প্রাণের উচ্ছ্বাস
সাম্প্রদায়িকতা,
জঙ্গিবাদ নির্মূল করে অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ গড়ার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে
শনিবার জাতি বরণ করে নিয়েছে ১৪২৫ বঙ্গাব্দকে। বর্ণিল আয়োজনে দেশজুড়ে পালিত
হয়েছে নানা কর্মসূচি। নববর্ষকে বরণ করতে সরকারি- বেসরকারি সংস্থা, সামাজিক
ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রাজধানীসহ সারা দেশে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
নৃত্যগীতে বৈশাখ বন্দনার পাশাপাশি ছিল বৈশাখী মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রাজধানীতে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে আগে থেকেই নিরাপত্তা কড়াকড়ির কারণে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে জনসমাগম ছিল তুলনামূলক কম। বাড়তি নিরাপত্তায় কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। রাজধানীতে সকাল থেকে বিভিন্ন বয়সী মানুষের বর্ষবরণ উদযাপনে উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছিল ঢাকা। বিকালে বৈশাখের ঝড়-বৃষ্টিতে কিছুটা ছন্দপতন হয়েছিল উৎসবে।
রাজধানীতে শনিবার বিকালে আকাশ কালো করে শুরু হয় ঝড়, বৃষ্টি। এতে নগরে বৈশাখের উন্মুক্ত আয়োজন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও উৎসবের রেশ ছিল সন্ধ্যাজুড়ে। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই উৎসবমুখর মানুষ ব্যস্ত ছিলেন বর্ষবরণে। নিরাপত্তা ইস্যুতে বর্ষবরণের উন্মুক্ত আয়োজনের সময় সংকোচনে কিছুটা হতাশ ছিলেন আয়োজক ও সাধারণ মানুষ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উন্মুক্ত আয়োজন শেষ হলেও রাত অবধি নগরের বৃষ্টি ভেজা পথে ছিল উৎসবমুখর মানুষের ঢল। চির নতুনের ডাক দিয়ে আসা পহেলা বৈশাখের বৈচিত্র্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের রঙিন সাজে।
ছায়ানটের বর্ষবরণ: শনিবার কাকডাকা ভোর থেকে নগরবাসীকে ছুটতে দেখা গেছে রমনার উদ্দেশে। সেখানকার বটমূলে উৎসব শুরুর আগে থেকেই মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। একসময় লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় রমনা ও তার আশপাশ এলাকা। রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ উপলক্ষে রমনা ও তার আশপাশ এলাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ষাটের দশকে গড়ে ওঠা সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের উদ্যোগে ১৯৬৭ সালে রমনার বটমূলে শুরু হয় প্রথম বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। ১৪২৫ বঙ্গাব্দকে সংগীতায়ন ছায়ানট বরণ করেছে বিশ্বায়নের বাস্তবতায় বাঙালির আত্মপরিচয়ের তালাশ নেয়ার আহ্বানে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মর্তুজা কবিরের বাঁশিতে রাগ আহীর ভাঁয়রো পরিবেশনার মধ্যদিয়ে রমনা বটমূলে শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজন। এসময় একক ও সম্মেলক কণ্ঠে সংগীত পরিবেশনা আর কবিতার পংক্তিমালার মাধ্যমে ছায়ানটের শিল্পীরা নতুন বছরকে স্বাগত জানান। প্রভাতী আয়োজনে ছায়ানট সভাপতি সনজীদা খাতুন বলেন, যে মাটি আমাদের পায়ের তলায় আশ্রয়, জন্মের শুভক্ষণে সেই মাটিতেই ভূমিষ্ঠ হয়েছি আমরা। জন্মসূত্রে এ মাটি আমাদের একান্ত আপন। সে মাটির বুকে শিকড়ের মতো পা ডুবিয়ে মাটি-মাতাকে জানবো আমরা। এমন স্বভাবসম্মত প্রক্রিয়ায় বেড়ে উঠে আত্মপরিচয়ে প্রত্যয়ী, আর প্রতিষ্ঠিত হবো আমরা বাংলাভূমির সর্বজন।
