অদ্ভুত অরাজকতায় ফুঁসছে by সুখরঞ্জন দাসগুপ্ত
সুখরঞ্জন দাসগুপ্ত |
একদা
মমতার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড যিনি গত ১৬ বছর ধরে তৃণমূল নামক দলটিকে লালনপালন
করেছেন তিনি এ মাসের শেষে তৃণমূল ভেঙে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে
চলেছেন। সম্ভবত দলটির নাম হচ্ছে প্রগতিশীল তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়ের যাবতীয় অপকর্মের প্রধান সেনানী ছিলেন এই মুকুল। মুকুল
ছাড়া মমতা এক পাও কোথাও যেতে পারতেন না। একটা সময় ছিল যখন গভীর রাত পর্যন্ত
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে বৈঠক করতেন তিনি।
১৯৯৮ সাল থেকে দল গঠনের পর পশ্চিমবঙ্গে যত নির্বাচন হয়েছে সেগুলো পরিচালনা করার দায়িত্ব ছিল মুকুলের ওপর। প্রশাসনকে ঘুষ দিয়ে মমতার দলের কোলে ঝোল টানার দায়িত্বও ছিল তার ওপর। হঠাৎ সারদা কাণ্ডে ফেঁসে যাওয়ায় পর মমতা সেই মুকুলকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ভ্রাতুষ্পুত্র অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে গুরুত্ব দিতে শুরু করেন।
মুকুল ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ৫ বছর ক্ষমতা ভোগের পর মমতায় একটা হিসাব-নিকাশ নেয়া দরকার। ঘরের শত্রু বিভীষণ হলে কি পরিণাম হয় তা তো সবারই জানা। মমতা ভাইপোকে নিয়ে কতদিন তার দল চালাতে পারবেন তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। তাই পশ্চিমবঙ্গের মানুষও চাইছেন ‘দাস ফার অ্যান্ড নো ফারদার।’ এবার মমতাকেও রাজ্য থেকে হটিয়ে বদল আনতে হবে। নিজের দলের বিধায়ক এবং এমপিদের রীতিমতো ব্ল্যাকমেইল করছেন মমতা। অথচ তার মন্ত্রিসভার মন্ত্রী মদন মিত্র প্রায় এক বছর ধরে জেলে কাটাচ্ছেন। জেলে আছেন আরো দুই সাংসদ। মদন বাবু তার আইনজীবীকে দিয়ে আদালতে বলিয়েছেন, তাকে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। অভিযোগে মমতার নাম থাকাসত্ত্বেও তাকে কিছু বলা হচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে নতুন দল করে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে নেবেন মুকুল রায়। এ ব্যাপারে মুকুলের ঘনিষ্ঠরা বলেছেন, মুকুল তো প্রথমে বাম দলগুলো এবং কংগ্রেসের কাছে গিয়েছিলেন। তারা উৎসাহ না দেখানোয় তিনি বিজেপির সঙ্গে যাচ্ছেন। সংখ্যালঘুদের মধ্যে যাতে ভুল বার্তা না যায় সে জন্য গত সপ্তাহে তিনি ইফতার পার্টিতে প্রায় ৪ হাজার সংখ্যালঘু নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলেন।
মুকুল-মমতা মিলেই সারদা কাণ্ড ঘটিয়েছেন। মুকুল অভিযোগ করেছেন, ‘সারদা থেকে তৃণমূল তহবিলে যে বিপুল অর্থ ঢুকেছে তা আমার মারফতেই। মমতার প্রচারের জন্য ৭-৮টি চ্যানেল, অনেকগুলো কাগজ করে দিয়েছি।’ এখন অবশ্য তার একটাই লক্ষ্য। মমতাকে ক্ষমতাচ্যুত করা। সে জন্য যার সঙ্গে যেতে হয় তিনি যাবেন। তার এক দফা কর্মসূচি মমতা হঠাও।
মুকুলের তৈরি করা পুলিশ বাহিনী কি করবে তা নিয়েও যথেষ্ট তোলপাড় তৈরি হয়েছে। কারণ পুলিশও ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। ইতোমধ্যে ২২ জন পুলিশকর্মী তৃণমূলের হাতে খুন হয়েছেন। তাই পুলিশ মহলের ক্ষোভও আর চাপা নেই। ঈদের পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতি নতুন করে উত্তপ্ত হবে। কারণ বামপন্থি এবং কংগ্রেসও তাদের ধারাবাহিক আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
সম্প্রতি শিক্ষা ক্ষেত্রে চরম অরাজকতার ফলে ক্ষিপ্ত হয়ে রয়েছেন ছাত্র, শিক্ষক, অধ্যাপক, আইনজীবী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও। অবিভক্ত বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা আর নেপালও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ছিল। সেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানরত অধ্যাপকদের ওপর হামলা চালিয়েছে তৃণমূলের গুণ্ডা বাহিনী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করছিলেন অধ্যাপকরা। সেখানে গিয়ে শিক্ষকদের ওপর চড়াও হয় তারা। হেনস্থার হাত থেকে বাদ যাননি স্বয়ং উপাচার্যও।
এই ঘটনা নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে তোলপাড় চলছে রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে। অধ্যাপকদের নিগ্রহের ঘটনায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। অধ্যাপকরাই নাকি ছাত্রদের পিটিয়েছে। উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকেই সরিয়ে দেয়া হয়েছে। গোটা দেশের মানুষ যেখানে টিভির পর্দায় ওই হামলার ছবি দেখেছে, সেখানে স্বয়ং মন্ত্রী বলছেন, এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই অদ্ভুত অরাজকতার মধ্যে ফুঁসছে গোটা রাজ্য।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
