আয়োজন ব্যাপক সমাগম কম
টানা
কয়েক দিনের আয়োজন। কয়েক কোটি টাকা খরচ। দেশে বিরোধী জোটের সমাবেশ আয়োজনে
যখন অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা এমন অবস্থায় ‘মহাসমাবেশ’ সরকারে থাকা বিরোধী দলের।
সমাবেশের আগে নেতারা ঘোষণা দিয়েছিলেন ১০ লাখ লোকের সমাগম হবে। কিন্তু আদতে
হয়েছে কয়েক হাজার মানুষের সমাবেশ। সমাবেশের প্রধান অতিথি ও জাতীয় পার্টির
চেয়ারম্যান তার বক্তৃতায় সমাবেশে পাঁচ লাখ লোকের উপস্থিতি দাবি করলে
উপস্থিত নেতাকর্মীরাই এদিক-ওদিক তাকিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এরশাদ বলেন,
হরতাল না থাকলে ১০ লাখ লোকেরই সমাগম হতো সোহরাওয়ার্দীতে। কয়েক হাজার লোকের এ
‘মহাসমাবেশে’ দেখা গেল অভিনব অনেক দৃশ্য। বাসে করে দূরের জেলা থেকে
সমাবেশের উদ্দেশ্যে এলেও তাদের কাউকে কাউকে অপেক্ষমাণ বাসেই বসে, শুয়ে সময়
কাটাতে দেখা গেছে। আবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সমাবেশে আসা কিছু
লোককে সমাবেশস্থলে পৌঁছার আগেই বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। তাদের কেউ কেউ
জানিয়েছেন, সরকারি দলের হয়ে তারা বিরোধী দলের সমাবেশ সফল করতে এসেছিলেন।
সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগম করতে প্রায় আড়াই হাজার পরিবহন ভাড়া করা হয়েছিল
বলে দলীয় সূত্র থেকে জানানো হয়েছিল। রাজধানীর রাস্তায় লাগানো হয়েছিল পাঁচ
শতাধিক বিলবোর্ড। এদিকে সমাবেশ চলাকালেই নেতাকর্মীরা মাঠে প্রবেশ করে
নির্ধারিত নেতাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যার যার পথ ধরেন। বিকাল দুইটায়
সমাবেশ শুরুর আগেই উপস্থিত নেতাকর্মীদের দুপুরের খাবার হিসেবে দেয়া হয়
বিরিয়ানি। নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা এক কর্মী জানান, তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির
সঙ্গে জড়িত। বন্ধুদের সঙ্গে তিনিও এসেছেন। প্রতিটি গাড়িতে আওয়ামী লীগের
৮-১০ জন করে লোক ছিল। মোহসীন নামের এক ব্যক্তি বলেন, জাতীয় পার্টি এখনও
বিরোধী দল হয়নি। সমাবেশে আসা গাড়ির চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সবচেয়ে
বেশি গাড়ি এসেছে নারায়ণগঞ্জ থেকে। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন,
গাজীপুর থেকে গাড়ি এসেছে ৬০টি। এছাড়া ময়মনসিংহ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ ও
টাঙ্গাইল থেকে আসা অনেক গাড়ি দেখা যায়। হরতালের কারণে রাস্তা এমনিতেই ছিল
ফাঁকা। তবুও সমাবেশ উপলক্ষে শাহবাগ থেকে মৎস্যভবনের রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়া
হয়। সমাবেশে আসা গাড়িগুলো বাদে বাকি সব গাড়ি রূপসী বাংলার মোড়েই আটকে দেয়
পুলিশ। সমাবেশ চলার সময় মৎস্যভবন এলাকায় থাকা একটি বাসে বসেছিলেন কয়েকজন।
তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল কেন তারা সমাবেশে যাননি। তাদের একজন বলেন,
আমরা আওয়ামী লীগের, জাতীয় পার্টির সমাবেশে যাবো কেন? এদিকে সমাবেশ মঞ্চেই
এরশাদের সামনে বিত-ায় জড়ান দুই নেতা এস এম ফয়সল চিশতি ও কাজী ফিরোজ রশিদ।
বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ পাননি সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও
প্রেসিডিয়াম সদস্য জি এম কাদের ও কাজী ফিরোজ রশিদ। সমাবেশে ১৮ দফা ঘোষণা
করে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ। বিরোধী দলের নেতা রওশন
এরশাদ দল ছেড়ে যাওয়া নেতাদের আবারও দলে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান তার
বক্তব্যে। সমাবেশে লোক সমাগমের বিষয়ে এরশাদ বলেন, আমরা হরতাল প্রত্যাহারের
আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহমর্মিতা নেই। তাই এ
অবস্থা। এ অবস্থায় সব দলের প্রতি আলোচনায় বসার আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি
বলেন, আসুন সবাই এক সঙ্গে বসি, কিভাবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়, সে
ব্যাপারে আলোচনা করি। তিনি বলেন, আমি সেনাপ্রধান ছিলাম। ইচ্ছা করে ক্ষমতা
নিতে চাইনি। আমার ওপর ক্ষমতার ভার অর্পণ করেছিলেন প্রেসিডেন্ট বিচারপতি
আবদুস সাত্তার। এরশাদ বলেন ১৯৮৪ সালে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ব্যারাকে ফিরে
যেতে চেয়েছিলাম। সব দল নির্বাচনে আসেনি। নির্বাচনে আসেনি বিএনপি। তাই বাধ্য
হয়ে আমাকে দল গঠন করতে হয়েছে। খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘উনি
(খালেদা) এ দেশে প্রতিহিংসার রাজনীতি শুরু করেন। আমাকে ছয় বছর তিনি জেলে
রেখেছেন। আমার স্ত্রীকে আড়াই বছর জেলে রেখেছেন। আমার ছেলেকে ছয় বছর আমার
সঙ্গে দেখা করতে দেননি। এখন তিনি প্রতিহিংসার ফল ভোগ করছেন। তিনি এখন
দু’ছেলের সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। কবে পারবেন তা-ও জানেন না। এরশাদ আরও
বলেন, আমার ১৪২টি সমাবেশে তিনি ১৪৪ ধারা জারি করেছিলেন। আজ যে তাঁর এ
অবস্থা হবে, তখন তাঁর মনে ছিল না। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। এখন তিনি
ইতিহাসের ফল ভোগ করছেন।
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে এরশাদ বলেন, ‘বিএনপি বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে চারবার চ্যাম্পিয়ন করেছিল। দুর্নীতিতে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করে আবার ক্ষমতায় আসতে চান, লজ্জা করে না? বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের সৃষ্টি করেছেন। কোন মুখে রাজনীতি করেন? তারেক রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজাকার বলেছে উল্লেখ করে এরশাদ উপস্থিত সবাইকে ‘শেম’ ‘ শেম’ ‘ শেম’ বলে চিৎকার করতে বলেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ বলেন, আমরা শ্রম বাজার চালু করেছিলাম, এখন শ্রম বাজার বন্ধ, আমরা আবার ক্ষমতায় এলে শ্রম বাজার চালু করবো। তিনি বলেন, আমরা ছিলাম সংবিধান স্বীকৃত বৈধ সরকার। আমি দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা শুরু করেছি। দেশের মানুষ এখন যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা বলতে পারছে তার ভিত আমিই তৈরি করে দিয়েছি। এলজিইডি সৃষ্টি করে সকল কাঁচা রাস্তাা পাকা করার ধারাবাহিকতা সৃষ্টি করেছি। এখন দেশে কোন কাঁচা রাস্তা নেই। এক পর্যায়ে সরকারের সমালোচনা করে বলেন, হলমার্ক, ডেসটিনিসহ ১৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে এরশাদ বলেন গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়লে আমারা রাজপথে আন্দোলনে নামবো। প্রযোজনে সংসদ থেকে ওয়াক আউট করবো। এর আগে বেলা ৩টার দিকে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধন করেন এরশাদ।
এরশাদের ১৮ দফা: নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার করে প্রাদেশিক সরকারসহ আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ১৮ দফা দাবি ও কর্মসূচি দিয়েছেন জাপা চেয়ারম্যান। ১৮ দফার মধ্যে রয়েছে- নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা। উপজেলায় আদালত পুনঃস্থাপনসহ পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা চালু করা। গ্রামীণ উন্নয়ন কর্মকা- স্থানীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত করা। প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণমুক্ত রাখা। ধর্মীয় মূল্যবোধকে সবার উপরে স্থান দেয়া এবং মসজিদ মাদরাসা ও মন্দিরসহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ের বিদ্যুৎ ও পানির বিল মওকুফ। ঘুষ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলদারিত্ব দমনে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন। গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা যাবে না। কৃষকদের ভর্তুকি মূল্যে সার, ডিজেল ও কীটনাশক সরবরাহ এবং কৃষি উপকরণের কর শুল্ক মওকুফ। কৃষকদের বিরুদ্ধে কোন সার্টিফিকেট মামলা থাকবে না। সহজ শর্তে কৃষিঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করা। একমাত্র জাতীয় অর্থনৈতিক স্বার্থের বিবেচনায় শিল্প প্রতিষ্ঠান ব্যতীত কৃষি জমি বা ফসলি জমি নষ্ট করে কোন স্থাপনা কিংবা আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার আইন বন্ধ করা। খাদ্যে ভেজাল কিংবা খাদ্যে বিষাক্ত পদার্থ মেশানোর বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে মৃত্যুদ-ের বিধান। শিক্ষা পদ্ধতি সংশোধনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের টিউশন নির্ভরতা কমাতে হবে এবং কোচিং ব্যবসা বন্ধ করা। স্বাস্থ্যখাত উন্নত করতে হবে একইসঙ্গে ইউনিয়নভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র কার্যকর করে সেখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ। হরতাল অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক এবং জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী কর্মকা- নিষিদ্ধ করা। হত্যা-খুন-গুম-ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ করা। এ জাতীয় অপরাধ দমনে সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে অবিলম্বে সকল রাস্তাঘাট সংস্কার এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো কমপক্ষে ৫০ ভাগ প্রশস্ত করার পদক্ষেপ নেয়া। সেই সঙ্গে সড়ক বিভাজন নির্মাণ। দ্রুত সময়ের মধ্যে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নসহ যেখানে ফেরি সার্ভিস চালু রয়েছে সেখানে সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ। সারা দেশে পর্যায়ক্রমে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত এবং প্রত্যেক উপজেলায় কৃষিভিত্তিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা। মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, ঢাকা দক্ষিণ জাতীয় পার্টির সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য এম এ হান্নান, সালমা ইসলাম এমপি, অ্যাডভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলাম, এস এম ফয়সল চিশতী প্রমুখ। তবে জাপার সাবেক মহাসচিব রুহুহুল আমিন হাওলাদার, জি এম কাদের, কাজী ফিরোজ রশীদ, মশিউর রহমান রাঙা, মুজিবুল হক চুন্নু, মীর আবদুস সবুর আসুদ, সুনীল শুভরায় প্রমুখ উপস্থিত থাকলেও বক্তৃতা করেননি। আর অনুপস্থিত ছিলেন বিরোধীদলীয় হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। সভায় সভাপতিত্ব করেন মহাসমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।
রওশন এরশাদ: বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টি নেত্রী রওশন এরশাদ বলেছেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নির্দেশে গত ৫ই জানুয়ারি নেতা-কর্মীদের নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে নির্বাচন আরও ভাল হতো। হয়তো তারাও ক্ষমতায় যেতেন। নির্বাচনের পর পর বারবার দলে বিভক্তি দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আর বিভক্তি দেখতে চাই না। একক শক্তি নিয়ে সামনে এগোতে চাই। যারা দল থেকে চলে গেছেন তাদের ফিরে আসারও আহ্বান জানান তিনি। ২৪ বছর ধরে জাতীয় পার্টি কেন ক্ষমতার বাইরে এমন প্রশ্ন রেখে রওশন এরশাদ বলেন, দলের ভেতরে ভুল কোথায়? তা খুঁজে বের করতে হবে। পরিকল্পনা নিতে হবে। তরুণ ও মেধাবী নারীদের দলে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। এর আগে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ফয়সল চিশতী তাকে ‘পল্লী মাতা’ উপাধি দেন। পরে যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া এ প্রস্তাব সমর্থন করে বলেন, এখন থেকে পোস্টার