খালেদা জিয়ার সাত দফা- কৌশল না পিছু হটা! by রিয়াদুল করিম
বিএনপির
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাত দফা প্রস্তাব নিয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে
মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেক নেতা এ
প্রস্তাবে কিছুটা বিস্মিত হয়েছেন। আবার কেউ কেউ একে দেখছেন কৌশল হিসেবে।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, এ প্রস্তাব আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিএনপিকে
কিছুটা হলেও বাড়তি সুবিধা দেবে। গত বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে খালেদা
জিয়া নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন
পুনর্গঠন ও বর্তমান আরপিও সংশোধন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে
মন্ত্রিসভা ও জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ‘প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর সম্মতিতে
গঠিত’ নির্দলীয় সরকারের হাতে দায়িত্ব দেওয়াসহ সাত দফা প্রস্তাব তুলে
ধরেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে এ
উদ্যোগ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জানা গেল, খালেদা জিয়া যে এ ধরনের প্রস্তাব
তুলে ধরবেন, তা দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি বড় অংশ জানতেন না। হঠাৎ
এ উদ্যোগে তাঁরা কিছুটা বিস্মিত হয়েছেন। তবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া এ প্রস্তাব দেওয়ার আগে তা নিয়ে বিএনপির
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়। এরপর ২০-দলীয় জোটের শরিকদের
তা জানানো হয়। তারপর সংবাদ সম্মেলন করেন খালেদা জিয়া।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়ার এ প্রস্তাব নিয়ে জানতে চাইলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের এক বছর হয়ে গেছে। অনেকের মনেই হয়তো প্রশ্ন, বিএনপি এখন সুনির্দিষ্টভাবে কী চায়। কারণ, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন না মানা এক বিষয়, আর এখনকার চাওয়া আরেক বিষয়। তাই এ রকম দাবি বা প্রস্তাব থাকলে বিএনপির সামনের আন্দোলনে সুবিধাই হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে পুরোপুরি বৈধতা দেয়নি। তারা হয়তো মনে করে, বড় দুই দলকে একসময় আলোচনায় বসতেই হবে। এ প্রস্তাব বিএনপিকে সেদিক থেকেও কিছুটা সুবিধা দিতে পারে। এ বিশ্লেষণের সঙ্গে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব সম্পর্কে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের ওয়াকিবহাল অংশের মূল্যায়নের মিল পাওয়া গেছে। এ অংশটি প্রথম আলোকে জানায়, ৫ জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ের আন্দোলনে যেতে চায় বিএনপি। এ পর্যায়ে থাকবে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি। তার আগে নিজেদের দাবি ও অবস্থান স্পষ্ট করতেই এই সাত দফা তুলে ধরা হয়েছে; যাতে আন্দোলন শুরু হলে দলকে কোনো প্রশ্নের মুখে পড়তে না হয়। দলের এ অংশের মূল্যায়ন হচ্ছে, বিএনপির আন্দোলন যখনই দানা বাঁধতে শুরু করে, তখন সরকার একে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা হিসেবে আখ্যা দেয়। তাঁদের আশঙ্কা, এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না। এ কারণেও আন্দোলনে যাওয়ার আগে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করা জরুরি ছিল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এত দিন বলা হয়েছে বিএনপি কী চায়? এখন তা-ই পরিষ্কার করা হয়েছে। দেশে ন্যূনতম গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে এই সাত দফা বাস্তবায়ন করতে হবে। এই মূল্যায়নের সঙ্গে অবশ্য একমত নন বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সব নেতা। স্থায়ী কমিটির তিনজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেছেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের আচমকা এমন প্রস্তাবে তাঁরা কিছুটা হতবাক হয়েছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এমন একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘ম্যাডামের বক্তব্যে আমরা নিজেরাও কনফিউজড (বিভ্রান্ত)। বক্তব্যের পর আমরা নিজেরা অনেকে এ নিয়ে আলোচনা করেছি। উনি যেভাবে কথা বলছিলেন, এগুলো তো নির্বাচনের প্রাক্কালের কথা। নির্বাচন কি খুব কাছাকাছি সময়ে হচ্ছে? কেউ-ই মনে করছে না যে মার্চ-এপ্রিল বা ভেরি নিয়ার ফিউচার (নিকট ভবিষ্যৎ) নির্বাচন হচ্ছে। জাতিসংঘের মতো বড় কোনো শক্তি কি নির্বাচনের ব্যবস্থা করছে? আন্তর্জাতিক বিশ্ব পরিস্থিতি তো সে কথা বলছে না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য মনে করেন, ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচি দিয়ে যেভাবে বিএনপি পিছিয়ে গিয়েছিল, এ সংবাদ সম্মেলনও আবার বিএনপিকে পিছিয়ে দিয়েছে। ৫ জানুয়ারি সামনে রেখে আন্দোলনের যে গতি তৈরি হচ্ছিল, খালেদা জিয়ার ‘নরম সুরের বক্তব্য’ তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মাঠপর্যায়ে কর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। দলের মধ্যম সারি ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের মধ্যেও চেয়ারপারসনের বক্তব্য নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। দলের জেলা শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সম্পাদক পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে এই প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। এঁদের কেউ কেউ মনে করছেন, খালেদা জিয়ার প্রস্তাব কৌশলগত। আবার কোনো ধরনের আলটিমেটাম না থাকায় কেউ কেউ হতাশ হয়েছেন। তবে সহসম্পাদক পর্যায়ের একাধিক নেতা মনে করেন, খালেদা জিয়ার কাছে কোনো ‘সিগন্যাল’ আছে। না হলে হঠাৎ তিনি এমন প্রস্তাব দিতেন না। জেলা পর্যায়ের নেতাদের কেউ কেউ ধারণা করেছিলেন, খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারি কঠোর কর্মসূচি দেবেন এবং তাঁর বক্তব্য হবে আক্রমণাত্মক। বিশেষ করে গাজীপুরের সমাবেশ থেকে পিছু হটার পর কর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে আনতে এটা দরকার ছিল বলে তাঁদের ধারণা।
কর্মীদের একটা অংশও কর্মসূচি না থাকায় কিছুটা বিস্মিত। গত বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার বক্তব্য শেষে তাঁর গুলশান কার্যালয়ের বাইরে অপেক্ষমাণ ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মীর বক্তব্যের মোদ্দা কথা ছিল—তাহলে কী হলো? তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এমাজউদ্দীন আহমদের ব্যাখ্যা ভিন্ন। তিনি মনে করেন, বিএনপি আন্দোলনের জন্য দলকে সংগঠিত করেছে। সামনে হয়তো হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি আসবে। দেশ অশান্ত হবে। এ ক্ষেত্রে কর্মীদের মনে সাহস সঞ্চারের জন্য বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রস্তাব বড় ভূমিকা রাখবে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়ার এ প্রস্তাব নিয়ে জানতে চাইলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের এক বছর হয়ে গেছে। অনেকের মনেই হয়তো প্রশ্ন, বিএনপি এখন সুনির্দিষ্টভাবে কী চায়। কারণ, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন না মানা এক বিষয়, আর এখনকার চাওয়া আরেক বিষয়। তাই এ রকম দাবি বা প্রস্তাব থাকলে বিএনপির সামনের আন্দোলনে সুবিধাই হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে পুরোপুরি বৈধতা দেয়নি। তারা হয়তো মনে করে, বড় দুই দলকে একসময় আলোচনায় বসতেই হবে। এ প্রস্তাব বিএনপিকে সেদিক থেকেও কিছুটা সুবিধা দিতে পারে। এ বিশ্লেষণের সঙ্গে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব সম্পর্কে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের ওয়াকিবহাল অংশের মূল্যায়নের মিল পাওয়া গেছে। এ অংশটি প্রথম আলোকে জানায়, ৫ জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ের আন্দোলনে যেতে চায় বিএনপি। এ পর্যায়ে থাকবে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি। তার আগে নিজেদের