাজ্যগুলোতে বড় ধরনের হামলার কোনো ছক কষছে আইএস জঙ্গিরা? এ নিয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বেশ দ্বিধার মধ্যে পড়েছিল। যদিও সবদিক খতিয়ে দেখার পর আপাতত তাদের ধারণা হয়েছে, বাংলাদেশের কথা মাথায় রেখেই এই পোস্টার প্রচার করা হয়েছে। এই পোস্টারে লেখা, শিগগিরই আসছে, ইনশাআল্লাহ। উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কায় লাগাতার বিস্ফোরণের ঘটনার দায় নিয়েছে আইএস। এর ঠিক পরপরই এই বাংলা পোস্ট ভারতীয় গোয়েন্দাদের গভীর চিন্তায় ফেলে দেয় বলে সংবাদ মাধ্যম সূত্রের খবর। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা অবশ্য শ্রীলঙ্কার জঙ্গি হামলার পর জঙ্গিরা পালিয়ে যাতে ভারতে চলে না আসে সেজন্য সতর্কতা অবলম্বন করেছে।
দেশের মধ্যেও আইএস জঙ্গি সন্দেহে অনেকের ওপরই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর। তবে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ঝাড়খণ্ড ও ত্রিপুরায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের জেএমবি শাখা-প্রশাখা বিস্তার করেছে। জেএমবি জঙ্গিদের আসা-যাওয়াও বেড়েছে এই অঞ্চলে। বেশ কয়েকজন জেএমবি জঙ্গি ধরাও পড়েছে। তবে গোয়েন্দাদের মতে, আইএস জঙ্গিদের সাংগঠনিক টার্গেটে এখনো মুখ্য জায়গায় রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে আইএস নিজেদের সংগঠনকে নতুন করে ঢেলে সাজার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও ভারতীয় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। তাই ভারতীয় গোয়েন্দাদের ধারণা, বাংলায় লেখা এই পোস্টার সম্ভবত বাংলাদেশের প্রতি লক্ষ্য করেই প্রচার করা হয়েছে। তবে ভারতীয় গোয়েন্দারা আইএস তৎপরতার কথা মাথায় রেখেই পশ্চিমবঙ্গসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের জঙ্গিদের খোঁজে জোরদার নজরদারি চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।
যদিও বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা বলছেন, ঝুঁকি থাকলেও এ ধরনের হামলার কোন শঙ্কা এই মুহূর্তে নেই। আর শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশে হামলার মতো সামর্থও কোন গোষ্ঠির নেই বলে মনে করছেন তারা। বাংলাদেশে কোন ধরনের শঙ্কা না থাকলেও ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে সতর্ক রয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অনেক জায়গায় বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা, বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিও।
এদিকে, গোয়েন্দা ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, তুর্কি ভাষার ভিডিও গানগুলোকে (নাশিদ) বাংলা ও ইংরেজি ভাষার সাবটাইটেলসহ প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) সংগঠনটির কথিত অনুবাদ বিভাগ ‘আল-মুরসালাত’ এক টুইট পোস্টে বৃহস্পতিবার রাতে এমন ঘোষণা দেয়।
আইএসের পোস্টারটিতে বাংলায় লেখা হয়েছে, ‘শীঘ্রই আসছে ইনশাআল্লাহ....’। এছাড়া তাতে আল মুরসালাতের আরবি ক্যালিগ্রাফি করা লোগো এবং তার নিচে একটি স্লোগানও বাংলায় লেখা রয়েছে। এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয়, পোস্টারটি বাংলাদেশে অথবা ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হামলার পরিকল্পনার ইঙ্গিত বহন করছে।