চারদিক-ওদের পাশে দাঁড়াই by মোছাব্বের হোসেন
ওরা কেমন আছে? আমি সেই শিশুদের কথা বলছি, যারা গত মা দিবসটি অন্য রকমভাবে কাটিয়েছিল।ওদের জন্য সাহায্য দরকার। দরকার ওদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। ওদের কথাই বলি। মা দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য প্রত্যেকেই নিজেদের মায়ের আমন্ত্রণপত্র নিজেরাই নকশা করেছে।
দুকথা লিখেছে মায়েদের কাছে। মা কি আর সন্তানের আমন্ত্রণ গ্রহণ না করে পারে! মা দিবসে তারা গান করেছে; তাও মায়েদের নিয়ে। সেদিন সন্তানদের এমন মমতা, ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন এই মায়েরা। তার পরও এই শিশুদের জন্যই গোপনে চোখের জল ফেলতে হয় তাঁদের।
যাদের কথা বলা হচ্ছে, তারা আসলে অন্য সাধারণ শিশুদের মতো নয়। এরা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু এবং চিকিৎসাশাস্ত্রের ভাষায় ওরা কেউ অটিস্টিক এবং কেউ বা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। একদিন এই শিশুদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাব বলে স্থির করলাম। ঢাকার মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে এই শিশুদের জন্য খোলা হয়েছে একটি স্কুল। নাম ‘এনজেলস কেয়ার ফাউন্ডেশন’। সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠতেই শিশুদের পড়ার গুনগুন শব্দ কানে এল। বিভিন্ন বয়সের শিশুরা এখানে শিখছে। শিক্ষকেরা তাদের সর্বক্ষণ এটা-ওটা শেখাচ্ছেন। এই শিশুদের বশে এনে পড়ানোর জন্য এখানে রয়েছেন বেশ কয়েকজন দক্ষ শিক্ষক। দুষ্টুমি করলে আদর দিয়ে শাসন করছেন।
এনজেলস কেয়ার ফাউন্ডেশন গড়ে ওঠার পেছনে রয়েছে একটি সুন্দর গল্প। আমরা সেই গল্পই শুনব এর অধ্যক্ষ ফারজানা ফারুকের কাছে। ফারজানা ফারুক ও মুশফেকুর রহমানের একমাত্র সন্তান নাজিবাহ সুহরাত মেহরীন। সন্তান জন্মের আনন্দ কাটিয়ে উঠতে না-উঠতে মাত্র চার মাস বয়সে তারা জানতে পারেন, তাঁদের সন্তান এক ধরনের জন্মত্রুটি ‘ডাউন সিনড্রোম’-এ আক্রান্ত। ভেঙে পড়লেন না তাঁরা। তাঁদের সন্তানের বয়স যখন চার বছর, তখন মুশফেকুর রহমান উচ্চশিক্ষার জন্য জাপানে যান। সঙ্গী হলেন ফারজানা ও তাঁদের আদরের শিশুকন্যা। ‘জাপানে গিয়ে দেখলাম, সেখানে অটিস্টিক বা বিশেষ শিশুদের নানা কায়দা-কসরতের মাধ্যমে অনেকটা স্বাভাবিক করে আনার ব্যবস্থা রয়েছে। এসব দেখে মনের মধ্যে একটা সাহস পেলাম।’ বলেন ফারজানা। তিনি আরও বলেন, ‘আমার শিশুর মতো আমাদের দেশে আরও এমন অনেক বাচ্চা আছে, যারা কেউ অটিস্টিক, কেউ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। তাদের যদি সঠিক যত্ন নিয়ে পড়ানো যায় এবং সঠিক সেবা দেওয়া যায়, তাহলে তারা উপকৃত হবে। অনেকটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে।’
দেশে ফেরার পর স্বামী-স্ত্রী মিলে একটা পরিকল্পনা তৈরি করে ফেললেন। আরও কয়েকজন অটিস্টিক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুর খোঁজ করে তাদের মা-বাবাকে বোঝালেন এই স্কুলে তাদের পাঠানোর জন্য। ২০১০ সালের শুরুর কথা। মাত্র চারজন শিশুকে নিয়ে যাত্রা শুরু করল এনজেলস কেয়ার ফাউন্ডেশন। নিজের সন্তানকে এই স্কুলে দিয়ে অন্য অটিস্টিক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুদের এখানে পাঠানোর জন্য তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন ফারজানা। তাতে কাজ হলো কিছুটা। ফারজানা বলেন, ‘শুরু থেকে স্কুলের সব ধরনের খরচ আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলেই চালাচ্ছি।’ মুশফেকুর রহমান বলেন, ‘আমার সকালটা শুরু হয় এই স্কুলে। প্রথমে স্কুলে আসি, সব ঠিকঠাক মতো চলছে কি না, তা দেখি। তারপর অফিসে যাই।’ বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। ফারজানা ফারুক বলেন, ‘আমার সন্তানের মতো এখানকার সব শিশুকেই আমি নিজের সন্তান মনে করি। কারণ, আমিও তো একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুর মা।’ তিন বছর বয়স থেকে অটিস্টিক এবং অন্যান্য বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী—এমন শিশুদের এখানে ভর্তি করানো হয়। অটিজমের ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতার মাত্রা যাচাই করে তাদের বিভিন্ন শাখায় উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া হয়। যারা একটু উন্নতি করে, তাদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে শিশুদের বিনোদনের জন্য এই স্কুলে নাচ-গানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড রয়েছে। এই স্কুলে বর্তমানে মোট ৩০ জন শিশু রয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই অল্প বেতন বা বিনা বেতনে পড়ছে। ‘সময় কেটে যাচ্ছে। এখানে শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু তেমন কোনো বড় অনুদান আমরা পাইনি। এ ধরনের শিশুদের আরও উন্নত সেবা দিতে গেলে এখানে আরও অনেক আধুনিক যন্ত্র ও দক্ষ জনবলের প্রয়োজন। কিন্তু সে অনুপাতে অর্থের জোগান নেই।’ বলেন ফারজানা ফারুক। তিনি আরও বলেন, এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা বিভিন্ন কল্যাণমূলক সংগঠনে দান করেন। তাঁরা এখানে দান করতে পারেন। আবার যে শুধু অর্থই দান করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই, এই শিশুদের জন্য কেউ শিক্ষার উপকরণ, কয়েকটি হুইল চেয়ার বা ভ্যানগাড়িও দিতে পারেন। আবার কেউ খেলার জন্য একটা মাঠ, প্রগ্রামের জন্য মিলনায়তন ব্যবহার করার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। এভাবে নানা সহায়তা করতে পারেন এই প্রতিষ্ঠানটির জন্য। একদিন এ ধরনের শিশুদের স্থায়ী নিবাস হবে এনজেলস কেয়ার ফাউন্ডেশন, তাদের অন্যের বোঝা হতে হবে না—এমনটাই স্বপ্ন দেখেন ফারজানা ফারুক ও মুশফেকুর রহমান এবং সে লক্ষ্যে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। চাইলে আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন এই স্কুলের সাহায্যের জন্য।
এনজেলস কেয়ার ফাউন্ডেশন,
১৬/১০,ব্লক-সি, তাজমহল রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। ফোন: ০১৭১৩৩৬৫৩০২,
www.angelscarebd.org।
মোছাব্বের হোসেন
যাদের কথা বলা হচ্ছে, তারা আসলে অন্য সাধারণ শিশুদের মতো নয়। এরা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু এবং চিকিৎসাশাস্ত্রের ভাষায় ওরা কেউ অটিস্টিক এবং কেউ বা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। একদিন এই শিশুদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাব বলে স্থির করলাম। ঢাকার মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে এই শিশুদের জন্য খোলা হয়েছে একটি স্কুল। নাম ‘এনজেলস কেয়ার ফাউন্ডেশন’। সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠতেই শিশুদের পড়ার গুনগুন শব্দ কানে এল। বিভিন্ন বয়সের শিশুরা এখানে শিখছে। শিক্ষকেরা তাদের সর্বক্ষণ এটা-ওটা শেখাচ্ছেন। এই শিশুদের বশে এনে পড়ানোর জন্য এখানে রয়েছেন বেশ কয়েকজন দক্ষ শিক্ষক। দুষ্টুমি করলে আদর দিয়ে শাসন করছেন।
এনজেলস কেয়ার ফাউন্ডেশন গড়ে ওঠার পেছনে রয়েছে একটি সুন্দর গল্প। আমরা সেই গল্পই শুনব এর অধ্যক্ষ ফারজানা ফারুকের কাছে। ফারজানা ফারুক ও মুশফেকুর রহমানের একমাত্র সন্তান নাজিবাহ সুহরাত মেহরীন। সন্তান জন্মের আনন্দ কাটিয়ে উঠতে না-উঠতে মাত্র চার মাস বয়সে তারা জানতে পারেন, তাঁদের সন্তান এক ধরনের জন্মত্রুটি ‘ডাউন সিনড্রোম’-এ আক্রান্ত। ভেঙে পড়লেন না তাঁরা। তাঁদের সন্তানের বয়স যখন চার বছর, তখন মুশফেকুর রহমান উচ্চশিক্ষার জন্য জাপানে যান। সঙ্গী হলেন ফারজানা ও তাঁদের আদরের শিশুকন্যা। ‘জাপানে গিয়ে দেখলাম, সেখানে অটিস্টিক বা বিশেষ শিশুদের নানা কায়দা-কসরতের মাধ্যমে অনেকটা স্বাভাবিক করে আনার ব্যবস্থা রয়েছে। এসব দেখে মনের মধ্যে একটা সাহস পেলাম।’ বলেন ফারজানা। তিনি আরও বলেন, ‘আমার শিশুর মতো আমাদের দেশে আরও এমন অনেক বাচ্চা আছে, যারা কেউ অটিস্টিক, কেউ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। তাদের যদি সঠিক যত্ন নিয়ে পড়ানো যায় এবং সঠিক সেবা দেওয়া যায়, তাহলে তারা উপকৃত হবে। অনেকটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে।’
