শিল্পাচার্যের জন্মস্থান বিতর্ক by মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম
২০১৪
সাল শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মশতবর্ষ। তার এ জন্মশতবার্ষিকীর স্মারক
হিসেবে এ লেখায় তিনটি অনুষঙ্গকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। যেগুলো হল- (১)
শিল্পাচার্য জয়নুলের জন্মস্থান বিতর্কের অবসান। (২) জন্মশতবার্ষিকী পালন
এবং (৩) শিল্পাচার্য জয়নুল শিল্পকলা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব। দেশ,
মাঠি ও মানুষের মঙ্গল চিন্তায় যারা আজীবন রক্ত-ঘাম ঝরান দেশের মানুষ তাদের
ভালো না বেসে পারেন না। জয়নুল আমাদের সে রকম একজন দেশপ্রেমিক শিল্পি যিনি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন দুর্ভিক্ষের ছবি এঁকে বিশ্ববিবেকের সামনে
মাতৃভূমির করুণ দশা তুলে ধরে আন্তর্জাতিক বলয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন সেই
ব্রিটিশ আমলেই। মুক্তিকামী মানুষের পাশে দাঁড়াতে মধ্যপ্রাচ্য সফর করে তিনি
ইহুদিদের চরম নির্যাতনের শিকার ফিলিস্তিনিদের শক্তি-সাহস যুগিয়েছেন তার
তুলির আঁচড়ে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিকায়
মুক্তিযোদ্ধাদের চিত্রায়নসহ বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের মুক্তিকামী শিল্পী
হিসেবে ভূমিকা রাখার কারণে আন্তর্জাতিক বিশ্বে তিনি সমাদৃত। কলকাতার আর্ট
কলেজ থেকে ১৯৩৮ সালে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে ফাইন আর্টস-এ
গ্র্যাজুয়েশন লাভকারী শিল্পী জয়নুলের শিল্পযাত্রার শুরুই হয়েছিল বাল্যকালে
আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভের ঘটনার মধ্য দিয়ে। ১৯৪৮ সালে ঢাকায় আর্ট
ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করে তিনি শিল্পী গড়ার যে বিদ্যাপীঠের ভিত্তি স্থাপন
করেছিলেন তার ফলাফল আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনকে আলোড়িত করছে। তার সে
প্রতিষ্ঠানই কালের পরিক্রমায় আজকের ঢাকা বিশ্বাবদ্যালয়ের চারু ও কারুকলা
অনুষদ।
কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী এ যুগের একজন সচেতন পাঠক হিসেবে জয়নুলের জন্মস্থানগত তথ্যের ভ্রান্তি আমাকে পীড়া দেয়। গত ২১ বছর ধরে ঢাকার বাসিন্দা হওয়ার আগে জয়নুলের গর্বিত জন্মস্থান কিশোরগঞ্জের একালের একজন সাহিত্য-সংস্কৃতিসেবী হিসেবে এ জাতীয় বিতর্কের মোকাবিলা করতে হয়েছে আমাকে বহুবার। ঢাকায় আসার পর জাতীয় ও স্থানীয় উভয় দিককেই মোকাবিলার চেষ্টা করেছি বা করে যাচ্ছি কিন্তু আজও ভ্রান্তি দূর হয়নি। কিশোরগঞ্জে থাকাকালীন শিল্পকলা একাডেমিতে এবং প্রেস ক্লাবে জয়নুল স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় আঞ্চলিক ভাষায় তার নাম জয়নুল আবেদিনের স্থলে ‘জয়নাল আবদীন’ উচ্চারণ করার কঠোর সমালোচনাসহ জয়নুলের জন্মস্থান বিতর্কে এর সুরাহা পেশ করেছি। স্কুলপাঠ্য বইয়ে জয়নুলের জীবনীতে যখন লেখা হয় ‘জয়নুল কিশোরগঞ্জের এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন’ তখন জানতে ইচ্ছা করে সে গ্রামের নাম কী? কেউ বলেন, কাঁটাবাড়িয়া, কেউ বলেন, পুরান থানা আবার একধাপ এগিয়ে কেউ বলেন, ‘কেন্দুয়া থানায়।
কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী শিল্পী জয়নুলের পৈতৃক নিবাস ময়মনসিংহ জেলা শহরের আকুয়া মাদরাসা কোয়ার্টার্সে। তার পিতামহ মরহুম ছমির উদ্দিন ময়মনসিংহ শহরের কাঁচিঝুলি এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। এরও আগে তার প্রপিতামহ ত্রিশালের দরিরামপুরে বসবাস করতেন। আকুয়া মাদরাসা কোয়ার্টার্সে মূলত জয়নুলের মাতামহের নিবাস ছিল, যেখানে পরবর্তী সময়ে তার পিতামহের আমলে বাড়ি নির্মাণ করা হয়। ফলে কিশোরগঞ্জে আগে থেকে তাদের কোনো পূর্বপুরুষ বা বংশের কোনো লোক বসবাস না করার কারণে এখানকার গ্রামের সঙ্গে তাদের পরিবারের কোনো সংযোগ ছিল না। জয়নুলের পিতা যেহেতু পুলিশের জমাদার ছিলেন, সেহেতু পুলিশের আবাসন এলাকা সরকারি কোয়ার্টারে জয়নুলের জন্ম হয়েছে এটিই স্বাভাবিক। তবে প্রশ্ন হল, সে থানা বা থানার কোয়ার্টারটিই বা কোন স্থানে অবস্থিত? কেউ কেউ অনুমান করেন সেটি কিশোরগঞ্জ শহরের পুরান থানায়। তাদের এ অনুমান এ কারণে ধোপে টেকে না যে, কিশোরগঞ্জ থানাটি বঙ্গভঙ্গের জোয়ারে ১৯০৬ সালেই পুরান থানা থেকে বর্তমান থানার স্থানে স্থানান্তর করা হয়। কিশোরগঞ্জ থানা পুলিশের আবাসিক কয়েকটি টিনের ঘর ছিল কাওনা নদীর (বর্তমান নাম নরসুন্দা) তীরবর্তী শহরের স্টেডিয়াম সংলগ্ন পূর্ব দিকটায়। দারোগার বাসা পরিচয়ে এ টিনের ঘরগুলো গত শতকের সত্তরের দশকেও ছিল। এখানকার টিনের তৈরি সরকারি কোয়ার্টারেই জয়নুল জন্মগ্রহণ করেন।
আমি ১৯৮৪ সালের ১ জুলাই কিশোরগঞ্জ শহর থেকে ফজলুল করিম খান চৌধুরী সম্পাদিত সাপ্তাহিক জনবার্তা পত্রিকায় ‘কিশোরগঞ্জের গর্ব- শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন’ শিরোনামের একটি লেখায় জয়নুল সংক্রান্ত, বিশেষ করে তার জন্মস্থান বিতর্কের অবসানের প্রয়াস চালাই। পাঠ্য বইয়ের ভুলের প্রসঙ্গটি আমি আমার সে লেখায় উল্লেখ করি। একই সঙ্গে ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে সৈয়দ শফিকুল মবিন রচিত ‘জয়নুল আবেদীন’ নামক কিশোর জীবনীমূলক বইটিতে জয়নুলের জন্মস্থান সংক্রান্ত ভুলের গঠনমূলক সমালোচনা করি। বইটিতে বলা হয়েছে, ‘ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমার কেন্দুয়া থানা। চারদিকে সবুজ আর সবুজ। গাছে গাছে পাখির কলকাকলি। বাংলার প্রকৃতি যেন অজস্র ধারায় তার কৃপা বর্ষণ করে চলেছে। কী অপরূপ শোভা চারদিকে। থানার পুলিশ-দারোগার উপস্থিতি নগণ্য হয়ে গেছে সেদিন। জয়নুলের জন্ম হল। ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর তারিখে সকাল সাড়ে ৮টায়।’ জয়নুল জীবনীকার শিশু-কিশোরদের উপযোগী করে অত্যন্ত সহজ-সরল বাংলায় জয়নুলের জন্মক্ষণটি আঁকার প্রয়াশে হয় তো সফল হয়েছেন। কিন্তু তথ্যগত ভ্রান্তির এমনি একটি দুর্ঘটনা ঘটালেন যা কিনা একটার পর একটা ঘটেই যাচ্ছে। প্রথমত জয়নুল কেন্দুয়া থানায় জন্মগ্রহণ করেননি। দ্বিতীয়ত কেন্দুয়া থানা তৎকালীন পেক্ষাপটে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার আওতায় হলেও মহকুমা বিভাজনে এটি নেত্রকোনা মহকুমার একটি থানা। কেন্দুয়া থানা ১৮২৮ সালে যখন ফতেপুর নামে পরিচিত ছিল, সে সময়ে কিশোরগঞ্জ শহরটিই সে থানার অধীন ছিল। কিন্তু ১৮৬০ সালে কিশোরগঞ্জ মহকুমা স্থাপন পরবর্তী কোনোকালেই কেন্দুয়া থানা কিশোরগঞ্জ মহকুমার অধীন ছিল না। তাই তার এ তথ্যপ্রমাদ এযাবৎ সব পাঠককে বিভ্রান্ত করে আসছে। এ লেখকের বইটি প্রকাশের আরও আগে জয়নুলের প্রথম জীবনী লেখেন জনাব আবদুল মতিন। আহমদ পাবলিশিং হাউস থেকে জয়নুলের মৃত্যুর দু’বছর পর ১৯৭৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় জনাব আবদুল মতিনের ‘জয়নুর আবেদীন’ নামক জীবনী গ্রন্থটি। এ গ্রন্থটিতে লেখক জয়নুলের জন্ম সম্পর্কে বলেছেন- ‘কিশোরগঞ্জ থানা সংলগ্ন একটি ছোট্ট সরকারি বাড়ি। এখানেই জয়নুল মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়ে পৃথিবীর আলো দেখেন।’ জনাব আবদুল মতিন সাহেবের বইটিতে জয়নুলের জন্মস্থান যে সুন্দরভাবে পেশ করেছেন এর পরবর্তী সময়ে কোনো লেখক তথ্যটিকে পাশ কাটাতে হলে তার গবেষণার গভীরতা স্বাভাবিকভাবেই আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল। তা’হলে জয়নুলের জন্মস্থান নিয়ে কোনো বিরোধ, বিতর্ক দেখা দিত না। জয়নুলের মৃত্যুর পর পর লেখা হলেও এ বইটিতে জয়নুল জীবনের নানা অনুপুংখ অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়েছে।
আরেকজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক জনাব এ. সাত্তার লেখেন জয়নুলের ওপর মূল্যায়নধর্মী একটি বই, ‘শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন’। অন্য জীবনী গ্রন্থগুলোতে ‘শিল্পাচার্য’ যোগ করে বইয়ের নামকরণ না করলেও এ বইটির নামকরণে ‘শিল্পাচার্য’ উপাধিটি যোগ করে নামকরণের সে তাৎপর্যও তুলে ধরেছেন। সে তাৎপর্য প্রসঙ্গে আলোচনার আগে এটিতে জয়নুলের জন্ম সম্পর্কে লেখক কি লিখেছেন তা আগে দেখে নেয়া যাক। জীবনী গ্রন্থটির ‘জন্ম ও বাল্যকাল’ শিরোনাম অংশে লেখা হয়েছে- ‘ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জে (বর্তমানে জেলা) নরসুন্দা নদীর তীরে একটি সরকারি বাড়িতে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর জয়নুল আবেদিনের জন্ম।’ তার এ বর্ণনা যথার্থ। মোট ২০টি অধ্যায়ে জয়নুলের কীর্তিগাথা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। বিশেষ করে রাজনৈতিক অবিমৃশ্যকারী কিছু লোক ‘শিল্পাচার্য’ উপাধি নিয়ে টানা-হেঁচড়া করে এটি আরেকজন শিল্পীর ওপর প্রয়োগের অপচেষ্টার চিত্রটি তার এ বইয়ে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ‘সুন্দরের সৃষ্টি এবং অসুন্দরের অপনোদন’-এ ব্রত নিয়ে যে জয়নুলের অভিযাত্রা ১৯৮৭ সালে একটি সংগঠন দেশ বরেণ্য আরেক শিল্পী কামরুল হাসানকে ‘শিল্পাচার্য’ খেতাব দিয়ে অনাহূত এক বিতর্কের সৃষ্টি করে। স্বয়ং কামরুল হাসান সাহেব সেদিন এ খেতাব নিতে অনাগ্রহ দেখালেও দৈনিক সংবাদের একজন কলামিস্ট এবং দেশের একজন নামজাদা কবিও সেদিন এ বিষয়ে ন্যক্কারজনক ভূমিকা নেন যা এ. সাত্তার সাহেবের বইতে ‘শিল্পাচার্য প্রসঙ্গ’ নামক অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে।
