সীমান্ত রক্ষায় ব্যর্থ ইউরোপ : জার্মানি
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ভেস্তে গেছে রেকর্ড পরিমাণ শরণার্থী অনুপ্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টাও। রোববার ইইউ’র নীতির ব্যর্থতার প্রতি কটাক্ষ করে এসব কথা বলেছেন জার্মানির যোগাযোগমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডব্রিন্ড। খবর এএফপি’র। শনিবার জার্মানির মিউনিখে প্রায় ১২ হাজার ২০০ শরণার্থী প্রবেশ করে। এ বছর দেশটি ৮ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার প্রতিশ্র“তি দিলেও অভিবাসীদের অপ্রত্যাশিত অনুপ্রবেশ রাজনৈতিক নেতাদের মারাত্মকভাবে বিচলিত করেছে। এরই মধ্যে চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল কনজারভেটিভ মিত্রদের কাছ থেকে কড়া সতর্কবাণী পেয়েছেন। তারা বলেন, মার্কেল রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
শরণার্থীদের আশ্রয় দিলে তা বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনবে। তাদের এ হুশিয়ারির পরপরই ইইউ’কে কটাক্ষ করে বক্তব্য দিলেন ডব্রিন্ড। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভয়াবহতম এ অভিবাসী ও শরণার্থী সংকট মোকাবেলায় ইউরোপকে আরও কঠোর অবস্থান নিতে হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া দরকার। আর এজন্য যেসব দেশ থেকে তারা পালচ্ছে সেখানে অর্থ সহায়তা দেয়া এবং আমাদের নিজ নিজ সীমানায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে শরণার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ে নাকাল জার্মানি। দেশটির মিউনিখ শহরে একদিনেই ১৩ হাজার ১৫ জন শরণার্থী ঢুকেছে। রোববার মিউনিখ পুলিশ সুপার জানান, ‘আমরা আমাদের ধারণক্ষমতার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেছি।’ জার্মানিতে চলতি বছরেই সাড়ে চার লাখের বেশি শরণার্থী ঢুকেছে। স্মরণকালের ভয়াবহ এ শরণার্থী সংকটে ইউরোপকে জরুরি আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে বার্লিন। একদিনে ৪ হাজার শরণার্থীর হাঙ্গেরি প্রবেশ : সার্বিয়া থেকে রোববার রেকর্ডসংখ্যক চার হাজারের বেশি অভিবাসী হেঁটে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে হাঙ্গেরিতে প্রবেশ করেছে। এদিকে হাঙ্গেরি কর্তৃপক্ষ সীমান্ত বন্ধ করার প্রস্তুতি শেষ করেছে। বিপুলসংখ্যক অভিবাসীর চাপ সামলাতে ইউরোপকে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। এদের অধিকাংশই সিরিয়া থেকে এসেছে। সহিংসতা ও দারিদ্র্যের কারণে তারা দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে। যারা সীমান্ত পার হয়ে হাঙ্গেরিতে প্রবেশ করেছে তাদের সঙ্গে দেশটির আচরণ ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। কর্মকর্তারা অনুমান করেছেন, চলতি বছর এ পর্যন্ত ১ লাখ ৭৫ হাজার অভিবাসী সার্বিয়া থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে হাঙ্গেরি প্রবেশ করেছে। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান দেশের সীমান্ত বন্ধ এবং অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতারের অঙ্গীকার করেছেন। দেশটি সার্বিয়া সীমান্তে ৪ মিটার (১৩ ফুট) উঁচু বেড়া নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ করছে। এদিকে ইউরোপের ১৫টি দেশে অভিবাসনের জন্য আবেদন করছে সিরিয়ান শরণার্থীরা।
এরই মধ্যে জার্মানিতে পৌঁছেছে ৯৮ হাজার ৭৮৩ জন, ব্রিটেন ৭ হাজার ৩০ জন, সুইডেন ৬৪ হাজার ৬৮৫ জন অভিবাসী গ্রহণ করেছে আনুষ্ঠানিকভাবে। অন্যদিকে সিরিয়ার নিকটবর্তী দেশ তুরস্ক ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৯৯৯ জন অভিবাসীকে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দিয়েছে। এ তালিকায় জর্ডান ৬ লাখ ২৯ হাজার ২৬৬ জনকে আশ্রয় দিয়েছে। লেবাননে আশ্রয় নিয়েছে ১১ লাখ ১৩ হাজার ৯৪১ জন। অন্যদিকে যুদ্ধকবলিত ইরাকেও ১ লাখ সিরীয় শরণার্থী আশ্রয় গ্রহণ করেছে। শরণার্থীদের স্বাগত জানিয়ে ইউরোপজুড়ে মিছিল : শরণার্থী ও অভিবাসীদের সমর্থনে ডাকা বিশেষ কর্মসূচি ‘ডে অব অ্যাকশন’ উপলক্ষে ইউরোপের বেশ কয়েকটি শহরে ও অস্ট্রেলিয়ায় আয়োজিত মিছিলে লাখো মানুষ অংশ নিয়েছে। তবে কয়েকটি দেশে শরণার্থী ও অভিবাসীবিরোধী মিছিলও হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে শরণার্থীদের ঢল সামলাতে হিমিশিম খাচ্ছে ইউরোপ। এসব শরণার্থীর অধিকাংশই সিরিয়ার নাগরিক, নিজ দেশে চলমান গৃহযুদ্ধ ও দারিদ্র্যের মুখে তারা পালিয়ে ইউরোপে চলে আসছেন। লন্ডনে প্রায় লাখো মানুষ শরণার্থী ও অভিবাসীদের সমর্থনে মিছিল করে ডাউনিং স্ট্রিটে অবস্থিত যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে এগিয়ে যায়। এদের অনেকের হাতেই ‘সীমান্ত খুলে দাও’ ও ‘শরণার্থীরা আসো’ লেখা প্লাকার্ড ছিল। যুক্তরাজ্যের অন্যান্য শহরেও একই ধরনের মিছিল হয়েছে। ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, তারা আগামী পাঁচ বছরে ২০ হাজার শরণার্থীকে গ্রহণ করবে। তবে এদের ইউরোপে হাজির হওয়া শরণার্থীদের থেকে না, সরাসরি মধ্যপ্রাচ্যের শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে। সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে এক হাজারের মতো মানুষ মিছিল করে শরণার্থীদের জন্য আরও বেশি সহায়তা দেয়ার আবেদন জানিয়েছে। ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে পার্লামেন্ট ভবনের সামনে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ জড়ো হয়ে স্লোগান তোলে, ‘উচ্চৈঃস্বরে এবং পরিষ্কারভাবে বলুন, শরণার্থীদের এখানে স্বাগতম।’ জার্মানির হামবুর্গে গত সপ্তাহের শুরুর দিকে উগ্র-ডানপন্থীদের বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করা হয়। নব্য-নাৎসিদের বহন করা হচ্ছে এমন ধারণা থেকে শহরটিতে একটি ট্রেনে হামলা চালায় বামপন্থী মিছিলকারীরা। এরপর শনিবার হামবুর্গের প্রধান রেলস্টেশন বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস ও অস্ট্রেলিয়ায় শরণার্থীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে মিছিল হয়েছে। পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি দেশে শরণার্থী ও অভিবাসীবিরোধী মিছিলও হয়েছে।
No comments