একজন দিশারি মানুষের কথা by আবুল মোমেন
ভালো মানুষ এবং সৎ—সেই মানুষটা কেমন? সৎ মানুষ তো মেরুদণ্ডী প্রাণী, সাহসী এবং প্রয়োজনে রুখে দাঁড়াতে জানেন। ভালো মানুষ হন বিনয়ী, সদালাপী, পরোপকারী; তাঁর ব্যক্তিত্ব প্রসন্ন। সততার আছে প্রখরতা আর তেজ, প্রয়োজনে অসত্য ও দুর্বলতাকে ঝলসে দিতে পারেন; মিথ্যার মোড়ক ফাঁস করে দিতে পারেন। ভালোবাসা আর সমীহ—দুটোই মেলে এর কপালে, দুটো মিলে তৈরি হয় শ্রদ্ধা।
এমন মানুষকে একদিকে কাছের মানুষ হিসেবে আপন ভাবা যায়, অন্যদিকে সবার মানুষ হিসেবে সমীহ করতে হয়। এমনই একজন মানুষ ছিলেন ডা. মনীন্দ্রলাল চক্রবর্তী। ১৯১০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া এই মানুষটিকে নিয়েই লিখছি। ১৯৮৩ সালের ১৪ জুলাই তিনি মারা যান।
ব্রিটিশ-প্রবর্তিত ইংরেজি শিক্ষা উন্নত নৈতিকতা ও উচ্চ আদর্শের প্রজন্ম তৈরি করেছে, যাঁরা সংসারে থেকেও সমাজের, দেশের এবং ইতিহাসের। আর ব্রিটিশের ঔপনিবেশিক শাসন এই প্রজন্মকে দেশপ্রেম, স্বাধীনতা ও প্রগতির জন্য সংগ্রামী চেতনায় আন্দোলনে নামার উদ্দীপনা দিয়েছে। এমন মানুষ ব্রিটিশ শাসনের শেষ অর্ধশতকে সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছিল। এদের বীরত্বে ও ত্যাগে ঔপনিবেশিক নাগপাশ থেকে উপমহাদেশ মুক্তি পেয়েছে।
দেশভাগের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতা ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য মস্ত বিপর্যয় ও মহা বিড়ম্বনা হিসেবে এসেছে। গান্ধী-নেহরুর নেতৃত্বে ভারত গণতন্ত্রের পতাকা সমুন্নত রেখে সংখ্যালঘুদের জন্য কিছুটা সহনীয় পরিবেশ তৈরি করতে পারলেও পাকিস্তানে এবং পরে বাংলাদেশে গণতন্ত্র বারবার বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুর বিড়ম্বনা কিছুতেই কাটেনি।
ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতাসংগ্রামীদের বড় অংশই পাকিস্তান ত্যাগ করে ভারতে চলে গিয়েছিলেন। কারণ, ধর্মীয় পরিচয়ে তাঁরা অমুসলিম। যে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ যাননি, ডা. মনীন্দ্রলাল চক্রবর্তী তাঁদেরই একজন। তিনি কেবল পাকিস্তানে, এবং বাংলাদেশে থেকে গেলেন না, তিনি রয়ে গেলেন নিজের গণ্ডগ্রামে; চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার বাজালিয়ায়। দেশ নিয়ে তাঁর মনে ক্ষোভ কিংবা হতাশা থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু সেটা দেশের, অর্থাৎ মাতৃভূমির দুর্দশা দেখে, ভারতে যেতে না পারার বা না যাওয়ার কারণে নয়।
পাকিস্তান আমল থেকে এ দেশে সামরিক শাসন এসেছে বেশ কয়েকবার। এ রকম সময়গুলো প্রগতিশীল বাম হিন্দু রাজনীতিকের জন্য কী রকম প্রতিকূল ছিল, তা ভুক্তভোগীমাত্রই জানেন। এসব প্রতিকূলতা ও পরীক্ষা তাঁকে কাবু করতে পারেনি। কারণ, তাঁর দেশপ্রেম আর মানবপ্রেম ছিল খাঁটি।
