হাসিনাকে ‘না’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে
নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ১৮দলীয় জোট নেতা
খালেদা জিয়া। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
খালেদা
জিয়া বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবো না।
সরকার র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি দিয়ে নির্বাচন করতে চাইলে সেটা হবে ভুল। সেটা
হতে দেয়া হবে না। বাংলাদেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে
এবং গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসবে। কোন স্বৈরাচারী সরকার আসবে না।
সরকারকে সঙ্কট সমাধানের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এখনও সময় আছে। সংসদে
সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। সংবিধান সংশোধন করুন। যতই সময় যাচ্ছে নির্দলীয় সরকারের
দাবি তত জোরালো হচ্ছে। সরকার ততই জনসমর্থন হারাচ্ছে। যত দিন যাবে জনগণ ততই
আপনাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাবে। ততই ক্ষতি হবে আপনাদের। সময় থাকতে সঠিক
সিদ্ধান্ত নিন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সরকারকে
সমর্থন দেয়াসহ অসাংবিধানিক কাজ করেছেন, অগণতান্ত্রিক কাজ করেছেন। অথচ তিনি
এখন গণতন্ত্র ও সংবিধানের কথা বলছেন। খালেদা জিয়া বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের
অধীনে নির্বাচন দেখেছি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচন দেখেছি।
আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন করা মানে নিজেদের ক্ষতি করা। বর্তমান সরকারের
অধীনে অনুষ্ঠিত ভোলা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপ-নির্বাচনের পর আমরা কোন নির্বাচনে
অংশগ্রহণ করিনি। কারণ সে উপনির্বাচন থেকে আমাদের শিক্ষা হয়েছে, আমরা
শিক্ষা নিয়েছি। তিনি বলেন, সরকার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের উদাহারণ দেয়।
কিন্তু সিটি করপোরেশন নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচন এক নয়। সরকার মনে করেছিল,
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তারা একতরফা গোল দেবে। কিন্তু তাদের অপকর্মের
কারণে ওইসব সিটি করপোরেশনের মানুষ বিরক্ত হয়ে পরিবর্তন এনেছে। আমরা
প্রার্থী না দিলেও তারা আমাদের নেতাদের প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নিয়েছে। তারা
আমাদের দল করলেও জনপ্রতিনিধি তো। ৫ সিটি করপোরেশনের মানুষ সরকার সমর্থিত
প্রার্থীকে পরাজিত করেছে। সে ভয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন একবার দেয়ার
কথা বলেন, আবার আটকে দেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সরকার সবসময় সংবিধানের
কথা বলে। তাহলে কেন আমাদের ডিসিসির নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি সাদেক হোসেন
খোকাকে সরিয়ে সেখানে অনির্বাচিত প্রতিনিধি বসানো হলো? সরকার এর কি জবাব
দেবে? প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আপনি সব সময় সংবিধানের কথা
বলেন। তাহলে ২০০৭ সালের ২২শে জানুয়ারি সাংবিধানিক নির্বাচন কেন হতে দেননি।
সে নির্বাচন হতো নিরপেক্ষ বিচারপতি কেএম হাসানের অধীনে। সেদিন আপনারা
সংবিধান মানেননি, সংবিধান অনুযায়ী কেএম হাসানকে মানেননি। তাহলে আপনার অধীনে
কিভাবে নির্বাচন হবে? আপনার অধীনে কোন নির্বাচনে যাবো না। সম্মেলনে
পেশাজীবী নেতাদের ‘আপস না করার অনুরোধে’র প্রেক্ষিতে খালেদা জিয়া বলেন,
সবাই বলেছেন- নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাচনের কথা। এ
দাবিতে আমরা আন্দোলন করবো। কেউ যদি আমার সঙ্গে না-ও আসে, আমি একলা হলেও
দাবি থেকে সরবো না। এ সময় সমবেত পেশাজীবীরা দাঁড়িয়ে সমস্বরে তাকে সমর্থন
জানান। এ সময় খালেদা জিয়া বলেন, অনেক কষ্ট করে আমরা গণতন্ত্র অর্জন করেছি।
গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার জন্য নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই।
প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে চাই- আপনি যেভাবে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন সে
নির্বাচনের ইশতিহারে কি সংবিধান সংশোধনের কথা বলেছেন? এ ব্যাপারে জনগণের
ম্যান্ডেট আপনি নেননি। চুপিসারে সংবিধান সংশোধন করেছেন। এখন আদালতের দোহাই
