বিশ্বের ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ক্ষুধার্ত বা খাদ্যের জন্য সংগ্রাম করা মানুষের পরিসংখ্যান করা সহজ হলেও এর সমীকরণ মেলানো অনেক জটিল বলে মনে করছেন তারা। কেননা, এসব মানুষের কষ্ট লাঘবে যে পরিমাণ অর্থ সহায়তার প্রয়োজন ধনী দেশগুলোর পক্ষ থেকে তা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে বর্তমানে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ৩০ কোটি ৭০ লাখ। এই সংখ্যার এখনো ৬০ শতাংশ মানুষের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এর অর্থ হচ্ছে ২০২৫ সালে কমপক্ষে ১০ কোটি ১৭ লাখ মানুষ খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়, এ বছর বিশ্ব জুড়ে মানবিক সাহায্যের জন্য ৪৯.৬ বিলিয়ন অর্থ সহায়তার তহবিলের আবেদন জানায় জাতিসংঘ। বছর শেষে চাহিদার মাত্র ৪৬ শতাংশ অর্থ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। টানা দ্বিতীয় বছরের মতো জাতিসংঘ চাহিদার তুলনায় অর্ধেকের কম তহবিল সংগ্রহ করেছে। যার ফলে তহবিলে অর্থ সংকট প্রকট হচ্ছে। এতে সকল ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছাতে ব্যর্থ হচ্ছে তারা। এই সংকটের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সিরিয়ার মতো জায়গাগুলোতে। কেননা, এসব অঞ্চলে বছরে প্রায় ৬০ লাখ মানুষকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছায় জাতিসংঘের খাদ্য সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। তবে অর্থ সংকটে এ বছরের শুরুতে সে সংখ্যা ১০ লাখে নামাতে বাধ্য হয়েছে তারা। রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির সম্পদ সংগ্রহ বিষয়ক সহকারী নির্বাহী পরিচালক রানিয়া দাগাশ কামার। এ বছরের মার্চে দাগাশ কামার সিরিয়ার খাদ্য সহায়তা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন। এক সাক্ষাৎকারে এই নারী বলেছেন, সেখানকার বিষয়টি হচ্ছে- আমরা ক্ষুধার্তদের খাবার অন্য ক্ষুধার্তদের মাঝে বিতরণ করছি। বিশ্ব জুড়ে সংঘাত, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিরূপ আবহাওয়ার ফলে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা। রয়টার্সকে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক উপ-প্রধান এবং জরুরি ত্রাণ সমন্বয়কারী টম ফ্লেচার বলেছেন, ‘চরম খাদ্য সংকটে থাকা মানুষদের সহায়তা কমাতে বাধ্য হয়েছি।
কারণ আর্থিক চাপ এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বৈরী পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় বিশ্বের বেশ কিছু ধনী দেশ তাদের সহায়তার পরিমাণ পুনর্গঠন করছে। জাতিসংঘের অন্যতম বৃহৎ দাতা দেশ জার্মানি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে দেশটি এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ কোটি ডলার তহবিল হ্রাস করেছে। এ ছাড়া আগামী বছরের জন্যও ১ বিলিয়ন ডলার সহায়তা হ্রাসের আবেদন করেছে ইউরোপের ওই দেশটি। ফেব্রুয়ারিতে ফেডারেল নির্বাচনের পর নতুন সংসদ গঠনের পর আগামী বছরের ব্যয় নির্ধারণ করবে তারা। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের দিকেও তাকিয়ে আছে বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলো। কেননা, জানুয়ারিতে তিনি তার দ্বিতীয় টার্মের কাজ শুরু করবেন। মানবিক সহায়তার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন কী ভাবছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তিনি তার প্রথম মেয়াদে মানবিক সহায়তা কমানোর চেষ্টা করেছিলেন। এবার তিনি এমন ব্যক্তিদের মনোনয়ন দিয়েছেন যারা মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে বিদেশি সহায়তা কমানোর সুযোগ রয়েছে। বিশ্ব জুড়ে ক্ষুধা প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। গত পাঁচ বছরে দেশটি ৬৪.৫ বিলিয়ন ডলার মানবিক সহায়তা প্রদান করেছে। যা জাতিসংঘের প্রাপ্ত মোট অর্থের ৩৮ শতাংশ।
No comments