তিনি বলেন, বিশ্বায়ন আজ আমাদের কাছে বাস্তব সত্য। এ শব্দ নিন্দা অর্থে উচ্চারণ করছি না। বিশ্বের সংগীতে-সাহিত্যে, শিল্পকলায়-দর্শনে-বিজ্ঞানে যে মহান অর্জন তার স্বাদ নেব আমরা। আত্মস্থ করতে হবে সকল মানবিক অন্তর সম্পদ। সেই সত্য সুন্দর সমৃদ্ধ করবে আমাদের। প্রভাতী আয়োজন শুরুর পর একক সংগীত পর্ব শুরু হয়। গানের ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকে ছায়ানটের শিশু ও বড়দের দলের সম্মেলক গানের পরিবেশনা। সম্মেলক গান পর্বে ছায়ানটের ‘বড়দের দল’ পরিবেশন করে ‘পূর্ব গগনভাগে দীপ্ত হইল সুপ্রভাত’, ‘ওই পোহাইল তিমিররাতি’, ‘শুভ সমুজ্জ্বল হে চির নির্মল’, ‘প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে’, ‘হিমালয় থেকে সুন্দরবন’, ‘ও আমার দরদী আগে জানলে’ গানগুলো। এছাড়া ‘ছোটদের দল’ পরিবেশন করে ‘প্রভাত বীণা তব বাজে’, ‘আজি নূতন রতনে’, ‘মেঘবিহীন খর বৈশাখে’, ‘এলো এলো রে বৈশাখী ঝড়’, ‘বাঁধন ছেঁড়ার সাধন হবে’ গানগুলো। পরে আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ পরিবেশন করেন হুমায়ূন আজাদের ‘শুভেচ্ছা’ কবিতাটি। প্রভাতী আয়োজনের একেবারে শেষ অংশে ছোট ও বড়দের দল যৌথভাবে পরিবেশন করে ‘ওরে আইল বৈশাখ নয়া সাজে’ গানটি।
চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা: লালনের দর্শনে ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’- এই প্রতিপাদ্যে ১৪২৫ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ শনিবার বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে। মনের আঁধার কাটিয়ে মানব বন্দনায় সোনার মানুষ হয়ে ওঠার আহ্বান এলো এবারের বর্ষবরণ উৎসবের মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে। বাঙালির বর্ষবরণের এই মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন ইউনেস্কোর ‘ইনটেনজিবল হেরিটেজ’-এর অংশ। শনিবার বৈশাখী সাজে সব বয়সের, সব শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভাযাত্রার সামনে-পেছনে ঢাকের বাদ্যের তালে তালে চলে নৃত্য, হাতে হাতে ছিল বড় আকারের বাহারি মুখোশ, শোলার পাখি আর টেপা পুতুল। এবারের শোভাযাত্রার অগ্রভাগে ছিল ‘সূর্য’, যার চারদিকে ছিল সাতটি ফুল। চারুকলার শিক্ষার্থীরা জানান, মানুষকে আলোকিত করার প্রত্যয়ে এবার এই প্রতীক।
শনিবার বৈশাখের প্রথম সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল (সাবেক রূপসী বাংলা) চত্বর ঘুরে টিএসসি হয়ে আবার চারুকলার সামনে এসে বর্ণিল এই শোভাযাত্রা শেষ হয়। শোভাযাত্রার পুরোভাগে ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান, প্রক্টর গোলাম রাব্বানী ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য সুন্দর একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলা, যেখানে খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসাসহ মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো পূরণ হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এই নতুন বছরে আমাদের কামনা আমরা সোনার মানুষ হয়ে সোনার বাংলা বিনির্মাণে এগিয়ে যাবো। শনিবার পহেলা বৈশাখের সকাল থেকেই চারুকলা-টিএসসিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশ এলাকায় বিভিন্ন বয়সী মানুষের জনসমাগম বাড়তে থাকে। অল্প সময়ের মধ্যেই রাজপথ পরিণত হয় বৈশাখের লাল-সাদা জনস্রোতে। অগণিত মানুষ অংশ নেন মঙ্গল শোভাযাত্রায়। এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রায় ছিল নিরাপত্তার কড়াকড়ি। পুলিশ, র?্যাব, এপিবিএন ও সোয়াটের সদস্যরা শোভাযাত্রার সামনে-পেছনে নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসির সদস্যরাও ছিলেন নিরাপত্তাকাজে। আর মাথার ওপর আকাশে টহল দেয় র্যাবের হেলিকপ্টার।
