আবারও মেসি চমক by তালহা বিন নজরুল
আবারও মেসি চমক, আবারও জয় আর্জেন্টিনার।
রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর হাঁপ ছেড়ে বাঁচা। আর্জেন্টাইন শিবিরের স্নায়ুছেঁড়া
উত্তেজনার অবসান ঘটে খেরার যখন বাকি ছিল মাত্র তিন মিনিট। আর্জেন্টিনার
একের পর এক আক্রমণ বিফল হয়ে যাচ্ছিল সুইস রক্ষণভাগে। সবার মধ্যে প্রস্ততি
টাইব্রেকারের। এমন সময়ে মাঝমাঠ থেকে সেই মেসির অসাধরণ টান। বল নিয়ে ছুটছেন
বিশ্বসেরা তারকা, আটকানোর চেষ্টায় ব্যস্ত একাধিক ডিফেন্ডার। দেরি করলেন না
বার্সেলোনার এ তারকা। দেখলেন ডান দিকে দিয়ে ফাঁকায় আছেন রিয়াল মাদ্রিদের ডি
মারিয়া। মাপা ক্রস, বল পেয়ে গেলেন ডি মারিয়া। এবার আর মিস করেননি। তার বাম
পায়ের তীব্র গড়ানো শট বারের কোনা দিয়ে বেনালিওকে ফাঁকি দিয়ে স্পর্শ করে
জালে। আনন্দে শুন্যে লাফিয়ে উঠলেন মারিয়া, সঙ্গে বিশ্বের আনাচে কানাচে থাকা
সব আর্জেন্টানইন সমর্থকরাও। ভাষ্যকারের তীব্র আওয়াজ; হোয়াট এ গোল!
পারফেক্ট পাস, পারফেক্ট ফিনিশিং। এই খেলায় ডি মারিয়া অন্তত ১২টি শট নেন
সুইজারল্যান্ডের গোলে। বিশ্বকাপে সেই ১৯৯৬ সালের পর কোন একটি খেলায়
আর্জেন্টিনার একজন খেলোয়াড়ের সর্বাধিক শট। তার খেলায় অনেকে হতাশ হলেও তার
অব্যাহত প্রচেষ্টায় কেউ তার প্রতি ক্ষুব্ধ হতে পারবেন না। ইরানের বিরুদ্ধে
গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় খেলায়ও শেষ মিনিটে লিওনেল মেসির দুর্দান্ত গোলে জয়
পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। গোল খাওয়ার পর সর্বাত্মক আক্রমণে গোল পরিশোধের চেষ্টা
করে সুইজারল্যান্ড। সুযোগও পেয়ে গিয়েছিল তারা। একেবারে পোস্টের কাছ থেকে
হেড করেছিলেন বদলি খেলোয়াড় ডিজামালি। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার এবং
সুইজারলান্ডের। বলটি সাইড বারে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলটিও তার পায়ে লাগে
বটে কিন্তু বাইরের দিয়ে চলে যায়। শেস মুহুর্তে সুইজারল্যান্ডের গোলরক্ষকও
আক্রমণে উঠে আর্জেন্টিনার সীমানায় চলে যান। অতিরিক্ত সময়ের তিন মিনিটে ডি
মারিয়ার তীব্র গতির একটি শট বেনালিও বাঁদিকে ঝাপিয়ে ডান হাতে পাঞ্চ করে
ফিরিয়ে দিয়ে নিশ্চিত গোলের হাত থেকে বাঁচান সুইজারল্যান্ডকে। আর্জেন্টিনা
বিশ্বকাপে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ছয় খেলার মধ্যে পাঁচটিতেই জিতেছে এর আগে।
