পা হারিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যত মোস্তফার by আল আমিন
পোশাক
শ্রমিক মোস্তফা প্রধান (২৬)। হাঁটু থেকে বাঁ পা কাটা পড়েছে। নাকের ওপর ও
কোমরে আঘাতের চিহ্ন। শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম। দুই চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে
পানি। হাসপাতালে বিছানার পাশে বসে থাকা পরিবারের সদস্যদের মুখের দিকে
হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে রয়েছেন। সামনে তার অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। সরেজমিন ঢাকা
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডে ১০ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন
মোস্তফা প্রধানের জীবন এখন এ রকমই। সোমবার দুপুরে কমলাপুর রেলস্টেশনে
অভ্যন্তরীণ কন্টিনেন্টাল ডিপো (আইসিডি)-র মধ্যে কাভার্ড ভ্যান ও ট্রেনের
সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিনি। মুমূর্ষু অবস্থায় রেলস্টেশনের লোকজন
তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকরা
জানিয়েছেন, তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা
জানিয়েছেন, তারা নিম্নবিত্ত মানুষ। তাদের সংসারে আর্থিক অনটন লেগেই থাকে। এ
অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার টাকা আসবে কোথা থেকে? ওই দিনের স্মৃতিচারণ করে
মোস্তফা প্রধান জানান, নারায়ণগঞ্জের বিসিক শিল্প নগরীর করোনী টেক্স সোয়েটার
নামে একটি কারখানার শ্রমিক। থাকতেন ওই শিল্প এলাকার পাশের একটি গ্রামে।
আগে চাকরি করতেন সাভারের আশুলিয়ার আউকপাড়ার একটি গার্মেন্ট কারখানায়।
দু’মাস হলো নতুন চাকরিতে যোগ দেন। সাভারের ভাড়া বাড়িতে রেখে যাওয়া কিছু
মালপত্র আনতেই নারায়ণগঞ্জের রেলস্টেশন থেকে একটি লোকাল ট্রেনে করে কমলাপুরে
রেলস্টেশনে আসছিলেন। বলেন, ওই ট্রেনের দুই নম্বর বগির ডান পাশের দরজার
সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বগির ভেতরে দাঁড়ানোর তিল পরিমাণের জায়গা ছিল না।
এজন্য দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। মোস্তফা আরও জানান, ট্রেনটি আইসিডি’র
মধ্যে আসার পর একটি কাভার্ড ভ্যান দুই নম্বর বগিকে সজোরে ধাক্কা মারে।
চিৎকার দিয়ে ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়ি। এরপর আর কিছু মনে নেই। পরে হাসপাতালে
জ্ঞান আসার পর দেখি, বাঁ পা কাটা পড়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এর চেয়ে
মৃত্যু অনেক ভাল ছিল। মোস্তফা প্রধানের গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার করুলগোছা এলাকায়। চার ভাই সাত বোনের মধ্যে তিনি
চতুর্থ। স্ত্রী লিমা বেগম জানান, আমাদের বিয়ে হয়েছে ১৫ মাস। স্বামী অল্প
টাকা বেতন পায়। টেনে-টুনে সংসার চলে। ভাবতেই পারেনি যে এমন একটি দুর্ঘটনায়
শিকার হয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনে অন্ধকার নেমে আসবে। এখন নিঃস্ব অবস্থা।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণের ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। সব ওষুধ
বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। তিনি স্বামীর
চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। শ্বশুর ইসলাম
হোসেন জানান, আমরা সমাজে নিম্নবিত্ত শ্রেণী। এখন কি করে তার চিকিৎসার টাকা
যোগাড় করবো জানি না। শাশুড়ি নিলুফা বেগম জানান, এ দুর্ঘটনায় কারও গাফিলতি
থাকলে তাদের যেন শাস্তি দেয়া হয়। কেননা এটা কেবল দুর্ঘটনা নয়- এটি
সারাজীবনের অভিশাপ। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সহকারী পরিচালক ডা. মুশফিকুর
রহমান জানান, ট্রেন দুর্ঘটনায় আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আরও কয়েকজন
ভর্তি আছেন। তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
No comments