ডা. চক্রবর্তী পরিণত বয়সে পৌঁছে নিজ গ্রাম, নিজ পেশা ও নিজের সংসার ছেড়ে দূরে যাননি। এই তিন অবলম্বনকে ঘিরে তাঁর বিচরণ ও বিকাশ। রাজনীতি কিংবা সমাজকর্ম ধীরে ধীরে মানুষের বৃত্ত প্রসারিত করে গ্রাম ছাড়িয়ে জেলা, জেলা ছাপিয়ে বিভাগ, বিভাগ থেকে দেশ—এভাবে কেউ কেউ বড় নেতা হন, ক্ষমতাবান হন। কিন্তু ডা. মনীন্দ্রলাল চক্রবর্তী যেন সহজাতভাবে গাঁয়ের মানুষ, খাঁটি মানুষ, আপন মানুষ। গাঁ ছেড়ে শহুরে হতে চাননি তিনি, বড় জীবনের মেকি কালচার তিনি সহ্য করেননি, আর ঘনিষ্ঠ আপনজনদের ছেড়ে দূরের কেউ হতে চাননি। তাঁর জীবনে বিভিন্ন সময়ে নিশ্চয় নানা রকম সুযোগ এসেছিল, যা তাঁকে গ্রামের বাইরে, ক্ষমতাবিত্তের আলগা সংস্কৃতির মোড়কে এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কাগুজে সম্পর্কে অভ্যস্ত করে ফেলত। কিন্তু তিনি সে সুযোগ নিতে আগ্রহ বোধ করেননি।
প্রতিষ্ঠা ও প্রচার যেন পরস্পর নির্ভরশীল, একে অন্যকে সাহায্য করে। কিন্তু স্বদেশি চেতনায় অনুপ্রাণিত মনীন্দ্রবাবু সহজাতভাবে প্রচারবিমুখ, মনে হয় প্রতিষ্ঠাবিমুখও ছিলেন।
ফিরে দেখা বইটি ঠিক তাঁর আত্মজীবনী নয়, স্মৃতিকথা; এবং তারও চেয়ে বেশি কিছু, অভিজ্ঞতার কথা। স্কুলে থাকতেই তিনি গোপন বিপ্লবী দলে যোগ দিয়েছিলেন। বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হলেও তাঁর মধ্যে গৃহীসত্তা সজাগ ছিল। সংসারের দায়, মা-বাবার প্রতি কর্তব্য, ভাইবোন ও সন্তানদের প্রতি দায়িত্ব তিনি অস্বীকার করার মানুষ নন। প্রথম জীবনের তারুণ্যের ভাবাবেগে নিশ্চয় তাঁর দুই প্রবণতায় টানাপোড়েন চলেছে, কিন্তু বরাবর তিনি দুইয়ের সমন্বয়ের চেষ্টা করে গেছেন। তরুণ বয়সে স্বভাবতই বিপ্লব পন্থার দিকেই টান ছিল প্রবল। এ সময়ে তিনি কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হন। শেষে কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচরে গৃহবন্দী হন, যা প্রায় আড়াই বছর স্থায়ী হয়েছিল।
মনীন্দ্রবাবু কলকাতা থেকে আয়ুর্বেদশাস্ত্র পড়ে বাবার পেশায় যোগ দেন, তাঁরই কর্মক্ষেত্র বার্মার মংডু, ভুথিডং ও রাথিডং—এই তিন মহকুমায় মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করেন।
তারপর মায়ের মৃত্যু, বাবার বার্ধক্য, বিবাহ এবং পেশার উত্তরোত্তর সাফল্য তাঁর ভবিষ্যৎ জীবনের যাত্রাপথ নির্ধারিত করে দিতে থাকে। পেশার সাফল্যের সঙ্গে সংসারের কলেবর বৃদ্ধি স্বভাবতই ডা. মনীন্দ্রকে সাংসারিক দায়িত্বে ক্রমেই বেঁধেছে।
কিন্তু প্রথম জীবনে যিনি দেশ ও মানুষের কল্যাণের ব্রত ধারণ করেছিলেন, তাঁর পক্ষে কি সম্ভব সম্পূর্ণ সংসারে নিমজ্জিত হওয়া? সম্ভব নয়। ফলে সংসার সচল থাকল, ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখে দেশের ও মানুষের কাজে যুক্ত থেকে বড় হলো, আর তিনি নেপথ্যে বটবৃক্ষের মতো সবাইকে আশ্রয় ও ছায়া দিয়ে গেলেন। বটবৃক্ষ তিনিই হন, যিনি আপন ক্ষুদ্র গণ্ডি ছাড়িয়ে বৃহত্তর পরিসরে ভূমিকা রাখেন। তাই ছায়া তিনি কেবল আপন সংসারকে দিলেন, তা নয়; গ্রামবাসী, এলাকাবাসীকেও দিলেন। ইউনিয়ন বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন ছাড়া বরাবর এলাকাবাসীর সুখে-দুঃখে অভিভাবকের ভূমিকায় ছিলেন।
