ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত : -আনিসুল হক
দেশের
বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত বলে মনে
করেন বুয়েটের সাবেক কৃতী শিক্ষার্থী ও লেখক আনিসুল হক। তিনি বলেছেন,
পেশীশক্তি নির্ভর বর্তমান ছাত্ররাজনীতিতে ছাত্ররা যুক্ত হয় পার্থিব লাভ ও
অল্প বয়সে অধিক টাকার মালিক হওয়ার মানসে। ছাত্ররাজনীতির এমন হালের পেছনে
শিক্ষাঙ্গনে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চর্চার দৈন্যতা বড় কারণ বলে মনে করেন
তিনি।
আনিসুল হক বলেন, ‘৯০ সাল পর্যন্ত ছাত্র রাজনীতিতে একটা আদর্শ ছিল। এরপর থেকেই ছাত্ররাজনীতির মূল চালিকা শক্তি হয়ে গেলো পেশীশক্তি। এর কারণটা হলো লোভ, পার্থিব লাভ, অতি অল্প বয়সে অধিক টাকার মালিক হওয়ার মানসিকতা।অতীতের সফল আন্দোলনগুলোতে আমরা দেখেছি, যারা আন্দোলন করতেন তারা জমিদারের ছেলে হয়েও খদ্দের পড়তেন, এক কাপড়ে জীবন পার করে দিতেন। তাদের মধ্যে আদর্শ ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখছি যেসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্ররাজনীতি আছে সেখানে নির্মমতা জায়গা করে নিচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি নেই সেখানে র্যাগিং এর নামে নানা ধরণের নির্যাতন হচ্ছে।
যেটি আগে আমাদের দেশে ছিল না। এ ধরণের ঘটনা ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছিল।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে এখন যা দেখা যাচ্ছে এর পেছনে শুধু রাজনীতি যুক্ত না, সামাজিকতাও যুক্ত। আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে শুধু জিপিএ-৫ পাওয়া শিখাচ্ছি। তাদের ভাষা শেখানোর জন্য একটা কাঠামোয় ছেড়ে দিচ্ছি। মাল্টিপল চয়েজ কোয়েশ্চন শিখাচ্ছি, কিন্তু সাহিত্য পড়াচ্ছি না। আগে আমরা সাহিত্য পড়ে ইংরেজি শিখেছি। সাহিত্য মানুষের হৃদয়কে কোমল করে। সাহিত্য পড়ে ঝরা পালকের জন্যও কষ্ট লাগে। উপন্যাস গল্প পড়ে চরিত্রগুলোর জন্য চোখে পানি আসে। তিনি বলেন, বইমেলায় গিয়ে দেখা যায়, ক্যারিয়ার ভিত্তিক বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। এটা হওয়ার কথা না। শিক্ষার্থীরা ফিকশন পড়বে, গল্প-উপন্যাস পড়বে। এগুলো মানুষের হৃদয়কে সংবেদশীল করে। জনপ্রিয় এ লেখক বলেন, মানুষ কিভাবে মানুষকে আঘাত করে সেটা আমি ভাবতে পারি না। আর বুয়েটের একটি হলের শিক্ষার্থীকে একই হলের অন্যরা পিটিয়ে মেরে ফেলল, কেউ এগিয়ে আসছে না এটা আমার কাছে অকল্পনীয় লেগেছে। আমি মনে করি, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত, বাংলাদেশ কিন্তু মধ্যম আয়ের দেশ ইতোমধ্যেই হয়ে গেছে। স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর হয়ে যাচ্ছে। আমরা সুবর্ণজয়ন্তি পালন করতে যাচ্ছি। আমরা যখন পরাধীন ছিলাম তখন ছাত্র রাজনীতির দরকার ছিল, তখন বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগ গঠন করেছিলেন। এমনকি সামরিক সরকারের সময়ও ছিল। এখন আর নেই।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা তিনটি বড় আন্দোলন দেখেছি। এর মধ্যে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন, শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন এবং সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন। এই আন্দোলনগুলো ছাত্ররাজনীতির বাইরে হয়েছে। সুতরাং ছাত্র রাজনীতি না থাকলে দেশে অন্যায়ের প্রতিবাদ হবে না যারা এটা বলতে চান তারা ভুল করছেন।
