কি হবে ভেনিজুয়েলার তেলের? বিশ্ব রাজনীতিতে উত্তেজনা
যুক্তরাষ্ট্রের
প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প আর ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর
মধ্যে ঘোর শত্রুতা। শত্রুতাই শুধু নয়, দৃশ্যত একজন অন্যজনের বিরুদ্ধে
অঘোষিত এক যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। নিকোলাস মাদুরোকে আর প্রেসিডেন্ট হিসেবে
মানেন না ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি
দিয়েছেন বিরোধী দলের ‘অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট’ হুয়ান গাইডোকে। এ নিয়ে
চরম এক উত্তেজনা বিরাজ করছে ভেনিজুয়েলা ও এর বাইরে। যুক্তরাষ্ট্র ও
ভেনিজুয়েলার মধ্যে যখন এমন উত্তেজনাকর অবস্থা তখন তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ
একটি সম্পর্ক আছে। তাহলো ভেনিজুয়েলার তেল। এই তেলের সবচেয়ে বড় ও
গুরুত্বপূর্ণ ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র।
ওপেকভুক্ত দেশগুলো গত বছর যে পরিমাণ তেল সরবরাহ দিয়েছে এ পরিমাণ তার শতকরা ৩৯ ভাগ।
গত অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ বৈদেশিক তেল গিয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সরবরাহের দিক দিয়ে চতুর্থ বৃহৎ উৎস হলো ভেনিজুয়েলা। কিন্তু এখন ট্রাম্প, মাদুরো, হুয়ান গাইডো এবং বাকি বিভক্ত বিশ্বের মধ্যে মাদুরো ইস্যুতে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তাতে ভেনিজুয়েলা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার তেলভিত্তিক শক্ত সম্পর্কে বড় ধরনের প্রভাব বা টান পড়বে। বুধবার হুয়ান গাইডো নিজেকে প্রেসিডেন্ট দাবি করার পরই নাটকীয় পদক্ষেপ নেয় হোয়াইট হাউস। তারা তাকে দেশটির বৈধ প্রেসিডেন্ট বলে স্বীকৃতি দেয়। এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন মাদুরো। ওদিকে ট্রাম্পকে সমর্থন দিচ্ছে বিশ্বের বড় বড় শক্তিধর দেশ। আর মাদুরোর পাশে আছে তার দেশের সেনাবাহিনী, রাশিয়া, চীন ও তুরস্কের মতো কিছু দেশ।
এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি করবেন- তা নিয়ে চলছে জল্পনা। এরই মধ্যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, সব ধরনের অপশন তাদের হাতে রয়েছে। এর অর্থ ভেনিজুয়েলায় সামরিক হামলা চালাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। আবার অর্থনৈতিক অবরোধও দেয়া হতে পারে মাদুরোর বিরুদ্ধে। যদি অবরোধ দেন ট্রাম্প তাহলে তার আওতায় পড়বে দেশটির তেলও। এটা করা হলে ভেনিজুয়েলার ভঙ্গুর অর্থনীতিকে ভেঙে দেয়া হবে। আর তা হবে মাদুরোর বিরুদ্ধে ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় আঘাত। কিন্তু তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় তাহলো, এতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ভীষণ বড় প্রভাব পড়বে। বড় এক আঘাত তাদের গায়েও লাগবে। ভেনিজুয়েলার তেলভর্তি ব্যারেলের যখন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে তখন অশোধিত তেলের দাম হু হু করে বেড়ে যাবে। ভেনিজুয়েলা থেকে প্রতিদিন সেখানে যায় কয়েক লাখ তেলভর্তি ব্যারেল। এর ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রে যে শোধনাগার রয়েছে তার সংখ্যাও দ্রুত কমে যাবে। তাই এ খাত নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ক্লিপার ডাটা’র পরিচালক ম্যাট স্মিথ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ভেনিজুয়েলার বিরুদ্ধে অবরোধ দেয় তাহলে তাতে নিজেরই ক্ষতি করবে তারা।
