যোগাযোগমন্ত্রীর এলাকার রাস্তায় চলা দায় -কোম্পানীগঞ্জের অর্ধেক সড়কই খারাপ
‘সড়ক নয়, যেন মরণফাঁদ। কার্পেটিং উঠে গিয়ে
ভাঙাচোরা, ছোট-বড় গর্তের এই সড়কে হাঁটাও দায়। আট-নয় বছর ধরে এ হাল। এ
সময় সরকারের পরিবর্তন হলেও এ সড়কের উন্নয়ন হলো না।’ নিজ বাড়ির সামনে দিয়ে
যাওয়া চরকাঁকড়া-বামনী বাইপাস সড়ক দেখিয়ে এমন আক্ষেপ করলেন আবুল কালাম।
আবুল কালাম নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। সড়ক নিয়ে এমন আক্ষেপ এই উপজেলার অনেক বাসিন্দার। সরকারি হিসাবে এই উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ৫০% সড়কই খারাপ। স্থানীয় লোকজন জানান, এসব সড়কে চলাচল করা কষ্টকর।
কোম্পানীগঞ্জ ও পাশের কবিরহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের নোয়াখালী-৫ আসনের সাংসদ হলেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তাঁর বাড়ি কোম্পানীগঞ্জে। কবিরহাটের সড়কগুলোর অবস্থা তুলনামূলক ভালো। এ দুই উপজেলায় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) বেশির ভাগ সড়কের অবস্থাও ভালো। এলজিইডি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন।
গত রোববার দিনভর এ দুই উপজেলায় গিয়ে কোম্পানীগঞ্জের অন্তত ১৫টি সড়কের দুরবস্থা দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চাপরাশির হাট-নতুন বাজার, সাহজির হাট সড়ক, চাপরাশির হাট-চর এলাহী সড়ক, বাংলাবাজার-মুছাপুর সড়ক, চাপরাশির হাট-বসুরহাট সড়ক, বসুরহাট-চৌধুরীর হাট সড়ক, বাংলাবাজার-রংমালা বাজার সড়ক, চরকালি-বদুমিয়া সড়ক, পেশকার হাট-ভূমিহীন বাজার সড়ক, সিরাজপুর-হাসপাতাল সড়ক ও হানিফ পাটোয়ারী সড়ক। এসব সড়কের বেশির ভাগ অংশেই খানাখন্দ ও ছোট-বড় গর্ত। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সড়কগুলো যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কোম্পানীগঞ্জের প্রধান কয়েকটি সড়ক ছাড়া বেশির ভাগ গ্রামীণ সড়কই বেহাল।
বসুরহাট-চাপরাশির হাট সড়কে চলাচলকারী অটোরিকশাচালক কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়কটি প্রায় দুই বছর আগে মেরামত করা হয়েছিল। কিন্তু নিম্নমানের কাজ হওয়ায় একতা বাজার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তের কারণে যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করতে ইচ্ছে হয় না।’
চর ফকিরার বাসিন্দা ফজলুল হক বলেন, তাঁদের বাড়ির সামনের চাপরাশির হাট-চর এলাহী সড়কে সাত-আট বছর ধরে কোনো সংস্কার নেই। ফলে সড়কের বেশির ভাগ অংশেরই কার্পেটিং উঠে গেছে। বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পুরো সড়কটিই চলাচলের অনুপযোগী।
চর কাঁকড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সমর্থক মো. হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ইউনিয়নের পেশকার হাট-ভূমিহীন বাজার সড়কসহ বেশির ভাগ সড়কের অবস্থাই অত্যন্ত নাজুক। এ নিয়ে প্রায়ই এলাকার লোকজনের কথা শুনতে হয়। বিষয়টি মন্ত্রীকেও অবহিত করেছেন। এখন পর্যন্ত আশ্বাস ছাড়া কিছুই পাননি।
বেহাল সড়ক দেখা গেছে চাপরাশির হাট পূর্ব ও পশ্চিম বাজারজুড়ে। একটু বৃষ্টি হলেই সড়কের গর্তে জমা পানি আর ময়লা-আবর্জনা একাকার হয়ে যায়। ওই সড়কে চলাচলকারীদের পড়তে হয় সীমাহীন ভোগান্তিতে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত খান প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন এলাকায় গেলে লোকজন তাঁদের ধরেন রাস্তাঘাট পাকা করার জন্য। এ নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের সব সময় কথা হয়। কিন্তু বেশির ভাগ রাস্তাই এলজিইডির অধীন হওয়ায় কাজ কিছুটা ধীর গতিতে হচ্ছে।
উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানীগঞ্জে এলজিইডির অধীন ৭৭টি সড়ক রয়েছে। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ২২৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ সড়কই খারাপ। উপজেলা প্রকৌশলী ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘গ্রামীণ সড়কগুলো মেরামতে তেমন অর্থ বরাদ্দ থাকে না। এর দরুন ওই সড়কগুলো ইচ্ছে থাকলেও মেরামত করা সম্ভব হয় না। প্রতিবছর যে পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোই মেরামতের চেষ্টা করা হয়।’
সওজের অধীন বসুরহাট-বাংলাবাজার সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিংয়ে ফাটল দেখা গেছে। সওজের নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হেনা মো. তারেক ইকবাল প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলায় সওজের প্রায় ৭০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এগুলোর সবটাই ভালো।
জানতে চাইলে স্থানীয় সাংসদ ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর নির্বাচনী এলাকায় সওজের সব সড়কই ভালো। এলজিইডির যেসব রাস্তা খারাপ সেগুলোর জন্য ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ হয়ে গেছে। বর্ষার পর এগুলোর কাজ শুরু হবে।
No comments