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে তারা এমন আশঙ্কার কথা জানায়। বাংলায় প্রকাশিত ওই পোস্টারটি আইএস’র প্রকাশিতব্য কোন ভিডিও’র হতে পারে বলেও সিটিটিসি’র কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে। ইউনিটটির একজন কর্মকর্তা জানান, শ্রীলঙ্কায় হামলার পর থেকে আরো সতর্ক অবস্থানে আছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। সূত্র জানায়, শ্রীলঙ্কায় হামলার পর বাংলাদেশেও অ্যাক্টিভ যেসব জঙ্গি সংগঠন রয়েছে, তারা অনুপ্রাণিত হয়েছে। জঙ্গিদের নিজেদের প্রপাগান্ডা চ্যানেলগুলোতে বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছে। তবে তাদের নতুন করে হামলা চালানোর মতো শক্তি ও সামর্থ্য কোনোটাই নেই বলেও দাবি সিটিটিসি ইউনিট কর্মকর্তাদের। আরেকটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে যারা আইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে ইরাক-সিরিয়াতে গিয়েছিল, সেই সব দেশ ফেরৎ কেউ দেশে থাকলে তাদের নজরদারিতে রাখা হবে। এরকম অন্তত ৪২ জনের নামের তালিকা বিভিন্ন ইমিগ্রেশনে দেয়া হলেও তারা নামে-বেনামে বা অবৈধ পথে দেশে প্রবেশ করতে পারে কিনা, সে বিষয়েও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, নিরপত্তা বিশ্লেষক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন গতকাল রাতে মানবজমিনকে বলেন, ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরটির সত্যতা কিংবা সে দেশের গোয়েন্দাদের কোন মেসেজ আছে কিনা সেটা ভাবনার বিষয়। তবে, কোন ধরনের তথ্যকেই উড়িয়ে দেয়া ঠিক নয়। শ্রীলঙ্কা মানে আমাদের একেবারে দোরগোড়ায় হামলার পর এক ধরনের ঝুঁকি বা আশঙ্কা তৈরি হতেও পারে। তবে সবক্ষেত্রেই যে হামলার ধরণ ও আবহ এক রকম হবে বিষয়টা তাও নয়। গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের এমন বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে। তবে, আমি মনে করি গণমাধ্যমের খবর হোক আর অন্য কোন গোয়েন্দা সূত্রের খবর হোক আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দাদের জোর প্রস্তুতি থাকতে হবে। শ্রীলংকার ঘটনায়ও যেটা দেখা গেছে সে দেশের গোয়েন্দাদের কাছে হামলার আগাম সতর্কতা ছিল। আমি মনে করি একেবারে কোন সম্ভাবনা না থাকলেও বাংলাদেশেও সর্বোচ্চ সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেয়া উচিত।
বাংলায় আইএসের বার্তা
মানবজমিন ডেস্ক: বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গে হামলার পরিকল্পনা করে থাকতে পারে জঙ্গি সংগঠন আইএস। আইএস টেলিগ্রামপন্থি চ্যানেলের একটি পোস্টারের ওপর ভিত্তি করে এমন ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে বলে দাবি করছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। পশ্চিমবঙ্গে এরই মধ্যে একটি পোস্টার বিতরণ করা হয়েছে। তাতে লেখা ‘শিগগিরই আসছি, ইনশাআল্লাহ’। গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত করেছে এমন পোস্টার বিলি করা হয়েছে এবং তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া।
বৃহস্পতিবার রাতে ওই পোস্টার বিলি করা হয়। পোস্টারে আল মুরসালাত নামে একটি গ্রুপের লোগো আছে। তাই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পোস্টারটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। কারণ, মাত্র এক সপ্তাহ আগে শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। আইএস এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। যদিও সেদেশের সরকার মনে করে এর জন্য দায়ী স্থানীয় ইসলামপন্থি সংগঠন ন্যাশনাল তাওহিদ জামায়াত।
টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, আইসিস সেন্ট্রালের সঙ্গে সম্পৃক্ত জামা’আতুল মুজাহিদীন (জেএমবি) নামের স্থানীয় সন্ত্রাসী সংগঠনের মাধ্যমে আইএসের শক্তিশালী উপস্থিতি আছে বাংলাদেশে। কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য স্থান ও অন্য প্রতিবেশী রাজ্যে জেএমবি বেশ পরিচিত। তারা আত্মগোপন করে আছে। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে কলকাতার বাবুঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জেএমবি অপারেটিভ আরিফুল ইসলামকে। বোধগয়া বিস্ফোরণে জড়িতদের মধ্যে সে অন্যতম। এর আগে আসামে একটি মডিউল গড়ে তুলেছিল জেএমবি। গ্রেপ্তার করা ওই অপারেটিভ প্রকাশ করেছে যে, লোয়ার আসাম বলে পরিচিত এলাকার চিরাংয়ে তাদের ছিল একটি প্রশিক্ষণ সেন্টার।
বর্ধমান রেলস্টেশন থেকে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি মোহাম্মদ মুসিরুদ্দিন ওরফে মুসা নামে আইসিস-জেএমবি সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই। মুসা অনেক দিন তামিলনাড়ুর তিরুপুর জেলায় পালিয়ে ছিল। স্বীকার করেছে জেএমবি’র একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আমজাদ শেখের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। আমজাদ শেখকে ২০১৪ সালে গ্রেপ্তার করা হয় খাগড়া বিস্ফোরণে। তিন বছর আগে স্থানীয় জেএমবি’র কয়েকজন স্লিপার সেল পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে পোস্টার লাগিয়েছিল। এতে সাধারণ তরুণদেরও জেএমবিতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশের কথা মাথায় রেখেই কি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) বাংলায় লেখা একটি পোস্টার প্রচার করেছে। নাকি পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা-সহ পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বাঙালিপ্রধান রাজ্যগুলোতে বড় ধরনের হামলার কোনো ছক কষছে আইএস জঙ্গিরা? এ নিয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বেশ দ্বিধার মধ্যে পড়েছিল। যদিও সবদিক খতিয়ে দেখার পর আপাতত তাদের ধারণা হয়েছে, বাংলাদেশের কথা মাথায় রেখেই এই পোস্টার প্রচার করা হয়েছে। এই পোস্টারে লেখা, শিগগিরই আসছে, ইনশাআল্লাহ। উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কায় লাগাতার বিস্ফোরণের ঘটনার দায় নিয়েছে আইএস। এর ঠিক পরপরই এই বাংলা পোস্ট ভারতীয় গোয়েন্দাদের গভীর চিন্তায় ফেলে দেয় বলে সংবাদ মাধ্যম সূত্রের খবর। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা অবশ্য শ্রীলঙ্কার জঙ্গি হামলার পর জঙ্গিরা পালিয়ে যাতে ভারতে চলে না আসে সেজন্য সতর্কতা অবলম্বন করেছে।
দেশের মধ্যেও আইএস জঙ্গি সন্দেহে অনেকের ওপরই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর। তবে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ঝাড়খণ্ড ও ত্রিপুরায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের জেএমবি শাখা-প্রশাখা বিস্তার করেছে। জেএমবি জঙ্গিদের আসা-যাওয়াও বেড়েছে এই অঞ্চলে। বেশ কয়েকজন জেএমবি জঙ্গি ধরাও পড়েছে। তবে গোয়েন্দাদের মতে, আইএস জঙ্গিদের সাংগঠনিক টার্গেটে এখনো মুখ্য জায়গায় রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে আইএস নিজেদের সংগঠনকে নতুন করে ঢেলে সাজার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও ভারতীয় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। তাই ভারতীয় গোয়েন্দাদের ধারণা, বাংলায় লেখা এই পোস্টার সম্ভবত বাংলাদেশের প্রতি লক্ষ্য করেই প্রচার করা হয়েছে। তবে ভারতীয় গোয়েন্দারা আইএস তৎপরতার কথা মাথায় রেখেই পশ্চিমবঙ্গসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের জঙ্গিদের খোঁজে জোরদার নজরদারি চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।
No comments