ভেনিজুয়েলার অর্থনীতির প্রাণ তেল
ভেনিজুয়েলার মোট রাজস্বের শতকরা ৯০ ভাগই আসে তেল রপ্তানি থেকে। ফলে তেলের ওপর নির্ভর করেই দেশটি টিকে আছে বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। কিন্তু জ্বালানি শিল্পের দ্রুত ক্ষতি হওয়ার ফলে এরই মধ্যে ভেনিজুয়েলার তেল উত্তোলন ৩০ বছরের মধ্যে নিচে নেমে এসেছে। আরবিসি ক্যাপিটাল মার্কেট এ বিষয়টিকে এভাবে মূল্যায়ন করেছে- ২০১৯ সালে এ দেশের প্রতিদিনের তেল উত্তোলন ৫ লাখ ব্যারেল পর্যন্ত কমে যাবে। আরবিসি আরো সতর্ক করেছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র অবরোধ দেয় তাহলে অতিরিক্ত কয়েক লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন বাড়িয়ে দিতে পারে ভেনিজুয়েলা।
আরবিসি’র বৈশ্বিক বিষয়ক প্রধান হেলিমা ক্রফট বুধবার তার ক্লায়েন্টদের কাছে লিখেছেন, ভেনিজুয়েলায় দ্রুত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে, খুব কঠিন একটি অবস্থানের দিকে অগ্রসর হচ্ছে সবকিছু।
ভেনিজুয়েলার তেলের অন্য বড় ক্রেতার মধ্যে রয়েছে চীন ও ভারত। কিন্তু এসব দেশে তেল শিপমেন্ট পাঠিয়ে অর্থের দিক থেকে তারা খুব একটা লাভবান হয় না। এ দেশগুলোর কাছে প্রচুর পরিমাণ অর্থের ঋণী ভেনিজুয়েলা। তাই যে তেল পাঠানো হয় তা থেকে ঋণের অংশ কর্তন করে নেয়া হয়। এ জন্য এই শিপমেন্ট বা রপ্তানিতে তাদের অর্থনীতির ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না। ম্যাট স্মিথ বলেছেন, এ অবস্থায় অবরোধ দেয়া হলে ভেনিজুয়েলার অর্থনীতির টিকে থাকার নাড়িটাই কেটে দেয়া হবে। এমনিতেই দেশটি মানবিক একটি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। কারণ, আইএমএফের মতে, ২০১২ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে সেখানে জাতীয় প্রবৃদ্ধি কমে গেছে শতকরা ৩৭ ভাগ। ২০১৯ সালে সেখানে মুদ্রাস্ফীতি শতকরা এক কোটি ভাগে গিয়ে দাঁড়াবে বলে ধরা হচ্ছে।
ট্রাম্প কি কঠোর পদক্ষেপ নেবেন?
ভেনিজুয়েলার পরিস্থিতি যখন এমন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে, বিশৃঙ্খল সেখানকার সবকিছু- তখন তেল বাজার দৃশ্যত প্রতিক্রিয়ার দিক থেকে থমকে আছে। এর কারণ হতে পারে, পরবর্তীতে কি ঘটতে যাচ্ছে তা একেবারেই নিশ্চিত নয়। গত বছর তেল বাজারে একটি ‘ওয়াইল্ড কার্ড’ ছিল ট্রাম্পের কাছে। ইরানের ওপর অবরোধ দিলে তাতে তেলের দাম ১০০ ডলার প্রতি ব্যারেল দাঁড়াতে পারে এমন আতঙ্কে ইরান অবরোধে প্রত্যাশার চেয়ে কিছুটা নমনীয় হন তিনি। তার এই নমনীয়তায় তেলের বাজারে সরবরাহ আছে পর্যাপ্ত। ফলে মূল্য মোটামুটি স্থিতিশীল আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের অধীনে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন সাবেক কর্মকর্তা জো ম্যামোনিঙ্গেল ভেনিজুয়েলার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, বাজারে খুব বেশি সংশয় রয়েছে যে, তেলের ওপর অবরোধকে পেছন থেকে টেনে ধরে রাখতে পারেন। জো ম্যামোনিঙ্গেল বর্তমানে হেজেয়ি পটোম্যাক রিসার্সের জ্বালানি নীতি বিষয়ক একজন সিনিয়র বিশ্লেষক। তিনি বিশ্বাস করেন ট্রাম্প অবরোধ আরোপকেই বেশি বেছে নিতে পারেন। তিনি সতর্ক করেন, এই অবরোধ দেয়া হলে বিশাল একটি সংকট সৃষ্টি হবে। তাতে দেখা দিতে পারে গৃহযুদ্ধ অথবা ভেনিজুয়েলায় রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানিতে অপারেশন স্থগিত হয়ে যেতে পারে।
ভেনিজুয়েলার তেলের ওপর নির্ভর করে টিকে আছে যুক্তরাষ্ট্রের শোধনাগার