জয়নুলের জীবনীকারদের কেউ কেউ তার জন্ম কেন্দুয়ায় উল্লেখ করায় জয়নুল জন্মবার্ষিকী পালনোপলক্ষে বিগত সময়ে অনেক পত্র-পত্রিকায় এবং সরকারি- বেসরকারি ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ভুল প্রচারণা চালানোর ফলে তার জন্মস্থান বিতর্কের অপনোদন সম্ভব হয়নি। আগেই উল্লেখ করেছি, এ ভুলের উদ্বোধন হয়েছিল বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে প্রকাশিত সৈয়দ শফিকুল হোসেনের লেখা ‘জয়নুল আবেদীন’ নামক বইটি দিয়ে। এর ব্যাপ্তি ঘটে সরকারিভাবে পাঠ্যপুস্তকে লেখা জয়নুলের জীবনীতে এ ভুল তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির উচিত হবে বইটি বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে এর একটি শুদ্ধ পাঠ মুদ্রণ করে বাজারজাত করা। পাঠ্য বইয়ে জয়নুলের জীবনীতে দেয়া তথ্য শোধরানোর উদ্যোগ নেবে পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। মানচিত্রে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অবস্থান দেখাতে গিয়েও একটি প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান এ ভুলের ফাঁদে পা দিয়েছে। আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে জয়নুলের জন্মস্থান বিষয়ক ভুলটি সংশোধনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করব।
এবারে জয়নুলের ১০০তম জন্মদিনে দেশপ্রেমিক জনতা বিপুল উৎসাহে ঘটা করে তার জন্মশতবার্ষিক পালন করছে। জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বছরব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করেছে। জাতীয় জাদুঘর আয়োজন করেছে রাষ্ট্রীয়ভাবে তার জন্মশতবার্ষিকী পালনের অনুষ্ঠান। দেশের নানা সাংস্কৃতিক সংগঠন তার ওপর অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। তার ওপর বিশেষ প্রকাশনার আয়োজন করেছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান। ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসবে এমনটিই অভিপ্রেত। পত্রিকাগুলো প্রকাশ করবে বিশেষ ক্রোড়পত্র। সব মিলে জয়নুল জন্মশতবার্ষিকীতে জাতি নতুন করে জয়নুল চর্চার দুয়ার উন্মোচন করবে এমনটিই সবার সঙ্গে আমারও প্রত্যাশা।
প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের বাংলাদেশ পরিচিত ছিল ‘সোনার বাংলা’ নামে। ১৩৩৮-১৫৩৮ সমকালীন স্বাধীন বাংলার রাজধানী ছিল সোনারগাঁয়ে। মোগল আমল থেকে সোনারগাঁ তা রাজধানীর ঐতিহ্য হারায়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশকে সোনার বাংলা রূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয়ের সেই পরিত্যক্ত রাজধানীর ক্যানভাস নতুন করে ঝলসে ওঠে জয়নুলর শিল্পী মানসে। ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবনে তার এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি ছুটে যান ‘বাংলাদেশ’ রাষ্ট্রের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে। বঙ্গবন্ধু তার এ মহৎ পরিকল্পনাকে অনুমোদন করলেন। এভাবে ১৯৭৫ সালে জয়নুলের প্রস্তাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাচীন সোনারগাঁয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন ‘বাংলাদেশ লোকজ চারু ও কারুকলা ফাউন্ডেশন’। জয়নুলের সেদিনের স্বপ্ন এবং প্রকল্প নতুন করে দেশকে গড়ে তোলার স্বপ্নে জাতিকে উজ্জীবিত করেছে। সরকারের তরফে শিল্পাচার্য জয়নুলের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের এ মহার্ঘলগ্নে দেশে একটি শিল্পকলা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা সময়ের দাবি যার নামকরণ হতে পারে ‘শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন শিল্পকলা বিশ্ববিদ্যালয়’। এভাবে তৃণমূল থেকে উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত সামগ্রিক কলা চর্চার যে প্রাতিষ্ঠানিক বিকাশের ধারা শুরু হবে তা সারা পৃথিবীর সামনে এক সুসংগঠিত অথচ বৃহৎ ও বহুমুখী অনন্য ব্যতিক্রমী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মডেল হিসেবে হয়ে উঠবে অনুকরণীয়।
কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী এ যুগের একজন সচেতন পাঠক হিসেবে জয়নুলের জন্মস্থানগত তথ্যের ভ্রান্তি আমাকে পীড়া দেয়। গত ২১ বছর ধরে ঢাকার বাসিন্দা হওয়ার আগে জয়নুলের গর্বিত জন্মস্থান কিশোরগঞ্জের একালের একজন সাহিত্য-সংস্কৃতিসেবী হিসেবে এ জাতীয় বিতর্কের মোকাবিলা করতে হয়েছে আমাকে বহুবার। ঢাকায় আসার পর জাতীয় ও স্থানীয় উভয় দিককেই মোকাবিলার চেষ্টা করেছি বা করে যাচ্ছি কিন্তু আজও ভ্রান্তি দূর হয়নি। কিশোরগঞ্জে থাকাকালীন শিল্পকলা একাডেমিতে এবং প্রেস ক্লাবে জয়নুল স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় আঞ্চলিক ভাষায় তার নাম জয়নুল আবেদিনের স্থলে ‘জয়নাল আবদীন’ উচ্চারণ করার কঠোর সমালোচনাসহ জয়নুলের জন্মস্থান বিতর্কে এর সুরাহা পেশ করেছি। স্কুলপাঠ্য বইয়ে জয়নুলের জীবনীতে যখন লেখা হয় ‘জয়নুল কিশোরগঞ্জের এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন’ তখন জানতে ইচ্ছা করে সে গ্রামের নাম কী? কেউ বলেন, কাঁটাবাড়িয়া, কেউ বলেন, পুরান থানা আবার একধাপ এগিয়ে কেউ বলেন, ‘কেন্দুয়া থানায়।
কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী শিল্পী জয়নুলের পৈতৃক নিবাস ময়মনসিংহ জেলা শহরের আকুয়া মাদরাসা কোয়ার্টার্সে। তার পিতামহ মরহুম ছমির উদ্দিন ময়মনসিংহ শহরের কাঁচিঝুলি এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। এরও আগে তার প্রপিতামহ ত্রিশালের দরিরামপুরে বসবাস করতেন। আকুয়া মাদরাসা কোয়ার্টার্সে মূলত জয়নুলের মাতামহের নিবাস ছিল, যেখানে পরবর্তী সময়ে তার পিতামহের আমলে বাড়ি নির্মাণ করা হয়। ফলে কিশোরগঞ্জে আগে থেকে তাদের কোনো পূর্বপুরুষ বা বংশের কোনো লোক বসবাস না করার কারণে এখানকার গ্রামের সঙ্গে তাদের পরিবারের কোনো সংযোগ ছিল না। জয়নুলের পিতা যেহেতু পুলিশের জমাদার ছিলেন, সেহেতু পুলিশের আবাসন এলাকা সরকারি কোয়ার্টারে জয়নুলের জন্ম হয়েছে এটিই স্বাভাবিক। তবে প্রশ্ন হল, সে থানা বা থানার কোয়ার্টারটিই বা কোন স্থানে