মামলা যন্ত্রণায় চোখ হারানো মেরী by শাহনেওয়াজ বাবলু
আগাম জামিন চাইতে আদালতে চোখ হারানো মেরী |
নির্বাচনের
আগে পছন্দের প্রার্থীর সঙ্গে গণসংযোগে বের হয়েছিলেন মেরী বেগম। দলীয়
কার্যালয়ে অবস্থানের সময় প্রতিপক্ষের হামলা। পুলিশের লাঠিচার্জ-সংঘর্ষ।
এরমধ্যেই দুই চোখে গুলিবিদ্ধ হন মেরী। গুরুতর আহত অবস্থায় আনা হয় ঢাকায়।
দীর্ঘ দেড় মাস ধরে চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার চোখে আলো ফেরার
কোনো সম্ভাবনাই নেই। চোখের আলো নেভা মেরীর জীবনটাও এখন যেন নিভু নিভু
অবস্থায়।
তিন সন্তানকে নিয়ে অনটনের সংসারের ঘানি টানছেন খেটে খাওয়া স্বামী। সঙ্গে মেরীর ব্যয়বহুল চিকিৎসা। এর সঙ্গে নতুন যন্ত্রণা হয়ে এসেছে মামলা। যে ঘটনায় চোখ হারিয়ে ধুঁকছেন মেরী ওই ঘটনার মামলায় তাকে করা হয়েছে আসামি। তিনি জানেন না কি কারণে তাকে আসামি করা হয়েছে। সোমবার মামলায় আগাম জামিন নিতে স্বামী ও স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে হাইকোর্টে এসেছিলেন। আদালতে শুনানির পর জামিনও হয়েছে। অন্যের সাহায্য নিয়ে তিনি আদালত কক্ষে যান। তার আগে আদালতের বারান্দায় মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে বসে ছিলেন তিনি। ষষ্ট শ্রেণিপড়ুয়া মেয়ে মারিয়া আক্তার এখন তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী। হাসপাতালে মায়ের সেবা, সাহায্য করে সে।
এ কারণে তার পড়াশোনাও অনিয়মিত হওয়ার উপক্রম। আদালতের বারান্দায় বসেই মেরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন তার যন্ত্রণার কথা। তিনি জানান, চার সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে একটি দোকানে কর্মচারীর কাজ করে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে ষষ্ট শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলেটিও স্কুলে যায়। রাজনীতি সচেতন হিসেবে তিনি বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এ কারণে সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী রুমানা মাহমুদের প্রচারণায় গিয়েছিলেন। ঘটনা ১৪ই ডিসেম্বরের। এ দিন সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে অবস্থানের সময় কয়েকটি মোটরসাইকেলে এসে তাদের ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে বিএনপি কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে। একপর্যায়ে গুলি করে। তার দুই চোখে তিনটি স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়। গুলি লাগার পর প্রথমে মনে করেছিলেন বিদ্যুৎ চলে গেছে। পরে বুঝতে পারেন চোখ দিয়ে রক্ত ঝরছে। ঘটনার পর থেকে তিন তিনবার চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে। ঢাকা ও সিরাজগঞ্জের হাসাপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। স্বামী জামাত আলী খেটে খাওয়া মানুষ। তার আয়ে সংসার চলে। গত দেড় মাস ধরে মানুষের সাহায্য নিয়ে তার চিকিৎসা চলছে। সংসারও চলছে টেনেটুনে। মেরী বলেন, গুলিতে আমি অন্ধ হয়ে গেলাম, তারপর আমার বিরুদ্ধে আবার মামলা হয়েছে। কী জন্য আমাকে আসামি করেছে আমি কিছু বুঝতে পারছি না। আমি চোখে দেখি না। তারপরও কোর্টে আসতে হয়েছে। এটি কী যে যন্ত্রণার বলে বুঝাতে পারব না। মেরী যখন কথা বলছিলেন তখন তার পাশে থাকা মেয়ে মারিয়া উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। তার চোখেও যেন রাজ্যের অনিশ্চয়তা। জামাত আলীর চোখেও দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।
