ঐক্যের পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান বেগম জিয়ারঃ আইনের শাসনের বিকল্প নেই
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শুক্রবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দারিদ্র্য বিমোচন কনভেনশন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে তার কারণ হিসেবে সরকারের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের বিপরীতে সমাজে ঘৃণা-বিদ্বেষ ও বিভাজন সৃষ্টির যে অভিযোগ এনেছেন, সেটাকে ফুঁত্কারে উড়িয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বেগম খালেদা জিয়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ বন্ব্দ, রিমান্ডে নির্যাতন ও বিরোধী দল দলন বন্ব্দ এবং সর্বক্ষেত্রে নগ্ন দলীয়করণ ও দলবাজি বন্ব্দের দাবি জানিয়ে বলেছেন, জনগণের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে আমরা ঐক্য ও সহযোগিতার পথে অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম। কিন্তু গত কয়েকদিনে সব রীতিনীতি, সৌজন্য এবং মানবাধিকার সম্পূর্ণ ভূলুণ্ঠিত করে শাসক দল স্বৈরাচারী বাকশালি কায়দায় যেভাবে আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তাতে কেবল আমরা নই, প্রতিটি সচেতন নাগরিক চরমভাবে আতঙ্কিত। তিনি আরও বলেছেন, সরকার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করলেই কেবল বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। অন্যথায় দারিদ্র্য বিমোচনে ঐক্যের আহ্বান অন্তঃসারশূন্য হয়েই থাকবে। বেগম জিয়ার অভিযোগগুলো সত্য না হলে শুধু আমরা নই, গোটা জাতি খুশি হতো। কিন্তু চোখের দেখাকে তো অস্বীকার করা যায় না। মাননীয় বিচারপতিদের পর্যন্ত এখন প্রকাশ্য শাসানো হচ্ছে। কতটা অসহায় বোধ করলে হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি বলতে বাধ্য হন, ‘এখন আমাদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করুন, দরকার হলে হাইকোর্ট বন্ব্দ করে দিন।’ এদেশের ১৫ কোটি মানুষের জিজ্ঞাসা করার সঙ্গত কারণ আছে যে, বিচার বিভাগ যদি প্রকৃতই স্বাধীন হতো তাহলে একজন বিচারপতি এমন উচ্চারণ করবেন কেন! নিজের মামলার প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেছেন, আমার মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল বিচারপতিকে এই বলে স্লমকি দিয়েছেন— ‘সরকারের বিরুদ্ধে রুল জারি করলে অসুবিধা হবে।’ সরকারের ইচ্ছা পূরণের ব্যাপারে পান থেকে চুন খসলে যে কী ধরনের অসুবিধায় পড়তে হয়, তা গোটা জাতি এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। রিমান্ডে নির্যাতন বন্ব্দে উচ্চ আদালতের নির্দেশ চরমভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে। মানুষের সামান্যতম নিরাপত্তাও অবশিষ্ট নেই। প্রশাসনে চলছে চরম দলীয়করণ। এই নির্লজ্জ দলবাজি থেকে আজ কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান মুক্ত নয়। আমরা মানবাধিকার লংঘনের বিরোধিতা করে আসছি এবং ভবিষ্যতেও করে যাব। জরুরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মানবাধিকার লংঘন যেমন অপরাধ; ‘গণতান্ত্রিক’ সরকারের আমলে একই অপকর্ম করলে তার অপরাধ কমে যায় না। ফখরুদ্দীন গং বিদায় নেয়ার পর আমরা আশা করেছিলাম, এবার দেশে আইনের শাসন ফিরে আসবে। রিমান্ডের নামে রাষ্ট্রযন্ত্রের দানবীয় তাণ্ডব থেকে জাতি রক্ষা পাবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখানোর প্রবণতা কমার পরিবর্তে বরং বেড়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এমনভাবে বেড়ে গেছে যে, কোনোদিন ক্রসফায়ারে কেউ খুন না হলে সেটাও সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়। দলের লোকদের পুরস্কৃত করতে গিয়ে এবং যারা দলীয় নয় তাদের শায়েস্তা করতে গিয়ে প্রশসানিক শৃগ্ধখলাকে এককথায় লণ্ডভণ্ড করে ফেলা হয়েছে। সবাই বলতে বাধ্য হচ্ছেন, এভাবে দেশ চলতে পারে না। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন ইত্যাদি নিয়ে মধুর বাক্যের নহর বইয়ে দিয়ে ক্ষমতায় আসার পর বর্তমান সরকার যেভাবে গণবিরোধী তাণ্ডব চালাচ্ছে, তাতে আশঙ্কা হয়, জরুরি সরকারের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার কোনো গোপন বাধ্যবাধকতা তাদের ওপর বর্তেছে কিনা। যদি বাস্তবতা তাই হয়, তবে এ সরকারের কাছ থেকে শুভ ও কল্যাণকর কিছু আশা করে লাভ নেই। আর যদি তা না হয়ে থাকে তবে আমরা সরকারকে সনির্বন্ব্দ অনুরোধ করব, দয়া করে আইনের শাসনকে ব্যাহত করবেন না। তাতে সবার ক্ষতি এবং সেই সবার মধ্যে আপনারাও পড়েন।
No comments