তিনি বলেন, এখন আর রাজনৈতিক দলের মিছিলে লোক পাওয়া যায় না। এর কারণ প্রধানত মানুষ বুঝে গেছে যে, রাজনৈতিক দলকে রক্ত দিয়ে আমি যদি ক্ষমতায় আনি, ক্ষমতায় আসার পর সে আর আমার জন্য কাজ করে না। এছাড়া এখন প্রতিটি মানুষের একটি করে মোবাইল ফোন হয়েছে। সবার ছেলে মেয়ে এখন স্কুল কলেজে যাচ্ছে। তারা স্বপ্ন দেখে সন্তানটি ভবিষ্যতে সফল হবে। তাই আমি বলছি, দেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে তথাকথিত ছাত্ররাজনীতির সংগঠনের আর বাস্তব প্রয়োজন নেই। এখন যারা ছাত্ররাজনীতিতে ব্যবহৃত হচ্ছে তারা ক্ষমতাকে পাহারা দেয়ার কাজ করছে। তিনি বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া সময়ের দাবি। বিশেষ করে বুয়েটের মতো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। এর পাশাপাশি, স্কুলে, কলেজে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতি চর্চার একটি বিপ্লব শুরু করতে হবে। এগুলোর মাধ্যমে চিন্তার বিকাশ ঘটবে। সারা পৃথিবীতে, উন্নত দেশগুলোতে ছাত্র সংসদগুলো যেভাবে চলে আমাদের দেশেও সেভাবে চলুক, প্রচুর ক্লাব হোক, বিতর্ক, বক্তৃতা এগুলো যতো হবে ততো ভাল।
বুয়েটে নিজের শিক্ষা জীবনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমরা যখন ভর্তি হই তখন প্রথম পরিচিতি সভায় বলা হয়েছিল, তোমরা ক্রিম অব দ্য ক্রিম। মানে মেধাবীদের মধ্য থেকে বাছাই করে অধিকতর মেধাবীদের নিয়ে এসেছি। আমাদের ক্লাশে জানতে চাওয়া হয়েছিল কারা কারা স্ট্যান্ড করেছে। তখন পুরো ক্লাস দাঁড়িয়ে গেলো। সবাই স্ট্যান্ড করা। চার-পাঁচ বছর পড়ার পর যখন আমাদের সমাপনী উৎসব করা হয় তখন একটা স্মরণিকা বের করা হয়। একটা জরিপে প্রশ্ন করা হয়, তুমি যদি কর্মক্ষেত্রে সুযোগ পাও, ঘুষ খাবে কি? ৯০ ভাগ ছাত্র উত্তর দেয় ঘুষ খাবো। আমি কিন্তু কেঁদে কেটে অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম। দেশের সবচাইতে মেধাবীদের এনে পাঁচ বছর পড়িয়ে কী নৈতিক শিক্ষা দিলেন? এর মানে বুয়েটের কারিকুলামের মধ্যে একটা গভীর অসুখ আছে। বুয়েটে কিন্তু ডান পন্থা প্রবল। এখানে পড়াশোনা করে কি করতে হবে জগৎ সংসারের জন্য তা বুঝতে পারে না শিক্ষার্থীরা। এজন্য একই সঙ্গে তারা ঘুষও খেতে চায় আবার পারলৌকিক মুক্তিও চায়। আমি মনে করি আমাদের কারিকুলাম সিস্টেমে সমস্যা আছে। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে সমস্যা আছে। আমাদের নৈতিক মান এবং মূল্যবোধের সমস্যা আছে। আরেকটি সমস্যা হলো, এখানে যে কয়জন পড়ে তার মধ্যে ৯০ ভাগই বিদেশে চলে যায়। আমরা কিন্তু বিদেশে কর্মী পাঠানোর একটি ফ্যাক্টরিতে পরিণত হয়েছি। এই অবস্থায় আবরারের মৃত্যু আমাদেরকে জাগ্রত করুক। অবস্থার পরিবর্তনে আমাদের সার্বিক কারিকুলাম বদলাতে হবে, সিস্টেম বদলাতে হবে। শূন্যতা পূরণে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