দিচ্ছেন। আদালত তো আপনাদের কথায় চলে। কাকে জেলে নিতে হবে, কাকে নির্যাতন
করতে হবে- সেটা তো আপনারাই বলে দেন। বিরোধী নেতা বলেন, এখানে একটি
পেশাজীবীদের সমাবেশ হচ্ছে। এখানে সবাই দেশের বিশিষ্ট নাগরিক। বাইরে
পুলিশ-র্যাবের গাড়ি দেখে মনে হচ্ছে, এটা কোন যুদ্ধক্ষেত্র। এরই নাম কি
গণতন্ত্র? এ দৃশ্যের মাধ্যমেই আপনাদের চেহারা ফুটে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীর
উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনার কথা কেউ বিশ্বাস করে না। কারণ আপনি মিথ্যা কথা
বলেন। বাংলাদেশ যদি রংহেডেড মানুষের হাতে পড়ে তাহলে তো রংপথে চলবেই।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে খালেদা জিয়া আরও বলেন, আপনি যদি মনে করেন
আপনি অনেক জনপ্রিয় তাহলে সমান মাঠে দাঁড়ান। আসুন সমানে সমানে খেলি। কিন্তু
আপনাদের সেই সাহস নেই। তিনি বলেন, আপনি হেলিকপ্টারে চড়ে নৌকায় ভোট চাইছেন।
যারা কখনও নির্বাচনে জেতে না তাদের নিয়ে আপনি কথা বলছেন। কিন্তু নৌকার তলা
ফুটো হয়ে গেছে। সেই ফুটো নৌকায় কোন মাঝি উঠবে না। সরকারের সমালোচনা করে
খালেদা জিয়া বলেন, আজকে দেশের কি দুরবস্থা! দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে
মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। পত্রিকায়
প্রকাশিত হয়েছে, ঈদের ছুটিতে ৪৫ জন মানুষ খুন হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে কি
অরাজক অবস্থা? এই অরাজক অবস্থার জন্য সরকারের লোকজন দায়ী। আসলে এই দেশ
এগিয়ে যাক, উন্নতি হোক- তা আপনারা চান না। তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলার কথা বলে
আপনারা সভা সমাবেশ করতে দিচ্ছেন না। দেশের মানুষকে এত ভয় পাচ্ছেন কেন?
খালেদা জিয়া বলেন, ভুলে যাবেন না বিচারকদের উপরও একজন বিচারক আছেন। দেশের
জনগণ আছে। সরকারের যখন শ্বাস নিতে কষ্ট হবে তখন বিচারকরাও ঘুরে যাবে। তাদের
চেহারাও পাল্টে যাবে। তাই আহ্বান জানাচ্ছি, জনগণের পাশে থাকুন। জনগণ যাদের
পক্ষে থাকে তাদের বিজয় অনিবার্য। তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমানের দোষ কি?
তিনি সত্য কথা লিখতেন বলেই তাকে সরকার জেলে পুরেছে। এতেই কি সব শেষ হয়ে
যাবে? নিশ্চয়ই না। তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। ১৮দলীয় নেতা বলেন, এদেশে
কখনও কারও আধিপত্য চলতে দেয়া হবে না। দেশ চলবে দেশের মানুষের কথায়। খালেদা
জিয়া বলেন, সরকার সবসময় মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ
করেনি। তারা মুক্তিবাহিনী গঠন করলেও তারা রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেনি। তারা
সীমান্ত পাড়ি দিয়েছিল। জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে রণাঙ্গনে যুদ্ধ
করেছেন। তার দল বিএনপিই সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের দল। খালেদা জিয়া বলেন,
আজকে সরকারের কাছে জানতে চাই, ইলিয়াস আলী কোথায়? কিন্তু সরকার এর উত্তর
দিতে পারবে না। কারণ তারা ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে। একইভাবে চৌধুরী আলমকে
গুম করেছে। শিবিরের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে নির্যাতন করে পঙ্গু করে দিয়েছে।
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজকে তরুণদের জাগতে হবে। সরকারের নির্যাতনের
বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। খালেদা জিয়া বলেন, পরীক্ষায় নকল করা আমরাই
বন্ধ করেছি। এখন সরকার পাসের হার বেশি দেখানোর জন্য পরীক্ষার সময়
ছেলেমেয়েদের বেশি মার্ক দিচ্ছে। আর বলছে, এত হাজার জিপিএ পেয়েছে, এত ভাগ
পাস করেছে। নারী শিক্ষার উন্নয়নের কৃতিত্ব আপনারা নেন- কিন্তু এর উন্নয়ন
আমরাই করেছি। বিরোধী নেতা বলেন, এই সরকার যুবসমাজের হাতে মাদক তুলে
দিচ্ছে। মাদক দিয়ে যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এই মাদক বন্ধ করতে হবে।
আগামী দিনে দেশ গড়ার কাজে তরুণদের অংশগ্রহণ করতে হবে। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা
সমাবেশে উপস্থিত হওয়ায় পেশাজীবীদের ধন্যবাদ জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন,
সবশেষে আপনাদের প্রতি অনুরোধ আওয়ামী লীগের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে।
সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসুন দেশকে আওয়ামী লীগের হাত থেকে বাঁচান।