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভেনিজুয়েলাকে শাস্তি দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যদি তেল শিল্পকে তার আওতায় রাখে তাহলে তাতে দাম বেড়ে যাবে। আকাশ ছুঁয়ে যাবে যুুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম। কারণ, নিজের তেল দিয়ে চলার মতো যুক্তরাষ্ট্র সক্ষম নয়। উপসাগরীয় অঞ্চলের সরবরাহকারীরা একাই এই সাপোর্ট দিয়ে যেতে পারবে না। গ্যাসোলিন, জেট বিমানের জ্বালানি ও অন্যান্য খাতে, শোধনাগার যে সরবরাহ দেয় তা খুব বেশি নির্ভর করে অশোধিত তেলের ওপর। সস্তায় যায় ভেনিজুয়েলা থেকে। এনার্জি ইনফরমেশন এডমিনিস্ট্রেশনের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান মতে, ভেনিজুয়েলায় সম্প্রতি তেল উত্তোলন দ্রুততার সঙ্গে কমে যায়। তা সত্ত্বেও অক্টোবরে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিদিন ৫ লাখ ৬ হাজার ব্যারেল তেল সরবরাহ দিয়ে গেছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে আর যেসব দেশ অশোধিত তেল সরবরাহ দিয়েছে বড় মাপে তার মধ্যে রয়েছে কানাডা, সৌদি আরব ও মেক্সিকো। এমন অবস্থায় জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বার বার সতর্কতা দিচ্ছেন। বলছেন, ভেনিজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র অবরোধ দিলে তাতে ‘হেভি ক্রড’-এর দাম বেড়ে যাবে। তখন এই তেল তাদেরকে অন্য স্থানে খুঁজতে হবে। ওই দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব প্রতিষ্ঠান গত বছর সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করেছে তার মধ্যে রয়েছে সিটগো, ভ্যালেরি ও শেভরন। বৃহস্পতিবার রিস্টাড এনার্জির বিশ্লেষক পাওলো রড্রিগুয়েজ-মিশুউ একটি রিপোর্টে লিখেছেন, অবরোধ দেয়া হলে উপসাগরীয় উপকূল অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব শোধনাগার আছে তা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ভেনিজুয়েলার তেল শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যগুলোর ওপর খুব বেশি নির্ভর করতে হয় দেশটিকে। ভেনিজুয়েলার অশোধিত তেল এতটাই ভারি যে, এটাকে লঘু তেলে পরিণত করতে ন্যাপথার সঙ্গে ব্লেন্ড করতে হয়। যদি যুক্তরাষ্ট্র অবরোধ দেয় তাহলে ওই ন্যাপথা ভেনিজুয়েলায় সরবরাহ করতে পারবে না সে নিজেই। এক্ষেত্রে অন্য দেশের কাছ থেকে ওই রাসায়নিক পণ্যটি সংগ্রহ করবে ভেনিজুয়েলা। তবে তাতে দাম পড়তে পারে বেশি এবং অনেক দূর থেকে নিতে হতে পারে।
(সূত্র অনলাইন সিএনএন)
ওপেকভুক্ত দেশগুলো গত বছর যে পরিমাণ তেল সরবরাহ দিয়েছে এ পরিমাণ তার শতকরা ৩৯ ভাগ।
গত অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ বৈদেশিক তেল গিয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সরবরাহের দিক দিয়ে চতুর্থ বৃহৎ উৎস হলো ভেনিজুয়েলা। কিন্তু এখন ট্রাম্প, মাদুরো, হুয়ান গাইডো এবং বাকি বিভক্ত বিশ্বের মধ্যে মাদুরো ইস্যুতে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তাতে ভেনিজুয়েলা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার তেলভিত্তিক শক্ত সম্পর্কে বড় ধরনের প্রভাব বা টান পড়বে। বুধবার হুয়ান গাইডো নিজেকে প্রেসিডেন্ট দাবি করার পরই নাটকীয় পদক্ষেপ নেয় হোয়াইট হাউস। তারা তাকে দেশটির বৈধ প্রেসিডেন্ট বলে স্বীকৃতি দেয়। এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন মাদুরো। ওদিকে ট্রাম্পকে সমর্থন দিচ্ছে বিশ্বের বড় বড় শক্তিধর দেশ। আর মাদুরোর পাশে আছে তার দেশের সেনাবাহিনী, রাশিয়া, চীন ও তুরস্কের মতো কিছু দেশ।
এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি করবেন- তা নিয়ে চলছে জল্পনা। এরই মধ্যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, সব ধরনের অপশন তাদের হাতে রয়েছে। এর অর্থ ভেনিজুয়েলায় সামরিক হামলা চালাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। আবার অর্থনৈতিক অবরোধও দেয়া হতে পারে মাদুরোর বিরুদ্ধে। যদি অবরোধ দেন ট্রাম্প তাহলে তার আওতায় পড়বে দেশটির তেলও। এটা করা হলে ভেনিজুয়েলার ভঙ্গুর অর্থনীতিকে ভেঙে দেয়া হবে। আর তা হবে মাদুরোর বিরুদ্ধে ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় আঘাত। কিন্তু তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় তাহলো, এতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ভীষণ বড় প্রভাব পড়বে। বড় এক আঘাত তাদের গায়েও লাগবে। ভেনিজুয়েলার তেলভর্তি ব্যারেলের যখন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে তখন অশোধিত তেলের দাম হু হু করে বেড়ে যাবে। ভেনিজুয়েলা থেকে প্রতিদিন সেখানে যায় কয়েক লাখ তেলভর্তি ব্যারেল। এর ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রে যে শোধনাগার রয়েছে তার সংখ্যাও দ্রুত কমে যাবে। তাই এ খাত নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ক্লিপার ডাটা’র পরিচালক ম্যাট স্মিথ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ভেনিজুয়েলার বিরুদ্ধে অবরোধ দেয় তাহলে তাতে নিজেরই ক্ষতি করবে তারা।
ভেনিজুয়েলার অর্থনীতির প্রাণ তেল
ভেনিজুয়েলার মোট রাজস্বের শতকরা ৯০ ভাগই আসে তেল রপ্তানি থেকে। ফলে তেলের ওপর নির্ভর করেই দেশটি টিকে আছে বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। কিন্তু জ্বালানি শিল্পের দ্রুত ক্ষতি হওয়ার ফলে এরই মধ্যে ভেনিজুয়েলার তেল উত্তোলন ৩০ বছরের মধ্যে নিচে নেমে এসেছে। আরবিসি ক্যাপিটাল মার্কেট এ বিষয়টিকে এভাবে মূল্যায়ন করেছে- ২০১৯ সালে এ দেশের প্রতিদিনের তেল উত্তোলন ৫ লাখ ব্যারেল পর্যন্ত কমে যাবে। আরবিসি আরো সতর্ক করেছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র অবরোধ দেয় তাহলে অতিরিক্ত কয়েক লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন বাড়িয়ে দিতে পারে ভেনিজুয়েলা।
আরবিসি’র বৈশ্বিক বিষয়ক প্রধান হেলিমা ক্রফট বুধবার তার ক্লায়েন্টদের কাছে লিখেছেন, ভেনিজুয়েলায় দ্রুত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে, খুব কঠিন একটি অবস্থানের দিকে অগ্রসর হচ্ছে সবকিছু।
ভেনিজুয়েলার তেলের অন্য বড় ক্রেতার মধ্যে রয়েছে চীন ও ভারত। কিন্তু এসব দেশে তেল শিপমেন্ট পাঠিয়ে অর্থের দিক থেকে তারা খুব একটা লাভবান হয় না। এ দেশগুলোর কাছে প্রচুর পরিমাণ অর্থের ঋণী ভেনিজুয়েলা। তাই যে তেল পাঠানো হয় তা থেকে ঋণের অংশ কর্তন করে নেয়া হয়। এ জন্য এই শিপমেন্ট বা রপ্তানিতে তাদের অর্থনীতির ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না। ম্যাট স্মিথ বলেছেন, এ অবস্থায় অবরোধ দেয়া হলে ভেনিজুয়েলার অর্থনীতির টিকে থাকার নাড়িটাই কেটে দেয়া হবে। এমনিতেই দেশটি মানবিক একটি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। কারণ, আইএমএফের মতে, ২০১২ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে সেখানে জাতীয় প্রবৃদ্ধি কমে গেছে শতকরা ৩৭ ভাগ। ২০১৯ সালে সেখানে মুদ্রাস্ফীতি শতকরা এক কোটি ভাগে গিয়ে দাঁড়াবে বলে ধরা হচ্ছে।
ট্রাম্প কি কঠোর পদক্ষেপ নেবেন?
