আসিফার ধর্ষণ ও হত্যা: একটি যাযাবর মেয়ে তার পরিবার ও অভিযুক্তরা
জানুয়ারির
এক শীতল বিকেলে সানজি রাম তার ভাতিজাকে বলছিল, মেয়েটাকে হত্যা করার সময়
হয়েছে। প্রাথমিক আচার-অনুষ্ঠান শেষে আট বছর বয়সী ভবঘুরে মুসলিম শিশু
আসিফাকে একটি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলার রাসানা গ্রামের এক
মন্দিরের সামনের সাঁকোতে নিয়ে যাওয়া হয়। চারদিন ধরে সেখানেই তাকে বন্দি করে
রাখা হয়েছিল।
আসিফাকে প্রথমে গলা টিপে হত্যা করার পর তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে মাথায় দুইবার পাথর দিয়ে আঘাত করা হয়। তবে এর আগে বিশেষ পুলিশ কর্মী দীপক খাজুরিয়া একটি ইচ্ছার কথা বলেন। তিনি মেয়েটিকে হত্যার আগে ধর্ষণের প্রস্তাব রাখেন। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আর এভাবেই শিশু মেয়েটিকে আরো একবার গণধর্ষণ করা হয়। এরপরের তিন মাস আসিফার ঘটনাটি কেবলই আরো একটি যৌন হামলার ঘটনায় পরিণত হয়। ভারতে যৌন হামলার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তবে কাশ্মীরে এরকম ঘটনা বিরল। তাই ঘটনাটি নিয়ে স্থানীয় তদন্ত সংস্থা ক্রাইম ব্র্যাঞ্চের ১৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন বের হওয়ার পর তা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। তদন্তে এটা প্রকাশ পায় যে, আসিফার ধর্ষণ ও হত্যা ছিল পদ্ধতিগত, পূর্বপরিকল্পিত ও সানজি রামের ধর্মীয় বিদ্বেষের ফসল। সোমবার এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচারকার্য শুরু হয়েছে। দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই ঘটনায় অভিযুক্তদের প্রথম শুনানি এটি। অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী অঙ্কুর শর্মা জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা আদালতে দোষ স্বীকার করেনি। এছাড়া একটি মিথ্যা-আবিষ্কারক পরীক্ষা দিতেও রাজি হয়েছেন তারা। গত কয়েকদিন ধরেই ভারতের বিভিন্ন শহরে এই ধর্ষণের বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিবাদ চলছে। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র নেতারা অভিযুক্তদের প্রথম দিকে সমর্থন দেয়ায় প্রতিবাদ আরো উত্তাল হয়।
যাযাবর মেয়েটি
আসিফা নামের যাযাবর মেয়েটির পছন্দ ছিল ঘোড়াকে ঘাস খাওয়ানো। রাসানা’র এক কোনায় তার বাড়ির পাশের বনে প্রায়ই ঘোড়াকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যেত সে। সানজি রাম তাকে টার্গেট হিসেবে নির্বাচিত করার পেছনে এটা একটা কারণ ছিল- সে জানতো আসিফা নিয়মিত বনে আসে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, তারা গ্রাম থেকে মুসলিম সম্প্রদায়কে তাড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। বয়সে ছোট হওয়ায় আসিফা ছিল সহজ টার্গেট। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মন্দিরের ভেতর তাকে নিয়মিতভাবে ধর্ষণ করা হয়। তবে এই অপরাধের নেপথ্যে লুকিয়ে ছিল ভিন্ন কারণ- মুসলিম যাযাবর সম্প্রদায়কে গ্রাম থেকে তাড়ানো।
আসিফার মা, রাফিজা বানু (৫৫) তার মেয়ের মৃতদেহ দেখার ভয়ানক দৃশ্যের কথা মনে করে বলেন, ‘তার গালে আঁচড়ের দাগ ছিল। তার ঠোঁট কালো হয়ে গিয়েছিল। তার চোখ ফেটে বের হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল। একজন মায়ের জন্য এটা বেশ ভয়ানক দৃশ্য ছিল। সে ছিল আমার সবচেয়ে ছোট সন্তান। সে অনেক বর্বরতা সহ্য করেছে।’ রাফিজা বানু এখন তার ১৩ বছর বয়সী অপর মেয়েকে নিয়ে চিন্তিত। তিনি বলেন, তারা একটি আট বছর বয়সী মেয়ের সঙ্গে এসব করেছে। কল্পনা করুন একজন ১৩ বছর বয়সী মেয়ের সঙ্গে তারা কি করতে পারে।
যাযাবর পরিবার