অনুষ্ঠানে একটি সুভ্যেনির উন্মোচন করা হয়।
এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, বিরোধী নেতাকে অনুরোধ করবো, হরতাল দিয়ে কোন লাভ হবে না। কিছু দিন পরে ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। তাই একসঙ্গে শুরু করুন যেন এই সরকারকে বের করার ব্যবস্থা করা যায়।
জামায়াতের নায়েবে আমীর একেএম নাজির আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকারের পাঁচটি ফোবিয়া। এক নম্বর হলো- ইসলামী ফোবিয়া, দুই. তত্ত্বাবধায়ক ফোবিয়া, তিন. খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ফোবিয়া, চার. জামায়াত ফোবিয়া, পাঁচ. হেফাজতে ইসলাম ফোবিয়া। খালেদা জিয়া সে প্রেসক্রিপশন দেবেন সে অনুযায়ী সরকারের এই ফোবিয়াগুলোর চিকিৎসা করা হবে।
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বিশিষ্ট কলামনিস্ট ফরহাদ মজহার বলেন, আপনি কোন ধরনের আপস-রফায় যাবেন না। কোন প্রকার লোভে কিংবা দলের কোন পক্ষের দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে আপস করবেন না। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। মাঠ ছাড়বেন না, পথ ছাড়বেন না।
এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, বিরোধী নেতাকে অনুরোধ করবো, হরতাল দিয়ে কোন লাভ হবে না। কিছু দিন পরে ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। তাই একসঙ্গে শুরু করুন যেন এই সরকারকে বের করার ব্যবস্থা করা যায়।
জামায়াতের নায়েবে আমীর একেএম নাজির আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকারের পাঁচটি ফোবিয়া। এক নম্বর হলো- ইসলামী ফোবিয়া, দুই. তত্ত্বাবধায়ক ফোবিয়া, তিন. খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ফোবিয়া, চার. জামায়াত ফোবিয়া, পাঁচ. হেফাজতে ইসলাম ফোবিয়া। খালেদা জিয়া সে প্রেসক্রিপশন দেবেন সে অনুযায়ী সরকারের এই ফোবিয়াগুলোর চিকিৎসা করা হবে।
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বিশিষ্ট কলামনিস্ট ফরহাদ মজহার বলেন, আপনি কোন ধরনের আপস-রফায় যাবেন না। কোন প্রকার লোভে কিংবা দলের কোন পক্ষের দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে আপস করবেন না। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। মাঠ ছাড়বেন না, পথ ছাড়বেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে ও সম্মিলিত পেশজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট খন্দকার মাহবুব হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমীন গাজী, জাবি’র সাবেক ভিসি অধ্যাপক খন্দকার মোস্তাহিদুর রহমান, প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান, সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি এড. এজে মোহাম্মদ আলী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. পিয়াস করিম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, এ্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আ ন ম আখতার হোসেন, ঢাবির সাদা দলের সভাপতি অধ্যাপক সদরুল আমীন, চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম, সম্মিলিত পেশাজীবী ফোরামের সভাপতি আ ফ ম সোলায়মান চৌধুরী, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ সেলিম ভূঁইয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আজ অবস্থান জানাবেন খালেদা
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রস্তাবের ব্যাপারে আজ ১৮ দলের অবস্থান জানাবেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। বিকাল ৪টায় রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ অবস্থান জানাবেন তিনি। ১৮ই অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রস্তাবের পর শনিবার রাতে দলের নীতি-নির্ধারকদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন তিনি। গত রাতে জোটের শরিকদলের সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর চূড়ান্ত অবস্থান নির্ধারণ করে আজ তা প্রকাশ করবেন। বিরোধীদলীয় একাধিক নেতা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবের বিপরীতে একটি পাল্টা প্রস্তাব দিতে পারেন বিরোধী নেতা খালেদা জিয়া। সেই সঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের সুনির্দিষ্ট করে ও পরিষ্কার করার আহ্বানও জানাতে পারেন। বিরোধীদলীয় সূত্র জানায়, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে বিএনপি আলোচনায় প্রস্তুত হলেও সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে যাবে না। এদিকে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ২৫শে অক্টোবর রাজধানীতে সমাবেশ করার কর্মসূচি দিয়েছে বিরোধী দল। নিয়ম মেনে রাজধানীর তিনটি স্পটে অনুমতি চেয়ে ডিএমপির কাছে আবেদনও করেছে। সে সমাবেশে রাজধানীর আশপাশের ৬ জেলার নেতাকর্মীদের ঢাকার সমাবেশে যোগদান ও অন্য প্রতিটি জেলা সদরে সমাবেশ করার নির্দেশনাও দিয়েছে বিএনপি। বিরোধী নেতারা জানান, সে সমাবেশ থেকে চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন খালেদা জিয়া। কিন্তু ২৫শে অক্টোবরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টিতে জড়িয়ে পড়ে সরকার ও বিরোধী দল দু’পক্ষই। সরকারি দলের নেতাদের কড়া বক্তব্যের জবাবে বিরোধী নেতারাও সে সমাবেশকে আন্দোলনের ফাইনাল খেলা শুরু হিসেবে ঘোষণা দেন। সরকারি দল আওয়ামী লীগও একই দিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সমাবেশের ঘোষণা দেয়। এতে হঠাৎ করেই পাল্টে যায় পুরো পরিস্থিতি। দেশের রাজনীতির আকাশে দেখা দেয় কালো মেঘের ঘনঘটা। এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়ে তাতে বিরোধী দলের সদস্যদের নাম আহ্বান করেন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে নতুন কিছু নেই। কিন্তু বিরোধীদলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসার আগেই ১৯শে অক্টোবর দুপুরে ডিএমপি কমিশনার বেনজির আহমেদ ২০শে অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীতে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধের ঘোষণা দেন। এমনকি মহানগরীতে ঘরোয়া সমাবেশ করতে দেয়া হবে না বলেও জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল পূর্বঘোষিত সম্মিলিত পেশাজীবী সম্মেলন নিয়ে নানা নাটকীয়তার পর দুপুরে ১৪ শর্তে অনুমতি দেয় পুলিশ। এদিকে রাজধানীতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধের প্রতিবাদে গতকাল সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিএনপি। রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বিরোধী নেতা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত জোটের বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ডা. রেদোয়ানউল্লাহ শাহেদী, এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীরবিক্রম, বিজেপি সভাপতি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিসের আমীর অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইসহাক, কল্যাণ পার্টির সভাপতি মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতিক, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বাংলাদেশ ন্যাপের সভাপতি জেবেল রহমান গানি, এনডিপি সভাপতি খন্দকার গোলাম মতুর্জা, এনপিপি সভাপতি শেখ শওকত হোসেন নিলু, লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানসহ শরিক দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অটল ১৮দল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষন করেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধীজোট। যে কোন পরিস্থিতিতে আগামী ২৫শে অক্টোবরের সমাবেশ সফল করার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছেন শরিক দলের শীর্ষ নেতারা। সেই সঙ্গে ২৫শে অক্টোবর সরকার কোন বাধা দিলে ২৬শে অক্টোবর থেকে সর্বাত্মক আন্দোলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কর্মসূচি প্রণয়ন ও ঘোষণার ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দায়িত্ব দিয়েছেন তারা। পাশাপাশি সরকারের অবস্থান ও প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের জবাবে দেশবাসীর কাছে নিজেদের অবস্থান জানাতে পাল্টা প্রস্তাব দেয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে। বৈঠক শেষে শরিক দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা এমন তথ্য জানিয়েছেন। নেতারা বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনে ১৮দল কোন অবস্থাতেই নির্বাচনে যাবে না। এমনকি সর্বদলীয় নামে দলীয় সরকারের অধীনেও নয়।
No comments