সরকারের হাতে সময় কম তাদের বিদায় নিতেই হবে: খালেদা জিয়া
সরকারের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা
জিয়া বলেছেন, আপনাদের হাতে সময় খুব কম। বেশিদিন টিকতে পারবেন না। আপনাদের
বিদায় নিতেই হবে। বিদায়ের পর জনগণের কাছে সব কর্মকাণ্ডের হিসাব দিতে হবে।
গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শ্রমিক দলের জাতীয়
সম্মেলন ও সপ্তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানে দেয়া প্রধান অতিথির বক্তব্যে
তিনি এ কথা বলেন।
খালেদা
জিয়া বলেন, আপনারা ভাবছেন সংবিধানের দোহাই দিয়ে ও এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে
আজীবন ক্ষমতায় থাকবেন। কিন্তু আপনারা বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।
কোথায় কী দুর্নীতি করেছেন সব তথ্য আমাদের কাছে আছে। বিদায় নেয়ার পর সব
কিছুর হিসাব দিতে হবে। সব কিছুর জবাব দিতে হবে। দেশ এখন কঠিন সময় পার করেছে
উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের কোন মানুষ আজ
নিরাপদ নয়। দিনদুপুরে এবি সিদ্দিককে অপহরণ করা হয়েছে। এবি সিদ্দিককে গুম
করার পর চারদিক থেকে প্রতিবাদ শুরু হলে সরকার বুঝতে পারে ভয়ঙ্কর অবস্থার
সৃষ্টি হচ্ছে। তাই তাকে ফিরিয়ে দিয়ে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। যদি তাকে
ফিরিয়ে না দিতো তাহলে পরিণতি হতো ভয়াবহ। এর মাধ্যমে শুরু হতো সরকারের পতন
আন্দোলন। খালেদা জিয়া বলেন, এখনও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী ও
ডিসিসি কমিশনার চৌধুরী আলমকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমি এ অবৈধ সরকারকে বলবো,
এখনও যাদের আটকে রেখেছেন তাদের মুক্তি দিন। আমাদের কাছে সব হিসাব আছে।
আপনাদের খুন-গুমের হিসাব আমাদের কাছে আছে। প্রতিনিয়ত আপনারা মানবতাবিরোধী
অপরাধ করছেন। এর জবাব দিতেই হবে। সরকারকে দুর্নীতিবাজ উল্লেখ করে বিরোধী
জোট নেতা খালেদা জিয়া বলেন, কত টাকা কত দিকে পাচার হচ্ছে সব তথ্য আমাদের
কাছে আছে। তারও জবাব দিতে হবে। এ সরকার দেশটাকে ফোকলা করে দিয়ে যে টাকা
কামাই করেছে তা দিয়ে তারা শান্তিতে থাকতে পারবে সারাজীবন। দেশে না থাকলে
বিদেশে গিয়েও থাকতে পারবে। আমাদের তো তাদের মতো সেই অবৈধ অর্থ নেই, আমাদের
দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ দেশে বসবাস করতে হবে। তিনি বলেন, জনগণকে আহ্বান
করেছিলাম ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতে। তারা আমাদের কথা
রেখেছেন, ভোটকেন্দ্রে যাননি। এমনকি যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন সেই আওয়ামী
লীগের লোকজনও ভোটকেন্দ্রে যাননি। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, গণতন্ত্রের
স্বার্থে বাংলাদেশে অতিদ্রুত নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। অবিলম্বে নিরপেক্ষ
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজন করুন। সরকারের উদ্দেশে খালেদা
জিয়া বলেন, খুন গুম অনেক করেছেন। এবার শান্তির পথে আসুন। আপনাদের আহ্বান
জানাই আসুন সবাই মিলে দেশটাকে গড়ে তুলি। এ দেশ আমাদের, আপনাদের, সবার। সবাই
মিলে একসঙ্গে কাজ করতে সেই পরিবেশ করবো। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কাজ করবো।
আমরা কেউ কারও শত্রু নই। বাংলাদেশকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। বাংলাদেশ
মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। বাংলাদেশ আবার জেগে উঠবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন,
দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে এ সরকার। তারা প্রশাসন, পুলিশ, বিচার
বিভাগ, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সব
প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশ আজ ধ্বংসের পথে। তিনি
সরকারের উদ্দেশে বলেন, আপনারা জনগণের সরকার দাবি করলে এত বিভাজন সৃষ্টি
করলেন কেন? যতই দলীয়করণ করেন, যখন বিদায় নেবেন তখন কেউ আপনাদের চিনবে না।
যে অস্ত্র আমাদের ওপর ব্যবহার করেছেন জনগণ রাস্তায় নামলে সে অস্ত্র আপনাদের
দিকে ঘুরে যাবে। খালেদা জিয়া বলেন, দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতির কারণে
গার্মেন্ট শিল্প ধ্বংসের পথে। কারণ একটাই। রানা প্লাজা ধসের পর বিশ্ববাসী
এখন বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যারা মারা গেছেন তাদের পর্যাপ্ত
ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। কত সংস্থার প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুদান দিয়েছে। তা
ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারদের দেয়া হয়নি। মাঝেমধ্যে মিডিয়ায় ছবি দেখানোর জন্য
কিছু আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হয়। তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে অনেক গার্মেন্ট
শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন কোন গার্মেন্ট তৈরি হয়নি। শিল্প স্থাপনের জন্য
যে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও পরিবেশের প্রয়োজন হয় বর্তমান সরকার তা নিশ্চিত
করতে পারেনি। যে কারণে এ সরকারের আমলে নতুন দেশী বা বিদেশী বিনিয়োগ আসেনি।
