মার্কিন কূটনীতিক রিচার্ড হলব্রুক আর নেই
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ প্রতিনিধি এবং পাঁচ দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালনকারী কূটনীতিক রিচার্ড হলব্রুক আর নেই। গত শুক্রবার আকস্মিকভাবে হূদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁকে ওয়াশিংটনের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত সোমবার সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ বিশ্বের বহু নেতা শোক প্রকাশ করেছেন।
রিচার্ড হলব্রুক |
কর্মকর্তারা বলেছেন, গত শুক্রবার ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে বৈঠক করছিলেন হলব্রুক। বৈঠক চলাকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁর হূৎপিণ্ড থেকে দেহে রক্ত সঞ্চালনকারী প্রধান ধমনী ছিঁড়ে গেছে বলে নিশ্চিত হন। দুই দফা অস্ত্রোপচার করে তাঁরা ছিঁড়ে যাওয়া ধমনী জোড়া লাগানোর চেষ্টা করেন। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন তাঁরা। গত সোমবার মারা যান তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।রিচার্ড হলব্রুকের মৃত্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক বিবৃতিতে বলেছেন, হলব্রুক ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির জন্য ‘একজন সত্যিকারের ঝানু কূটনীতিক’, যিনি যুক্তরাষ্ট্রকে উত্তরোত্তর শক্তিশালী, নিরাপদ ও সম্মানিত করে গেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, হলব্রুকের মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্র একজন প্রচণ্ড বিচক্ষণ ও নিবেদিতপ্রাণ কূটনীতিককে হারাল।পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি বলেছেন, তাঁর মৃত্যুতে পাকিস্তান একজন ‘বন্ধু’কে হারাল। তিনি বলেছেন, হলব্রুক এমন একজন বিচক্ষণ কূটনীতিক ছিলেন, যিনি খুব দ্রুত অন্যদের আস্থা অর্জন করতে পারতেন। হলব্রুক বসনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য অস্থিতিশীল এলাকায় শান্তি স্থাপনের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইও তাঁর মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ১৯৬২ সালে ভিয়েতনামে মার্কিন মিশনে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে হলব্রুকের পেশাগত জীবনের শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি থেকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পর্যন্ত সব সরকারের আমলেই তিনি গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অত্যন্ত জোরালো ও কঠোর ভঙ্গিতে কথা বলতেন বলে তাঁকে অনেকেই ‘বুলডোজার’ নামে ডাকতেন। বসনিয়ায় শান্তি স্থাপনের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য তিনি বিশ্বখ্যাত কূটনীতিক হিসেবে স্বীকৃত হন। জাতিসংঘ ও জার্মানিতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করা ছাড়াও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ করেন।হলব্রুকের পরামর্শেই ওবামা আফগানিস্তানে অতিরিক্ত তিন হাজার সেনাসদস্য পাঠানোর ঘোষণা দেন।
No comments