মেরী বলেন, আমার ডান চোখে একটি আর বাম চোখে দু’টি গুলি লাগে। আমি অন্ধ হয়েও আদালতে আসা লাগছে। গত তিনদিন ধরে আমি ঢাকায় চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। সেখানে আমি ভর্তি হতে চাইছিলাম। কিন্তু ভর্তি হতে পারিনি। এখন একজন আত্মীয়ের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছি। ডাক্তার বলছে বাংলাদেশে চিকিৎসা করে আমার চোখ ভালো করা যাবে না। এর জন্য বিদেশ যেতে হবে। আমার কাছেতো এতো টাকা নেই। বিদেশে গিয়ে কিভাবে আমি চিকিৎসা করব। চিকিৎসায় কোনো সাহায্য পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে মেরী বলেন, শুনছি তারা কিছুটা সাহায্য করছে। তবে কে বা কারা সাহায্য করছে তার কিছুই বলতে চাননি তিনি। এই ঘটনার পর বিচার চেয়ে মামলা করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না আমি কোনো মামলা করিনি। উল্টো আমার নামে মামলা করা হয়েছে। এর জন্য আজ আদালতে এসেছি। আর আমি কারো নামে মামলা করতে চাই না। কারণ আমরা গরিব মানুষ। মামলা করতে গেলে আবার কোন ঝামেলায় পড়ি।
সরকারের কাছে কোনো আবেদন আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সরকারের কাছে কোনো আবেদন নেই। তবে আমি দেশবাসীর কাছে জানতে চাই, আমার যে দুই চোখ শেষ করে দিলো। এর বিচার কে করবে? আমার চোখ কে ভালো করে দেবে? আমি এই দুই চোখ দিয়া আমার সন্তানদের আবারো দেখতে চাই।
তিন সন্তানকে নিয়ে অনটনের সংসারের ঘানি টানছেন খেটে খাওয়া স্বামী। সঙ্গে মেরীর ব্যয়বহুল চিকিৎসা। এর সঙ্গে নতুন যন্ত্রণা হয়ে এসেছে মামলা। যে ঘটনায় চোখ হারিয়ে ধুঁকছেন মেরী ওই ঘটনার মামলায় তাকে করা হয়েছে আসামি। তিনি জানেন না কি কারণে তাকে আসামি করা হয়েছে। সোমবার মামলায় আগাম জামিন নিতে স্বামী ও স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে হাইকোর্টে এসেছিলেন। আদালতে শুনানির পর জামিনও হয়েছে। অন্যের সাহায্য নিয়ে তিনি আদালত কক্ষে যান। তার আগে আদালতের বারান্দায় মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে বসে ছিলেন তিনি। ষষ্ট শ্রেণিপড়ুয়া মেয়ে মারিয়া আক্তার এখন তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী। হাসপাতালে মায়ের সেবা, সাহায্য করে সে।
এ কারণে তার পড়াশোনাও অনিয়মিত হওয়ার উপক্রম। আদালতের বারান্দায় বসেই মেরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন তার যন্ত্রণার কথা। তিনি জানান, চার সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে একটি দোকানে কর্মচারীর কাজ করে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে ষষ্ট শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলেটিও স্কুলে যায়। রাজনীতি সচেতন হিসেবে তিনি বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এ কারণে সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী রুমানা মাহমুদের প্রচারণায় গিয়েছিলেন। ঘটনা ১৪ই ডিসেম্বরের। এ দিন সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে অবস্থানের সময় কয়েকটি মোটরসাইকেলে এসে তাদের ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে বিএনপি কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে। একপর্যায়ে গুলি করে। তার দুই চোখে তিনটি স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়। গুলি লাগার পর প্রথমে মনে করেছিলেন বিদ্যুৎ চলে গেছে। পরে বুঝতে পারেন চোখ দিয়ে রক্ত ঝরছে। ঘটনার পর থেকে তিন তিনবার চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে। ঢাকা ও সিরাজগঞ্জের হাসাপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। স্বামী জামাত আলী খেটে খাওয়া মানুষ। তার আয়ে সংসার চলে। গত দেড় মাস ধরে মানুষের সাহায্য নিয়ে তার চিকিৎসা চলছে। সংসারও চলছে টেনেটুনে। মেরী বলেন, গুলিতে আমি অন্ধ হয়ে গেলাম, তারপর আমার বিরুদ্ধে আবার মামলা হয়েছে। কী জন্য আমাকে আসামি করেছে আমি কিছু বুঝতে পারছি না। আমি চোখে দেখি না। তারপরও কোর্টে আসতে হয়েছে। এটি কী যে যন্ত্রণার বলে বুঝাতে পারব না। মেরী যখন কথা বলছিলেন তখন তার পাশে থাকা মেয়ে মারিয়া উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। তার চোখেও যেন রাজ্যের অনিশ্চয়তা। জামাত আলীর চোখেও দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।
