হাল্কা প্রকৌশল শিল্পখাতের জন্য প্রয়োজন ১০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা by আবুল কাসেম হায়দার
বাংলাদেশে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বস্ল পুরনো একটি শিল্পখাত। যা হাল্কা প্রকৌশল শিল্পখাত হিসেবে পরিচিত। শুধু বর্তমানে নয়, বিগত কয়েক দশক ধরে এটা সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে সুপরিচিত। কিন্তু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবের কারণে ও নানাবিধ সীমাবদ্ধতার ফলে এই শিল্পখাতটি আশানুরূপ অগ্রসর হতে পারেনি। মাঝে মাঝে এই শিল্পখাতে রফতানি ব্যয়ও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়, ফলে আয় হ্রাস পায়।
সরকারি সহযোগিতা ও নীতিগত উত্সাহব্যঞ্জক এই শিল্পখাতে প্রচুর বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। একদিকে যেমন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে পণ্য রফতানি করে হাজার হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হতে পারে। এই জন্য প্রয়োজন সরকারের নীতিগত সহযোগিতা। কর কাঠামোকে পুনর্বিন্যাস করা এ খাতের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এ খাতে পুঁজির অভাব একটি বড় রকমের সমস্যা । হাল্কা প্রকৌশল শিল্প উদ্যোক্তারা সহজে ঋণ না পাওয়ার কারণে আশানুরূপ গতিতে অগ্রসর হতে পারেন না। সরকার এ খাতকে সহযোগিতার জন্য এসএমই গঠন করেছে। এসএমই’র সীমাবদ্ধতার কারণে এর সুফল হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং খাত পায়নি। অবকাঠামোগত সমস্যা হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের অন্যতম সমস্যা। কিন্তু বিশ্বজুড়ে হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং খাত এসএমই খাতের একটি উল্লেখযোগ্য শিল্পখাত হিসেবে অবদান রাখছে। রফতানি ক্ষেত্রে হাল্কা প্রকৌশল খাত আমাদের এই হাল্কা প্রকৌশল শিল্পখাতটি শিল্পোদ্যোক্তাদের নিজস্ব সৃষ্টি। প্রয়োজনের তাগিদে এই শিল্পোদ্যোক্তারা পণ্য উত্পাদন করছে। দেশের চাহিদা পূরণ করে এর মধ্যে হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য বিদেশে রফতানি শুরু করছেন। বেশ কয়েক বছর আগ থেকে দেশের চাহিদা মিটিয়ে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশে এসব পণ্য রফতানি হচ্ছে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং রফতানি খাতে আয় হয়েছে ২১ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার। বিগত ২ বছর ধরে বিশ্ব মন্দার ফলে এ খাতে আয় হ্রাস পেয়েছে। তারপরও গত বছর রফতানি হয়েছে আনুমানিক ১৯ কোটি ডলারের সমপরিমাণ পণ্য। ২০০৬-০৭ সালে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয় ২৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে আয় হয় ১১ কোটি ১০ লাখ, ২০০৪-০৫ অর্থবছরে আয় হয় ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। দেখা যায় লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের রফতানি বাড়ছে। বিশ্ব মন্দার ফলে এ শিল্পের কিছু আয় হ্রাস পেয়েছে। কাজেই এ শিল্পকে একটি বিকাশমান শিল্পক্ষেত্র বলা যায়। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি আয় করেছে। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিশ্বব্যাপী মন্দা, ব্যাংক ঋণের সহযোগিতা ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবের কারণে রফতানির এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়নি।
হাল্কা প্রকৌশল শিল্পখাতে উৎপাদিত পণ্য এই শিল্পখাতটি আমাদের দেশের ঢাকা শহরের পুরনো ঢাকায় গড়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম, খুলনা, বগুড়া, রাজশাহী, সিলেট, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা শহরে হাল্কা প্রকৌশল শিল্পের কারখানা রয়েছে। এই শিল্পে উত্পাদিত পণ্য বিভিন্ন শিল্পে মেশিনারিজ, যন্ত্রাংশ এবং এক্সেসরিজ হিসেবে দেশের বিভিন্ন শিল্প কারখানার যন্ত্রাংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন : টেক্সটাইল, পাট, চিনি, গার্মেন্ট, পেপার, রাবার প্রক্রিয়াকরণ মেশিন, প্লাস্টিকের পাইপ তৈরির মেশিন, পানি সরবরাহের মেশিন, রেলওয়ের নানা ধরনের যন্ত্রাংশ।
