আইনের শাসন সমুন্নত রাখুন by কাজী আলী রেজা
ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অনাহার, বেকারত্ব ও বঞ্চনার পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে একটি উন্নততর কল্যাণকর ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৪৫ সালে গঠিত হয় জাতিসংঘ। সেই প্রচেষ্টা আজও অব্যাহত রয়েছে।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার এই নিরন্তর প্রচেষ্টায় জাতিসংঘকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করাই শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী দশকগুলোতে ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মধ্যকার ঠান্ডা-যুদ্ধ এবং এর ফলে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার বাস্তবতা মোকাবিলা করা, অসহিষ্ণুতাকে সহিষ্ণুতা দিয়ে জয় করা, শক্তিমত্তাকে সমন্বয়ে পর্যবসিত করা এবং যুদ্ধকে শান্তির প্রক্রিয়ায় রূপান্তর করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী গঠিত হয়। শান্তিরক্ষা যুদ্ধ ও সংঘাতের বিকল্প শক্তি এবং বিশ্বশান্তির নতুন কৌশল।
১৯৪৮ সালের মে মাসে ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যকার সাময়িক যুদ্ধবিরতি আন্তর্জাতিক এখতিয়ারে ন্যস্ত করার পর থেকে সেখানে ৩৬ সদস্যের জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক দল ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের ইতিহাসে সর্বপ্রথম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এই মিশনের নাম দেওয়া হয় ইউএনটিএসও। দ্বিতীয় মিশনটি পাঠানো হয় ১৯৪৯ সালের জানুয়ারি মাসে। কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার এই মিশনের নাম ইউএনএমওজিআইপি।
বিবদমান দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠা ও আর্তমানবতার কল্যাণ এবং বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা বাহিনীর অবদান ও আত্মত্যাগের মহিমাকে স্মরণ করে ২০০৩ সালের ২৯ মে প্রথম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস পালিত হয়। তখন থেকে প্রতিবছর এ দিবসটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
শান্তিরক্ষা জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ, সফল ও দৃশ্যমান কার্যক্রম। এই কার্যক্রমের বর্ণনা দিতে গিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, সনদের প্রথম অনুচ্ছেদের প্রথম বাক্য, পরবর্তী প্রজন্মকে যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে মুক্ত রাখার লক্ষ্য বাস্তবায়নে শান্তিরক্ষীরা কাজ করে যাচ্ছেন।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে: নিবারক কূটনীতি, শান্তি প্রতিষ্ঠা, শান্তিরক্ষা ও শান্তি বিনির্মাণ। নিবারক কূটনীতি, শান্তিরক্ষায় অলক্ষ্যে কাজ করে যায় এবং প্রায়ই তেমন আলোচিত হয় না। আর শান্তি প্রতিষ্ঠার কূটনীতির সাফল্য শান্তিরক্ষা ও শান্তি বিনির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি করে।
শান্তিরক্ষার জন্য চাহিদা আগে যেমন ছিল এখনো তা-ই আছে। বাস্তবিক অর্থে আগের চেয়ে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের আওতা আরও ব্যাপক ও বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়েছে। শান্তিরক্ষীরা এখন যুদ্ধবিরতি রক্ষা করছেন, সীমান্ত পর্যবেক্ষণ করছেন, সাবেক যোদ্ধাদের নিরস্ত্র করছেন, আপস-মীমাংসায় সহায়তা করছেন, মানবিক সাহায্য দেওয়ার সুযোগ তৈরি করছেন, শরণার্থী ও বাস্তুত্যাগীদের ঘরবাড়িতে ফিরতে সাহায্য করছেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচন, আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পরিবেশ নিশ্চিত করছেন।
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৫টি শান্তিরক্ষা কার্যক্রম চালু আছে। তা ছাড়া ১২টি রাজনৈতিক মিশন কাজ করে যাচ্ছে। এগুলোতে নিয়োজিত শান্তিরক্ষীর সংখ্যা এক লাখ ২০ হাজার। এই সংখ্যাটি সর্বশীর্ষে পৌঁছে গত বছরের মে মাসে, যা ছিল এক লাখ ২৬ হাজার।
নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক ২০০০ সালে গৃহীত নারী, শান্তি ও নিরাপত্তাবিষয়ক ১৩২৫ নম্বর প্রস্তাবে শান্তিরক্ষায় নারীর ভূমিকাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই প্রস্তাবে শান্তিরক্ষায় নারী পুলিশের অংশীদারি ২০১৪ সাল নাগাদ ২০ শতাংশে পৌঁছার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর পর থেকে নারীরা বিভিন্ন শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে অংশ নিয়ে আসছে। বর্তমানে নারী পুলিশ শান্তিরক্ষীর হার ৯ শতাংশ।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এলেইন-লি-রয় বাংলাদেশ থেকে ১৪০ সদস্যের নারী পুলিশ সদস্যকে শান্তিরক্ষা বাহিনীতে নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিলে শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের নারীদের অবদানের পথ আরও প্রশস্ত হয়। ওই বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভাষণে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের নীতিনির্ধারণী স্তরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বের জোর দাবি জানিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, বর্তমানে চালু ১৫টি মিশনের মধ্যে তিনটির প্রধান হলেন নারী, আর এই তিনজনের একজন বাংলাদেশের আমিরা হক। তিনি তিমুর লিস্তের মিশনপ্রধান। অপর দুই নারী নিযুক্ত আছেন লাইবেরিয়া ও সাইপ্রাসে।
সেনাবাহিনীর ১৫ জন সামরিক পর্যবেক্ষক প্রেরণের মধ্য দিয়ে ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা ৪৫টি মিশনে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে ১০টি মিশনে মোট ১০ হাজার ৭৪৩ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী কর্মরত আছেন। এর মধ্যে পুলিশ সদস্যের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের ভূমিকা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সুনাম অর্জনের পাশাপাশি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। ২০১০ সালের গ্লোবাল পিস ইনডেক্সে দক্ষিণ এশিয়ায় নেপালের পরই বাংলাদেশের স্থান।
শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবদান সারা বিশ্বে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। এই শান্তিরক্ষার কাজ করতে গিয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশকে চড়া মূল্যও দিতে হয়েছে। বিশ্বশান্তি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ১০৩ জন শান্তিরক্ষী তাঁদের জীবন উত্সর্গ করেছেন।
এবারের শান্তিরক্ষী দিবসের প্রতিপাদ্য, আইনের শাসন সমুন্নত রাখা। এ উপলক্ষে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেন, ‘আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে প্রয়োজন পুলিশ, বিচারব্যবস্থা এবং সংশোধনমূলক ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থাকে শক্তিশালী করা। এ কারণেই জাতিসংঘ পুলিশকে কখনো তাদের ক্ষমতা অপব্যবহার না করার প্রশিক্ষণ দেয়, ন্যায়বিচার প্রদান নিশ্চিত করতে আদালত যাতে সঠিকভাবে কাজ করতে পারেন, সে জন্য আদালতকে সহায়তা দেয় এবং আটক ব্যক্তিদের আটকাবস্থা যাতে মানবিক হয়, তার জন্য কাজ করে।’
শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সাফল্যের মূল কারণ, বিবদমান পক্ষগুলোর জাতিসংঘের নিরপেক্ষতার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস। কয়েক বছর ধরে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী শীর্ষ দেশের তালিকায় প্রথম অথবা দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করে জাতিসংঘের এই সাফল্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে বাংলাদেশ।
এ কথা আজ সবারই জানা, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় উত্সর্গকৃত যুদ্ধের বিকল্প শক্তি শান্তিরক্ষীরা যুদ্ধের হাতিয়ার নন; বরং শান্তির অগ্রদূত। আজকের এই শান্তিরক্ষী দিবসে চলুন সবাই তাঁদের সম্মান জানাই।