ব্যানারে রওশন এরশাদের নামের সঙ্গে পল্লী মাতা ব্যবহার করতে হবে। বক্তৃতার শুরুতেই রওশন এরশাদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, জেনারেল ওসমানীসহ জাতীয় নেতাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেণ। স্মরণ করেন জাপার প্রয়াত নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরীকে। এছাড়া কাজী জাফর আহমেদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ দলে যারা অবদান রেখেছেন তাদের নামও উল্লেখ করেন জাপা নেত্রী। পাশাপাশি তাদের দলে ফিরে আসারও আহ্বান জানান তিনি।
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে এরশাদ বলেন, ‘বিএনপি বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে চারবার চ্যাম্পিয়ন করেছিল। দুর্নীতিতে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করে আবার ক্ষমতায় আসতে চান, লজ্জা করে না? বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের সৃষ্টি করেছেন। কোন মুখে রাজনীতি করেন? তারেক রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজাকার বলেছে উল্লেখ করে এরশাদ উপস্থিত সবাইকে ‘শেম’ ‘ শেম’ ‘ শেম’ বলে চিৎকার করতে বলেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ বলেন, আমরা শ্রম বাজার চালু করেছিলাম, এখন শ্রম বাজার বন্ধ, আমরা আবার ক্ষমতায় এলে শ্রম বাজার চালু করবো। তিনি বলেন, আমরা ছিলাম সংবিধান স্বীকৃত বৈধ সরকার। আমি দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা শুরু করেছি। দেশের মানুষ এখন যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা বলতে পারছে তার ভিত আমিই তৈরি করে দিয়েছি। এলজিইডি সৃষ্টি করে সকল কাঁচা রাস্তাা পাকা করার ধারাবাহিকতা সৃষ্টি করেছি। এখন দেশে কোন কাঁচা রাস্তা নেই। এক পর্যায়ে সরকারের সমালোচনা করে বলেন, হলমার্ক, ডেসটিনিসহ ১৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে এরশাদ বলেন গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়লে আমারা রাজপথে আন্দোলনে নামবো। প্রযোজনে সংসদ থেকে ওয়াক আউট করবো। এর আগে বেলা ৩টার দিকে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধন করেন এরশাদ।
এরশাদের ১৮ দফা: নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার করে প্রাদেশিক সরকারসহ আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ১৮ দফা দাবি ও কর্মসূচি দিয়েছেন জাপা চেয়ারম্যান। ১৮ দফার মধ্যে রয়েছে- নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা। উপজেলায় আদালত পুনঃস্থাপনসহ পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা চালু করা। গ্রামীণ উন্নয়ন কর্মকা- স্থানীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত করা। প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণমুক্ত রাখা। ধর্মীয় মূল্যবোধকে সবার উপরে স্থান দেয়া এবং মসজিদ মাদরাসা ও মন্দিরসহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ের বিদ্যুৎ ও পানির বিল মওকুফ। ঘুষ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলদারিত্ব দমনে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন। গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা যাবে না। কৃষকদের ভর্তুকি মূল্যে সার, ডিজেল ও কীটনাশক সরবরাহ এবং কৃষি উপকরণের কর শুল্ক মওকুফ। কৃষকদের বিরুদ্ধে কোন সার্টিফিকেট মামলা থাকবে না। সহজ শর্তে কৃষিঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করা। একমাত্র জাতীয় অর্থনৈতিক স্বার্থের বিবেচনায় শিল্প প্রতিষ্ঠান ব্যতীত কৃষি জমি বা ফসলি জমি নষ্ট করে কোন স্থাপনা কিংবা আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার আইন বন্ধ করা। খাদ্যে ভেজাল কিংবা খাদ্যে বিষাক্ত পদার্থ মেশানোর বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে মৃত্যুদ-ের বিধান। শিক্ষা পদ্ধতি সংশোধনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের টিউশন নির্ভরতা কমাতে হবে এবং কোচিং ব্যবসা বন্ধ করা। স্বাস্থ্যখাত উন্নত করতে হবে একইসঙ্গে ইউনিয়নভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র কার্যকর করে সেখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ। হরতাল অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক এবং জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী কর্মকা- নিষিদ্ধ করা। হত্যা-খুন-গুম-ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ করা। এ জাতীয় অপরাধ দমনে সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে অবিলম্বে সকল রাস্তাঘাট সংস্কার এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো কমপক্ষে ৫০ ভাগ প্রশস্ত করার পদক্ষেপ নেয়া। সেই সঙ্গে সড়ক বিভাজন নির্মাণ। দ্রুত সময়ের মধ্যে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নসহ যেখানে ফেরি সার্ভিস চালু রয়েছে সেখানে সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ। সারা দেশে পর্যায়ক্রমে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত এবং প্রত্যেক উপজেলায় কৃষিভিত্তিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা। মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, ঢাকা দক্ষিণ জাতীয় পার্টির সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য এম এ হান্নান, সালমা ইসলাম এমপি, অ্যাডভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলাম, এস এম ফয়সল চিশতী প্রমুখ। তবে জাপার সাবেক মহাসচিব রুহুহুল আমিন হাওলাদার, জি এম কাদের, কাজী ফিরোজ রশীদ, মশিউর রহমান রাঙা, মুজিবুল হক চুন্নু, মীর আবদুস সবুর আসুদ, সুনীল শুভরায় প্রমুখ উপস্থিত থাকলেও বক্তৃতা করেননি। আর অনুপস্থিত ছিলেন বিরোধীদলীয় হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। সভায় সভাপতিত্ব করেন মহাসমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।
রওশন এরশাদ: বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টি নেত্রী রওশন এরশাদ বলেছেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নির্দেশে গত ৫ই জানুয়ারি নেতা-কর্মীদের নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে নির্বাচন আরও ভাল হতো। হয়তো তারাও ক্ষমতায় যেতেন। নির্বাচনের পর পর বারবার দলে বিভক্তি দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আর বিভক্তি দেখতে চাই না। একক শক্তি নিয়ে সামনে এগোতে চাই। যারা দল থেকে চলে গেছেন তাদের ফিরে আসারও আহ্বান জানান তিনি। ২৪ বছর ধরে জাতীয় পার্টি কেন ক্ষমতার বাইরে এমন প্রশ্ন রেখে রওশন এরশাদ বলেন, দলের ভেতরে ভুল কোথায়? তা খুঁজে বের করতে হবে। পরিকল্পনা নিতে হবে। তরুণ ও মেধাবী নারীদের দলে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। এর আগে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ফয়সল চিশতী তাকে ‘পল্লী মাতা’ উপাধি দেন। পরে যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া এ প্রস্তাব সমর্থন করে বলেন, এখন থেকে পোস্টার ব্যানারে রওশন এরশাদের নামের সঙ্গে পল্লী মাতা ব্যবহার করতে হবে। বক্তৃতার শুরুতেই রওশন এরশাদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, জেনারেল ওসমানীসহ জাতীয় নেতাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেণ। স্মরণ করেন জাপার প্রয়াত নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরীকে। এছাড়া কাজী জাফর আহমেদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ দলে যারা অবদান রেখেছেন তাদের নামও উল্লেখ করেন জাপা নেত্রী। পাশাপাশি তাদের দলে ফিরে আসারও আহ্বান জানান তিনি।
No comments