এই প্রকৌশল শিল্পখাতে উত্পাদিত পণ্য ফার্মাসিউটিক্যাল এবং কৃষিক্ষেত্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশের অল্প শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত ও অশিক্ষিত কারিগর এই হাল্কা প্রকৌশল শিল্পের কারিগর। এই দেশের প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানা বর্তমানে রয়েছে। এই শিল্পখাতে কমপক্ষে ১০ লাখ শ্রমিক নিয়োজিত। এ খাতের সমস্যাগুলো হাল্কা প্রকৌশল শিল্পখাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এই শিল্পখাতটি জাতীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হলেও আমাদের সরকার ও বিনিয়োগকারীরা এ খাতকে মূল্যায়ন করতে পারেনি। এ পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি কোনো উদ্যোগ এখন পর্যন্ত কোনো ভিশন প্রণয়ন করতে পারেনি। সত্যিকার অর্থে দাতাগোষ্ঠী উত্সাহব্যঞ্জক সাড়া না দেয়ায় আমাদের সরকার এ খাতকে গুরুত্ব দিতে পারছে না।
দ্বিতীয়ত : এ খাতের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে সরকারের সহায়ক নীতির অভাবে এ শিল্পের বিকাশ বড় কঠিন হয়ে পড়ছে। কারণ আমাদের দেশে এ শিল্পের কাঁচামাল উত্পাদিত হয় না। এ শিল্পের কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। এ শিল্পের বড় সমস্যা হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তিসম্মত আধুনিক মেশিনারির অভাব। বস্ল পুরনো এবং বিশ্বমানের উত্পাদন ক্ষমতাসম্পন্ন মেশিনারি না থাকার কারণে পণ্য উত্পাদনও আধুনিক করা যায় না। তাই বাংলাদেশে এ খাতে উত্পাদিত পণ্য অন্যান্য দেশের তুলনায় নিম্নমানের হওয়ার কারণে হাল্কা প্রকৌশল শিল্প দিন-দিন রফতানি বাজার হারাচ্ছে। হাল্কা প্রকৌশল খাতে উন্নয়নের জন্য সরকারি সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকার কারণে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করার জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এই শিল্পখাত উন্নয়নে আমাদের করণীয়
১. এ খাতের উন্নয়ন প্রয়োজন একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এ খাতের শিল্পোদ্যোক্তারা একটি ১০ বছর মেয়াদি উন্নয়নের তাগাদা সরকারকে দিয়ে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা মনে করেন সরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করলে তৈরি পোশাকের মতো আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সরকারি, বেসরকারি ও বিশেষ করে এসএমই একটি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে।
২. হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পখাতে ব্যাংক ঋণের হার অত্যধিক হওয়ার কারণে উদ্যোক্তারা লাভ করতে পারছে না। প্রতিবেশী দেশগুলোতে এই ক্ষেত্রে সুদের হার ৫ শতাংশ। এই খাতে যদি সরকার ব্যাংকের সুদের হার ৭ শতাংশ নির্ধারণ করেন, তাহলে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। বর্তমানে এ খাতে উদ্যোক্তাদের ১৩-১৮ শতাংশ সুদ দিতে হয়। এতে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে লাভের একটি বড় অংশ সুদ পরিশোধে ব্যয় করতে হয়। তাই বিনিয়োগকারীরা লাভবান হতে পারছেন না।
৩. হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে ৫% হারে ঋণ দেয়ার একটি বিশেষ ব্যবস্থা করা উচিত। এসএমই ফাউন্ডেশন তাদের অর্থের একটি অংশ হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ও ৭ শতাংশ হারে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারে। সরকার এ দেশে বেসিক ব্যাংক স্থাপন করেছিল ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ দেয়ার জন্য। বাস্তবে বেসিক ব্যাংক এখন পর্যন্ত এ খাতে ঋণ সুবিধা দিতে পারেনি। যে উদ্দেশ্যে এই ব্যাংক স্থাপিত হয়েছিল সে লক্ষ্যে যাতে ভূমিকা রাখতে পারে, সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে এই ব্যাংকের মাধ্যমে জামানতবিহীন ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