অবস্থিত? কেউ কেউ অনুমান করেন সেটি কিশোরগঞ্জ শহরের পুরান থানায়। তাদের এ অনুমান এ কারণে ধোপে টেকে না যে, কিশোরগঞ্জ থানাটি বঙ্গভঙ্গের জোয়ারে ১৯০৬ সালেই পুরান থানা থেকে বর্তমান থানার স্থানে স্থানান্তর করা হয়। কিশোরগঞ্জ থানা পুলিশের আবাসিক কয়েকটি টিনের ঘর ছিল কাওনা নদীর (বর্তমান নাম নরসুন্দা) তীরবর্তী শহরের স্টেডিয়াম সংলগ্ন পূর্ব দিকটায়। দারোগার বাসা পরিচয়ে এ টিনের ঘরগুলো গত শতকের সত্তরের দশকেও ছিল। এখানকার টিনের তৈরি সরকারি কোয়ার্টারেই জয়নুল জন্মগ্রহণ করেন।
আমি ১৯৮৪ সালের ১ জুলাই কিশোরগঞ্জ শহর থেকে ফজলুল করিম খান চৌধুরী সম্পাদিত সাপ্তাহিক জনবার্তা পত্রিকায় ‘কিশোরগঞ্জের গর্ব- শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন’ শিরোনামের একটি লেখায় জয়নুল সংক্রান্ত, বিশেষ করে তার জন্মস্থান বিতর্কের অবসানের প্রয়াস চালাই। পাঠ্য বইয়ের ভুলের প্রসঙ্গটি আমি আমার সে লেখায় উল্লেখ করি। একই সঙ্গে ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে সৈয়দ শফিকুল মবিন রচিত ‘জয়নুল আবেদীন’ নামক কিশোর জীবনীমূলক বইটিতে জয়নুলের জন্মস্থান সংক্রান্ত ভুলের গঠনমূলক সমালোচনা করি। বইটিতে বলা হয়েছে, ‘ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমার কেন্দুয়া থানা। চারদিকে সবুজ আর সবুজ। গাছে গাছে পাখির কলকাকলি। বাংলার প্রকৃতি যেন অজস্র ধারায় তার কৃপা বর্ষণ করে চলেছে। কী অপরূপ শোভা চারদিকে। থানার পুলিশ-দারোগার উপস্থিতি নগণ্য হয়ে গেছে সেদিন। জয়নুলের জন্ম হল। ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর তারিখে সকাল সাড়ে ৮টায়।’ জয়নুল জীবনীকার শিশু-কিশোরদের উপযোগী করে অত্যন্ত সহজ-সরল বাংলায় জয়নুলের জন্মক্ষণটি আঁকার প্রয়াশে হয় তো সফল হয়েছেন। কিন্তু তথ্যগত ভ্রান্তির এমনি একটি দুর্ঘটনা ঘটালেন যা কিনা একটার পর একটা ঘটেই যাচ্ছে। প্রথমত জয়নুল কেন্দুয়া থানায় জন্মগ্রহণ করেননি। দ্বিতীয়ত কেন্দুয়া থানা তৎকালীন পেক্ষাপটে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার আওতায় হলেও মহকুমা বিভাজনে এটি নেত্রকোনা মহকুমার একটি থানা। কেন্দুয়া থানা ১৮২৮ সালে যখন ফতেপুর নামে পরিচিত ছিল, সে সময়ে কিশোরগঞ্জ শহরটিই সে থানার অধীন ছিল। কিন্তু ১৮৬০ সালে কিশোরগঞ্জ মহকুমা স্থাপন পরবর্তী কোনোকালেই কেন্দুয়া থানা কিশোরগঞ্জ মহকুমার অধীন ছিল না। তাই তার এ তথ্যপ্রমাদ এযাবৎ সব পাঠককে বিভ্রান্ত করে আসছে। এ লেখকের বইটি প্রকাশের আরও আগে জয়নুলের প্রথম জীবনী লেখেন জনাব আবদুল মতিন। আহমদ পাবলিশিং হাউস থেকে জয়নুলের মৃত্যুর দু’বছর পর ১৯৭৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় জনাব আবদুল মতিনের ‘জয়নুর আবেদীন’ নামক জীবনী গ্রন্থটি। এ গ্রন্থটিতে লেখক জয়নুলের জন্ম সম্পর্কে বলেছেন- ‘কিশোরগঞ্জ থানা সংলগ্ন একটি ছোট্ট সরকারি বাড়ি। এখানেই জয়নুল মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়ে পৃথিবীর আলো দেখেন।’ জনাব আবদুল মতিন সাহেবের বইটিতে জয়নুলের জন্মস্থান যে সুন্দরভাবে পেশ করেছেন এর পরবর্তী সময়ে কোনো লেখক তথ্যটিকে পাশ কাটাতে হলে তার গবেষণার গভীরতা স্বাভাবিকভাবেই আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল। তা’হলে জয়নুলের জন্মস্থান নিয়ে কোনো বিরোধ, বিতর্ক দেখা দিত না। জয়নুলের মৃত্যুর পর পর লেখা হলেও এ বইটিতে জয়নুল জীবনের নানা অনুপুংখ অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়েছে।
আরেকজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক জনাব এ. সাত্তার লেখেন জয়নুলের ওপর মূল্যায়নধর্মী একটি বই, ‘শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন’। অন্য জীবনী গ্রন্থগুলোতে ‘শিল্পাচার্য’ যোগ করে বইয়ের নামকরণ না করলেও এ বইটির নামকরণে ‘শিল্পাচার্য’ উপাধিটি যোগ করে নামকরণের সে তাৎপর্যও তুলে ধরেছেন। সে তাৎপর্য প্রসঙ্গে আলোচনার আগে এটিতে জয়নুলের জন্ম সম্পর্কে লেখক কি লিখেছেন তা আগে দেখে নেয়া যাক। জীবনী গ্রন্থটির ‘জন্ম ও বাল্যকাল’ শিরোনাম অংশে লেখা হয়েছে- ‘ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জে (বর্তমানে জেলা) নরসুন্দা নদীর তীরে একটি সরকারি বাড়িতে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর জয়নুল আবেদিনের জন্ম।’ তার এ বর্ণনা যথার্থ। মোট ২০টি অধ্যায়ে জয়নুলের কীর্তিগাথা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। বিশেষ করে রাজনৈতিক অবিমৃশ্যকারী কিছু লোক ‘শিল্পাচার্য’ উপাধি নিয়ে টানা-হেঁচড়া করে এটি আরেকজন শিল্পীর ওপর প্রয়োগের অপচেষ্টার চিত্রটি তার এ বইয়ে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ‘সুন্দরের সৃষ্টি এবং অসুন্দরের অপনোদন’-এ ব্রত নিয়ে যে জয়নুলের অভিযাত্রা ১৯৮৭ সালে একটি সংগঠন দেশ বরেণ্য আরেক শিল্পী কামরুল হাসানকে ‘শিল্পাচার্য’ খেতাব দিয়ে অনাহূত এক বিতর্কের সৃষ্টি করে। স্বয়ং কামরুল হাসান সাহেব সেদিন এ খেতাব নিতে অনাগ্রহ দেখালেও দৈনিক সংবাদের একজন কলামিস্ট এবং দেশের একজন নামজাদা কবিও সেদিন এ বিষয়ে ন্যক্কারজনক ভূমিকা নেন যা এ. সাত্তার সাহেবের বইতে ‘শিল্পাচার্য প্রসঙ্গ’ নামক অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে।
জয়নুলের জীবনীকারদের কেউ কেউ তার জন্ম কেন্দুয়ায় উল্লেখ করায় জয়নুল জন্মবার্ষিকী পালনোপলক্ষে বিগত সময়ে অনেক পত্র-পত্রিকায় এবং সরকারি- বেসরকারি ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ভুল প্রচারণা চালানোর ফলে তার জন্মস্থান বিতর্কের অপনোদন সম্ভব হয়নি। আগেই উল্লেখ করেছি, এ ভুলের উদ্বোধন হয়েছিল বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে প্রকাশিত সৈয়দ শফিকুল হোসেনের লেখা ‘জয়নুল আবেদীন’ নামক বইটি দিয়ে। এর ব্যাপ্তি ঘটে সরকারিভাবে পাঠ্যপুস্তকে লেখা জয়নুলের জীবনীতে এ ভুল তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির উচিত হবে বইটি বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে এর একটি শুদ্ধ পাঠ মুদ্রণ করে বাজারজাত করা। পাঠ্য বইয়ে জয়নুলের জীবনীতে দেয়া তথ্য শোধরানোর উদ্যোগ নেবে পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। মানচিত্রে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অবস্থান দেখাতে গিয়েও একটি প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান এ ভুলের ফাঁদে পা দিয়েছে। আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে জয়নুলের জন্মস্থান বিষয়ক ভুলটি সংশোধনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করব।
