ভাইয়ের সূত্রে উসাইন বোল্টও ক্রিকেটের লোক by মাসুদ পারভেজ

তাঁর ক্লাব দলের এক ক্রিকেটার কোনো এক দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে চান। কিন্তু খেলতে চাইলেই তো আর হবে না। সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে আসার যোগ্যতা ও সামর্থ্য থাকতে হবে। সেটা কী সত্যিই ওই ক্রিকেটারের আছে? প্রশ্নটা শুনে বোধহয় একটু বিরক্তই হলেন মারলন স্যামুয়েলস। জবাবে সেটা খুব স্পষ্টও, 'মাইকেল হোল্ডিং ও কোর্টনি ওয়ালশের মতো গ্রেটরা যে ক্লাবের হয়ে খেলেছেন, সেই দলে নিশ্চয়ই যেনতেন ক্রিকেটার থাকতে পারে না।' বোঝা গেল, সাদিকির মাঝে সম্ভাবনার স্ফুরণ অবশ্যই দেখেছেন মারলন।


সেই সঙ্গে এই দূর বাংলাদেশে সাদিকিকে নিয়ে কৌতূহলের কারণও অবশ্যই আছে। ক্রিকেট খেলুড়ে সব দেশের মিডিয়ারই তাঁকে নিয়ে আগ্রহী হওয়ার কথা। সেটা ক্রিকেটার পরিচয়ে যতটা না, তার চেয়ে বেশি ভ্রাতৃপরিচয়ে! নামের সঙ্গে পারিবারিক পদবি উল্লেখ করে দিলেই যে কারো কাছে সেটা পরিষ্কার হয়ে যাওয়া উচিত_সাদিকি বোল্ট! উসাইন বোল্টের ভাই বলেই না তাঁর সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার সামর্থ্য নিয়ে এত গবেষণা। না হলে কার এত দায় পড়েছিল যে তাঁকে নিয়ে পড়ে থাকে! বাংলাদেশের আরাফাত সালাউদ্দিন কিংবা সাকলায়েন সজীবরাও একদিন জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখেন। কই, এখানে এসে তো কেউ তাদের খোঁজে নেমে পড়েন না!
বয়সে সাদিকি বিশ্বের দ্রুততম মানব উসাইনের আট মাসের ছোট। একই বাবার সন্তান তবে তাঁরা জন্ম নিয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন মায়ের গর্ভে। নিজ নিজ মায়ের সঙ্গে আলাদা থাকলেও শৈশব থেকে বেড়ে ওঠা পর্যন্ত ক্রিসমাস থেকে শুরু করে প্রতিটা ছুটিই দুই ভাইয়ের কেটেছে একসঙ্গে। সে জন্যই একে অন্যের প্রতি তাঁদের টান অন্য পর্যায়ের। সাদিকি যেমন উসাইনের কাকভোরের অনুশীলনে সঙ্গ দিয়েছেন, তেমনি 'লাইটনিং বোল্ট'ও। জ্যামাইকায় থাকলে নিয়মিতই ঢুঁ মারেন হোল্ডিং আর ওয়ালশদের মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাব মাঠে। যেখানে সাদিকির বিপক্ষে নেটে উসাইন বোল্টকে পেস বল করতেও দেখেছেন মারলন স্যামুয়েলস।
বোলিং করতে গেলে পিঠের নিচের অংশের ইনজুরি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে বলে এখন আর তা করেন না বলেই জানা গেছে। বোলিং যে খুব খারাপ করেন না, ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে ইতিহাসের দ্রুততম সময়ে ১০০ মিটার স্প্রিন্ট শেষ করা উসাইন বোল্ট তার প্রমাণ দিয়েছেন গত বছরই। ক্রিস গেইল, ডোয়াইন ব্রাভো ও কিয়েরন পোলার্ডদের সঙ্গে এক চ্যারিটি ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন। যেখানে গতিদানবকে দেখার জন্যই ভিড়টা জমেছিল সবচেয়ে বেশি। তো সেই ম্যাচে ক্রিস গেইলকে বোল্ড করে দিয়েছিলেন পেসার উসাইন বোল্ট! আর ক্রিকেট দর্শক হিসেবে তাঁর খ্যাতির কথা শোনা গেল মারলনের মুখেও, 'ও ক্রিকেটের খুব বড় ভক্ত। দেশে থাকলে নিয়মিতই ক্রিকেট দেখতে মাঠে আসে। আমাদের মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের ও নিয়মিত অতিথি।'
আর বিশ্বে জ্যামাইকার সবচেয়ে বড় দূতও! যাঁর সঙ্গে মারলনের পরিচয় তাঁদের নিজেদের খেলোয়াড়ি পরিচয়ের সূত্রেই, 'যদি বলি উসাইনের সঙ্গে অনেক আগে থেকেই ওঠা-বসা, তাহলে ভুল বলা হবে। আসলে আমরা দুজনই ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব। দুজনই তাই দুজনকে চিনতাম। আর সাদিকির সঙ্গে মেলবোর্ন ক্লাবে যাতায়াতের কারণে উসাইনের সঙ্গে দেখাও হয় প্রায়ই।' দেখা হতে হতে সম্পর্কটা বন্ধুত্বেও রূপ নিয়েছে বলা যায়। কখনো কখনো যে নৈশ জীবনেও তাঁরা একে অন্যের সঙ্গী হয়ে যান, "দেখা হয়, আড্ডা হয়। আবার দেশে থাকলে মাঝেমধ্যে আমরা 'নাইট টাইম'ও একসঙ্গেই উপভোগ করি।"
মারলনের মতো জ্যামাইকানের কাছে উসাইন বোল্ট কাছের মানুষ হলেও ফিদেল এডওয়ার্ডসের কাছে তিনি দূরের তারা। এঁরা ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের ঠিক, কিন্তু এডওয়ার্ডস যে এ অঞ্চলেরই আরেক দেশ বার্বাডোজের। উসাইনের সঙ্গে দুই-তিনবারের দেখা হওয়ার স্মৃতি তাঁর কাছে অমূল্য। এর মধ্যে প্রথম দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছিল আচমকাই, 'আমরা লর্ডসে টেস্ট খেলছিলাম। ওই সময় লন্ডনেই থাকা উসাইন হঠাৎ একদিন ড্রেসিংরুমে এসে হাজির।' সঙ্গে সঙ্গেই ক্যামেরা বের করে তুলে ফেলেছেন আজীবন সংগ্রহে রাখার মতো কিছু ছবি। ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শেষে বলছিলেন, 'প্রায়ই ছবিগুলো দেখি। এত বড় ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের সঙ্গে নিজেকে দেখে ভীষণ ভালো লাগে।' লর্ডসের ড্রেসিংরুমে উসাইন বোল্টের বলে যাওয়া একটা কথাও আলোড়িত করে যায় তাঁকে, 'উসাইন বলেছিলেন, ক্যারিবীয় ক্রিকেটকে আবারও আগের জায়গায় দেখতে পারলে তাঁর খুব ভালো লাগবে।'
নিজের ভাইকে সেই লক্ষ্যের এক যোদ্ধা হয়ে উঠতে দেখলেও নিশ্চয়ই ভীষণ উল্লসিত হবেন উসাইন। কে জানে, সাদিকিও একদিন ভ্রাতৃপরিচয় ছাপিয়ে বড় ক্রিকেট তারকা হয়ে উঠবেন না!

No comments

Powered by Blogger.