এলপি গ্যাসের চড়া মূল্য-চাহিদার সঙ্গে জোগানে মিল থাকুক

প্রতি মাসে রান্নার জ্বালানি খাতে নূ্যনতম তিন হাজার টাকা ব্যয় নিম্নবিত্তের জন্য তো বটেই, মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্যও দুঃসহ বোঝা। এলপি গ্যাস হিসেবে পরিচিত তরল গ্যাস ব্যবহারকারীদের এই পরিমাণ অর্থই ব্যয় করতে হয়। অনেক পরিবারের ক্ষেত্রে দেখা যায়, উচ্চমূল্যের বাজারেও চাল-ডাল-সবজি-মাছের জন্য মাসিক ব্যয়ের কাছাকাছি পড়ে যায় শুধু


জ্বালানি ব্যয়। এর তুলনায় পাইপলাইনে গ্যাস সংযোগ থাকা পরিবারগুলো অনেক ভাগ্যবান_ তাদের প্রতি মাসে সর্বোচ্চ খরচ পড়ে সাড়ে চারশ' টাকা। কিন্তু রাজধানীসহ হাতেগোনা কয়েকটি শহরের বাইরে দেশের বেশিরভাগ পরিবারে পাইপলাইনে গ্যাস সংযোগ সুবিধা নেই। উৎপাদন-সরবরাহে ঘাটতির কারণে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে_ আবাসিক চাহিদা মেটাতে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। কবে এ সিদ্ধান্ত বদলাবে_ সেটা অজানা। কিন্তু রান্নার জন্য বাসগৃহ ও হোটেলে জ্বালানি অপরিহার্য। পাঁচ দশক আগেও কাঠ থেকে এ ক্ষেত্রে সিংহভাগ জোগান আসত। কেরোসিনেরও প্রচুর ব্যবহার হতো। এখন সীমিত বৃক্ষসম্পদ নিয়ে উদ্বেগের শেষ নেই। শহর-নগরের ঘরে ঘরে কাঠের ব্যবহারও মস্ত ঝামেলার। আর কেরোসিনের দাম ডিজেল-অকটেনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এ অবস্থায় রান্নার জ্বালানি আসবে কোত্থেকে? এ পণ্য বিলাস সামগ্রী নয় যে, তার ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার জন্য প্রচার চালিয়ে লাভ হবে। যে কোনোভাবেই হোক, জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই হবে। এ ক্ষেত্রে প্রধান বিকল্প হচ্ছে এলপি গ্যাস। বর্তমানে এ গ্যাসের চাহিদা বছরে তিন থেকে চার লাখ টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ২০ হাজার টনের মতো। আরও ৭০-৮০ হাজার টনের মতো আমদানি করা হয় বেসরকারি খাতে। চাহিদার তুলনায় যেহেতু সরবরাহ মাত্র চার ভাগের এক ভাগের মতো, সঙ্গত কারণেই এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের বাজারেও জ্বলছে আগুন। ব্যবসায়ীরা এর সুযোগ নেবে_ সেটা স্বাভাবিক। অসাধুতার মাত্রা প্রকট এবং আরও অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মতো এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে সরকারকে তার দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিতে পারি, কিন্তু প্রত্যাশা পূরণের ভরসা বড়ই কম। তদুপরি এ পণ্যের দাম বিশ্ববাজারেও চড়া হওয়ায় দেশের বাজারে তার প্রভাব পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার যুক্তি দেখিয়ে দেশের বাজারে যতটা বাড়া উচিত তার চেয়েও বেশি বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়টি নিয়ন্ত্রণেও সরকারের অসহায়ত্ব প্রকটভাবে ধরা পড়ে। কিন্তু ঘরে ঘরে, হোটেলে এবং অন্যান্য স্থানে তো রান্না প্রতিদিনই করতে হবে। এজন্য জ্বালানি হিসেবে পাইপলাইনে গ্যাস প্রদান সম্ভব না হলে প্রধান বিকল্প হিসেবে অবশ্যই এলপি গ্যাস সরবরাহ করতে হবে। এ জন্য জরুরি করণীয় দুটি :এক. বাজার নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ গ্রহণ। দুই. এলপি গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ বাড়ানোর জন্য একদিকে আমদানি প্রক্রিয়া যতটা সম্ভব সহজ করতে হবে। পাশাপাশি আমদানি করা গ্যাস সিলিন্ডারজাতকরণে নতুন নতুন কারখানা স্থাপনে পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে রাতারাতি এ ক্ষেত্রে সুফল মিলবে না। এ কারণে বাজারে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠাই আপাতত সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

No comments

Powered by Blogger.