সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবিতে ৩১শে মার্চ অনশন
দু’বছর পার
হলেও উদ্ঘাটন হয়নি সাংবাদিক সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের
রহস্য। হত্যাকাণ্ডের বিচারে কোন প্রকার কিনারা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে
সাংবাদিক সমাজ। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে
চাওয়ার অনুরোধ করেছেন সাগর সারোয়ারের মা সালেহা মুনীর। অপরদিকে অপরাধী
শনাক্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতার কারণে লজ্জা ও দুঃখ প্রকাশ
করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
গতকাল
সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে পরিবার, সাংবাদিক সমাজের
পক্ষ প্রয়াত সাগর-রুনিকে স্মরণ করা হয়। প্রকৃত খুনিদের বিচারের আওতায় আনার
দাবিতে ৩১শে মার্চ অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সাংবাদিক নেতারা। জাতীয়
প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা দাবি করেন,
সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে একটি মহল সরকারকে বিভ্রান্ত করেছে। এ
হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ সাংবাদিকদের সকল সমস্যায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন অব্যাহত
থাকবে। সমাবেশে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের
দুই অংশের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন সাংবাদিক ও সামাজিক সংগঠন যোগ দেয়।
সমাবেশের সভাপতির বক্তব্যে বিএফইউজের একাংশের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সাগর-রুনির পরিবার অভিমান থেকে আজ বলছে আমরা তাদের ভুলে যাই। এতে সরকারের লজ্জা হওয়া উচিত। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার না করে সরকার তিন ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। প্রথমত, দেশের সাধারণ নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। দ্বিতীয়ত, গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। তৃতীয়ত, জনগণ যাদের বেতন দেয় সে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। তিনি সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখেন, খুনিরা এতটাই প্রভাবশালী, এতটাই দক্ষ যে সরকার তাদের স্পর্শ করতে পারছে না। তিনি তথ্যমন্ত্রী গণমাধ্যমের ওয়েজবোর্ড নিয়ে যে অসত্য তথ্য দিয়েছেন তার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, এ বিষয় নিয়ে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাংবাদিক নেতারা দেখা করবেন। বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেয়া, জেলে থাকা সাংবাদিকদের মুক্তি ও সাংবাদিকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ঘোষণাও দেন তিনি। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারি সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, সকল ভেদাভেদ ভুলে সাংবাদিকদের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে। ডিইউজে এক অংশের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ বলেন, প্রশাসন চাইলে খুনিদের সহজেই ধরতে পারে। বিভিন্ন ঘটনায় তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রশাসনের ব্যর্থতা মানে সরকারের ব্যর্থতা। বিএফইউজে একাংশের মহাসচিব ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, সাগর-রুনির বিচার নিয়ে সাংবাদিকদের মাঝে একটা ভয় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। সাংবাদিকদের মাঝে যে ঐক্যের সৃষ্টি হয়েছে তা যেন কোন বেঈমানির বিনিময়ে বিক্রি না হয়ে যায়। কেউ যেন সরাকরের কাছ থেকে সুবিধার বিনিময়ে বিপথগামী না হয়।
বিএফইউজে একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদ্ঘাটনে ব্যর্থতা স্বীকার করেছে। ফলে তারা কিভাবে চাকরিতে বহাল থাকেন? এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা রকম ছলচাতুরি ও প্রতারণা চলছে। বিচারহীনতার কারণে সাগরের মা সাংবাদিকদের যে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন তা থেকে কেউ মুক্তি পাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএফইউজে মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া, ডিইউজে মহাসচিব কুদ্দুস আফ্রাদ, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান প্রমুখ।
এদিকে সাগর-রুনির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় সাগর সারোয়ারের মা সালেহা মুনীর হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বললেন, আন্দোলন থামিও না, যত সাংবাদিক মারা গেছে, সবার বিচারের দাবিতে তোমরা আন্দোলন চালিয়ে যাও। আমি বিচার চাই, আমার মেঘের জন্য আমি বিচার চাই। তিনি বলেন, সরকারের বহু আশ্বাসের পরেও এ হত্যাকাণ্ডের কোন কিনারা হয়নি। বিচার প্রক্রিয়া ধামাচাপা দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শাহেদ চৌধুরী বলেন, সাগর-রুনির হত্যার বিচার নিয়ে ইতিপূর্বে সরকার ও স্বরাষ্টমন্ত্রী জজ মিয়া নাটক সাজিয়েছিল। এখন আমরা এটা হতে দেবো না। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আপনি বলেছিলেন দারোয়ানকে ধরলেই হত্যাকারীদের কূল-কিনারা পাওয়া যাবে। আপনি তা করতে পারেননি। এর মানে কি এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কি তাহলে আপনিও আছেন? দুর্নীতি করার কারণে এবার মন্ত্রিসভায় আপনি ঠাঁই পাননি। স্মরণসভায় ৩১শে মার্চ ডিআরইউর সামনে দিনব্যাপী প্রতীকী অনশনের কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, কেউ পাশে থাক আর না থাক, সাগর-রুনির হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে ডিআরইউ আন্দোলন চালিয়ে যাবে। ৩১শে মার্চের মধ্যে দাবি আদায় না হলে কাফনের কাপড় পরে মিছিল, আমরণ অনশন ও রাজপথ অবরোধের মতো কর্মসূচি দিতে আমরা বাধ্য হবো। এক মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে সাগর-রুনিকে স্মরণ করার পর শেষ হয় এ স্মরণসভা। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)-র সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খানের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)-র সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদ, ডিআরইউ সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, সাংগঠনিক সম্পাদক মুরসালিন নোমানী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এদিকে দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে সাগর-রুনির কবরে ফুল দিয়ে তাদের স্মরণ করেন স্বজনরা।
No comments