ফাঁসি থেকে মুক্তি মিলেছে কনডেম সেল থেকে নয় by চৌধুরী মুমতাজ আহমদ
একটি
হত্যার জেরে আরেকটি হত্যা মামলায় ১৩ বছর আগে মৃত্যুদণ্ডের সাজা পেয়েছিলেন
নিম্ন আদালত থেকে। হাইকোর্টে আপিল করলে সাজা কমে হয় ১০ বছরের কারাদণ্ড।
আবার আপিল হয় সুপ্রিম কোর্টে, সে আপিলের নিষ্পত্তিও হয়েছে বছরখানেক আগে।
মামলার বাদীপক্ষ জানালেন সাজা কমে যাবজ্জীবন হয়েছে। কিন্তু রায়ের কপি না
আসায় মৃত্যুদণ্ডের আসামি হিসেবে ১৩ বছর আগে সেই যে অন্ধকার কনডেম সেলে
জায়গা হয়েছিল। সেখান থেকে আর আলোর মুখ দেখেননি ছাতক উপজেলার বনগাঁও গ্রামের
আবদুল খালিকের।
আবদুল খালিক নিজে প্রথমে একটি হত্যা মামলার বাদী ছিলেন। ২০০২ সালের ২২শে সেপ্টেম্বর তার ছোট ভাই আবদুল মালিক অপহৃত হয়েছিলেন। ৫ দিন পর ছাতক সিমেন্ট কোম্পানির রোপওয়ের একটি খুঁটির নিচে লাশ পাওয়া যায় মালিকের। লাশের গলায় দাগ ছিল। এ ঘটনায় আবদুল খালিক বাদী হয়ে ছাতক থানায় একটি মামলা করেছিলেন। মামলায় ছাতক উপজেলার নিজগাঁও গ্রামের বাবুল, লাল মিয়া, শানুর ও ছনবাড়ি গ্রামের জালালসহ ৭/৮জনকে আসামি করা হয়।
এ ঘটনার কিছুদিন পর ২০০২ সালের ৫ই ডিসেম্বর সন্ধ্যা রাতে ছনবাড়ি বাজার থেকে ফেরার পথে খুন হন ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বনগাঁওয়ের আবদুল জলিল ওরফে জলই মেম্বার। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সৌদি আরব প্রবাসী সেলিম মিয়া বাদী হয়ে ছাতক থানায় মামলা করেন। এ মামলায় আসামি করা হয় বনগাঁও গ্রামের আবদুল খালিক ও তার বড় ভাই সমসুল ইসলাম ওরফে সমসু মিয়া, গাঙপাড় নোয়াকোট গ্রামের নূরুজ্জামান, তাজুল ইসলাম, আবদুল কুদ্দুস, আকদ্দস আলী, কামরুজ্জামান ও রতনপুর গ্রামের ফয়জুর রহমান ওরফে কালা বতাইকে। ভাইয়ের হত্যার বিচার নিশ্চিত করার পরিবর্তে নিজেকে বাঁচাতেই এবার ছুটতে হয় আবদুল খালিককে। অন্যসব আসামির মতো ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়ান খালিক।
এ অবস্থায় ২০০৩ সালের ৭ই এপ্রিল বিশ্বনাথ থেকে আটক হন তিনি। ঐদিনই প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট খলিলুর রহমানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আবদুল খালিক। পরে তাকে ছাতক থানায় হস্তান্তর করা হয়। ৭ মাস ১২ দিন তদন্ত শেষে ২০০৩ সালের ১৭ই জুলাই পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিটে ৮ আসামির মধ্যে সমসুল ইসলাম ওরফে সমসু মিয়া, নূরুজ্জামান, তাজুল ইসলাম, আবদুল কুদ্দুস, আকদ্দস আলী, কামরুজ্জামান ও ফয়জুর রহমান ওরফে কালা বতাইকে অব্যাহতির সুপারিশ করেন এবং নতুন করে বনগাঁও গ্রামের সুন্দর আলীর ছেলে আবদুল হাই, জগম্বর আলীর ছেলে মানিক, জালালউদ্দিনের ছেলে মাখন ও ফয়জুর রহমান মাস্টারের ছেলে ছালিককে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করেন। যুক্তি হিসেবে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আবদুল জলিলের সঙ্গে চোরাচালান সংক্রান্ত বিরোধ ছিল এদের সকলের। এছাড়া আবদুল জলিলের সঙ্গে আবদুল হাই ও মানিকের নির্বাচন নিয়ে গোষ্ঠীগত বিরোধও রয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করলেও রাষ্ট্রপক্ষ বনগাঁও গ্রামের মৃত তৈমুছ আলীর ছেলে আবদুল খালিক, সুন্দর আলীর ছেলে আবদুল হাই, জগম্বর আলীর ছেলে মানিক, জালালউদ্দিনের ছেলে মাখন ও ফয়জুর রহমান মাস্টারের ছেলে ছালিকের পাশাপাশি বনগাঁও গ্রামের সমসুল ইসলাম ওরফে সমসু মিয়া, গাঙপাড় নোয়াকোট গ্রামের নূরুজ্জামান, তাজুল ইসলাম, আবদুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে। অবশ্য পরে তদন্ত কর্মকর্তার দেয়া ৫টি নামই অভিযুক্তের তালিকায় রাখে রাষ্ট্রপক্ষ।