মেরী বলেন, আমার ডান চোখে একটি আর বাম চোখে দু’টি গুলি লাগে। আমি অন্ধ হয়েও আদালতে আসা লাগছে। গত তিনদিন ধরে আমি ঢাকায় চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। সেখানে আমি ভর্তি হতে চাইছিলাম। কিন্তু ভর্তি হতে পারিনি। এখন একজন আত্মীয়ের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছি। ডাক্তার বলছে বাংলাদেশে চিকিৎসা করে আমার চোখ ভালো করা যাবে না। এর জন্য বিদেশ যেতে হবে। আমার কাছেতো এতো টাকা নেই। বিদেশে গিয়ে কিভাবে আমি চিকিৎসা করব। চিকিৎসায় কোনো সাহায্য পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে মেরী বলেন, শুনছি তারা কিছুটা সাহায্য করছে। তবে কে বা কারা সাহায্য করছে তার কিছুই বলতে চাননি তিনি। এই ঘটনার পর বিচার চেয়ে মামলা করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না আমি কোনো মামলা করিনি। উল্টো আমার নামে মামলা করা হয়েছে। এর জন্য আজ আদালতে এসেছি। আর আমি কারো নামে মামলা করতে চাই না। কারণ আমরা গরিব মানুষ। মামলা করতে গেলে আবার কোন ঝামেলায় পড়ি।
সরকারের কাছে কোনো আবেদন আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সরকারের কাছে কোনো আবেদন নেই। তবে আমি দেশবাসীর কাছে জানতে চাই, আমার যে দুই চোখ শেষ করে দিলো। এর বিচার কে করবে? আমার চোখ কে ভালো করে দেবে? আমি এই দুই চোখ দিয়া আমার সন্তানদের আবারো দেখতে চাই।
মেরীর স্বামী জামাত আলী মানবজমিনকে বলেন, আমরা হচ্ছি সাধারণ মানুষ। আমার স্ত্রী চোখ হারিয়েছে দেড় মাস হলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর বিচার তো দূরের কথা, উল্টো মামলা হয়েছে তার নামে। আমার একার উপার্জনের উপরই পরিবারের সবকিছু নির্ভর করে। কিভাবে স্ত্রীর চিকিৎসা করব কিছুই বুঝতে পারছি না। মেরীর ছোট মেয়ে মারিয়া আক্তার বলে, ঘটনার পর থেকে মায়ের সঙ্গে হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে আমাকে। আমরা সারাক্ষণ খুব আতঙ্কে থাকি। বাড়ি থেকে বের হলে কেউ আমাগোর সঙ্গে কথা কইতে চায় না। আমি ঠিকমতো স্কুলেও যেতে পারছি না। যারা আমার মায়ের দুই চোখ কেড়ে নিয়েছে আমি তাদের বিচার চাই। আর মা যাতে সুস্থ হতে পারে দেশবাসীর কাছে দোয়া ও সাহায্য চাই।
ঘটনার বিষয়ে গতকাল যোগাযোগ করা হলে সিরাজগঞ্জ সদর থানার ওসি মোহাম্মদ দাউদ বলেন, ওইদিন পুলিশ টহল দেয়ার সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের গাড়ির ওপর হামলা চালায়। এ সময় রাবার বুলেট টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। হামলায় পুলিশের একটি গাড়ির কাঁচও ভাঙচুর করা হয় এবং কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হন। পরে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে তদন্ত চলছে। তবে মেরীর চোখে গুলিবিদ্ধ হলো কিভাবে তা তার জানা নেই বলে জানান ওসি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, সে কিভাবে আহত হয়েছে সেটা বলতে পারব না। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগও করেনি।
স্থানীয়রা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-২ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী রুমানা মাহমুদ ১৪ই ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর শহরে গণসংযোগের জন্য জেলা বিএনপি কার্যালয়ে যান। সেখানে থেকে বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতাকর্মীরা ধানের শীষের প্রার্থীসহ গণসংযোগে বের হওয়ার প্রস্তুতি নেয়ার সময় ১০ থেকে ১২টি মোটরসাইকেলে করে লোকজন এসে কার্যালয়ের সামনে মহড়া দেয়। মাগরিবের নামাজের পর একপর্যায়ে তারা জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দু’টি ককটেল ছুঁড়ে। এ সময় বিএনপি’র কর্মী-সমর্থকরা তাদের ধাওয়া দেয়। পর মুহূর্তে সেখানে পুলিশ আসে এবং বিএনপি’র কর্মী-সমর্থকদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে পুলিশ। একপর্যায়ে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছুড়ে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের মধ্যেই চোখে গুলিবিদ্ধ হন মেরী।
No comments