দেশে ফেরার পর স্বামী-স্ত্রী মিলে একটা পরিকল্পনা তৈরি করে ফেললেন। আরও কয়েকজন অটিস্টিক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুর খোঁজ করে তাদের মা-বাবাকে বোঝালেন এই স্কুলে তাদের পাঠানোর জন্য। ২০১০ সালের শুরুর কথা। মাত্র চারজন শিশুকে নিয়ে যাত্রা শুরু করল এনজেলস কেয়ার ফাউন্ডেশন। নিজের সন্তানকে এই স্কুলে দিয়ে অন্য অটিস্টিক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুদের এখানে পাঠানোর জন্য তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন ফারজানা। তাতে কাজ হলো কিছুটা। ফারজানা বলেন, ‘শুরু থেকে স্কুলের সব ধরনের খরচ আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলেই চালাচ্ছি।’ মুশফেকুর রহমান বলেন, ‘আমার সকালটা শুরু হয় এই স্কুলে। প্রথমে স্কুলে আসি, সব ঠিকঠাক মতো চলছে কি না, তা দেখি। তারপর অফিসে যাই।’ বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। ফারজানা ফারুক বলেন, ‘আমার সন্তানের মতো এখানকার সব শিশুকেই আমি নিজের সন্তান মনে করি। কারণ, আমিও তো একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুর মা।’ তিন বছর বয়স থেকে অটিস্টিক এবং অন্যান্য বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী—এমন শিশুদের এখানে ভর্তি করানো হয়। অটিজমের ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতার মাত্রা যাচাই করে তাদের বিভিন্ন শাখায় উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া হয়। যারা একটু উন্নতি করে, তাদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে শিশুদের বিনোদনের জন্য এই স্কুলে নাচ-গানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড রয়েছে। এই স্কুলে বর্তমানে মোট ৩০ জন শিশু রয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই অল্প বেতন বা বিনা বেতনে পড়ছে। ‘সময় কেটে যাচ্ছে। এখানে শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু তেমন কোনো বড় অনুদান আমরা পাইনি। এ ধরনের শিশুদের আরও উন্নত সেবা দিতে গেলে এখানে আরও অনেক আধুনিক যন্ত্র ও দক্ষ জনবলের প্রয়োজন। কিন্তু সে অনুপাতে অর্থের জোগান নেই।’ বলেন ফারজানা ফারুক। তিনি আরও বলেন, এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা বিভিন্ন কল্যাণমূলক সংগঠনে দান করেন। তাঁরা এখানে দান করতে পারেন। আবার যে শুধু অর্থই দান করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই, এই শিশুদের জন্য কেউ শিক্ষার উপকরণ, কয়েকটি হুইল চেয়ার বা ভ্যানগাড়িও দিতে পারেন। আবার কেউ খেলার জন্য একটা মাঠ, প্রগ্রামের জন্য মিলনায়তন ব্যবহার করার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। এভাবে নানা সহায়তা করতে পারেন এই প্রতিষ্ঠানটির জন্য। একদিন এ ধরনের শিশুদের স্থায়ী নিবাস হবে এনজেলস কেয়ার ফাউন্ডেশন, তাদের অন্যের বোঝা হতে হবে না—এমনটাই স্বপ্ন দেখেন ফারজানা ফারুক ও মুশফেকুর রহমান এবং সে লক্ষ্যে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। চাইলে আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন এই স্কুলের সাহায্যের জন্য।
এনজেলস কেয়ার ফাউন্ডেশন,
১৬/১০,ব্লক-সি, তাজমহল রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। ফোন: ০১৭১৩৩৬৫৩০২,
www.angelscarebd.org।
মোছাব্বের হোসেন
No comments