সূত্র: ভয়েস অফ আমেরিকা
আনিসুল হক বলেন, ‘৯০ সাল পর্যন্ত ছাত্র রাজনীতিতে একটা আদর্শ ছিল। এরপর থেকেই ছাত্ররাজনীতির মূল চালিকা শক্তি হয়ে গেলো পেশীশক্তি। এর কারণটা হলো লোভ, পার্থিব লাভ, অতি অল্প বয়সে অধিক টাকার মালিক হওয়ার মানসিকতা।অতীতের সফল আন্দোলনগুলোতে আমরা দেখেছি, যারা আন্দোলন করতেন তারা জমিদারের ছেলে হয়েও খদ্দের পড়তেন, এক কাপড়ে জীবন পার করে দিতেন। তাদের মধ্যে আদর্শ ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখছি যেসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্ররাজনীতি আছে সেখানে নির্মমতা জায়গা করে নিচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি নেই সেখানে র্যাগিং এর নামে নানা ধরণের নির্যাতন হচ্ছে।
যেটি আগে আমাদের দেশে ছিল না। এ ধরণের ঘটনা ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছিল।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে এখন যা দেখা যাচ্ছে এর পেছনে শুধু রাজনীতি যুক্ত না, সামাজিকতাও যুক্ত। আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে শুধু জিপিএ-৫ পাওয়া শিখাচ্ছি। তাদের ভাষা শেখানোর জন্য একটা কাঠামোয় ছেড়ে দিচ্ছি। মাল্টিপল চয়েজ কোয়েশ্চন শিখাচ্ছি, কিন্তু সাহিত্য পড়াচ্ছি না। আগে আমরা সাহিত্য পড়ে ইংরেজি শিখেছি। সাহিত্য মানুষের হৃদয়কে কোমল করে। সাহিত্য পড়ে ঝরা পালকের জন্যও কষ্ট লাগে। উপন্যাস গল্প পড়ে চরিত্রগুলোর জন্য চোখে পানি আসে। তিনি বলেন, বইমেলায় গিয়ে দেখা যায়, ক্যারিয়ার ভিত্তিক বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। এটা হওয়ার কথা না। শিক্ষার্থীরা ফিকশন পড়বে, গল্প-উপন্যাস পড়বে। এগুলো মানুষের হৃদয়কে সংবেদশীল করে। জনপ্রিয় এ লেখক বলেন, মানুষ কিভাবে মানুষকে আঘাত করে সেটা আমি ভাবতে পারি না। আর বুয়েটের একটি হলের শিক্ষার্থীকে একই হলের অন্যরা পিটিয়ে মেরে ফেলল, কেউ এগিয়ে আসছে না এটা আমার কাছে অকল্পনীয় লেগেছে। আমি মনে করি, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত, বাংলাদেশ কিন্তু মধ্যম আয়ের দেশ ইতোমধ্যেই হয়ে গেছে। স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর হয়ে যাচ্ছে। আমরা সুবর্ণজয়ন্তি পালন করতে যাচ্ছি। আমরা যখন পরাধীন ছিলাম তখন ছাত্র রাজনীতির দরকার ছিল, তখন বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগ গঠন করেছিলেন। এমনকি সামরিক সরকারের সময়ও ছিল। এখন আর নেই।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা তিনটি বড় আন্দোলন দেখেছি। এর মধ্যে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন, শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন এবং সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন। এই আন্দোলনগুলো ছাত্ররাজনীতির বাইরে হয়েছে। সুতরাং ছাত্র রাজনীতি না থাকলে দেশে অন্যায়ের প্রতিবাদ হবে না যারা এটা বলতে চান তারা ভুল করছেন।