৪. লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে ক্রেডিট গ্যারান্টি ও ক্রেডিট ইন্স্যুরেন্স স্কিম চালু করার প্রয়োজন, তাহলে উদ্যোক্তারা এর আওতায় পণ্য উত্পাদনের মাধ্যমে এ ব্যবসা আরও সমপ্রসারণ করতে পারবেন।
৫. ওই শিল্পখাতে বিশেষ অবকাঠামোগত উন্নয়ন ব্যবস্থা নেয়া দরকার। ঢাকার আশপাশের একটি বড় এলাকা নিয়ে একটি শিল্প পার্ক নির্মাণ করা প্রয়োজন। যেমন ট্যানারি শিল্পখাতকে সাভারে স্থানান্তরের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেটে বিশেষ প্লট বরাদ্দ করে উন্নয়নের পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
৬. প্রতিবেশী দেশগুলোর মতো হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের উন্নয়নে বাস্তবসম্মত কর ও শুল্ক কাঠামো প্রণয়ন করা প্রয়োজন। অত্যধিক কর ও শুল্কের কারণে এ খাত অগ্রসর হতে পারছে না। এ খাত থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করা যেতে পারে এবং এ খাতের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে কর ও মূসক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নেয়া উচিত।
৭. এই শিল্পখাতের পণ্য প্রদর্শনীর জন্য স্থায়ী একটি প্রদর্শনী কেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে।
৮. এই শিল্পখাতের প্রধান কাঁচামাল অ্যালুমিনিয়াম, তামা, পিতল, জিঙ্ক, এলয়স্টিল, পিগ আয়রন, স্ক্র্যাপ, হার্ডকোক প্রভৃতি কাঁচামাল দেশে পাওয়া যায় না। বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এ শিল্পের উত্পাদন খরচ হ্রাসের জন্য আমদানি শুল্ক হ্রাস করা যেতে পারে।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ইসল্টার্ন ইউনিভার্সিটি, সাবেক সহ-সভাপতি এফবিসিসিআই
হাল্কা প্রকৌশল শিল্পখাতে উৎপাদিত পণ্য এই শিল্পখাতটি আমাদের দেশের ঢাকা শহরের পুরনো ঢাকায় গড়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম, খুলনা, বগুড়া, রাজশাহী, সিলেট, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা শহরে হাল্কা প্রকৌশল শিল্পের কারখানা রয়েছে। এই শিল্পে উত্পাদিত পণ্য বিভিন্ন শিল্পে মেশিনারিজ, যন্ত্রাংশ এবং এক্সেসরিজ হিসেবে দেশের বিভিন্ন শিল্প কারখানার যন্ত্রাংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন : টেক্সটাইল, পাট, চিনি, গার্মেন্ট, পেপার, রাবার প্রক্রিয়াকরণ মেশিন, প্লাস্টিকের পাইপ তৈরির মেশিন, পানি সরবরাহের মেশিন, রেলওয়ের নানা ধরনের যন্ত্রাংশ।
এই প্রকৌশল শিল্পখাতে উত্পাদিত পণ্য ফার্মাসিউটিক্যাল এবং কৃষিক্ষেত্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশের অল্প শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত ও অশিক্ষিত কারিগর এই হাল্কা প্রকৌশল শিল্পের কারিগর। এই দেশের প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানা বর্তমানে রয়েছে। এই শিল্পখাতে কমপক্ষে ১০ লাখ শ্রমিক নিয়োজিত। এ খাতের সমস্যাগুলো হাল্কা প্রকৌশল শিল্পখাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এই শিল্পখাতটি জাতীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হলেও আমাদের সরকার ও বিনিয়োগকারীরা এ খাতকে মূল্যায়ন করতে পারেনি। এ পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি কোনো উদ্যোগ এখন পর্যন্ত কোনো ভিশন প্রণয়ন করতে পারেনি। সত্যিকার অর্থে দাতাগোষ্ঠী উত্সাহব্যঞ্জক সাড়া না দেয়ায় আমাদের সরকার এ খাতকে গুরুত্ব দিতে পারছে না।
দ্বিতীয়ত : এ খাতের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে সরকারের সহায়ক নীতির অভাবে এ শিল্পের বিকাশ বড় কঠিন হয়ে পড়ছে। কারণ আমাদের দেশে এ শিল্পের কাঁচামাল উত্পাদিত হয় না। এ শিল্পের কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। এ শিল্পের বড় সমস্যা হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তিসম্মত আধুনিক মেশিনারির অভাব। বস্ল পুরনো এবং বিশ্বমানের উত্পাদন ক্ষমতাসম্পন্ন মেশিনারি না থাকার কারণে পণ্য উত্পাদনও আধুনিক করা যায় না। তাই বাংলাদেশে এ খাতে উত্পাদিত পণ্য অন্যান্য দেশের তুলনায় নিম্নমানের হওয়ার কারণে হাল্কা প্রকৌশল শিল্প দিন-দিন রফতানি বাজার হারাচ্ছে। হাল্কা প্রকৌশল খাতে উন্নয়নের জন্য সরকারি সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকার কারণে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করার জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এই শিল্পখাত উন্নয়নে আমাদের করণীয়