এবারে জয়নুলের ১০০তম জন্মদিনে দেশপ্রেমিক জনতা বিপুল উৎসাহে ঘটা করে তার জন্মশতবার্ষিক পালন করছে। জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বছরব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করেছে। জাতীয় জাদুঘর আয়োজন করেছে রাষ্ট্রীয়ভাবে তার জন্মশতবার্ষিকী পালনের অনুষ্ঠান। দেশের নানা সাংস্কৃতিক সংগঠন তার ওপর অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। তার ওপর বিশেষ প্রকাশনার আয়োজন করেছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান। ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসবে এমনটিই অভিপ্রেত। পত্রিকাগুলো প্রকাশ করবে বিশেষ ক্রোড়পত্র। সব মিলে জয়নুল জন্মশতবার্ষিকীতে জাতি নতুন করে জয়নুল চর্চার দুয়ার উন্মোচন করবে এমনটিই সবার সঙ্গে আমারও প্রত্যাশা।
প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের বাংলাদেশ পরিচিত ছিল ‘সোনার বাংলা’ নামে। ১৩৩৮-১৫৩৮ সমকালীন স্বাধীন বাংলার রাজধানী ছিল সোনারগাঁয়ে। মোগল আমল থেকে সোনারগাঁ তা রাজধানীর ঐতিহ্য হারায়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশকে সোনার বাংলা রূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয়ের সেই পরিত্যক্ত রাজধানীর ক্যানভাস নতুন করে ঝলসে ওঠে জয়নুলর শিল্পী মানসে। ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবনে তার এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি ছুটে যান ‘বাংলাদেশ’ রাষ্ট্রের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে। বঙ্গবন্ধু তার এ মহৎ পরিকল্পনাকে অনুমোদন করলেন। এভাবে ১৯৭৫ সালে জয়নুলের প্রস্তাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাচীন সোনারগাঁয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন ‘বাংলাদেশ লোকজ চারু ও কারুকলা ফাউন্ডেশন’। জয়নুলের সেদিনের স্বপ্ন এবং প্রকল্প নতুন করে দেশকে গড়ে তোলার স্বপ্নে জাতিকে উজ্জীবিত করেছে। সরকারের তরফে শিল্পাচার্য জয়নুলের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের এ মহার্ঘলগ্নে দেশে একটি শিল্পকলা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা সময়ের দাবি যার নামকরণ হতে পারে ‘শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন শিল্পকলা বিশ্ববিদ্যালয়’। এভাবে তৃণমূল থেকে উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত সামগ্রিক কলা চর্চার যে প্রাতিষ্ঠানিক বিকাশের ধারা শুরু হবে তা সারা পৃথিবীর সামনে এক সুসংগঠিত অথচ বৃহৎ ও বহুমুখী অনন্য ব্যতিক্রমী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মডেল হিসেবে হয়ে উঠবে অনুকরণীয়।
No comments