বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন: কোন আপস করার কোন সুযোগ নেই
বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন
খালেদা জিয়া বলেছেন, কোন আপস নয়। আপস করার কোন সুযোগ নেই। কারণ, আপস করা
মানে অন্যায় করা, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া এবং অন্যায় মেনে নেয়া। আমরা
ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন করছি।
এই সরকারকে বিদায় দিয়ে
সত্যিকারের জনগণের সরকারকে প্রতিষ্ঠা করতেই হবে। গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয়
প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক অনির্ধারিত মতবিনিময় সভায় তিনি এভাবেই
নিজের দৃঢ় অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। খালেদা জিয়া বলেন,
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আমাদের নয়, এক সময় আওয়ামী লীগেরই ছিল।
এখন এ দাবি আমাদের, দেশের মানুষের। সরকার সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে
নির্বাচনকালীন সে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে অন্যায় করেছে। এখন সে
অন্যায়কে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। তবে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকারের
দাবিতে যে আন্দোলন চলছে এখানে কোন রকম আপস করার সুযোগ নেই। আমরা কোন
অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে পারি না। খালেদা জিয়া বলেন, আমি আজ বক্তব্য দিতে
আসিনি। আমি এসেছি আপনাদের সঙ্গে চা খেতে। আপনাদের কথা শুনতে। আপনারা
সাংবাদিক। আপনাদের কাছে দেশ ও জনগণের অনেক তথ্য আছে। আপনারা সবাই দেশকে
ভালবাসেন, দেশকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। এটা জেনে আমি আনন্দিত। তিনি বলেন, সারাদেশে
কি অবস্থা তা আপনাদের মুখেই শুনলাম। বর্তমান জুলুম অত্যাচারী সরকার থেকে
দেশকে মুক্ত করা প্রয়োজন তা আপনারাও বলেছেন। যে চিন্তাধারা প্রকাশ করেছেন
তা নিয়ে এগিয়ে যান। খালেদা জিয়া বলেন, দেশ ও দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক যে
কোন আন্দোলন সংগ্রামে আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। আমার কাছে পদ বড় নয়। প্রথম
যখন শুরু করেছিলাম তখনও পদ বড় ছিল না। তখন ছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই।
আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা তখন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছিলাম। এখনও গণতন্ত্র
পুনরুদ্ধার করাই আমার লক্ষ্য। শত প্রতিকূলতার মাঝেও আমাদের দায়িত্ব চালিয়ে
যাবো। আপনাদের সঙ্গে নিয়েই আন্দোলন মধ্য দিয়ে জুলুমবাজ সরকারকে বিতাড়িত করে
জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করবো। দেশ ও মানুষের জন্য আপনাদের পাশে পাবেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশের যে অবস্থা আপনারা তুলে ধরেছেন তাতে
দ্রুত এই সরকারকে বিদায় করা প্রয়োজন। আপনারা অতীতে আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে
ছিলেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন আশা রাখি। আপনারা-আমরা একসঙ্গে থাকলে আমি বিশ্বাস
করি দ্রুতই এই সরকারকে বিদায় করে সত্যিকারের নির্বাচিত জনগণের সরকার
প্রতিষ্ঠা করতে পারবো। আমরা সবাই একসঙ্গে এগিয়ে যাবো। দেশের জন্য কাজ করবো।
বিরোধী নেতা বলেন, রাজনৈতিক সঙ্কটের সময় জাতীয় প্রেস ক্লাব আমাদের জায়গা
দিয়েছে। আমরা জাতীয় প্রেস ক্লাবকে আমাদের নিজেদের জায়গা মনে করি। প্রয়াত
সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরীর কথা স্মরণ করে খালেদা জিয়া বলেন, গণতন্ত্রের
জন্য তিনি রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে নেমেছেন। বর্তমান সঙ্কটে জাতীয় প্রেস
ক্লাবে আজ তার কথাই মনে পড়ছে। তিনি থাকলে আজ আমাদের সঙ্কট উত্তরণে
বুদ্ধি-পরামর্শ দিতেন। এ সময় বিরোধী নেতা প্রয়াত সাংবাদিক গিয়াস কামাল
চৌধুরীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। এর আগে আজ সন্ধ্যা ছয়টায় জাতীয় প্রেস
ক্লাবে যান খালেদা জিয়া। প্রেস ক্লাবে পৌঁছলে উপস্থিত সাংবাদিকরা তাকে
স্বাগত জানান। মতবিনিময় সভার পর বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সম্মানে এক
চা চক্রের আয়োজন করেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। চা চক্রে অংশ নিয়ে তিনি সেখানে
কিছুক্ষণ অবস্থান করে প্রেস ক্লাব ছেড়ে যান। মতবিনিময়ের শুরুতে জাতীয় প্রেস
ক্লাবের সভাপতি কামালউদ্দিন সবুজের পরিচালনায় দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি
তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক নেতারা। অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেস ক্লাবের
সাবেক সভাপতি রিয়াজউদ্দিন আহমেদ বলেন, সর্বত্র আজ এক আওয়াজ, গণতন্ত্রকে
বাঁচাতে হবে। একজনের গোঁয়াতুর্মির কাছে গণতন্ত্র বিপন্ন হতে পারে না। দেশের
গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিকল্প নেই।
অন্য কোন পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে আমরা নই। তিনি বিরোধী নেতাকে
আশ্বস্ত করে বলেন, আপনার দাবির প্রতি দেশবাসীর সমর্থন আছে। দৈনিক সংগ্রাম
সম্পাদক আবুল আসাদ বলেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার চলমান আন্দোলনে
দেশের মানুষ আপনার সঙ্গে আছে। সাংবাদিকরাও আপনার পাশে আছে। তিনি বলেন,
আওয়ামী লীগ তিনবার ক্ষমতা গেছে, মাত্র একবার স্বাভাবিক উপায়ে ক্ষমতা
হস্তান্তর হয়েছে। আওয়ামী লীগ স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা
হস্তান্তরে বিশ্বাস করে না। ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমীন
গাজী বলেন, এই সরকারের আমলে ২১ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। সাংবাদিক
সাগর-রুনিকে হত্যা করা হয়েছে। অথচ তাদের খুনিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি
সরকার। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আন্দোলন করে এই সরকারকে উৎখাত করতে হবে।
বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া
রাজনীতিতে আসার পর থেকেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। গণতন্ত্রকে সামনে
এগিয়ে নেয়ার জন্য আন্দোলন করছেন। আমরা আশা করবো, ভবিষ্যতে গণতন্ত্র
প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে প্রজ্ঞা, মেধা দিয়ে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করবেন।
সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আপনিই সবচেয়ে
দীর্ঘ ও দৃঢ় আন্দোলন করেছিলেন। দেশবাসী সে গণতন্ত্রের সুফল ভোগ করেছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ বলেন, দেশ আজ গভীর
সংকটে। আর এই সংকট তৈরি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা সাংবাদিক
ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এলাহী নেওয়াজ খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা ভাল করে জানেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে
নির্বাচন দিলে তিনি জিততে পারবেন না। তাই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল
করেছেন। কিন্তু রাজপথে এর সমাধান করতে হবে। সাংবাদিক আবদুল আউয়াল ঠাকুর
বলেন, বর্তমান দেশ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বর্তমান সরকার গোটা দেশ থেকে
বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দেশবাসী শুধু খালেদা জিয়ার ডাকের অপেক্ষায় আছে। তবে
কেবল নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনেই সমাধান আসবে না। বিএফইউজের সাবেক
মহাসচিবচ এমএ আজিজ বলেন, প্রধানমন্ত্রী যতই বলুক, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে
আসলে তিনি এক চুলও সংবিধানে নেই। সরকার এখন গণতান্ত্রিক বাকশাল কায়েম
করেছে। যেভাবে প্রশাসন সাজানো হয়েছে এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই হবে না।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এম
আবদুল্লাহ বলেন, হরতালের মধ্যে আমরা রাজপথে ছিলাম। আমরা আছি। সাংবাদিক
ইউনিয়ন এ আন্দোলন চালিয়ে যাবে। সাংবাদিক আবদুশ শহীদ বলেন, সাংবাদিকরা আজ
সত্য কথা লিখতে পারছে না। টকশো গিয়ে কথা বললেও হামলার শিকার হতে হচ্ছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাাদক ইলিয়াস খান বলেন, বর্তমান এই
ফ্যাসিস্ট সরকার সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু ঢাকায় অবরুদ্ধ হয়ে আছে।
খালেদা জিয়া নির্দেশ দিলে তাদেরকে রাজধানী থেকেও উৎখাত করা হবে। এছাড়াও
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি খন্দকার মনিরুল আলম,
দৈনিক নয়াদিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ
সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ফেডারেল ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক
বাকের হোসেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান,
একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার শফিক আহমেদ, কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের
সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম বকুল, এরশাদ মজুমদার, কামরুজ্জামান, মাহমুদ
শফিক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান
সেলিমা রহমান, অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মাহবুব উল্লাহ, বিশিষ্ট সাংবাদিক
শফিক রেহমান, প্রফেসর ড. পিয়াস করিম, চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল
খান, সাবেক এমপি আফজাল এইচ খান, সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন, মাহবুবুল আলম গোরাসহ
শতাধিক সাংবাদিক নেতা প্রেস ক্লাবের মতবিনিয়ময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।
No comments