ভেনিজুয়েলার পরিস্থিতি যখন এমন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে, বিশৃঙ্খল সেখানকার সবকিছু- তখন তেল বাজার দৃশ্যত প্রতিক্রিয়ার দিক থেকে থমকে আছে। এর কারণ হতে পারে, পরবর্তীতে কি ঘটতে যাচ্ছে তা একেবারেই নিশ্চিত নয়। গত বছর তেল বাজারে একটি ‘ওয়াইল্ড কার্ড’ ছিল ট্রাম্পের কাছে। ইরানের ওপর অবরোধ দিলে তাতে তেলের দাম ১০০ ডলার প্রতি ব্যারেল দাঁড়াতে পারে এমন আতঙ্কে ইরান অবরোধে প্রত্যাশার চেয়ে কিছুটা নমনীয় হন তিনি। তার এই নমনীয়তায় তেলের বাজারে সরবরাহ আছে পর্যাপ্ত। ফলে মূল্য মোটামুটি স্থিতিশীল আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের অধীনে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন সাবেক কর্মকর্তা জো ম্যামোনিঙ্গেল ভেনিজুয়েলার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, বাজারে খুব বেশি সংশয় রয়েছে যে, তেলের ওপর অবরোধকে পেছন থেকে টেনে ধরে রাখতে পারেন। জো ম্যামোনিঙ্গেল বর্তমানে হেজেয়ি পটোম্যাক রিসার্সের জ্বালানি নীতি বিষয়ক একজন সিনিয়র বিশ্লেষক। তিনি বিশ্বাস করেন ট্রাম্প অবরোধ আরোপকেই বেশি বেছে নিতে পারেন। তিনি সতর্ক করেন, এই অবরোধ দেয়া হলে বিশাল একটি সংকট সৃষ্টি হবে। তাতে দেখা দিতে পারে গৃহযুদ্ধ অথবা ভেনিজুয়েলায় রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানিতে অপারেশন স্থগিত হয়ে যেতে পারে।
ভেনিজুয়েলার তেলের ওপর নির্ভর করে টিকে আছে যুক্তরাষ্ট্রের শোধনাগার
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভেনিজুয়েলাকে শাস্তি দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যদি তেল শিল্পকে তার আওতায় রাখে তাহলে তাতে দাম বেড়ে যাবে। আকাশ ছুঁয়ে যাবে যুুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম। কারণ, নিজের তেল দিয়ে চলার মতো যুক্তরাষ্ট্র সক্ষম নয়। উপসাগরীয় অঞ্চলের সরবরাহকারীরা একাই এই সাপোর্ট দিয়ে যেতে পারবে না। গ্যাসোলিন, জেট বিমানের জ্বালানি ও অন্যান্য খাতে, শোধনাগার যে সরবরাহ দেয় তা খুব বেশি নির্ভর করে অশোধিত তেলের ওপর। সস্তায় যায় ভেনিজুয়েলা থেকে। এনার্জি ইনফরমেশন এডমিনিস্ট্রেশনের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান মতে, ভেনিজুয়েলায় সম্প্রতি তেল উত্তোলন দ্রুততার সঙ্গে কমে যায়। তা সত্ত্বেও অক্টোবরে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিদিন ৫ লাখ ৬ হাজার ব্যারেল তেল সরবরাহ দিয়ে গেছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে আর যেসব দেশ অশোধিত তেল সরবরাহ দিয়েছে বড় মাপে তার মধ্যে রয়েছে কানাডা, সৌদি আরব ও মেক্সিকো। এমন অবস্থায় জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বার বার সতর্কতা দিচ্ছেন। বলছেন, ভেনিজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র অবরোধ দিলে তাতে ‘হেভি ক্রড’-এর দাম বেড়ে যাবে। তখন এই তেল তাদেরকে অন্য স্থানে খুঁজতে হবে। ওই দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব প্রতিষ্ঠান গত বছর সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করেছে তার মধ্যে রয়েছে সিটগো, ভ্যালেরি ও শেভরন। বৃহস্পতিবার রিস্টাড এনার্জির বিশ্লেষক পাওলো রড্রিগুয়েজ-মিশুউ একটি রিপোর্টে লিখেছেন, অবরোধ দেয়া হলে উপসাগরীয় উপকূল অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব শোধনাগার আছে তা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ভেনিজুয়েলার তেল শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যগুলোর ওপর খুব বেশি নির্ভর করতে হয় দেশটিকে। ভেনিজুয়েলার অশোধিত তেল এতটাই ভারি যে, এটাকে লঘু তেলে পরিণত করতে ন্যাপথার সঙ্গে ব্লেন্ড করতে হয়। যদি যুক্তরাষ্ট্র অবরোধ দেয় তাহলে ওই ন্যাপথা ভেনিজুয়েলায় সরবরাহ করতে পারবে না সে নিজেই। এক্ষেত্রে অন্য দেশের কাছ থেকে ওই রাসায়নিক পণ্যটি সংগ্রহ করবে ভেনিজুয়েলা। তবে তাতে দাম পড়তে পারে বেশি এবং অনেক দূর থেকে নিতে হতে পারে।
(সূত্র অনলাইন সিএনএন)
No comments