সাও পাওলোতে আরেনা করিন্থিয়ান্স-এ বিশ্বকাপ ফুটবলের দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলায় আর্জেন্টিনা সুইজারল্যান্ড খেলায় ৯০ মিনিটে কোন দলই গোল করতে না পারায় অতিরিক্তি সময়ে খেলা গড়ায়। এবার দ্বিতীয় পর্বের সাত খেলার মধ্যে চারটিই শেষ হলো অতিরিক্ত সময়ে, যার দু’টি নিস্পত্তি হয় টাইব্রেকারে। বেশ কয়েকবার গোলের সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি। সুযোগ পেয়েছিল সুইজারল্যান্ডও। দুই দলের খেলোয়াড়দের ফাউল করে খেলার প্রবণতা খেলার সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়। আগুয়েরোর পরিবর্তে মাঠে নামেন লাভেজ্জি। ম্যারডোনাকে মাঠে দেখা না গেলেও উপস্থিত ছিলেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলে। দেখে মনেই হয়নি এই সুইজারল্যান্ড দল প্রথম পর্বে ফ্রান্সের কাছে ৫-২ গোলে হেরেছিল। উল্টো প্রথমার্ধে অন্তত দুটি আসল সুযোগ পেয়েছিল সুইজারল্যান্ডই। আর্জেন্টিনা ৪-৩-৩ পদ্ধতিতে আর সুইজারল্যান্ড ৪-৫-১ পদ্ধতিতে খেলা শুরু করে। আর্জেন্টিনার আক্রমণে ডান দিকে ছিলেন লাভেজ্জি। আর বামে ছিলেন হিগুয়াইন। আর মাঝেখানে মেসি স্বয়ং। মাঝমাঠে ডি মারিয়া, সেন্টার মিডফিল্ডে মাসকেরানো আর গাগো ছিলেন। তবে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় দেখা গেছে ডি মারিয়াকে। তিনি অপ্রতিরোধ্য গতি ও শৈলীতে ব্যাতিব্যস্ত রাখেন সুইস রক্ষণভাগকে। তবে এক হিসাবে দেখা ৯০ মিনিটে তার পা থেকে বল বেদখল হয়েছে ৩৭ বার। যদিও শেষ কাজটি করেছেন সেই ডি মারিয়া।
৬৭ মিনিটে মেসি একটা সুযোগ তৈরি করেও সফল হতে পারেন নি। বঙের ওপরে বুক দিয়ে নামিয়ে হাফ ভলি মারেন মেসি। কিন্তু তার তীব্র শটের বল বারের উপর দিয়ে চলে যায়। এর ১০ মিনিট পর বঙের ভেতরে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে ঢুকে বাঁ পায়ে তীব্র শট নিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু বেনাগলিও শুয়ে পড়ে তা আটকে দেন। বিরতির পরপরই হিগুয়াইনের তীব্র হেডের বল চমৎকারভাবে বারের উপর দিয়ে পাঠিয়ে দেন সুইস গোলরক্ষক দিয়েগো বেনালিও। ৩৪ মিনিটে সুইসরা আরেকটি সুযোগ পায় ফি কিক পেলে। কিন্তু শাকিরির বাঁকানো শট রোমেরো ফিরিয়ে দেন। ৩৯ মিনিটের সময় একটা সহজ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন নি সুইস আক্রমণভাগের জসিপ দারমিচ। পাল্টা আক্রমণ থেকে বল পেয়ে ছুটছিলেন তিনি। আর্জেন্টিনার সব ডিফেন্ডার পেছনে পড়ে গিয়েছিলেন। সামনে কেবল গোলরক্ষক রোমেরো। কিন্তু দ্রুত ধাবমান জসিপ বঙের কোনা থেকে বলটি সোজা তুলে দেন রোমেরোর হাতে। প্রথম ৫ মিনিটে মেসিকে দেখাই যায়নি। আর্জেন্টিনাও শুরু করে বেশ শান্ত ও ধীরে। যেন তাড়াহুড়োর কি আছে। আমরাই তো জিতবো। মেসির আসল টান দেখা যায় খেলা ১৫ মিনিটের সময়। কাগজে কলমে ২০,০০০ আর্জেন্টাইন সমর্থক খেলা দেখতে ঢুকলেও পুরো গ্যালারি জুড়েই দেখা গেছে তাদের জার্সি। আর্জেন্টাইন সমর্থক হবে প্রায় ৪০,০০০। দু’তিন জায়গায় দেখা যায় লাল জার্সি গায়ে সুইস সমর্থক। তবে আসনসংখ্যা ছিল ৬২৩২২, যার অনেকই শুন্য পড়ে ছিল।
No comments