উল্টো এখন বাংলাদেশের গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান কিনে নিচ্ছে বিদেশীরা। তারা তো
আমাদের দেশের লোকদের চাকরি দেবে না। নিজের দেশ থেকে শ্রমিক নিয়ে আসবে।
খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের দেশের শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ছে। সরকারের ভুলনীতির
কারণে মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক ভিসা বন্ধ হয়ে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিদেশ থেকে
বাংলাদেশী শ্রমিকদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এ ‘অবৈধ’ সরকারের আমলে দুবাইয়ে কোন
ধরনের শ্রমিক নেয়া হবে না বলে তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে। দেশে গণতন্ত্র না
থাকায় আজ সরকার শুধু জনগণ থেকেই বিচ্ছিন্ন নয়, সারা বিশ্ব থেকেও বিচ্ছিন্ন।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের তেমন কোন ভূমিকা নেই। তারা নাকি
জিয়াকে যুদ্ধে দেখেননি! কারণ জিয়া রণাঙ্গনে যুদ্ধে ছিলেন। আর তারা ছিলেন
কলকাতার থিয়েটার রোডে। সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন,
রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে টি-টোয়েন্টি ও জাতীয় সংগীতের আয়োজন
করেছেন। এগুলো দেশের মানুষের জন্য ব্যয় করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে
নিজেদের নাম ও সস্তা প্রচারের জন্য এসব করেছেন। ১৯ দলীয় জোটনেতা খালেদা
জিয়া দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, পানির ওপর আমাদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করতে
হবে। সংগ্রাম করতে হবে। পাশাপাশি বিকল্প পানির ব্যবস্থাও আমাদের করতে হবে।
এখন খাওয়ার পানির জন্যও সমস্যা হচ্ছে। বিএনপি আগামী দিনে ক্ষমতায় গেলে পানি
সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবে। পানি সংরক্ষণ করতে না পারলে দেশের কৃষি,
কল-কারখানা সব বন্ধ হয়ে যাবে। দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট আরও ঘনীভূত হবে। তিনি
বলেন, জিয়াউর রহমান যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন খাল বা নদী খননের, তা করলে ভাল
হতো। আমাদের প্রতিটি নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা সব শুকিয়ে
যাচ্ছে। দলে ও দেশে এখন তরুণ নেতৃত্বের প্রয়োজন উল্লেখ করে খালেদা জিয়া
শ্রমিক দলের উদ্দেশে বলেন, সিনিয়ররা পরামর্শ দেবেন। সর্বত্রই চাই নতুন ও
তরুণ নেতৃত্ব। আন্দোলন-সংগ্রামে যারা সামনে থেকে দায়িত্ব নিতে পারবে, তাদের
আনতে হবে। বয়স্করা সেটা পারবে না। শুধু শ্রমিক দল নয়, অন্য সংগঠনগুলোতেও
তরুণ ও নতুন নেতৃত্ব আনতে হবে। তিনি বলেন, যুবকদের নেতৃত্বে আনলেও বয়স্কদের
ফেলে দেয়া হবে না। তাদের অভিজ্ঞতা আমাদের প্রয়োজন রয়েছে। তারা উপদেষ্টা
হিসেবে আমাদের উপদেশ দেবেন এবং তাদের অন্য পদ দেয়া হবে। সারা দেশে সব
সংগঠনকে এভাবে সাজাতে হবে। সব সংগঠনের গতি সঞ্চার করতে হবে।
এর আগে ১২টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় সংগীতের পর খালেদা জিয়া বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে জাঁকজমকপূর্ণ কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন। জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে কাউন্সিলের আলোচনা পর্বে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংগঠনের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান, শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক জাফরুল হাসান, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান সারোয়ার, সাবেক এমপি ও শ্রমিক নেতা শাহ মো. আবু জাফর ও শ্রমিক দলের কার্যকরী সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরী বক্তব্য দেন। এ ছাড়াও শ্রমিক দলের কাউন্সিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, আহমদ আজম খান, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ সারা দেশ থেকে আগত শ্রমিক দলের কয়েক হাজার কাউন্সিলর অংশ নেন।
এর আগে ১২টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় সংগীতের পর খালেদা জিয়া বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে জাঁকজমকপূর্ণ কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন। জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে কাউন্সিলের আলোচনা পর্বে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংগঠনের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান, শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক জাফরুল হাসান, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান সারোয়ার, সাবেক এমপি ও শ্রমিক নেতা শাহ মো. আবু জাফর ও শ্রমিক দলের কার্যকরী সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরী বক্তব্য দেন। এ ছাড়াও শ্রমিক দলের কাউন্সিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, আহমদ আজম খান, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ সারা দেশ থেকে আগত শ্রমিক দলের কয়েক হাজার কাউন্সিলর অংশ নেন।
No comments