ইরানে মার্কিন আধিপত্য অবসানে ইসলামি বিপ্লবের ভূমিকা
ইসলামি
বিপ্লব বিজয়ের আগে ইরান ছিল পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে আমেরিকার অনুগত একটি
দেশ। অঢেল প্রাকৃতিক সম্পদ, জনসংখ্যার আধিক্য, ভূ-কৌশলগত অবস্থান ও সামরিক
দিক দিয়ে শক্তিশালী ও সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা কারণে সব দিক থেকেই এ
অঞ্চলের অন্য ছোট ছোট দেশগুলোর তুলনায় ইরান শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। ইসলামি
বিপ্লবের আগে ইরান এ অঞ্চলে আমেরিকার পক্ষ থেকে পুলিশি ভূমিকা পালন করত বা
খরবদারি করত। ইরানকে এ অঞ্চলে আমেরিকার স্তম্ভ বা খুঁটি হিসেবে মনে করা হত।
কিন্তু বিপ্লবের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়।
আন্তর্জাতিক বাজারে হঠাৎ তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এবং সামরিক দিক দিয়ে ইরান শক্তিশালী হয়ে ওঠায় এ অঞ্চলে আমেরিকার কাছে ইরানের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর অযাচিত হস্তক্ষেপ ও তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ইরানের তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী পাশ্চাত্যের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহৃত হত এবং ইরানের মাধ্যমে তারা এ অঞ্চলে সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠা করেছিল। পারস্য উপসাগর অঞ্চল থেকে ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পর আমেরিকা নিক্সন ডক্ট্রিন অনুযায়ী এ অঞ্চলের দেশগুলোকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে থাকে এবং দু'টি লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করে। প্রথমত, তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে পাশ্চাত্যের স্বার্থ রক্ষা করা এবং দ্বিতীয়ত, নিক্সন ডক্ট্রিন অনুযায়ী পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপের পরিবেশ সৃষ্টি করা।
নিক্সন ডক্ট্রিন অনুযায়ী মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার প্রধান দু'টি স্তম্ভ বা শক্তি হচ্ছে ইরান ও সৌদি সরকার এবং এই দুই দেশ আমেরিকার লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এ কারণে আমেরিকা এই দুই দেশকে অর্থ ও সামরিক সহযোগিতা দিয়ে শক্তিশালী করে তাদেরকে পাশ্চাত্যের স্বার্থ রক্ষার কাজে ব্যবহার করত। যাতে এ অঞ্চলে সরাসরি আমেরিকাকে উপস্থিত থাকতে না হয়। নিক্সন বলেছেন, "পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং এ ক্ষেত্রে সৌদি আরব ও ইরান ভূমিকা রাখতে পারে।" নিক্সন পারস্য উসাগরীয় অঞ্চলে তার তিনটি লক্ষ্য বাস্তবায়ন করেন। এ তিনটি হল, এক, এ অঞ্চলের প্রধান দুই শক্তি অর্থাৎ ইরান ও সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযাগিতা গড়ে তোলেন। দুই, পারস্য উপসাগরে আমেরিকার অন্তত তিনটি যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন করা হয়। এবং তিন, মধ্যপ্রাচ্যের ছোট ছোট দেশগুলোর নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ব্রিটেনের ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে আনা হয়।
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রভাব বিস্তারে প্রধান সহযোগি হিসেবে ইরান ছিল এক নম্বরে। এরপর আমেরিকার দৃষ্টিতে সৌদি আরব হচ্ছে প্রধান অর্থের যোগানদাতা। নিক্সন ডক্ট্রিন অনুযায়ী আমেরিকার পক্ষ থেকে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে পুলিশি ভূমিকা তথা মাতব্বরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। নিক্সনের পরিকল্পনাগুলো কেবল সেইসব দেশে বাস্তবায়ন করা হয়েছিল যারা এ অঞ্চলে আমেরিকার স্বার্থ রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে পারত। এ ছাড়া, ভূ-কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গেই আমেরিকা এ সহযোগিতা গড়ে তুলেছিল।
পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে ইরান একমাত্র দেশ যে কিনা এ ধরণের সমস্ত সুযোগ-সুবিধার অধিকারী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শীতল যুদ্ধ চলাকালে মার্কিন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভূ-কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকার কারণে ইরানের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়।
ইরান মধ্যপ্রাচ্যের উত্তরে অবস্থিত হওয়ার কারণে সেখান থেকে আকাশ কিংবা স্থল পথে রাশিয়ায় হামলা চালানো কিংবা দেশটির বিরুদ্ধে গোয়েন্দাবৃত্তি চোলানো আমেরিকার জন্য অনেক সহজ ছিল। ইরানসহ এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের তেল সম্পদও ছিল পাশ্চাত্যের কাছে লোভনীয় বস্তু। এ ছাড়া, ওই অঞ্চলে কমিউনিজমের প্রভাব ঠেকানোর জন্য ইরানের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এসব কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পাশ্চাত্যের কাছে ইরানের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছিল। খ্যাতনামা সামরিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জশওয়া অ্যাপেস্টিন গত ৫০ বছরে ন্যাটো, পেন্টাগণ ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রকাশিত বিভিন্ন দলিল প্রমাণ দেখিয়ে বলেছেন, 'কৌশলগত সামরিক দিক থেকে আমেরিকার কাছে ইরান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।'
১৯৬৬ সালের জুনে ইরানের শাহ দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, "তার দেশের সেনাবাহিনীকে পারস্য উপসাগরে প্রস্তুত রাখতে হবে। কারণ ব্রিটিশরা এডেন বন্দর খালি করে চলে যাওয়ার পর মিশরের আরব জাতীয়তাবাদের নেতা জামাল আব্দুল নাসের তার সেনাবাহিনীকে ইয়েমেন থেকে আরব উপদ্বীপ ও পারস্য উপসাগরের শেখ শাসিত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত করতে চান।"
সে সময় আরব জনগোষ্ঠীর প্রচণ্ড ক্ষোভের বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে আমেরিকা ও ইসরাইল এ অঞ্চলে তাদের স্বার্থ বজায় রাখার জন্য ইরানকে একমাত্র অবলম্বন বলে মনে করত। ১৯৬৩ সালে ইরানে ক্যাপিচুলেশন আইন পাশ হওয়া থেকে বোঝা যায় ইরানও আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল এবং দেশটির কোনো স্বাধীনতা ছিল না। জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিষয়ে শাহ সরকারেরও কোনো চিন্তাভাবনা ছিল না এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য শাহ পুরোপুরি আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল।
এ কারণে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় আরবরা তেল বিক্রি বন্ধ করে দিলেও ইরানের রেজা শাহ ইসরাইলের কাছে তেল বিক্রি করা অব্যাহত রাখেন এবং তেলআবিবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরাইলের কাছে আরবরা পরাজিত হওয়ার পর এবং পাশ্চাত্যের নাগরিকদের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা যাওয়ায় তেহরান পাশ্চাত্যের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে পরিণত হয় এবং ইরানকে ব্যবহার কোরে আমেরিকা এ অঞ্চলে তার স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা চালায়। অন্যদিকে ইরানের শাহ সরকার আমেরিকার প্রতিশ্রুতির ওপর নির্ভর করে নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করে। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সঙ্গে ইরানের শাহ সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং দুই দেশ একে অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠে। আমেরিকা ও ব্রিটেনের কাছ থেক ইরান সেসময় অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ক্রয় করে। আমেরিকা ও ইরান পারস্য উপসাগর থেকে ভারত মহাসগর পর্যন্ত তাদের উপস্থিতি বজায় রাখে।
