মুন্সীগঞ্জে আ’লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষে নিহত ১
মুন্সীগঞ্জের আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষে নিহত এক এবং তিনজন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। নিহতের নাম মাসুদ, পিতা মোজাফফর বিন ঢালি। শনিবার সকালে চরকেওয়ার ইউনিয়নের দক্ষিণ চরমশুরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর পুরো দক্ষিণ চরমশুরার ঢালিরচরসহ আশপাশের এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে। এ সুযোগে হারুন সমর্থকরা সাধারণ মানুষের গোয়ালঘর থেকে প্রায় ১২টি বড় গরু ও দুধেল গাভী লুট ও ঘর ভাংচুর করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান ইউপি সদস্য মন্টু দেওয়ান ও পরাজিত প্রার্থী হারুন ফকিরের মধ্যে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছিল। নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে হারুন, শাহীন, সাবেক ইউপি সদস্য রহিম, জয়নাল, হাশেম ও স্থানীয় প্রভাবশালী নান্নু হাজী একটি বাহিনী গঠন করে। এ বাহিনীর সঙ্গে মন্টু দেওয়ানের সমর্থকদের মধ্যে বেশ কয়েক মাস ধরে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে হারুন ও নান্নু সমর্থকদের অনেকেই গ্রামের বাইরে চলে যান। শনিবার সকালে নান্নু বাহিনীর সদস্যরা সংগঠিত হয়ে দক্ষিণ চরমশুরা গ্রামবাসীর ওপর গুলিবর্ষণ করেন। এ সময় মাসুদ, তারিফ, সুমন দেওয়ান, ইফরান গুলিবিদ্ধ হন। আহতদের মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাসুদকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর গুলিবিদ্ধ তারিফকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। বাকি আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্য আহতরা বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নেয় বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা জানায়, গত ইউপি নির্বাচনে হারুন ফকিরকে পরাজিত করে মন্টু দেওয়ান মেম্বার নির্বাচিত হয়। এরপর থেকে নান্নু হাজী ও হারুন ফকিরের মধ্যে বিরোধ চলতে থাকে। আর এ দুই গ্রুপের নেতৃত্ব দেন সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফসার উদ্দিন ভূঁইয়া ও চরকেওয়ার ইউপি চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান জীবন। চরকেওয়ার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফসার উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, মূলত মন্টু মেম্বার ও হারুন মেম্বারের গ্রুপের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। আমি আওয়ামী লীগের সদর থানার সভাপতি হিসেবে হারুন মেম্বারকে সাপোর্ট করি।
কারণ সে আওয়ামী লীগ করে। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আক্তারুজ্জামান জীবন মন্টু মেম্বারকে সমর্থন করে। মন্টু মেম্বার বিএনপি করে। এ ব্যাপারে চরকেওয়ার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আক্তারুজ্জামান জীবন জানান, আমি অন্যায় মারামারিকে সমর্থন করি না। এখানে মূলত মারামারি করেছে মন্টু মেম্বার গ্রুপ ও শাহীন মাতব্বর গ্রুপ। আমি ঢাকায় থেকে শুনেছি শাহীন মাতব্বরের গ্রুপ প্রথমে মারামারি শুরু করে। এ ঘটনার পর সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, দক্ষিণ চরমশুরা গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য মন্টু দেওয়ানের সমর্থকরা ঢালিরচর গ্রামে গিয়ে অর্ধশতাধিক বসতবাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট করে। এ সময় হারুন সমর্থক ও সাধারণ মানুষের ১২টি গরু লুট করে নিয়ে যায়। পুরুষশূন্য গ্রামগুলোতে হামলা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। দক্ষিণ চরমশুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রীর অভিযোগ, মন্টু দেওয়ানের লোকরা ঘরবাড়ি ভাংচুর এবং তাদের গরুগুলো লুট করেছে। গৃহবধূ নাছিমা বলেন, বাড়িতে পুরুষ থাকে না। মন্টু দেওয়ানের লোকজন বাড়িতে এসে ভাংচুর করে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি। অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে বর্তমান ইউপি সদস্য মন্টু দেওয়ান বলেন, গরু লুটপাটের বিষয়টি আমার জানা নেই। নান্নু বাহিনীর লোকজন আমাদের লোকদের ওপর হামলা করে একজনকে গুলি করে হত্যা করেছে। নিজেদের গরু নিজেরা সরিয়ে এখন মিথ্যা অভিযোগ করেছে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইউনুচ আলী জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শনিবার ভোরে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দোষীদের ধরতে অভিযান চলছে।
No comments