ছাত্রলীগের আরও একটি খুন- খুনিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করুন
সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের
নেতা-কর্মীরা যে শুধু অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গেই সহিংস
হয়ে ওঠেন, তা নয়। তাঁরা নিজেদের মধ্যেও খুনোখুনি করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে
এসব খুনোখুনির বিচার ও অপরাধীর শাস্তি হয় না।
ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের জনপ্রিয় নেতা সায়াদ ইবনে মোমতাজকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনাটিও ব্যতিক্রম নয় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের পরপরই ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সায়াদকে হত্যা করেছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। ছাত্রশিবির এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নাকচ করেছে; শুধু তা-ই নয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকেরাও মনে করেন, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। বস্তুত, ছাত্রলীগের এটি সেই চিরাচরিত স্বভাবেরই আরেকটি দৃষ্টান্ত: নিজেদের অপরাধ ঢাকতে অন্যদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা।
হত্যাকাণ্ডের শিকার সায়াদ সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বেশ জনপ্রিয় ছিলেন, শিক্ষকেরাও তাঁকে পছন্দ করতেন। তাই দেখা যাচ্ছে, তাঁর হত্যাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছেন সবাই। গতকাল প্রথম আলোয় প্রকাশিত এ-সম্পর্কিত একটি সরেজমিন প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্য থেকে স্পষ্ট যে ছাত্রলীগের সুজয় কুমার কুণ্ডুসহ কয়েকজন নেতা-কর্মী সায়াদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ছাত্র সমিতির নির্বাচনে প্রার্থিতাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধের ভয়ংকর রূপ ফুটে উঠেছে। সুজয় এবং রোকনুজ্জামান নামে ছাত্রলীগের আরেক কর্মীকে পালানোর সময় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা যে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন, তাতে আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। তাই গোড়া থেকেই হত্যা মামলাটি দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। আর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সংবাদ সম্মেলন ডেকে হত্যাকাণ্ডের দায় ছাত্রশিবিরের ওপর চাপানোর চেষ্টা থেকে প্রকৃত খুনিদের পার পাইয়ে দেওয়ার মতলব তো পরিষ্কার।
এর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জুবায়ের হত্যাকাণ্ড ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সোহেল হত্যাকাণ্ডও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিজেদের মধ্যে খুনোখুনির জলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত, যেগুলোর আইনি প্রতিকার হয়নি দীর্ঘ দুই বছরেও। জুবায়ের হত্যা মামলার সব আসামি পলাতক; আর দুই বছরেও অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি সোহেল হত্যা মামলার। এসব হত্যার বিচার আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। কারণ, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সবাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী, আর ছাত্রলীগের তো সাত খুন মাফ!
কিন্তু ছাত্রলীগের ছত্রচ্ছায়ায় যাঁরা হত্যার মতো গুরুতর অপরাধ ঘটান, তাঁদের বাঁচাতে আইন প্রয়োগে শিথিলতা কিংবা তাঁদের পক্ষে খোদ ছাত্রলীগের সাফাই গাওয়া—কোনোটাই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সায়াদের হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেছেন, খুনিদের ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে। কিন্তু শুধু ছাত্রত্ব বাতিল খুনের শাস্তি হতে পারে না, খুনিদের আইনানুগভাবে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার।
No comments