এদিকে, সামরিক শক্তি, তেল বিক্রি ও পাশ্চাত্যের ওপর নির্ভরশীল ইরানের শাহ সরকার দেশের অভ্যন্তরে জনগণের প্রতিবাদ আন্দোলন ও গণবিদ্রোহ ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়। শাহের দমন-পীড়ন সত্বেও স্বাধীনতা, মুক্তি ও ইসলামি প্রজাতন্ত্রের দাবিতে শুরু হওয়া ইরানের গণআন্দোলন শেষ পর্যন্ত বিজয় লাভ করে। শাহের পতন এবং আমেরিকার কর্তৃত্ব খর্ব করা ছিল ইরানে ইসলামি বিপ্লবের সবচেয়ে বড় সাফল্য। জনগণের শক্তির ওপর ভর করে ইরানের ইসলামি সরকার গত ৩৯ বছর ধরে এখনো টিকে আছে এবং আমেরিকার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। ইরান এ অঞ্চলে আমেরিকার সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে হঠাৎ তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এবং সামরিক দিক দিয়ে ইরান শক্তিশালী হয়ে ওঠায় এ অঞ্চলে আমেরিকার কাছে ইরানের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর অযাচিত হস্তক্ষেপ ও তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ইরানের তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী পাশ্চাত্যের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহৃত হত এবং ইরানের মাধ্যমে তারা এ অঞ্চলে সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠা করেছিল। পারস্য উপসাগর অঞ্চল থেকে ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পর আমেরিকা নিক্সন ডক্ট্রিন অনুযায়ী এ অঞ্চলের দেশগুলোকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে থাকে এবং দু'টি লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করে। প্রথমত, তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে পাশ্চাত্যের স্বার্থ রক্ষা করা এবং দ্বিতীয়ত, নিক্সন ডক্ট্রিন অনুযায়ী পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপের পরিবেশ সৃষ্টি করা।
নিক্সন ডক্ট্রিন অনুযায়ী মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার প্রধান দু'টি স্তম্ভ বা শক্তি হচ্ছে ইরান ও সৌদি সরকার এবং এই দুই দেশ আমেরিকার লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এ কারণে আমেরিকা এই দুই দেশকে অর্থ ও সামরিক সহযোগিতা দিয়ে শক্তিশালী করে তাদেরকে পাশ্চাত্যের স্বার্থ রক্ষার কাজে ব্যবহার করত। যাতে এ অঞ্চলে সরাসরি আমেরিকাকে উপস্থিত থাকতে না হয়। নিক্সন বলেছেন, "পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং এ ক্ষেত্রে সৌদি আরব ও ইরান ভূমিকা রাখতে পারে।" নিক্সন পারস্য উসাগরীয় অঞ্চলে তার তিনটি লক্ষ্য বাস্তবায়ন করেন। এ তিনটি হল, এক, এ অঞ্চলের প্রধান দুই শক্তি অর্থাৎ ইরান ও সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযাগিতা গড়ে তোলেন। দুই, পারস্য উপসাগরে আমেরিকার অন্তত তিনটি যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন করা হয়। এবং তিন, মধ্যপ্রাচ্যের ছোট ছোট দেশগুলোর নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ব্রিটেনের ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে আনা হয়।
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রভাব বিস্তারে প্রধান সহযোগি হিসেবে ইরান ছিল এক নম্বরে। এরপর আমেরিকার দৃষ্টিতে সৌদি আরব হচ্ছে প্রধান অর্থের যোগানদাতা। নিক্সন ডক্ট্রিন অনুযায়ী আমেরিকার পক্ষ থেকে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে পুলিশি ভূমিকা তথা মাতব্বরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। নিক্সনের পরিকল্পনাগুলো কেবল সেইসব দেশে বাস্তবায়ন করা হয়েছিল যারা এ অঞ্চলে আমেরিকার স্বার্থ রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে পারত। এ ছাড়া, ভূ-কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গেই আমেরিকা এ সহযোগিতা গড়ে তুলেছিল।
পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে ইরান একমাত্র দেশ যে কিনা এ ধরণের সমস্ত সুযোগ-সুবিধার অধিকারী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শীতল যুদ্ধ চলাকালে মার্কিন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভূ-কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকার কারণে ইরানের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়।