তিনি বলেন, এখন আর রাজনৈতিক দলের মিছিলে লোক পাওয়া যায় না। এর কারণ প্রধানত মানুষ বুঝে গেছে যে, রাজনৈতিক দলকে রক্ত দিয়ে আমি যদি ক্ষমতায় আনি, ক্ষমতায় আসার পর সে আর আমার জন্য কাজ করে না। এছাড়া এখন প্রতিটি মানুষের একটি করে মোবাইল ফোন হয়েছে। সবার ছেলে মেয়ে এখন স্কুল কলেজে যাচ্ছে। তারা স্বপ্ন দেখে সন্তানটি ভবিষ্যতে সফল হবে। তাই আমি বলছি, দেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে তথাকথিত ছাত্ররাজনীতির সংগঠনের আর বাস্তব প্রয়োজন নেই। এখন যারা ছাত্ররাজনীতিতে ব্যবহৃত হচ্ছে তারা ক্ষমতাকে পাহারা দেয়ার কাজ করছে। তিনি বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া সময়ের দাবি। বিশেষ করে বুয়েটের মতো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। এর পাশাপাশি, স্কুলে, কলেজে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতি চর্চার একটি বিপ্লব শুরু করতে হবে। এগুলোর মাধ্যমে চিন্তার বিকাশ ঘটবে। সারা পৃথিবীতে, উন্নত দেশগুলোতে ছাত্র সংসদগুলো যেভাবে চলে আমাদের দেশেও সেভাবে চলুক, প্রচুর ক্লাব হোক, বিতর্ক, বক্তৃতা এগুলো যতো হবে ততো ভাল।
বুয়েটে নিজের শিক্ষা জীবনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমরা যখন ভর্তি হই তখন প্রথম পরিচিতি সভায় বলা হয়েছিল, তোমরা ক্রিম অব দ্য ক্রিম। মানে মেধাবীদের মধ্য থেকে বাছাই করে অধিকতর মেধাবীদের নিয়ে এসেছি। আমাদের ক্লাশে জানতে চাওয়া হয়েছিল কারা কারা স্ট্যান্ড করেছে। তখন পুরো ক্লাস দাঁড়িয়ে গেলো। সবাই স্ট্যান্ড করা। চার-পাঁচ বছর পড়ার পর যখন আমাদের সমাপনী উৎসব করা হয় তখন একটা স্মরণিকা বের করা হয়। একটা জরিপে প্রশ্ন করা হয়, তুমি যদি কর্মক্ষেত্রে সুযোগ পাও, ঘুষ খাবে কি? ৯০ ভাগ ছাত্র উত্তর দেয় ঘুষ খাবো। আমি কিন্তু কেঁদে কেটে অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম। দেশের সবচাইতে মেধাবীদের এনে পাঁচ বছর পড়িয়ে কী নৈতিক শিক্ষা দিলেন? এর মানে বুয়েটের কারিকুলামের মধ্যে একটা গভীর অসুখ আছে। বুয়েটে কিন্তু ডান পন্থা প্রবল। এখানে পড়াশোনা করে কি করতে হবে জগৎ সংসারের জন্য তা বুঝতে পারে না শিক্ষার্থীরা। এজন্য একই সঙ্গে তারা ঘুষও খেতে চায় আবার পারলৌকিক মুক্তিও চায়। আমি মনে করি আমাদের কারিকুলাম সিস্টেমে সমস্যা আছে। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে সমস্যা আছে। আমাদের নৈতিক মান এবং মূল্যবোধের সমস্যা আছে। আরেকটি সমস্যা হলো, এখানে যে কয়জন পড়ে তার মধ্যে ৯০ ভাগই বিদেশে চলে যায়। আমরা কিন্তু বিদেশে কর্মী পাঠানোর একটি ফ্যাক্টরিতে পরিণত হয়েছি। এই অবস্থায় আবরারের মৃত্যু আমাদেরকে জাগ্রত করুক। অবস্থার পরিবর্তনে আমাদের সার্বিক কারিকুলাম বদলাতে হবে, সিস্টেম বদলাতে হবে। শূন্যতা পূরণে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
সূত্র: ভয়েস অফ আমেরিকা
No comments