সবেমাত্র ওজু সেরে উঠে দাঁড়িয়েছি
বাইরে তখন বালুঝড়ের দাপাদাপি। ভারি বাতাসে মরুঝড়ের আগমনী সাইরেন। মাগরিবের নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আমরা। সবেমাত্র ওজু সেরে উঠে দাঁড়িয়েছি। হঠাৎ বেড়ে গেল দমকা হাওয়ার দাপট- মেঘ চমকানির বজ নিনাদের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হল তুমুল বৃষ্টি। ঝড়ো বাতাসে ভেঙেচূড়ে পড়ছিল জানালার কাচগুলো। ভাঙা কাচের ফাঁকা দিয়ে বৃষ্টি এসে পড়ছিল সবার গায়ে। কাগজের ঠোঙার মতো উড়ে বেড়াচ্ছিল নির্মাণাধীন স্থাপনা ঢেকে রাখার হার্ডবোর্ডগুলো। ঠিক এসময়ে কড়মড় শব্দে ভেঙে পড়ল একটি দানবাকৃতির ক্রেন। আর এরপরই ইতিহাসের পাতায় লেখা হল আরেকটি ‘মক্কা ট্র্যাজেডি’। শিকার হল নিচে বিশ্রাম নিতে থাকা হজব্রত পালনে আসা মানুষগুলো। শুক্রবার কাবা শরিফের মসজিদে ঘটা মর্মান্তিক দুর্ঘটনার এমন বর্ণনা দিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ইয়াহিয়া আল হাশেমি (৩০)।
সিএনএনের স্থানীয় প্রতিবেদকের বাস্তব অভিজ্ঞতার এ ঘটনা শনিবার প্রকাশ করেছে সিএনএন। হাশেমি বলেন, আকস্মিক এ ঘটনার মুহূর্তে সবাই ছুটছিল বহির্গমন পথের দিকে। ক্রেনের নিচে চাপা পড়ে তাৎক্ষণিক মারা যায় অনেকেই। আহতদের চিৎকার শোকের বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল এ গ্রান্ড মসজিদের আনাচে-কানাচে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, এ যাবত নিহত হয়েছে ১০৭ জন, আহত ২৮৪ জন। হাজিদের কল্যাণে নির্মিতব্য স্থাপনায় ব্যবহৃত ক্রেনের নিচে চাপা পড়ে তাদেরই মৃত্যু এক দুর্ভাগ্যের ছাপ ফেলেছে। এটা খুবই দুঃখজনক। বলছিলেন সৌদির খালেক আল-মায়িনা পত্রিকার সম্পাদক। তিনি বলেন, হজ শুরুর মাত্র ১০ দিন আগের এ মর্মান্তিক ঘটনা খুবই হৃদয়বিদারক। তারপরও কপাল ভালো। কেননা ৪ বা ৫ ঘণ্টা আগে এ ঘটনা ঘটলে হতাহতের সংখ্যা হাজারে ছাড়াত। এ সপ্তাহে হজ উপলক্ষে অন্তত ৮ লাখ মানুষের সমাগম ঘটেছে। প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে মিনায় পাথর নিক্ষেপের সময় সংকীর্ণ পথে চলতে গিয়ে চাপা পড়ে মারা যায় ৩৬৩ জন। হজের ইতিহাসে এটাই ছিল ভয়াবহতম দুর্ঘটনা।
No comments