২০০৫ সালে সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে মামলাটি সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ২০০৫ সালের ৭ই মে থেকে ৭০ কার্য দিবসে মামলার রায় প্রদান করা হয়। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক বিপ্লব গোস্বামী মামলার বাদী, তদন্ত কর্মকর্তা, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও জবানবন্দি রেকর্ডকারী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ২৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানি শেষে ২০০৫ সালের ২৪শে জুলাই রায় দেন। রায়ে আবদুল খালিক, আবদুল হাই (পলাতক), মাখন (পলাতক), ছালিক (পলাতক), মানিক (পলাতক)কে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। সমসুল ইসলাম ওরফে সমসু মিয়া, নূরুজ্জামান, তাজুল ইসলাম, আবদুল কুদ্দুসকে খালাস দেয়া হয়।
২০০৫ সালের ৪ঠা মার্চ থেকে জামিনে ছিলেন আবদুল খালিক। রায়ের পর আবার কারাবন্দি হন। তবে বাকিরা পলাতকই থাকেন। আবদুল খালিক ২০০৫ সালের ২৪শে জুলাই থেকে ২০১২ সালের ১৯শে মে পর্যন্ত ছিলেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে, এরপর স্থানান্তর হন কাশিমপুর কারাগারে। কাশিমপুর কারাগারের কনডেম সেলে ৪ বছর থাকার পর আবার ২০১৬ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি আবদুল খালিককে ফিরিয়ে আনা হয় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে। এর আগে মামলা চলাকালে সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে ৭ই এপ্রিল ২০০৩ থেকে ২০০৫ সালের ৪ঠা মার্চ পর্যন্ত বন্দি ছিলেন তিনি।
২০০৫ সালে রায়ের বিরুদ্ধে আবদুল খালিক হাইকোর্টে আপিল (নং:৩৭৫৭) করেন একই সঙ্গে জেল থেকেও আপিল (নং: ৮৫৩) করেন তিনি। ইতিমধ্যে নিম্ন আদালত থেকে মামলাটি ডেথ রেফারেন্সের (নং:১১৬) জন্য হাইকোর্টে উত্থাপিত হয়। আপিলসহ ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হয় বিচারপতি তারিক-উল হাকিম ও বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকারের বেঞ্চে। ২০১০ সালের ৩১শে জানুয়ারি থেকে ৮ই ফেব্রুয়ারি টানা ৭ কার্যদিবসে মামলাটির শুনানি হয়। ২২শে ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করা হয়। আদালত রায়ে আবদুল খালিকের মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রত্যাখ্যান করে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড নির্ধারণ করেন যা তার গ্রেপ্তার হওয়ার দিন থেকে গণনার কথা বলা হয়। পলাতক থাকাবস্থায়ই মৃত্যুদণ্ড থেকে অব্যাহতি পান আবদুল হাই, মাখন, ছালিক ও মানিক।
হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল দায়ের করে সরকার পক্ষ (নং:২০/২০১১)। ২০১২ সালের ২৩শে জুলাই হত্যা মামলার বাদী সেলিম মিয়া আবদুল খালিকসহ সকল আসামির শাস্তি দাবি করে সুপ্রিম কোর্টে পৃথক আপিল আবেদন দায়ের করেন (নং: ৫৪২/২০১২)। ২০১৪ সালের ২রা মার্চ বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী ও বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ারুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ দুটো আপিল আবেদনই মঞ্জুর করে