এদিকে বাংলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)-এর যৌথ উদ্যোগে শনিবার পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু হয়েছে বৈশাখী মেলা। যা চলবে ১০ দিনব্যাপী। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু শনিবার বিকালে এই মেলা উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। এর আগে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সকালে বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র চত্বরে বর্ষবরণ, একক বক্তৃতা ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। জোটের অনুষ্ঠানে দলীয় সংগীত পরিবেশন করে বহ্নিশিখা, স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র। রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করেন মহাদেব ঘোষ।
এছাড়া আরিফ রহমান শোনান শাহ আবদুল করিমের গান। পাশাপাশি মরমী সাধক হাছন রাজার গান, ধামাইল গান, লোকগীতি, লালনগীতি, বাউল সংগীত, ভাওয়াইয়া গান পরিবেশন করা হয়। এছাড়া আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশন করা হয় অনুষ্ঠানে। বর্ষবরণ উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন লালমাটিয়ার বেঙ্গল বইয়ে আয়োজন করেছিল গানের আসর ‘পরান ভরি দাও’। শনিবার ছিল এই আয়োজনের তৃতীয় দিন। এখানে চার দিনের উৎসবের শেষ দিনে গতকাল সন্ধ্যায় ছিল লোকগানের অনুষ্ঠান। এদিকে নববর্ষ উপলক্ষে শনিবার দিনভর রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। শেষ বিকেল থেকে রাজধানীর অনেকেই ভিড় করেন দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলে। সেখানে ছিল মানুষের উপচে পড়া ঢল।
নৃত্যগীতে বৈশাখ বন্দনার পাশাপাশি ছিল বৈশাখী মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রাজধানীতে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে আগে থেকেই নিরাপত্তা কড়াকড়ির কারণে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে জনসমাগম ছিল তুলনামূলক কম। বাড়তি নিরাপত্তায় কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। রাজধানীতে সকাল থেকে বিভিন্ন বয়সী মানুষের বর্ষবরণ উদযাপনে উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছিল ঢাকা। বিকালে বৈশাখের ঝড়-বৃষ্টিতে কিছুটা ছন্দপতন হয়েছিল উৎসবে।
রাজধানীতে শনিবার বিকালে আকাশ কালো করে শুরু হয় ঝড়, বৃষ্টি। এতে নগরে বৈশাখের উন্মুক্ত আয়োজন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও উৎসবের রেশ ছিল সন্ধ্যাজুড়ে। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই উৎসবমুখর মানুষ ব্যস্ত ছিলেন বর্ষবরণে। নিরাপত্তা ইস্যুতে বর্ষবরণের উন্মুক্ত আয়োজনের সময় সংকোচনে কিছুটা হতাশ ছিলেন আয়োজক ও সাধারণ মানুষ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উন্মুক্ত আয়োজন শেষ হলেও রাত অবধি নগরের বৃষ্টি ভেজা পথে ছিল উৎসবমুখর মানুষের ঢল। চির নতুনের ডাক দিয়ে আসা পহেলা বৈশাখের বৈচিত্র্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের রঙিন সাজে।
