বারবার ভাঙনের শিকার স্কুল, ফসলি জমিতে পাঠদান
চারদিকে ফসলের মাঠ। মাঝখানে ৩৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রশস্ত ছাপরাঘর। এর চারপাশ খোলা। বাঁশের খুঁটি ও টিনের চালার নিচে শিশুরা বসে আছে তিন ভাগে। দুজন শিক্ষিকা চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পাশে জটলা করে বসে আছে। ঠান্ডা বাতাসে শিশুদের জবুথবু অবস্থা। এ দৃশ্য শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর ইউনিয়নের কাঁকড়াভোগ গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। নাম কলমিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গত বছরের ২৬ আগস্ট কলমিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন পদ্মায় বিলীন হয়। এরপর বিদ্যালয়টির স্থায়ী কোনো জায়গা কিংবা ভবন মেলেনি। বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কাঁকড়াভোগ গ্রামে ১৬ শতাংশ ফসলি জমি ভাড়া নিয়ে টিনের চালা দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছেন। কলমিরচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলেন, কুন্ডেরচর ইউনিয়নের কলমিরচর গ্রামটি পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত। ২০০৭ সালের ১৮ আগস্ট বিদ্যালয়ের চার কক্ষের একটি পাকা ভবন নদীভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। এরপর ওই গ্রামের মাঝখানের একটি টিনের ঘরের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চলছিল।
গত ২৬ আগস্ট নদীভাঙনে বিদ্যালয়ের টিনের ওই ভবনটিও বিলীন হয়ে যায়। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে পাশের কাঁকড়াভোগ গ্রামের কালু ব্যাপারীর কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আঙিনায় তিন মাস বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহানাজ বেগম বলেন, কাঁকড়াভোগ গ্রামের জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে বার্ষিক ৮ হাজার টাকায় ১৬ শতাংশ জমি ভাড়া নেওয়া হয়। ওই টাকার সংস্থান করেন শিক্ষকেরাই। পরে সেখানে বাঁশ ও টিনের চালা দিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে, কিন্তু চারপাশে কোনো বেড়া দেওয়া যায়নি। সেখানেই গত ৭ জানুয়ারি থেকে পাঠদান চালছে। বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিফ মোল্লা বলে, স্কুলের চারপাশ খোলা হওয়ার কারণে ঠান্ডা বাতাসে বেশ কষ্ট হয় তাদের। একটি ঘরের মধ্যে সব শ্রেণির ক্লাস হওয়ায় তাদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটছে। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বর্ষা আক্তার বলেন, ২০১৬ সালে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল ২৯০ জন। বর্তমানে ১১৫ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। শৌচাগার না থাকার কারণে শিশুদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক বলেন, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা অনুদান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২০ হাজার টাকা দিয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শরীয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি। এই টাকা দিয়ে ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হবে। শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ওই বিদ্যালয়ের একটি ভবন নির্মাণ করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি অনুদান নিয়ে শিগগিরই একটি ঘর নির্মাণ করে শিশুদের মনে আনন্দ ফিরিয়ে দিতে পারব।’
No comments