মিসরে ৫২৯ জনের ফাঁসি কার্যকর করা কি সম্ভব?- সিএনএনের বিশ্লেষণ
মিসরের গত আগস্টে এক সহিংস ঘটনার দায়ে
ইসলামপন্থী সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ
মুরসির ৫২৯ সমর্থকের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দেশটির
দক্ষিণাঞ্চলীয় মিনা শহরে সংঘর্ষের সময় এক পুলিশ সদস্য নিহত হন। একজন
মানুষকে হত্যার ঘটনায় এতগুলো মানুষের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া কতটা
যৌক্তিক এবং এ রায় মিসরের সেনা-সমর্থিত বর্তমান সরকার কার্যকর করতে পারবে
কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত সোমবার রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১৪৭ জন বিবাদী। একই মামলায় ১৬ জনকে খালাস দেওয়া হয়। একই ঘটনায় একই আদালতের বিচারকদের সামনে গতকাল মঙ্গলবার আরও ৬৮৩ জনকে হাজির করা হয়।
কী ঘটেছিল মিনায়?
মিনা শহরে গত বছরের আগস্টে মুরসি-সমর্থকদের বিক্ষোভের সময় হত্যার শিকার হন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। সাবেক প্রেসিডেন্ট মুরসির সমর্থকদের কায়রোর দুটি স্থান থেকে উচ্ছেদ করতে নিরাপত্তা বাহিনী শক্তি প্রয়োগ করার জের ধরে মিনায় ওই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। গত বছরের ৩ জুলাই সেনাবাহিনী দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রতিবাদে কায়রোর ওই দুটি স্থানে অবস্থান ধর্মঘট করছিলেন তাঁর সমর্থকেরা।
দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আইনজীবী খালেদ আল-কোমি জানান, দণ্ডপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছিল, তার মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেঙে একটি থানায় প্রবেশ, হত্যাচেষ্টা, জনগণের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করা।
এতজনের বিরুদ্ধে দণ্ড কার্যকর করা হবে কি না?
সিএনএনের সাংবাদিক লি বলেন, সবার বিরুদ্ধে দণ্ড কার্যকর করার সম্ভাবনা ‘একেবারে ক্ষীণ’। তিনি জানান, মিসরের লম্বা আপিল প্রক্রিয়া রয়েছে। আবার দেশের প্রধান ইসলামি কর্তৃপক্ষ গ্রান্ড মুফতির কাছ থেকেও এই দণ্ড কার্যকর করার অনুমতি নিতে হবে।
আইনবিষয়ক ইতিহাসবিদ ফাহমিও বলছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হবে এবং রায়ে পরিবর্তন আসবে, সে সম্ভাবনাই বেশি।
বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন
মাত্র দুটি সেশন বিচারকাজ চলার পরই ৫২৯ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে মিনার ওই আদালতের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। আইনবিষয়ক ইতিহাসবিদ ফাহমি বলেন, ‘এর আগে কোনো আদালত এত কম সময়ে এত বেশি মানুষের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেননি।’ আর বিবাদীপক্ষের আইনজীবী খালেদ আল-কোমি জানান, দণ্ডপ্রাপ্তদের পক্ষে আদালতে কাউকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। এমনকি তাঁদের আইনজীবীদের আদালতকক্ষে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি।
সাংবাদিক সাহিরা বলেন, এই রায় ‘হাস্যকর এবং বিরাট এক অবিচার’। কেননা, এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ৫২৯ জন হত্যা করেছেন, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আর অন্য যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে, তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হতে পারে না।
No comments