জীবন্ত চার্লি চ্যাপলিন!
![]() |
চ্যাপলিন জাদুঘর |
চোখের
সামনে নড়াচড়া করছেন চার্লি চ্যাপলিন। সিনেমায় দেখা ভারী যন্ত্রের চাকার
সঙ্গে ঘুরছেন। অথবা ঝড়ের কবলে পড়া জাহাজের কেবিনের মেঝেতে টলমল করে
হাঁটছেন। দেখে হাসি চেপে রাখা দায়। চ্যাপলিনের এসব মজার দৃশ্যই জীবন্ত হয়ে
উঠছে তাঁর স্মৃতিতে ঘেরা সুইজারল্যান্ডের জাদুঘর ‘চ্যাপলিনস ওয়ার্ল্ড’-এ।
সম্প্রতি জাদুঘরটির উদ্বোধন করা হয়। লেক জেনেভার কাছে করসিয়ার সার ভেভে
গ্রামে জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। চ্যাপলিনের ১২৭তম জন্মদিন উপলক্ষে
জাদুঘরটির উদ্বোধন হয়। জাদুঘর দেখে আবেগে আপ্লুত চ্যাপলিনের ৬২ বছর বয়সী
ছেলে ইউজেন। এএফপিকে বললেন, চ্যাপলিন মানুষের স্মৃতিতে বেঁচে থাকতে
চেয়েছিলেন। চাইতেন মানুষ তাঁকে সব সময় মনে রাখুক। এই জাদুঘর তাঁর স্মৃতিকে
অটুট রাখবে। লসান থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে ম্যানয়ের দ্য বানে জাদুঘরটি
প্রতিষ্ঠিত। এখানেই চ্যাপলিনের জীবনের ২৫টি বছর কেটেছে। এখানেই ১৯৭৭ সালে
৮৮ বছর বয়সে মারা যান চ্যাপলিন। তিনি কমিউনিস্টঘেঁষা বলে সন্দেহে করে বসে
যুক্তরাষ্ট্র। তাই পঞ্চাশের দশকে তাঁর জন্য সে দেশের দুয়ার বন্ধ হয়ে যায়।
পরে সুইজারল্যান্ডে পাড়ি জমান তিনি। জাদুঘরের অর্ধেকটা জুড়ে চ্যাপলিন, তাঁর
স্ত্রী উনা ও আট সন্তানের ব্যক্তিগত জীবনের ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
চ্যাপলিনের ৭০ বছর বয়সী ছেলে মাইকেল বলেন, জাদুঘরে এসে মনে হচ্ছে এটি যেন
তাঁদের বাড়ি। এখানে এসে তিনি তাঁর ছেলেবেলা খুঁজে পেয়েছেন। জাদুঘরের আরেক
অংশ হলিউডের স্টুডিওর আদলে নির্মিত। এখানে চ্যাপলিনের পর্দার চরিত্র ও কাজ
ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ১৯১৪ সাল থেকে চ্যাপলিনের রুপালি পর্দার জীবন শুরু হয়।
চ্যাপলিনের জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের অসাধারণ দৃশ্যায়ন রয়েছে জাদুঘরে।
দর্শনার্থীরা অনায়াসে হাঁটতে পারবেন ‘ইজি স্ট্রিট’ চলচ্চিত্রের রাস্তায়,
দেখতে পারবেন ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’ সিনেমার সেই নরসুন্দরের দোকান। ‘দ্য
ইমিগ্র্যান্ট’ সিনেমায় রেস্তোরাঁয় বসে চ্যাপলিনের সেই জুতো চিবিয়ে খাওয়ার
দৃশ্যও জীবন্ত হয়ে উঠবে। মাইকেল বলেন, বাবাকে সব সময় তাঁরা ছটফটে দেখেছেন।
এই জাদুঘরটিও যেন তাঁর বাবার মতোই ছটফটে। চ্যাপলিনস ওয়ার্ল্ড জাদুঘরের আরও
একটি আকর্ষণীয় দিক ছিল মোমের তৈরি ৩০টিরও বেশি মূর্তি। ফ্রান্সের প্যারিসের
গ্রেভিন ওয়াক্স জাদুঘর এই মূর্তিগুলো বানিয়েছে। এই জাদুঘরে রয়েছে
চ্যাপলিনের স্ত্রী উনা, তাঁর চলচ্চিত্রের অভিনেতা, অভিনেত্রী, বন্ধুবান্ধব,
চ্যাপলিনের অনুরাগী বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, যেমন: বিজ্ঞানী আলবার্ট
আইনস্টাইন, মাইকেল জ্যাকসন, উডি অ্যালেন প্রমুখের মূর্তি। জাদুঘরের রক্ষক ও
পরিচালক ইভস ডুরান্ড বলেন, ‘জাদুঘরটি জীবন্ত করে তুলতে আমরা কঠোর পরিশ্রম
করেছি।’ জাদুঘরের খিলানে চ্যাপলিন আরও জীবন্ত। এখানে রয়েছে তাঁর ব্যবহৃত
শক্ত গোল টুপি, তাঁর সেই বিখ্যাত ছড়ি, অদ্ভুত পাজামা, ‘দ্য কিড’ চলচ্চিত্রে
পরা বাঁকানো জুতো। চ্যাপলিনের ছেলে মাইকেল চ্যাপলিন বলেন, বাবার ব্যবহৃত
জিনিসগুলো তিনি বহুদিন ধরে সযত্নে রেখেছিলেন। এসব জিনিস এত দিন সিনেমাতেই
দেখেছেন। এখন জাদুঘরে এগুলো যেন তাঁর বাবাকে জীবন্ত করে তুলেছে। ১৯৭৫ সালে
নাইট উপাধি পান চ্যাপলিন। জাদুঘরের একপাশে একটি শোকেসে রানি এলিজাবেথের সই
করা সেই সনদ রয়েছে। রয়েছে চ্যাপলিনের অস্কার পুরস্কারটিও। ‘লাইমলাইট’
চলচ্চিত্রের জন্য এই পুরস্কার জেতেন চ্যাপলিন। তবে তিনি ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত
কোনো অস্কার পুরস্কার পাননি। এমনকি ১৯৫২ সালে যুক্তরাষ্ট্র এই সিনেমা আটকেও
দেয়। চ্যাপলিনকে স্মরণ করে গড়ে ওঠা এই জাদুঘরও ১৫ বছর ধরে আটকে ছিল।
জাদুঘরের জন্য ভবন নির্মাণের অনুমতি পেতেই সময় লাগে সাত বছর। সংগঠকদের আইনি
প্রক্রিয়া পার হতে আরও পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হয়। চ্যাপলিনের ছেলে ইউজেন
চ্যাপলিন বলেন, শুরুতে মনে হয়েছিল তাঁদের স্মৃতিময় বাড়িটি নষ্ট হয়ে যাবে।
ঘাসের ওপর বুলডোজার চলাও তিনি সহ্য করতে পারেননি। জাদুঘর নির্মাণের সময়
তিনি সেখানেই ছিলেন। এখন এই জাদুঘরও বাড়ির মতো স্মৃতিময় হয়ে উঠেছে। এখানে
তিনি আবার তাঁর হারানো বাবাকে খুঁজে পাচ্ছেন।
No comments