আসিফার বাবা মোহাম্মদ আখতার এর বয়স ৪৫ হলেও দেখতে আরো বেশি বয়স্ক লাগে। যাযাবর হওয়ার ছাপ পড়েছে মুখে। কিন্তু এখন তার মাথায় আরো বড় এক বোঝা চেপেছে। নিজের মেয়ের ধর্ষণ ও হত্যার বিচার আদায়। তিনি বলেন, তার পুরো মুখে আঁচড় আর কামড়ের দাগ ছিল। আমি কখনো ভাবিনি তারা একটি শিশুর সঙ্গে এমন করতে পারে। এখনো তার দুধ দাঁতও পড়েনি। জন্মসূত্রে আসিফার বাবা আখতার হলেও সে বেড়ে উঠছিল তার চাচা মোহাম্মদ ইউসুফ এর মেয়ে হিসেবে। নিজের তিন সন্তানকে হারানোর পর আসিফাকে দত্তক নেন ইউসুফ। তিনি জানান, এই ঘটনার পর তার পরিবারকেও হুমকি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তার বলেছে- তাদের লোকজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলে তারা আমাদের সবাইকে এক এক করে মেরে ফেলবে। মৃতদেহ আবিষ্কারের পর হিন্দুরা এসে আমাদের হুমকি দিয়ে গেছে। আসিফার বড় বোন মানেগা (১৩) কথা বলার সময়ও স্তম্ভিত ছিল। সে বলেছে, আমি তার লাশ দেখেছি। আমার এখন অনেক ভয় করে। আমরা খেলিনা, একা একা বাড়ির বাইরে যাই না। আসিফার হত্যা আমাদের চুরমার করে দিয়েছে।
অভিযুক্তরা
পুলিশের প্রতিবেদন অনুসারে, আসিফার হত্যায় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত। এর মধ্যে রয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মকর্তা; তার সন্তান, যে অন্য এক শহর থেকে রাসানা’য় গিয়েছিল নিজের লালসা মেটাতে; তার কিশোর ভাতিজা ও তার বন্ধু; এক বিশেষ পুলিশ কর্মী। সব মিলিয়ে ধর্ষণ, নির্যাতন, হত্যা ও অপহরণের দায়ে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার তাদের বিচারকার্য শুরু হয়েছে। তবে আদালতে তারা দোষ স্বীকার করেনি। আসিফাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর তা দেশটির হিন্দু জাতীয়তাবাদী ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির জন্য বেশ সমালোচনা বয়ে আনে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বহুদিন ধরে ভারতে সংখ্যালঘুদের ওপর, বিশেষ করে মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের কথা তুলে ধরছে। সমপ্রতি এক প্রতিবেদনে, লন্ডন-ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপ্রসূত হামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশজুড়ে অন্তত ১০ মুসলিম পুরুষ বিচারবহির্ভূতভাবে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হয়েছেন। ওই দুর্বৃত্তদের অনেককে ক্ষমতাসীন বিজেপি’র সমর্থন নিয়ে কাজ করতে দেখা গেছে।
(আল জাজিরা ও বিবিসি অবলম্বনে)
আসিফাকে প্রথমে গলা টিপে হত্যা করার পর তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে মাথায় দুইবার পাথর দিয়ে আঘাত করা হয়। তবে এর আগে বিশেষ পুলিশ কর্মী দীপক খাজুরিয়া একটি ইচ্ছার কথা বলেন। তিনি মেয়েটিকে হত্যার আগে ধর্ষণের প্রস্তাব রাখেন। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আর এভাবেই শিশু মেয়েটিকে আরো একবার গণধর্ষণ করা হয়। এরপরের তিন মাস আসিফার ঘটনাটি কেবলই আরো একটি যৌন হামলার ঘটনায় পরিণত হয়। ভারতে যৌন হামলার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তবে কাশ্মীরে এরকম ঘটনা বিরল। তাই ঘটনাটি নিয়ে স্থানীয় তদন্ত সংস্থা ক্রাইম ব্র্যাঞ্চের ১৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন বের হওয়ার পর তা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। তদন্তে এটা প্রকাশ পায় যে, আসিফার ধর্ষণ ও হত্যা ছিল পদ্ধতিগত, পূর্বপরিকল্পিত ও সানজি রামের ধর্মীয় বিদ্বেষের ফসল। সোমবার এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচারকার্য শুরু হয়েছে। দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই ঘটনায় অভিযুক্তদের প্রথম শুনানি এটি। অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী অঙ্কুর শর্মা জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা আদালতে দোষ স্বীকার করেনি। এছাড়া একটি মিথ্যা-আবিষ্কারক পরীক্ষা দিতেও রাজি হয়েছেন তারা। গত কয়েকদিন ধরেই ভারতের বিভিন্ন শহরে এই ধর্ষণের বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিবাদ চলছে। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র নেতারা অভিযুক্তদের প্রথম দিকে সমর্থন দেয়ায় প্রতিবাদ আরো উত্তাল হয়।