১৯৯৮ সাল থেকে দল গঠনের পর পশ্চিমবঙ্গে যত নির্বাচন হয়েছে সেগুলো পরিচালনা করার দায়িত্ব ছিল মুকুলের ওপর। প্রশাসনকে ঘুষ দিয়ে মমতার দলের কোলে ঝোল টানার দায়িত্বও ছিল তার ওপর। হঠাৎ সারদা কাণ্ডে ফেঁসে যাওয়ায় পর মমতা সেই মুকুলকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ভ্রাতুষ্পুত্র অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে গুরুত্ব দিতে শুরু করেন।
মুকুল ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ৫ বছর ক্ষমতা ভোগের পর মমতায় একটা হিসাব-নিকাশ নেয়া দরকার। ঘরের শত্রু বিভীষণ হলে কি পরিণাম হয় তা তো সবারই জানা। মমতা ভাইপোকে নিয়ে কতদিন তার দল চালাতে পারবেন তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। তাই পশ্চিমবঙ্গের মানুষও চাইছেন ‘দাস ফার অ্যান্ড নো ফারদার।’ এবার মমতাকেও রাজ্য থেকে হটিয়ে বদল আনতে হবে। নিজের দলের বিধায়ক এবং এমপিদের রীতিমতো ব্ল্যাকমেইল করছেন মমতা। অথচ তার মন্ত্রিসভার মন্ত্রী মদন মিত্র প্রায় এক বছর ধরে জেলে কাটাচ্ছেন। জেলে আছেন আরো দুই সাংসদ। মদন বাবু তার আইনজীবীকে দিয়ে আদালতে বলিয়েছেন, তাকে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। অভিযোগে মমতার নাম থাকাসত্ত্বেও তাকে কিছু বলা হচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে নতুন দল করে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে নেবেন মুকুল রায়। এ ব্যাপারে মুকুলের ঘনিষ্ঠরা বলেছেন, মুকুল তো প্রথমে বাম দলগুলো এবং কংগ্রেসের কাছে গিয়েছিলেন। তারা উৎসাহ না দেখানোয় তিনি বিজেপির সঙ্গে যাচ্ছেন। সংখ্যালঘুদের মধ্যে যাতে ভুল বার্তা না যায় সে জন্য গত সপ্তাহে তিনি ইফতার পার্টিতে প্রায় ৪ হাজার সংখ্যালঘু নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলেন।
মুকুল-মমতা মিলেই সারদা কাণ্ড ঘটিয়েছেন। মুকুল অভিযোগ করেছেন, ‘সারদা থেকে তৃণমূল তহবিলে যে বিপুল অর্থ ঢুকেছে তা আমার মারফতেই। মমতার প্রচারের জন্য ৭-৮টি চ্যানেল, অনেকগুলো কাগজ করে দিয়েছি।’ এখন অবশ্য তার একটাই লক্ষ্য। মমতাকে ক্ষমতাচ্যুত করা। সে জন্য যার সঙ্গে যেতে হয় তিনি যাবেন। তার এক দফা কর্মসূচি মমতা হঠাও।
মুকুলের তৈরি করা পুলিশ বাহিনী কি করবে তা নিয়েও যথেষ্ট তোলপাড় তৈরি হয়েছে। কারণ পুলিশও ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। ইতোমধ্যে ২২ জন পুলিশকর্মী তৃণমূলের হাতে খুন হয়েছেন। তাই পুলিশ মহলের ক্ষোভও আর চাপা নেই। ঈদের পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতি নতুন করে উত্তপ্ত হবে। কারণ বামপন্থি এবং কংগ্রেসও তাদের ধারাবাহিক আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
সম্প্রতি শিক্ষা ক্ষেত্রে চরম অরাজকতার ফলে ক্ষিপ্ত হয়ে রয়েছেন ছাত্র, শিক্ষক, অধ্যাপক, আইনজীবী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও। অবিভক্ত বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা আর নেপালও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ছিল। সেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানরত অধ্যাপকদের ওপর হামলা চালিয়েছে তৃণমূলের গুণ্ডা বাহিনী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করছিলেন অধ্যাপকরা। সেখানে গিয়ে শিক্ষকদের ওপর চড়াও হয় তারা। হেনস্থার হাত থেকে বাদ যাননি স্বয়ং উপাচার্যও।
এই ঘটনা নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে তোলপাড় চলছে রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে। অধ্যাপকদের নিগ্রহের ঘটনায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। অধ্যাপকরাই নাকি ছাত্রদের পিটিয়েছে। উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকেই সরিয়ে দেয়া হয়েছে। গোটা দেশের মানুষ যেখানে টিভির পর্দায় ওই হামলার ছবি দেখেছে, সেখানে স্বয়ং মন্ত্রী বলছেন, এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই অদ্ভুত অরাজকতার মধ্যে ফুঁসছে গোটা রাজ্য।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
No comments