জেমস প্যাটিনসন-অভিনয়-অনুবাদ: অরুণোদয় ভট্টাচার্য

আমি জাহাজের ‘পারসার’। সব রকম খরচাপত্তর আমার হাত দিয়ে হয়। জাহাজে থাকাকালীন যাবতীয় লোকের ব্যাংকার আমি। এই জাহাজে এবার যাচ্ছেন তরুণ আর্ল ম্যাকলাউড। ইনি কোটিপতি হেনরি ম্যাকলাউডের একমাত্র সন্তান।
হঠাৎ দেখি, এই জাহাজেই চলেছে সেই সুযোগসন্ধানী রবিনসন পরিবার।


বড়লোকের গন্ধে গন্ধে গোড়া থেকেই হাজির। মি. ও মিসেস রবিনসন ও তাঁদের মেয়ে প্যাটসি। সে এখন বেশ সুন্দরী তরুণী হয়েছে। ছোটবেলায় হাত সাফাইয়ের কাজে দু-একবার ধরাও পড়েছিল।
বুঝলাম, বেচারা ম্যাকলাউড অনতিবিলম্বে হবেন এই প্যাটসির শিকার। অনুমান আমার নির্ভুল হলো। দেড় দিন কাটতে না কাটতেই দেখি, তরুণ আর্লের কণ্ঠলগ্না হয়েছে বিড়ালাক্ষী পেলবাঙ্গী প্লাটিনাম-চুলী প্যাটসি।
না বলে আর পারলাম না। বড়শিবিদ্ধ তরুণ ম্যাকলাউডকে আড়ালে ডেকে বললাম, ‘ইয়ংম্যান, ওই প্যাটসি রবিনসন সম্পর্কে একটু সাবধানে থাকবেন।’
আমার কথা শুনে বললেন, ‘তুমি দেখছি ঠিক আমার বুড়ো বাপটার মতো। তুমি কি ভাবো, এখনো আমার নিজের ভালো-মন্দ বোঝার বয়স হয়নি? আমার জন্য মাথা ঘামাতে হবে না তোমার।’
ক্রমে জাহাজ এসে পৌঁছাল সিঙ্গাপুর।
সিঙ্গাপুর থেকে তরুণ ম্যাকলাউড জাহাজে এবার প্রেমে পড়লেন গ্লোরিয়া রাইটের। সে কন্যাও উপযুক্ত। বাপ-মায়ের লাইনেরই। বরং আরও বেশি মারাত্মক। তার রূপ ফেটে পড়ছে। নিখুঁত ফিগার।
ম্যাকলাউড শেষে প্যাটসিকে ছেড়ে গ্লোরিয়ার দিকে ঢলে পড়লেন। আমি আরেকবার চেষ্টা করলাম তাঁর জ্ঞান ফেরাতে। কিন্তু তিনি আবার আমাকে শাসিয়ে বললেন, ‘খারাপ হয়ে যাবে, বুড়ো! আমার ব্যাপারে নাক গলিয়ো না।’
কয়েক দিন পর হঠাৎ একদিন সকালে মি. রাইট শুকনো মুখে আমার কেবিনে এসে হাজির। ঢুকেই দরজাটা বন্ধ করে বললেন, ‘এখনই আমাকে পাঁচ হাজার পাউন্ড দিতে হবে।’
বললাম, ‘এখনই দিচ্ছি, স্যার। কারণ জিজ্ঞেস করাটা অশোভন, তবু যদি সাহায্য করতে পারি...।’
‘ওই স্কাউন্ড্রেল রবিনসনরা ডার্টি ক্রিমিনাল সব। যুবক ম্যাকলাউডকে সহজ-সরল ভালো মানুষ পেয়ে ফাঁদ পেতে ব্ল্যাকমেল করছে! তাঁদের মেয়েটাকে লেলিয়ে দিয়ে সুবিধেমতো কয়েকটা স্ন্যাপ নিয়ে এখন টাকা চাইছে। ছি-ছি-ছি।...আচ্ছা চলি, থ্যাংক ইউ।’
হাসি পেল আমার। খেলা তাহলে বেশ জমেছে। হবু জামাইয়ের হয়ে টাকা দিচ্ছেন মি. রাইট।
গত রাতে রবিনসনও গোপনে এসেছিলেন আমার কাছে। ঠিক রাইটের মতোই পাঁচ হাজার পাউন্ড নিয়ে গেছেন। আমি চোখের ইশারায় জানতে চেয়েছিলাম, ব্যাপার কী? উনি ক্রুদ্ধ চাহনিতে বুঝিয়েছিলেন, সেটা আমার জানার দরকার নেই। কিন্তু বুঝতে আমার কিছুই বাকি রইল না। গ্লোরিয়ার সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলে রাইটরাও আর্লকে ব্ল্যাকমেল করতে চায়। তাই ভাবী জামাই আর্লকে বাঁচানোর চেষ্টা।
ডারহাম আসতেই তরুণ আর্ল ম্যাকলাউড দুটি বিরাট ব্যাগ নিয়ে বাজার করতে নামলেন। প্যাটসি ও গ্লোরিয়া দুজনকে বললেন, ‘ঘুরে আসছি, প্রিয়ে।’
জাহাজ ছাড়ার পর কিন্তু আর্ল ম্যাকলাউডকে আর দেখা গেল না। উৎকণ্ঠিত হয়ে রাইট আর রবিনসনরা বললেন, ‘লোকটা জালিয়াত নয় তো?’
আমি বললাম, ‘তা কী করে জানব?’
আর্ল ম্যাকলাউড, তুমি খাসা অভিনয় করেছ। যদিও তুমি আমার নিজের ছেলে, হাড়ে হাড়ে চিনি, তবু রূপসীদের পাল্লায় পড়োনি ভাগ্যিস!

জেমস প্যাটিনসন: বিখ্যাত এই রহস্যোপন্যাস লেখক জাতে ব্রিটিশ। লিখেছেন প্রায় ১০০-এর মতো থ্রিলার। জন্ম-১৯১৫; মৃত্যু-২০০৯।

No comments

Powered by Blogger.