কাজী আলী রেজা: অধিকর্তা, জাতিসংঘ তথ্যকেন্দ্র, ঢাকা।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার এই নিরন্তর প্রচেষ্টায় জাতিসংঘকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করাই শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী দশকগুলোতে ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মধ্যকার ঠান্ডা-যুদ্ধ এবং এর ফলে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার বাস্তবতা মোকাবিলা করা, অসহিষ্ণুতাকে সহিষ্ণুতা দিয়ে জয় করা, শক্তিমত্তাকে সমন্বয়ে পর্যবসিত করা এবং যুদ্ধকে শান্তির প্রক্রিয়ায় রূপান্তর করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী গঠিত হয়। শান্তিরক্ষা যুদ্ধ ও সংঘাতের বিকল্প শক্তি এবং বিশ্বশান্তির নতুন কৌশল।
১৯৪৮ সালের মে মাসে ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যকার সাময়িক যুদ্ধবিরতি আন্তর্জাতিক এখতিয়ারে ন্যস্ত করার পর থেকে সেখানে ৩৬ সদস্যের জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক দল ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের ইতিহাসে সর্বপ্রথম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এই মিশনের নাম দেওয়া হয় ইউএনটিএসও। দ্বিতীয় মিশনটি পাঠানো হয় ১৯৪৯ সালের জানুয়ারি মাসে। কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার এই মিশনের নাম ইউএনএমওজিআইপি।
বিবদমান দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠা ও আর্তমানবতার কল্যাণ এবং বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা বাহিনীর অবদান ও আত্মত্যাগের মহিমাকে স্মরণ করে ২০০৩ সালের ২৯ মে প্রথম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস পালিত হয়। তখন থেকে প্রতিবছর এ দিবসটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
শান্তিরক্ষা জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ, সফল ও দৃশ্যমান কার্যক্রম। এই কার্যক্রমের বর্ণনা দিতে গিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, সনদের প্রথম অনুচ্ছেদের প্রথম বাক্য, পরবর্তী প্রজন্মকে যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে মুক্ত রাখার লক্ষ্য বাস্তবায়নে শান্তিরক্ষীরা কাজ করে যাচ্ছেন।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে: নিবারক কূটনীতি, শান্তি প্রতিষ্ঠা, শান্তিরক্ষা ও শান্তি বিনির্মাণ। নিবারক কূটনীতি, শান্তিরক্ষায় অলক্ষ্যে কাজ করে যায় এবং প্রায়ই তেমন আলোচিত হয় না। আর শান্তি প্রতিষ্ঠার কূটনীতির সাফল্য শান্তিরক্ষা ও শান্তি বিনির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি করে।
শান্তিরক্ষার জন্য চাহিদা আগে যেমন ছিল এখনো তা-ই আছে। বাস্তবিক অর্থে আগের চেয়ে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের আওতা আরও ব্যাপক ও বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়েছে। শান্তিরক্ষীরা এখন যুদ্ধবিরতি রক্ষা করছেন, সীমান্ত পর্যবেক্ষণ করছেন, সাবেক যোদ্ধাদের নিরস্ত্র করছেন, আপস-মীমাংসায় সহায়তা করছেন, মানবিক সাহায্য দেওয়ার সুযোগ তৈরি করছেন, শরণার্থী ও বাস্তুত্যাগীদের ঘরবাড়িতে ফিরতে সাহায্য করছেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচন, আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পরিবেশ নিশ্চিত করছেন।
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৫টি শান্তিরক্ষা কার্যক্রম চালু আছে। তা ছাড়া ১২টি রাজনৈতিক মিশন কাজ করে যাচ্ছে। এগুলোতে নিয়োজিত শান্তিরক্ষীর সংখ্যা এক লাখ ২০ হাজার। এই সংখ্যাটি সর্বশীর্ষে পৌঁছে গত বছরের মে মাসে, যা ছিল এক লাখ ২৬ হাজার।
নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক ২০০০ সালে গৃহীত নারী, শান্তি ও নিরাপত্তাবিষয়ক ১৩২৫ নম্বর প্রস্তাবে শান্তিরক্ষায় নারীর ভূমিকাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই প্রস্তাবে শান্তিরক্ষায় নারী পুলিশের অংশীদারি ২০১৪ সাল নাগাদ ২০ শতাংশে পৌঁছার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর পর থেকে নারীরা বিভিন্ন শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে অংশ নিয়ে আসছে। বর্তমানে নারী পুলিশ শান্তিরক্ষীর হার ৯ শতাংশ।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এলেইন-লি-রয় বাংলাদেশ থেকে ১৪০ সদস্যের নারী পুলিশ সদস্যকে শান্তিরক্ষা বাহিনীতে নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিলে শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের নারীদের অবদানের পথ আরও প্রশস্ত হয়। ওই বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভাষণে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের নীতিনির্ধারণী স্তরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বের জোর দাবি জানিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, বর্তমানে চালু ১৫টি মিশনের মধ্যে তিনটির প্রধান হলেন নারী, আর এই তিনজনের একজন বাংলাদেশের আমিরা হক। তিনি তিমুর লিস্তের মিশনপ্রধান। অপর দুই নারী নিযুক্ত আছেন লাইবেরিয়া ও সাইপ্রাসে।
সেনাবাহিনীর ১৫ জন সামরিক পর্যবেক্ষক প্রেরণের মধ্য দিয়ে ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা ৪৫টি মিশনে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে ১০টি মিশনে মোট ১০ হাজার ৭৪৩ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী কর্মরত আছেন। এর মধ্যে পুলিশ সদস্যের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের ভূমিকা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সুনাম অর্জনের পাশাপাশি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। ২০১০ সালের গ্লোবাল পিস ইনডেক্সে দক্ষিণ এশিয়ায় নেপালের পরই বাংলাদেশের স্থান।
শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবদান সারা বিশ্বে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। এই শান্তিরক্ষার কাজ করতে গিয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশকে চড়া মূল্যও দিতে হয়েছে। বিশ্বশান্তি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ১০৩ জন শান্তিরক্ষী তাঁদের জীবন উত্সর্গ করেছেন।
এবারের শান্তিরক্ষী দিবসের প্রতিপাদ্য, আইনের শাসন সমুন্নত রাখা। এ উপলক্ষে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেন, ‘আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে প্রয়োজন পুলিশ, বিচারব্যবস্থা এবং সংশোধনমূলক ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থাকে শক্তিশালী করা। এ কারণেই জাতিসংঘ পুলিশকে কখনো তাদের ক্ষমতা অপব্যবহার না করার প্রশিক্ষণ দেয়, ন্যায়বিচার প্রদান নিশ্চিত করতে আদালত যাতে সঠিকভাবে কাজ করতে পারেন, সে জন্য আদালতকে সহায়তা দেয় এবং আটক ব্যক্তিদের আটকাবস্থা যাতে মানবিক হয়, তার জন্য কাজ করে।’
শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সাফল্যের মূল কারণ, বিবদমান পক্ষগুলোর জাতিসংঘের নিরপেক্ষতার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস। কয়েক বছর ধরে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী শীর্ষ দেশের তালিকায় প্রথম অথবা দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করে জাতিসংঘের এই সাফল্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে বাংলাদেশ।
এ কথা আজ সবারই জানা, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় উত্সর্গকৃত যুদ্ধের বিকল্প শক্তি শান্তিরক্ষীরা যুদ্ধের হাতিয়ার নন; বরং শান্তির অগ্রদূত। আজকের এই শান্তিরক্ষী দিবসে চলুন সবাই তাঁদের সম্মান জানাই।
কাজী আলী রেজা: অধিকর্তা, জাতিসংঘ তথ্যকেন্দ্র, ঢাকা।
No comments