হাইকোর্ট ডিভিশনের রায় স্থগিত করেন। পাশাপাশি পলাতক আসামিদের এ রায় ঘোষণার তিন মাসের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন এবং নিম্ন আদালতকে তাদের জামিনের বিষয় বিবেচনার নির্দেশনা দেন। ২০১৭ সালের ১১ই জানুয়ারি থেকে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় উঠতে থাকে সরকারপক্ষের আপিলের (নং:৮৪/২০১৪) সঙ্গে আসামিপক্ষের আপিল (৫৪২/২০১২)। ১৯তম কার্যদিবসে ২০১৭ সালের ২২শে মার্চ শুনানি শেষে আপিল দুটো নিষ্পত্তি করেন আপিল বিভাগ। কিন্তু একটি বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি এখনো সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে না আসায় ঝুলে আছে আবদুল খালিকের ভাগ্য। দিন কাটছে কনডেম সেলের বদ্ধ কুঠুরিতে। আবদুল খালিক নিজের ভাগ্য জানতে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের মাধ্যমে ২০১৭ সালের ৩০শে মে সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসের সচিবের কাছে আবেদন করেন। এরই প্রেক্ষিতে সিলেটের সে সময়কার সিনিয়র জেল সুপার মো. ছগির মিয়া মামলার অগ্রগতি জানতে পত্র দেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। তার সে পত্রের জবাবে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির সচিব ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট টাইটাস হিল্লোল রেমা জানান, ‘মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি হাতে না আসা অবধি মামলার সামগ্রিক ফলাফল আন্দাজ করা সম্ভব নয়।’
বাদী পক্ষের হয়ে এ মামলাটির তদারকি করছেন বিলাল মিয়া। তিনি মানবজমিনকে বললেন, মামলায় আবদুল খালিকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে।
মামলা নিয়ে গরজ শুধু একজনেরই। তিনি আবদুল খালিক। ফলাফল জানতে কনডেম সেলের ভেতরে এখনো অপেক্ষায় তিনি। কারা সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রায়ই জানতে চান তার ভাগ্যে কি হলো। কিন্তু কেউই তাকে কোনো জবাব দিতে পারেন না।
আবদুল খালিক নিজে প্রথমে একটি হত্যা মামলার বাদী ছিলেন। ২০০২ সালের ২২শে সেপ্টেম্বর তার ছোট ভাই আবদুল মালিক অপহৃত হয়েছিলেন। ৫ দিন পর ছাতক সিমেন্ট কোম্পানির রোপওয়ের একটি খুঁটির নিচে লাশ পাওয়া যায় মালিকের। লাশের গলায় দাগ ছিল। এ ঘটনায় আবদুল খালিক বাদী হয়ে ছাতক থানায় একটি মামলা করেছিলেন। মামলায় ছাতক উপজেলার নিজগাঁও গ্রামের বাবুল, লাল মিয়া, শানুর ও ছনবাড়ি গ্রামের জালালসহ ৭/৮জনকে আসামি করা হয়।
এ ঘটনার কিছুদিন পর ২০০২ সালের ৫ই ডিসেম্বর সন্ধ্যা রাতে ছনবাড়ি বাজার থেকে ফেরার পথে খুন হন ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বনগাঁওয়ের আবদুল জলিল ওরফে জলই মেম্বার। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সৌদি আরব প্রবাসী সেলিম মিয়া বাদী হয়ে ছাতক থানায় মামলা করেন। এ মামলায় আসামি করা হয় বনগাঁও গ্রামের আবদুল খালিক ও তার বড় ভাই সমসুল ইসলাম ওরফে সমসু মিয়া, গাঙপাড় নোয়াকোট গ্রামের নূরুজ্জামান, তাজুল ইসলাম, আবদুল কুদ্দুস, আকদ্দস আলী, কামরুজ্জামান ও রতনপুর গ্রামের ফয়জুর রহমান ওরফে কালা বতাইকে। ভাইয়ের হত্যার বিচার নিশ্চিত করার পরিবর্তে নিজেকে বাঁচাতেই এবার ছুটতে হয় আবদুল খালিককে। অন্যসব আসামির মতো ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়ান খালিক।