ছায়ানটের বর্ষবরণ: শনিবার কাকডাকা ভোর থেকে নগরবাসীকে ছুটতে দেখা গেছে রমনার উদ্দেশে। সেখানকার বটমূলে উৎসব শুরুর আগে থেকেই মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। একসময় লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় রমনা ও তার আশপাশ এলাকা। রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ উপলক্ষে রমনা ও তার আশপাশ এলাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ষাটের দশকে গড়ে ওঠা সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের উদ্যোগে ১৯৬৭ সালে রমনার বটমূলে শুরু হয় প্রথম বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। ১৪২৫ বঙ্গাব্দকে সংগীতায়ন ছায়ানট বরণ করেছে বিশ্বায়নের বাস্তবতায় বাঙালির আত্মপরিচয়ের তালাশ নেয়ার আহ্বানে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মর্তুজা কবিরের বাঁশিতে রাগ আহীর ভাঁয়রো পরিবেশনার মধ্যদিয়ে রমনা বটমূলে শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজন। এসময় একক ও সম্মেলক কণ্ঠে সংগীত পরিবেশনা আর কবিতার পংক্তিমালার মাধ্যমে ছায়ানটের শিল্পীরা নতুন বছরকে স্বাগত জানান। প্রভাতী আয়োজনে ছায়ানট সভাপতি সনজীদা খাতুন বলেন, যে মাটি আমাদের পায়ের তলায় আশ্রয়, জন্মের শুভক্ষণে সেই মাটিতেই ভূমিষ্ঠ হয়েছি আমরা। জন্মসূত্রে এ মাটি আমাদের একান্ত আপন। সে মাটির বুকে শিকড়ের মতো পা ডুবিয়ে মাটি-মাতাকে জানবো আমরা। এমন স্বভাবসম্মত প্রক্রিয়ায় বেড়ে উঠে আত্মপরিচয়ে প্রত্যয়ী, আর প্রতিষ্ঠিত হবো আমরা বাংলাভূমির সর্বজন।
তিনি বলেন, বিশ্বায়ন আজ আমাদের কাছে বাস্তব সত্য। এ শব্দ নিন্দা অর্থে উচ্চারণ করছি না। বিশ্বের সংগীতে-সাহিত্যে, শিল্পকলায়-দর্শনে-বিজ্ঞানে যে মহান অর্জন তার স্বাদ নেব আমরা। আত্মস্থ করতে হবে সকল মানবিক অন্তর সম্পদ। সেই সত্য সুন্দর সমৃদ্ধ করবে আমাদের। প্রভাতী আয়োজন শুরুর পর একক সংগীত পর্ব শুরু হয়। গানের ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকে ছায়ানটের শিশু ও বড়দের দলের সম্মেলক গানের পরিবেশনা। সম্মেলক গান পর্বে ছায়ানটের ‘বড়দের দল’ পরিবেশন করে ‘পূর্ব গগনভাগে দীপ্ত হইল সুপ্রভাত’, ‘ওই পোহাইল তিমিররাতি’, ‘শুভ সমুজ্জ্বল হে চির নির্মল’, ‘প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে’, ‘হিমালয় থেকে সুন্দরবন’, ‘ও আমার দরদী আগে জানলে’ গানগুলো। এছাড়া ‘ছোটদের দল’ পরিবেশন করে ‘প্রভাত বীণা তব বাজে’, ‘আজি নূতন রতনে’, ‘মেঘবিহীন খর বৈশাখে’, ‘এলো এলো রে বৈশাখী ঝড়’, ‘বাঁধন ছেঁড়ার সাধন হবে’ গানগুলো। পরে আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ পরিবেশন করেন হুমায়ূন আজাদের ‘শুভেচ্ছা’ কবিতাটি। প্রভাতী আয়োজনের একেবারে শেষ অংশে ছোট ও বড়দের দল যৌথভাবে পরিবেশন করে ‘ওরে আইল বৈশাখ নয়া সাজে’ গানটি।
চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা: লালনের দর্শনে ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’- এই প্রতিপাদ্যে ১৪২৫ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ শনিবার বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে। মনের আঁধার কাটিয়ে মানব বন্দনায় সোনার মানুষ হয়ে ওঠার আহ্বান এলো এবারের বর্ষবরণ উৎসবের মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে। বাঙালির বর্ষবরণের এই মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন ইউনেস্কোর ‘ইনটেনজিবল হেরিটেজ’-এর অংশ। শনিবার বৈশাখী সাজে সব বয়সের, সব শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভাযাত্রার সামনে-পেছনে ঢাকের বাদ্যের তালে তালে চলে নৃত্য, হাতে হাতে ছিল বড় আকারের বাহারি মুখোশ, শোলার পাখি আর টেপা পুতুল। এবারের শোভাযাত্রার অগ্রভাগে ছিল ‘সূর্য’, যার চারদিকে ছিল সাতটি ফুল। চারুকলার শিক্ষার্থীরা জানান, মানুষকে আলোকিত করার প্রত্যয়ে এবার এই প্রতীক।
