জেগে উঠেছে আরবের তরুণ প্রজন্ম
জেগে উঠেছে আরবের তরুণ প্রজন্ম। গণতন্ত্রের জন্য রাস্তায় নেমে এসেছে তারা। রাজপথে নেমে তারা ইতিমধ্যেই পতন ঘটিয়েছে তিউনিসিয়ার শাসক জয়নুল আবেদিন বেন আলীর, যিনি দীর্ঘ ২৩ বছর সে দেশের ক্ষমতায় ছিলেন। গণতন্ত্রের জন্য তিউনিসিয়ার তরুণেরা যে বিক্ষোভ শুরু করেছিল, তা এখন ছড়িয়ে পড়েছে মিসর, ইয়েমেন, জর্ডান, আলজেরিয়া, ওমান, সুদান ও মৌরিতানিয়ায়। তারণ্যের এ আগুন মধ্যপ্রাচ্যে কোন পরিবর্তনের ঈঙ্গিত দিচ্ছে, তা নিয়ে নানা হিসাব কষছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।মিসর আরব বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ। আকৃতির দিক দিয়ে দেশটির সেনাবাহিনী বিশ্বে দশম। ১৯৫২ সাল থেকে সেনা শাসকেরাই দেশটি শাসন করে আসছে। গণতন্ত্রের জন্য প্রবল আকাঙ্ক্ষা থাকলে এর জন্য আন্দোলন এত দিন তেমন একটা দানা বাঁধেনি। কিন্তু তিউনিসিয়ার সাম্প্রতিক সফল গণ-অভ্যুত্থান মিসরের তরুণ প্রজন্মসহ জনসাধারণকে দারুণভাবে উজ্জীবিত করে। তারা নেমে আসে রাস্তায়। চলমান এই আন্দোলনে ইতিমধ্যেই ৭৪ জন নিহত হয়েছে। আন্দোলনের ধাক্কা গিয়ে লেগেছে প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের সরকারেও। ইতিমধ্যেই তিনি মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়েছেন। তাঁর ছেলে গামাল মোবারক ১০০টি লাগেজ নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে।আরব বিশ্বের আরেক দেশ ইয়েমেনও এখন রীতিমতো উত্তাল। ১৯৭৮ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লাহ সালেহর পদত্যাগের দাবিতে প্রতিদিন রাজপথে হাজার হাজার লোক বিক্ষোভ করছেন। গণতন্ত্রের দাবিতে চারজন বিক্ষোভকারী ইতিমধ্যেই আত্মাহুতি দিয়েছেন।আলজেরিয়ায়ও প্রবল বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে এ পর্যন্ত পাঁচজন নিহত ৮০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদুর আজিজ বুতেফলিক ১৯৯৯ সাল থেকে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন।জর্ডানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ খুব একটা চোখে না পড়লেও তিউনিসিয়ার ঘটনার পর সেখানে এখন প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ হচ্ছে। রাজধানী আম্মানে দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার প্রতিবাদে হাজার হাজার লোক বিক্ষোভ করছে।দেশজুড়ে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নৈরাজ্যের প্রতিবাদে সুদানের রাজধানী খার্তুমে সম্প্রতি এক ব্যক্তি নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেন। আরব বিশ্বের আরেক দেশ ওমানেও ১৭ জানুয়ারি বিক্ষোভ হয়েছে। রাজতন্ত্রের জাঁতাকলে পিষ্ট এ দেশটির এ বিক্ষোভকে অনেকেই নজিরবিহীন বলে মনে করছেন। সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে মৌরিতানিয়ায় গত ২২ জানুয়ারি এক ব্যক্তি নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেন। ২১ জানুয়ারি মরক্কোতেও সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। ওই বিক্ষোভে তিনজন নিজেদের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেন। উল্লেখ্য, তিউনিসিয়ায় সরকার পতনের সূচনা হয়েছিল একজন বিক্ষোভকারীর গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মাহুতির মধ্য দিয়ে।
No comments