এ অবস্থায় ২০০৩ সালের ৭ই এপ্রিল বিশ্বনাথ থেকে আটক হন তিনি। ঐদিনই প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট খলিলুর রহমানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আবদুল খালিক। পরে তাকে ছাতক থানায় হস্তান্তর করা হয়। ৭ মাস ১২ দিন তদন্ত শেষে ২০০৩ সালের ১৭ই জুলাই পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিটে ৮ আসামির মধ্যে সমসুল ইসলাম ওরফে সমসু মিয়া, নূরুজ্জামান, তাজুল ইসলাম, আবদুল কুদ্দুস, আকদ্দস আলী, কামরুজ্জামান ও ফয়জুর রহমান ওরফে কালা বতাইকে অব্যাহতির সুপারিশ করেন এবং নতুন করে বনগাঁও গ্রামের সুন্দর আলীর ছেলে আবদুল হাই, জগম্বর আলীর ছেলে মানিক, জালালউদ্দিনের ছেলে মাখন ও ফয়জুর রহমান মাস্টারের ছেলে ছালিককে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করেন। যুক্তি হিসেবে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আবদুল জলিলের সঙ্গে চোরাচালান সংক্রান্ত বিরোধ ছিল এদের সকলের। এছাড়া আবদুল জলিলের সঙ্গে আবদুল হাই ও মানিকের নির্বাচন নিয়ে গোষ্ঠীগত বিরোধও রয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করলেও রাষ্ট্রপক্ষ বনগাঁও গ্রামের মৃত তৈমুছ আলীর ছেলে আবদুল খালিক, সুন্দর আলীর ছেলে আবদুল হাই, জগম্বর আলীর ছেলে মানিক, জালালউদ্দিনের ছেলে মাখন ও ফয়জুর রহমান মাস্টারের ছেলে ছালিকের পাশাপাশি বনগাঁও গ্রামের সমসুল ইসলাম ওরফে সমসু মিয়া, গাঙপাড় নোয়াকোট গ্রামের নূরুজ্জামান, তাজুল ইসলাম, আবদুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে। অবশ্য পরে তদন্ত কর্মকর্তার দেয়া ৫টি নামই অভিযুক্তের তালিকায় রাখে রাষ্ট্রপক্ষ।
২০০৫ সালে সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে মামলাটি সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ২০০৫ সালের ৭ই মে থেকে ৭০ কার্য দিবসে মামলার রায় প্রদান করা হয়। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক বিপ্লব গোস্বামী মামলার বাদী, তদন্ত কর্মকর্তা, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও জবানবন্দি রেকর্ডকারী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ২৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানি শেষে ২০০৫ সালের ২৪শে জুলাই রায় দেন। রায়ে আবদুল খালিক, আবদুল হাই (পলাতক), মাখন (পলাতক), ছালিক (পলাতক), মানিক (পলাতক)কে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। সমসুল ইসলাম ওরফে সমসু মিয়া, নূরুজ্জামান, তাজুল ইসলাম, আবদুল কুদ্দুসকে খালাস দেয়া হয়।
২০০৫ সালের ৪ঠা মার্চ থেকে জামিনে ছিলেন আবদুল খালিক। রায়ের পর আবার কারাবন্দি হন। তবে বাকিরা পলাতকই থাকেন। আবদুল খালিক ২০০৫ সালের ২৪শে জুলাই থেকে ২০১২ সালের ১৯শে মে পর্যন্ত ছিলেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে, এরপর স্থানান্তর হন কাশিমপুর কারাগারে। কাশিমপুর কারাগারের কনডেম সেলে ৪ বছর থাকার পর আবার ২০১৬ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি আবদুল খালিককে ফিরিয়ে আনা হয় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে। এর আগে মামলা চলাকালে সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে ৭ই এপ্রিল ২০০৩ থেকে ২০০৫ সালের ৪ঠা মার্চ পর্যন্ত বন্দি ছিলেন তিনি।