শনিবার বৈশাখের প্রথম সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল (সাবেক রূপসী বাংলা) চত্বর ঘুরে টিএসসি হয়ে আবার চারুকলার সামনে এসে বর্ণিল এই শোভাযাত্রা শেষ হয়। শোভাযাত্রার পুরোভাগে ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান, প্রক্টর গোলাম রাব্বানী ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য সুন্দর একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলা, যেখানে খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসাসহ মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো পূরণ হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এই নতুন বছরে আমাদের কামনা আমরা সোনার মানুষ হয়ে সোনার বাংলা বিনির্মাণে এগিয়ে যাবো। শনিবার পহেলা বৈশাখের সকাল থেকেই চারুকলা-টিএসসিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশ এলাকায় বিভিন্ন বয়সী মানুষের জনসমাগম বাড়তে থাকে। অল্প সময়ের মধ্যেই রাজপথ পরিণত হয় বৈশাখের লাল-সাদা জনস্রোতে। অগণিত মানুষ অংশ নেন মঙ্গল শোভাযাত্রায়। এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রায় ছিল নিরাপত্তার কড়াকড়ি। পুলিশ, র?্যাব, এপিবিএন ও সোয়াটের সদস্যরা শোভাযাত্রার সামনে-পেছনে নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসির সদস্যরাও ছিলেন নিরাপত্তাকাজে। আর মাথার ওপর আকাশে টহল দেয় র্যাবের হেলিকপ্টার।
এদিকে বাংলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)-এর যৌথ উদ্যোগে শনিবার পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু হয়েছে বৈশাখী মেলা। যা চলবে ১০ দিনব্যাপী। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু শনিবার বিকালে এই মেলা উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। এর আগে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সকালে বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র চত্বরে বর্ষবরণ, একক বক্তৃতা ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। জোটের অনুষ্ঠানে দলীয় সংগীত পরিবেশন করে বহ্নিশিখা, স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র। রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করেন মহাদেব ঘোষ।
এছাড়া আরিফ রহমান শোনান শাহ আবদুল করিমের গান। পাশাপাশি মরমী সাধক হাছন রাজার গান, ধামাইল গান, লোকগীতি, লালনগীতি, বাউল সংগীত, ভাওয়াইয়া গান পরিবেশন করা হয়। এছাড়া আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশন করা হয় অনুষ্ঠানে। বর্ষবরণ উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন লালমাটিয়ার বেঙ্গল বইয়ে আয়োজন করেছিল গানের আসর ‘পরান ভরি দাও’। শনিবার ছিল এই আয়োজনের তৃতীয় দিন। এখানে চার দিনের উৎসবের শেষ দিনে গতকাল সন্ধ্যায় ছিল লোকগানের অনুষ্ঠান। এদিকে নববর্ষ উপলক্ষে শনিবার দিনভর রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। শেষ বিকেল থেকে রাজধানীর অনেকেই ভিড় করেন দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলে। সেখানে ছিল মানুষের উপচে পড়া ঢল।
No comments