দাবি ও অবস্থান স্পষ্ট করতেই এই সাত দফা তুলে ধরা হয়েছে; যাতে আন্দোলন শুরু হলে দলকে কোনো প্রশ্নের মুখে পড়তে না হয়। দলের এ অংশের মূল্যায়ন হচ্ছে, বিএনপির আন্দোলন যখনই দানা বাঁধতে শুরু করে, তখন সরকার একে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা হিসেবে আখ্যা দেয়। তাঁদের আশঙ্কা, এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না। এ কারণেও আন্দোলনে যাওয়ার আগে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করা জরুরি ছিল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এত দিন বলা হয়েছে বিএনপি কী চায়? এখন তা-ই পরিষ্কার করা হয়েছে। দেশে ন্যূনতম গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে এই সাত দফা বাস্তবায়ন করতে হবে। এই মূল্যায়নের সঙ্গে অবশ্য একমত নন বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সব নেতা। স্থায়ী কমিটির তিনজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেছেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের আচমকা এমন প্রস্তাবে তাঁরা কিছুটা হতবাক হয়েছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এমন একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘ম্যাডামের বক্তব্যে আমরা নিজেরাও কনফিউজড (বিভ্রান্ত)। বক্তব্যের পর আমরা নিজেরা অনেকে এ নিয়ে আলোচনা করেছি। উনি যেভাবে কথা বলছিলেন, এগুলো তো নির্বাচনের প্রাক্কালের কথা। নির্বাচন কি খুব কাছাকাছি সময়ে হচ্ছে? কেউ-ই মনে করছে না যে মার্চ-এপ্রিল বা ভেরি নিয়ার ফিউচার (নিকট ভবিষ্যৎ) নির্বাচন হচ্ছে। জাতিসংঘের মতো বড় কোনো শক্তি কি নির্বাচনের ব্যবস্থা করছে? আন্তর্জাতিক বিশ্ব পরিস্থিতি তো সে কথা বলছে না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য মনে করেন, ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচি দিয়ে যেভাবে বিএনপি পিছিয়ে গিয়েছিল, এ সংবাদ সম্মেলনও আবার বিএনপিকে পিছিয়ে দিয়েছে। ৫ জানুয়ারি সামনে রেখে আন্দোলনের যে গতি তৈরি হচ্ছিল, খালেদা জিয়ার ‘নরম সুরের বক্তব্য’ তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মাঠপর্যায়ে কর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। দলের মধ্যম সারি ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের মধ্যেও চেয়ারপারসনের বক্তব্য নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। দলের জেলা শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সম্পাদক পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে এই প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। এঁদের কেউ কেউ মনে করছেন, খালেদা জিয়ার প্রস্তাব কৌশলগত। আবার কোনো ধরনের আলটিমেটাম না থাকায় কেউ কেউ হতাশ হয়েছেন। তবে সহসম্পাদক পর্যায়ের একাধিক নেতা মনে করেন, খালেদা জিয়ার কাছে কোনো ‘সিগন্যাল’ আছে। না হলে হঠাৎ তিনি এমন প্রস্তাব দিতেন না। জেলা পর্যায়ের নেতাদের কেউ কেউ ধারণা করেছিলেন, খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারি কঠোর কর্মসূচি দেবেন এবং তাঁর বক্তব্য হবে আক্রমণাত্মক। বিশেষ করে গাজীপুরের সমাবেশ থেকে পিছু হটার পর কর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে আনতে এটা দরকার ছিল বলে তাঁদের ধারণা।
কর্মীদের একটা অংশও কর্মসূচি না থাকায় কিছুটা বিস্মিত। গত বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার বক্তব্য শেষে তাঁর গুলশান কার্যালয়ের বাইরে অপেক্ষমাণ ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মীর বক্তব্যের মোদ্দা কথা ছিল—তাহলে কী হলো? তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এমাজউদ্দীন আহমদের ব্যাখ্যা ভিন্ন। তিনি মনে করেন, বিএনপি আন্দোলনের জন্য দলকে সংগঠিত করেছে। সামনে হয়তো হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি আসবে। দেশ অশান্ত হবে। এ ক্ষেত্রে কর্মীদের মনে সাহস সঞ্চারের জন্য বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রস্তাব বড় ভূমিকা রাখবে।
No comments