যাযাবর মেয়েটি
আসিফা নামের যাযাবর মেয়েটির পছন্দ ছিল ঘোড়াকে ঘাস খাওয়ানো। রাসানা’র এক কোনায় তার বাড়ির পাশের বনে প্রায়ই ঘোড়াকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যেত সে। সানজি রাম তাকে টার্গেট হিসেবে নির্বাচিত করার পেছনে এটা একটা কারণ ছিল- সে জানতো আসিফা নিয়মিত বনে আসে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, তারা গ্রাম থেকে মুসলিম সম্প্রদায়কে তাড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। বয়সে ছোট হওয়ায় আসিফা ছিল সহজ টার্গেট। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মন্দিরের ভেতর তাকে নিয়মিতভাবে ধর্ষণ করা হয়। তবে এই অপরাধের নেপথ্যে লুকিয়ে ছিল ভিন্ন কারণ- মুসলিম যাযাবর সম্প্রদায়কে গ্রাম থেকে তাড়ানো।
আসিফার মা, রাফিজা বানু (৫৫) তার মেয়ের মৃতদেহ দেখার ভয়ানক দৃশ্যের কথা মনে করে বলেন, ‘তার গালে আঁচড়ের দাগ ছিল। তার ঠোঁট কালো হয়ে গিয়েছিল। তার চোখ ফেটে বের হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল। একজন মায়ের জন্য এটা বেশ ভয়ানক দৃশ্য ছিল। সে ছিল আমার সবচেয়ে ছোট সন্তান। সে অনেক বর্বরতা সহ্য করেছে।’ রাফিজা বানু এখন তার ১৩ বছর বয়সী অপর মেয়েকে নিয়ে চিন্তিত। তিনি বলেন, তারা একটি আট বছর বয়সী মেয়ের সঙ্গে এসব করেছে। কল্পনা করুন একজন ১৩ বছর বয়সী মেয়ের সঙ্গে তারা কি করতে পারে।
যাযাবর পরিবার
আসিফার বাবা মোহাম্মদ আখতার এর বয়স ৪৫ হলেও দেখতে আরো বেশি বয়স্ক লাগে। যাযাবর হওয়ার ছাপ পড়েছে মুখে। কিন্তু এখন তার মাথায় আরো বড় এক বোঝা চেপেছে। নিজের মেয়ের ধর্ষণ ও হত্যার বিচার আদায়। তিনি বলেন, তার পুরো মুখে আঁচড় আর কামড়ের দাগ ছিল। আমি কখনো ভাবিনি তারা একটি শিশুর সঙ্গে এমন করতে পারে। এখনো তার দুধ দাঁতও পড়েনি। জন্মসূত্রে আসিফার বাবা আখতার হলেও সে বেড়ে উঠছিল তার চাচা মোহাম্মদ ইউসুফ এর মেয়ে হিসেবে। নিজের তিন সন্তানকে হারানোর পর আসিফাকে দত্তক নেন ইউসুফ। তিনি জানান, এই ঘটনার পর তার পরিবারকেও হুমকি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তার বলেছে- তাদের লোকজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলে তারা আমাদের সবাইকে এক এক করে মেরে ফেলবে। মৃতদেহ আবিষ্কারের পর হিন্দুরা এসে আমাদের হুমকি দিয়ে গেছে। আসিফার বড় বোন মানেগা (১৩) কথা বলার সময়ও স্তম্ভিত ছিল। সে বলেছে, আমি তার লাশ দেখেছি। আমার এখন অনেক ভয় করে। আমরা খেলিনা, একা একা বাড়ির বাইরে যাই না। আসিফার হত্যা আমাদের চুরমার করে দিয়েছে।
অভিযুক্তরা
পুলিশের প্রতিবেদন অনুসারে, আসিফার হত্যায় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত। এর মধ্যে রয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মকর্তা; তার সন্তান, যে অন্য এক শহর থেকে রাসানা’য় গিয়েছিল নিজের লালসা মেটাতে; তার কিশোর ভাতিজা ও তার বন্ধু; এক বিশেষ পুলিশ কর্মী। সব মিলিয়ে ধর্ষণ, নির্যাতন, হত্যা ও অপহরণের দায়ে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার তাদের বিচারকার্য শুরু হয়েছে। তবে আদালতে তারা দোষ স্বীকার করেনি। আসিফাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর তা দেশটির হিন্দু জাতীয়তাবাদী ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির জন্য বেশ সমালোচনা বয়ে আনে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বহুদিন ধরে ভারতে সংখ্যালঘুদের ওপর, বিশেষ করে মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের কথা তুলে ধরছে। সমপ্রতি এক প্রতিবেদনে, লন্ডন-ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপ্রসূত হামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশজুড়ে অন্তত ১০ মুসলিম পুরুষ বিচারবহির্ভূতভাবে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হয়েছেন। ওই দুর্বৃত্তদের অনেককে ক্ষমতাসীন বিজেপি’র সমর্থন নিয়ে কাজ করতে দেখা গেছে।
(আল জাজিরা ও বিবিসি অবলম্বনে)
No comments