ইরান মধ্যপ্রাচ্যের উত্তরে অবস্থিত হওয়ার কারণে সেখান থেকে আকাশ কিংবা স্থল পথে রাশিয়ায় হামলা চালানো কিংবা দেশটির বিরুদ্ধে গোয়েন্দাবৃত্তি চোলানো আমেরিকার জন্য অনেক সহজ ছিল। ইরানসহ এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের তেল সম্পদও ছিল পাশ্চাত্যের কাছে লোভনীয় বস্তু। এ ছাড়া, ওই অঞ্চলে কমিউনিজমের প্রভাব ঠেকানোর জন্য ইরানের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এসব কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পাশ্চাত্যের কাছে ইরানের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছিল। খ্যাতনামা সামরিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জশওয়া অ্যাপেস্টিন গত ৫০ বছরে ন্যাটো, পেন্টাগণ ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রকাশিত বিভিন্ন দলিল প্রমাণ দেখিয়ে বলেছেন, 'কৌশলগত সামরিক দিক থেকে আমেরিকার কাছে ইরান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।'
১৯৬৬ সালের জুনে ইরানের শাহ দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, "তার দেশের সেনাবাহিনীকে পারস্য উপসাগরে প্রস্তুত রাখতে হবে। কারণ ব্রিটিশরা এডেন বন্দর খালি করে চলে যাওয়ার পর মিশরের আরব জাতীয়তাবাদের নেতা জামাল আব্দুল নাসের তার সেনাবাহিনীকে ইয়েমেন থেকে আরব উপদ্বীপ ও পারস্য উপসাগরের শেখ শাসিত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত করতে চান।"
সে সময় আরব জনগোষ্ঠীর প্রচণ্ড ক্ষোভের বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে আমেরিকা ও ইসরাইল এ অঞ্চলে তাদের স্বার্থ বজায় রাখার জন্য ইরানকে একমাত্র অবলম্বন বলে মনে করত। ১৯৬৩ সালে ইরানে ক্যাপিচুলেশন আইন পাশ হওয়া থেকে বোঝা যায় ইরানও আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল এবং দেশটির কোনো স্বাধীনতা ছিল না। জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিষয়ে শাহ সরকারেরও কোনো চিন্তাভাবনা ছিল না এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য শাহ পুরোপুরি আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল।
এ কারণে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় আরবরা তেল বিক্রি বন্ধ করে দিলেও ইরানের রেজা শাহ ইসরাইলের কাছে তেল বিক্রি করা অব্যাহত রাখেন এবং তেলআবিবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরাইলের কাছে আরবরা পরাজিত হওয়ার পর এবং পাশ্চাত্যের নাগরিকদের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা যাওয়ায় তেহরান পাশ্চাত্যের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে পরিণত হয় এবং ইরানকে ব্যবহার কোরে আমেরিকা এ অঞ্চলে তার স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা চালায়। অন্যদিকে ইরানের শাহ সরকার আমেরিকার প্রতিশ্রুতির ওপর নির্ভর করে নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করে। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সঙ্গে ইরানের শাহ সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং দুই দেশ একে অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠে। আমেরিকা ও ব্রিটেনের কাছ থেক ইরান সেসময় অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ক্রয় করে। আমেরিকা ও ইরান পারস্য উপসাগর থেকে ভারত মহাসগর পর্যন্ত তাদের উপস্থিতি বজায় রাখে।
এদিকে, সামরিক শক্তি, তেল বিক্রি ও পাশ্চাত্যের ওপর নির্ভরশীল ইরানের শাহ সরকার দেশের অভ্যন্তরে জনগণের প্রতিবাদ আন্দোলন ও গণবিদ্রোহ ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়। শাহের দমন-পীড়ন সত্বেও স্বাধীনতা, মুক্তি ও ইসলামি প্রজাতন্ত্রের দাবিতে শুরু হওয়া ইরানের গণআন্দোলন শেষ পর্যন্ত বিজয় লাভ করে। শাহের পতন এবং আমেরিকার কর্তৃত্ব খর্ব করা ছিল ইরানে ইসলামি বিপ্লবের সবচেয়ে বড় সাফল্য। জনগণের শক্তির ওপর ভর করে ইরানের ইসলামি সরকার গত ৩৯ বছর ধরে এখনো টিকে আছে এবং আমেরিকার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। ইরান এ অঞ্চলে আমেরিকার সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে।
No comments