চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে- বিচার প্রক্রিয়া এক ধাপ এগিয়ে গেল
রাজন ভট্টাচার্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচারের রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া। বৃহস্পতিবার রায় কার্যকর করার পর পরই যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে অভিযুক্তরাও নড়েচড়ে বসেছে।
চিনত্মিত স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী। আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে তাদের। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীরাও এক সময় ভাবত, তাদের বিচার বাংলাদেশের মাটিতে কোন দিনই সম্ভব নয়। কিন্তু সেই ভাবনায় ছেদ পড়েছে। তাই এবার টনক নড়েছে যুদ্ধাপরাধীদের। গুঞ্জন আছে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার পর পরই চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের পাঁয়তারা চালাচ্ছে তারা। সেই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যেন সরকার করতে না পারে, সেজন্য বিভিন্ন দেশ থেকে চাপে রাখা হয়েছে সরকারকে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের ফাঁসির পর সরকারের পৰ থেকে বলা হয়েছে, ফিরিয়ে আনা হবে বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত পলাতক অন্য আসামিদেরও। কার্যকর করা হবে মৃতু্যদ-। ইতোমধ্যে পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরম্ন হয়েছে। ইন্টারপোলের পৰ থেকে জারি করা হয়েছে রেড এলার্ট। সেই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরম্ন করার কথা বলা হয়েছে সরকারের পৰ থেকে। এদিকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করায় সনত্মোষ প্রকাশ করেছেন দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক দলের নেতাসহ সাধারণ মানুষ। বলেছেন, রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হলো। সেই সঙ্গে দাবি জানিয়েছেন, অবিলম্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরম্ন করার। বলেছেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিকল্প নেই। এবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হওয়ার অপেৰায়।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে ঘাতকরা। থেমে থাকেনি ষড়যন্ত্র। '৭৫ পরবর্তী সরকারের মদদে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় খুনীরা। বিচার না করে পরবর্তী সরকারগুলো খুনীদের পুনর্বাসন করে। বর্বরোচিত হত্যাকা-ের বিচার থামাতে জারি করে ইনডেমনিটি আইন। খুনীদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। অনেকেই বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। তাদের মনে দম্ভ কাজ করে। ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকা-ের ঘটনাকে দেশের রাজনৈতিক প্রেৰাপটে ইতিবাচক হিসেবে মনে করত খুনীরা। এদের মধ্যে অনেকেই আনত্মর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা নির্ভয়ে স্বীকার করে। আত্মস্বীকৃত খুনীদের অনেকেই ছিলেন দেশে। অনেকেই লিবিয়া কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়। তাদের ধারণা ছিল, কোন দিনই আসামি হিসেবে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সম্ভব হবে না। দেশে এমন পরিস্থিতি কোন সময় আসা সম্ভব নয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ৰমতায় আসার পর পাল্টে যায় পরিস্থিতি। শুরম্ন হয় বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার প্রক্রিয়া। দীর্ঘ সময় পর দেশের মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত পাঁচ খুনীর বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে বৃহস্পতিবার। বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থাকা খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রক্রিয়া শুরম্ন হয়েছে।
ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে ভেঙ্গেছে খুনীদের দম্ভ। মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে তাদের বিচার করতে না পারার বিষয়টি। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আইনের শাসন। দেশের আপামর জনসাধারণ মনে করছে, এবার যুদ্ধাপরাধীদের দম্ভ ভাঙ্গার পথ সুগম হয়েছে। এসেছে উপযুক্ত সময়। যুদ্ধাপরাধীদের ধারণা বাংলাদেশের মাটিতে তাদের বিচার কোন দিন সম্ভব নয়। তাই চিহ্নিত অপরাধীরা বুক ফুলিয়ে রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন কর্মকা-ের প্রকাশ্য সমালোচনা করছে তারা। অপরাধীরা নিজেই মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনার আয়োজন করছে! বিচার বানচালে মিত্র দেশগুলো থেকে সরকারকে চাপ দেয়া হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার হলেও বাসত্মবায়ন কঠিন। তা ছাড়া এ বিষয়টি সরকারের সামনে বড় রকমের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন অনেকেই। তবে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই পাল্টে থেকে দৃশ্যপট। বিচারের পথ সুগম হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে আরেক ধাপ এগিয়ে গেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার বিষয়টি। পাঁচ খুনীর ফাঁসির রায় কার্যকর করার পর থেকেই অনেকটা আতঙ্কেই আছে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীরা। তাদের কাছেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরম্নর বিষয়টি এখন অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তারাও এখন অনেকটাই নিশ্চিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরম্ন করতে সরকারের সামনে এখন আর কোন বাধা নেই। শুধু সময়ের ব্যাপার। সর্বসত্মরে আলোচনার বিষয় এখন একটিই। কবে শুরম্ন হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার স্বাধীনতাবিরোধী শিবিরে নেমে এসেছে সুনসান নীরবতা। চুপচাপ কেটেছে দিন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীরা শক্তিশালী মিত্র বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। অনেকেই গোয়েন্দাদের নজর এড়িয়ে পালিয়ে দেশ ছাড়ার চিনত্মা করছেন। ছদ্মবেশে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা, এমন গুঞ্জনও আছে অনেক চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিরম্নদ্ধে। সেই সঙ্গে বিচার প্রক্রিয়া বানচালের চেষ্টা তো আছেই। আছে দেশে বড় রকমের নাশকতার আশঙ্কাও।
বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার পর পরই সরকারের পৰ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের অচিরেই বিচার শুরম্ন করার বিষয়টি আবারও স্পষ্ট করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, পালিয়ে থাকা খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে শাসত্মি দেয়া হবে। দ-প্রাপ্তরা আইনের হাত থেকে রৰা পাবে না। তাদের ফিরিয়ে আনা হবেই। আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেছেন, পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দ্রম্নত ফিরিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে। বাণিজ্যমন্ত্রী ফারম্নক খান বলেছেন, আনত্মর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। আইন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরম্নল ইসলাম বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরম্ন হবে। দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরম্ন করবে। এ নিয়ে সন্দেহ বা অনিশ্চয়তার কোন অবকাশ নেই। রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরম্নর পথ আরও সুগম হয়েছে। এখন অপেৰামাত্র।
No comments