আয়ারল্যান্ডের জন্য তৈরি হচ্ছে ঘূর্ণিফাঁদ by সাইদুজ্জামান

উঁচু ক্যাচ নিতে গিয়ে ডান কাঁধে ভর দিয়ে পড়লেন শফিউল ইসলাম। সেখান থেকে মাইকেল হেনরির সাহায্যে তাঁর বেরিয়ে আসা দেখে বাংলাদেশ দলের প্র্যাকটিস দেখতে আসা ছোট ভিড়ে গুঞ্জন, 'তবে কি মাশরাফি বিন মুর্তজার স্বপ্নের পালে হাওয়া লাগল?' কিছুক্ষণ শুশ্রূষা দিয়ে বাংলাদেশ দলের অস্ট্রেলীয় ফিজিও পরিষ্কার বাংলায় সে হাওয়া


সরিয়ে নিলেন, 'তোমাদের চিন্তার কিছু নেই।' শফিউল ঠিক আছেন। নেটে বলের আঘাত পাওয়া ইমরুল কায়েসের হাতের ব্যথাও মামুলি বরফ চিকিৎসায় সেরে গেছে। তাই মাশরাফির দরজা আপাতত বন্ধই থাকছে। আর বদ্ধ ঘরে আয়ারল্যান্ড ম্যাচকে ঘিরে একের পর এক ছক এঁকে যাচ্ছে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। সেই চিন্তাবিদদের গতকালের উদ্ভাবন, এক পেসার ফর্মুলা।
ঘরোয়া ক্রিকেটে এক পেসার নিয়ে ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলারও রেকর্ড আছে এ দেশে! সেখানে উইকেটের কারণে এক দিনের ক্রিকেটে এক পেসার দিয়ে নতুন বলটাকে নূ্যনতম সন্মান (!) দেওয়ার ঘটনা থাকাটাই স্বাভাবিক। আছেও। শুধু ঘরোয়া ক্রিকেট কেন, দেশের মাটিতে এক পেসার নিয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচও খেলেছে বাংলাদেশ। তবে বিশ্বকাপে এখনো খেলেনি 'এক পেসারের বাংলাদেশ'। থিংক ট্যাংকের সবশেষ চিন্তা মাঠে অনূদিত হলে ২৫ ফেরুয়ারি সে অভিষেকও হয়ে যাবে! আয়ারল্যান্ড স্পিন খেলতে পারে না, ২০১১ বিশ্বকাপ প্রচারণার চেয়েও জোরালো হয়ে ওঠা এ দাবি বাংলাদেশ দলের। দলের বাইরে বিসিবি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মাঝেও সংক্রমিত।
এ দাবির পক্ষে বিস্তর প্রমাণাদিও আছে। ২০০৭ বিশ্বকাপে হারের বদলা পরের বছর ঘরের মাঠে নিয়েছিল বাংলাদেশ। ৩-০ ব্যবধানে জেতা সে সিরিজে আয়ারল্যান্ড বধে বাংলাদেশের মূল অস্ত্রই ছিল স্পিন। একাদশে দুজন পেসার থাকলেও প্রথম ম্যাচে মাশরাফির পর তৎকালীন অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল বল তুলে দিয়েছিলেন আবদুর রাজ্জাকের হাতে। কানাঘুষা হচ্ছে, বিশ্বকাপ ম্যাচে আবারও নতুন বল পেতে পারেন বাঁহাতি এ স্পিনার।
তবে স্পিনের মায়াজালে আয়ারল্যান্ডকে আটকে ফেলার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? যদি কেউ একটা বড় ইনিংস খেলে ফেলেন। যদি আরেকটি বিশ্বকাপ চমক দেখাতে আবারও বাংলাদেশকেই বেছে নেয় আইরিশরা! আশ্বাসবাণী শুনিয়েছেন মুশফিকুর রহিম, 'আমার মনে হয় না আমাদের কন্ডিশনে আমাদের স্পিনারদের ওরা খেলতে পারবে।' ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে রাজ্জাকের বোলিং বিশ্লেষণ ভয়াবহ রূপ নিলেও তাঁর শুরুটা কিন্তু মোটেও খারাপ ছিল না। পাওয়ার প্লে'তে আক্রমণে এসেও বীরেন্দর শেবাগ ও শচীন টেন্ডুলকারের বিপক্ষে ৪ ওভারের প্রথম স্পেলে মাত্র ২০ রান দিয়েছিলেন রাজ্জাক। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে শুরুতে এ বোলিংটা করতে পারলে তাঁর দু-একটা শিকারও জুটে যাওয়ার কথা।
রাজ্জাক কিংবা সাকিব আল হাসান-নাঈমদের সাফল্য নিশ্চিত করায় চেষ্টার ত্রুটি নেই। বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মুন্নার দেওয়া তথ্যমতে, মিরপুরের যে উইকেট সবচেয়ে বেশি স্পিন-সহায়ক, সেটিতেই খেলতে হবে আয়ারল্যান্ডকে। 'হোম অ্যাডভান্টেজ' নিতে উইকেটে বাড়তি কারিকুরির দরকার নেই। আগামী দুদিনের আবহাওয়া পূর্বাভাস দেখে গ্রাউন্ডস কমিটি আরো চাপমুক্ত। রাতে ঘন শিশিরপাতের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাতে রাজ্জাক-সাকিবদের রাতে বোলিং করতে সমস্যা হবে না বলেই ধারণা তাঁদের। অবশ্য শিশিরের ম্যাচকে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা থাকুক কিংবা না থাকুক, টস জিতলে আগামীকালের ম্যাচেও প্রথমে ফিল্ডিং করবে বাংলাদেশ। পেসারদের যেহেতু রাতে বোলিংয়ে সমস্যাটা কম হয়, তাই আগে ব্যাটিং করা আইরিশদের ম্যাচ ভাবনাতেও প্রাধান্য পাওয়ার কথা। যদি বাংলাদেশের সামনে বড় কোনো স্কোর দাঁড় করিয়ে দেয় যায়! এক দিন আগে নাগপুরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৯২ রান করেছে নেদারল্যান্ডস। তাহলে আয়ারল্যান্ড কেন পারবে না? উত্তর একটাই, ইংল্যান্ডের শুধু গ্রায়েম সোয়ান আছেন। কিন্তু বাংলাদেশের আছেন রাজ্জাক, সাকিব, নাঈম, মাহমুদউল্লাহ। এমনকি এক পেসার ফর্মুলা বাজার পেয়ে গেলে তৃতীয় বাঁহাতি স্পিনার সোহরাওয়ার্দীর বিশ্বকাপ অভিষেকও হয়ে যেতে পারে ২৫ ফেব্রুয়ারি।

No comments

Powered by Blogger.