২০০৫ সালে রায়ের বিরুদ্ধে আবদুল খালিক হাইকোর্টে আপিল (নং:৩৭৫৭) করেন একই সঙ্গে জেল থেকেও আপিল (নং: ৮৫৩) করেন তিনি। ইতিমধ্যে নিম্ন আদালত থেকে মামলাটি ডেথ রেফারেন্সের (নং:১১৬) জন্য হাইকোর্টে উত্থাপিত হয়। আপিলসহ ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হয় বিচারপতি তারিক-উল হাকিম ও বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকারের বেঞ্চে। ২০১০ সালের ৩১শে জানুয়ারি থেকে ৮ই ফেব্রুয়ারি টানা ৭ কার্যদিবসে মামলাটির শুনানি হয়। ২২শে ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করা হয়। আদালত রায়ে আবদুল খালিকের মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রত্যাখ্যান করে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড নির্ধারণ করেন যা তার গ্রেপ্তার হওয়ার দিন থেকে গণনার কথা বলা হয়। পলাতক থাকাবস্থায়ই মৃত্যুদণ্ড থেকে অব্যাহতি পান আবদুল হাই, মাখন, ছালিক ও মানিক।
হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল দায়ের করে সরকার পক্ষ (নং:২০/২০১১)। ২০১২ সালের ২৩শে জুলাই হত্যা মামলার বাদী সেলিম মিয়া আবদুল খালিকসহ সকল আসামির শাস্তি দাবি করে সুপ্রিম কোর্টে পৃথক আপিল আবেদন দায়ের করেন (নং: ৫৪২/২০১২)। ২০১৪ সালের ২রা মার্চ বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী ও বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ারুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ দুটো আপিল আবেদনই মঞ্জুর করে হাইকোর্ট ডিভিশনের রায় স্থগিত করেন। পাশাপাশি পলাতক আসামিদের এ রায় ঘোষণার তিন মাসের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন এবং নিম্ন আদালতকে তাদের জামিনের বিষয় বিবেচনার নির্দেশনা দেন। ২০১৭ সালের ১১ই জানুয়ারি থেকে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় উঠতে থাকে সরকারপক্ষের আপিলের (নং:৮৪/২০১৪) সঙ্গে আসামিপক্ষের আপিল (৫৪২/২০১২)। ১৯তম কার্যদিবসে ২০১৭ সালের ২২শে মার্চ শুনানি শেষে আপিল দুটো নিষ্পত্তি করেন আপিল বিভাগ। কিন্তু একটি বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি এখনো সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে না আসায় ঝুলে আছে আবদুল খালিকের ভাগ্য। দিন কাটছে কনডেম সেলের বদ্ধ কুঠুরিতে। আবদুল খালিক নিজের ভাগ্য জানতে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের মাধ্যমে ২০১৭ সালের ৩০শে মে সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসের সচিবের কাছে আবেদন করেন। এরই প্রেক্ষিতে সিলেটের সে সময়কার সিনিয়র জেল সুপার মো. ছগির মিয়া মামলার অগ্রগতি জানতে পত্র দেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। তার সে পত্রের জবাবে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির সচিব ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট টাইটাস হিল্লোল রেমা জানান, ‘মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি হাতে না আসা অবধি মামলার সামগ্রিক ফলাফল আন্দাজ করা সম্ভব নয়।’
বাদী পক্ষের হয়ে এ মামলাটির তদারকি করছেন বিলাল মিয়া। তিনি মানবজমিনকে বললেন, মামলায় আবদুল খালিকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে।
মামলা নিয়ে গরজ শুধু একজনেরই। তিনি আবদুল খালিক। ফলাফল জানতে কনডেম সেলের ভেতরে এখনো অপেক্ষায় তিনি। কারা সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রায়ই জানতে চান তার ভাগ্যে কি হলো। কিন্তু কেউই তাকে কোনো জবাব দিতে পারেন না।
No comments