১. এ খাতের উন্নয়ন প্রয়োজন একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এ খাতের শিল্পোদ্যোক্তারা একটি ১০ বছর মেয়াদি উন্নয়নের তাগাদা সরকারকে দিয়ে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা মনে করেন সরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করলে তৈরি পোশাকের মতো আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সরকারি, বেসরকারি ও বিশেষ করে এসএমই একটি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে।
২. হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পখাতে ব্যাংক ঋণের হার অত্যধিক হওয়ার কারণে উদ্যোক্তারা লাভ করতে পারছে না। প্রতিবেশী দেশগুলোতে এই ক্ষেত্রে সুদের হার ৫ শতাংশ। এই খাতে যদি সরকার ব্যাংকের সুদের হার ৭ শতাংশ নির্ধারণ করেন, তাহলে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। বর্তমানে এ খাতে উদ্যোক্তাদের ১৩-১৮ শতাংশ সুদ দিতে হয়। এতে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে লাভের একটি বড় অংশ সুদ পরিশোধে ব্যয় করতে হয়। তাই বিনিয়োগকারীরা লাভবান হতে পারছেন না।
৩. হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে ৫% হারে ঋণ দেয়ার একটি বিশেষ ব্যবস্থা করা উচিত। এসএমই ফাউন্ডেশন তাদের অর্থের একটি অংশ হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ও ৭ শতাংশ হারে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারে। সরকার এ দেশে বেসিক ব্যাংক স্থাপন করেছিল ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ দেয়ার জন্য। বাস্তবে বেসিক ব্যাংক এখন পর্যন্ত এ খাতে ঋণ সুবিধা দিতে পারেনি। যে উদ্দেশ্যে এই ব্যাংক স্থাপিত হয়েছিল সে লক্ষ্যে যাতে ভূমিকা রাখতে পারে, সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে এই ব্যাংকের মাধ্যমে জামানতবিহীন ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
৪. লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে ক্রেডিট গ্যারান্টি ও ক্রেডিট ইন্স্যুরেন্স স্কিম চালু করার প্রয়োজন, তাহলে উদ্যোক্তারা এর আওতায় পণ্য উত্পাদনের মাধ্যমে এ ব্যবসা আরও সমপ্রসারণ করতে পারবেন।
৫. ওই শিল্পখাতে বিশেষ অবকাঠামোগত উন্নয়ন ব্যবস্থা নেয়া দরকার। ঢাকার আশপাশের একটি বড় এলাকা নিয়ে একটি শিল্প পার্ক নির্মাণ করা প্রয়োজন। যেমন ট্যানারি শিল্পখাতকে সাভারে স্থানান্তরের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেটে বিশেষ প্লট বরাদ্দ করে উন্নয়নের পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
৬. প্রতিবেশী দেশগুলোর মতো হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের উন্নয়নে বাস্তবসম্মত কর ও শুল্ক কাঠামো প্রণয়ন করা প্রয়োজন। অত্যধিক কর ও শুল্কের কারণে এ খাত অগ্রসর হতে পারছে না। এ খাত থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করা যেতে পারে এবং এ খাতের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে কর ও মূসক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নেয়া উচিত।
৭. এই শিল্পখাতের পণ্য প্রদর্শনীর জন্য স্থায়ী একটি প্রদর্শনী কেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে।
৮. এই শিল্পখাতের প্রধান কাঁচামাল অ্যালুমিনিয়াম, তামা, পিতল, জিঙ্ক, এলয়স্টিল, পিগ আয়রন, স্ক্র্যাপ, হার্ডকোক প্রভৃতি কাঁচামাল দেশে পাওয়া যায় না। বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এ শিল্পের উত্পাদন খরচ হ্রাসের জন্য আমদানি শুল্ক হ্রাস করা যেতে পারে।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ইসল্টার্ন ইউনিভার্সিটি, সাবেক সহ-সভাপতি এফবিসিসিআই
No comments