চরাচর-তসবি টুপি আতরের ব্যবসা by এস কবির

জীবনধারণের জন্য মানুষ কত কিছুই না করে। এক বায়তুল মোকাররম মসজিদ ঘিরে আছে কত রকমের ব্যবসা। চেনা-জানা ব্যবসাই বেশি এখানে। ইলেকট্রনিক সামগ্রী, কাপড়চোপড়, গয়না আর খাবারের দোকান বেশি। কিন্তু এসব জানা ব্যবসা ছাড়াও আছে অনেক কিছু। শুধুই টুপি আর তসবি বিক্রির মাধ্যমে জীবন ধারণ করছেন অনেক মানুষ।


ব্যবসাটা অনেকটাই মৌসুমি। টুপি, তসবি বা জায়নামাজ ঈদের সময়ই একটু বেশি বিক্রি হয়। তেমনি একজন বিক্রেতার নাম আবু বকর।
আবু বকরের গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুর। তাঁদের এলাকার মানুষ এ ব্যবসায় তেমন কেউ নেই। বায়তুল মোকাররম এলাকার যে টুপি, জায়নামাজের দোকান আছে তার বেশির ভাগই নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষের। আবু বকরের দোকানটা অন্যদের তুলনায় একটু ছোটই। দোকানের মাপ চার ফুট বাই পাঁচ ফুট। ছোট এই দোকানের ভাড়াও কম নয়। আবু বকরকে এটুকু দোকানের ভাড়া দিতে হয় মাসে আট হাজার টাকা। দোকানে মালামাল খুব যে বেশি তাও নয়। জিজ্ঞেস করায় বলেন পুঁজির সমস্যা। এটুকু দোকানে তাঁর পাঁচ-ছয় লাখ টাকা পুঁজি খাটে। মালামাল আরো তোলা দরকার; কিন্তু টাকার অভাবে হচ্ছে না। টুপি, তসবি ছাড়া আবু বকরের দোকানে পাওয়া যায় বড় রুমাল, জায়নামাজ ইত্যাদি। এই ছোট ব্যবসা দিয়ে তাঁর সংসার চলতে চায় না। জানালেন পুঁজির জন্য টাকা ধার করেছেন। সেই টাকার লাভ দিতে হয়, দোকান ভাড়া আছে। তা ছাড়া প্রতিদিন দোকানের একটা খরচ আছে। ঈদ বা এ রকম কোনো মৌসুমে হয়তো বিক্রি বাড়ে; কিন্তু সারা বছর যা বিক্রি হয় তা দিয়ে চলে না।
আবু বকরের দোকানে টুপি পাওয়া যায় নানা ধরনের। আগের আমলের লোমশ একধরনের টুপি, যেটার দাম আড়াই শ টাকা। এ ছাড়া নকশাদার কিছু টুপি আছে জরির কাজ করা। সেগুলোর দাম ২০০ থেকে দেড় শ টাকার মধ্যে। এগুলোর চেয়ে কম দামে পাওয়া যায় সাধারণ কাপড়ের টুপি আর নেটের টুপি। দাম ৩০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। তসবির দামও বিভিন্ন রকমের। ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে নানা রকমের তসবি পাওয়া যায়। এর চেয়ে দামি তসবিও পাওয়া যায়। তবে আবু বকরের দোকানে সেগুলো নেই। জানালেন_টাকার অভাবে দামি মাল তুলতে পারেন না। তাঁর দোকানে এ ছাড়া পাওয়া যায় রুমাল। চেক রুমালগুলো মানুষ স্কার্ফের মতো ব্যবহার করে। আবার কেউ কেউ এটা দিয়ে পাগড়ির মতো মাথা ঢাকে। এসব রুমালের দাম ১৩০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে। এর চেয়ে একটু ভালোমানের রুমাল চায়নার তৈরি। সেগুলোর দাম ২৫০ টাকা।
সংসারে তাঁর সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজন এবং তিন সন্তান। তিন সন্তানের মধ্যে বড় দুটি মেয়ে। এর পরেরজন অর্থাৎ ছোটটি ছেলে। বড় মেয়ে ক্লাস এইটে পড়ে, ছেলে এখনো পড়াশোনা শুরু করেনি। আবু বকরের ইচ্ছা ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখে শিক্ষিত হোক। ছেলেকে এই ব্যবসায় আনার ইচ্ছা আছে কি না জানতে চাইলে একটু চুপ করে থাকেন। এরপর বলেন, 'আমি চাই লেখাপড়া শিখে ভালো চাকরি করুক। আর যদি ব্যবসা করতেই চায়, তাহলেও যেন বড় কোনো ব্যবসা করে।' নিজের মতো এমন জোড়াতালির ব্যবসা তাঁর সন্তান করুক, সেটা তিনি চান না।
এস কবির

No comments

Powered by Blogger.