বটবৃক্ষ তো মহীরুহ, তাই নিজ গ্রামে কর্মময় জীবনের সিংহ ভাগ ব্যয় করলেও তার বারতা দেশের সমমনা ও সমদর্শী মানুষের কাছে পৌঁছেছে। তাঁদের পক্ষ থেকে শতবর্ষের এই পুণ্যলগ্নে তাঁকে স্মরণ করা এবং সেই সূত্রে দেশবাসীর সামনে একজন সৎ দেশপ্রেমিকের জীবন ও কর্ম তুলে ধরার এই সুযোগ হাতছাড়া করা সম্ভব নয়। কেননা, এ দেশ আমাদের, এবং এই দেশকে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিতে হলে অতীত থেকে প্রেরণা নিতে হবে ও দিশারি মানুষদের চিনতে হবে। ডা. মনীন্দ্রলাল চক্রবর্তী এক অনুপ্রেরণাদায়ী চরিত্র এবং সমাজের একজন দিশারি মানুষ।
এমন মানুষকে একদিকে কাছের মানুষ হিসেবে আপন ভাবা যায়, অন্যদিকে সবার মানুষ হিসেবে সমীহ করতে হয়। এমনই একজন মানুষ ছিলেন ডা. মনীন্দ্রলাল চক্রবর্তী। ১৯১০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া এই মানুষটিকে নিয়েই লিখছি। ১৯৮৩ সালের ১৪ জুলাই তিনি মারা যান।
ব্রিটিশ-প্রবর্তিত ইংরেজি শিক্ষা উন্নত নৈতিকতা ও উচ্চ আদর্শের প্রজন্ম তৈরি করেছে, যাঁরা সংসারে থেকেও সমাজের, দেশের এবং ইতিহাসের। আর ব্রিটিশের ঔপনিবেশিক শাসন এই প্রজন্মকে দেশপ্রেম, স্বাধীনতা ও প্রগতির জন্য সংগ্রামী চেতনায় আন্দোলনে নামার উদ্দীপনা দিয়েছে। এমন মানুষ ব্রিটিশ শাসনের শেষ অর্ধশতকে সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছিল। এদের বীরত্বে ও ত্যাগে ঔপনিবেশিক নাগপাশ থেকে উপমহাদেশ মুক্তি পেয়েছে।
দেশভাগের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতা ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য মস্ত বিপর্যয় ও মহা বিড়ম্বনা হিসেবে এসেছে। গান্ধী-নেহরুর নেতৃত্বে ভারত গণতন্ত্রের পতাকা সমুন্নত রেখে সংখ্যালঘুদের জন্য কিছুটা সহনীয় পরিবেশ তৈরি করতে পারলেও পাকিস্তানে এবং পরে বাংলাদেশে গণতন্ত্র বারবার বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুর বিড়ম্বনা কিছুতেই কাটেনি।
ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতাসংগ্রামীদের বড় অংশই পাকিস্তান ত্যাগ করে ভারতে চলে গিয়েছিলেন। কারণ, ধর্মীয় পরিচয়ে তাঁরা অমুসলিম। যে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ যাননি, ডা. মনীন্দ্রলাল চক্রবর্তী তাঁদেরই একজন। তিনি কেবল পাকিস্তানে, এবং বাংলাদেশে থেকে গেলেন না, তিনি রয়ে গেলেন নিজের গণ্ডগ্রামে; চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার বাজালিয়ায়। দেশ নিয়ে তাঁর মনে ক্ষোভ কিংবা হতাশা থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু সেটা দেশের, অর্থাৎ মাতৃভূমির দুর্দশা দেখে, ভারতে যেতে না পারার বা না যাওয়ার কারণে নয়।
পাকিস্তান আমল থেকে এ দেশে সামরিক শাসন এসেছে বেশ কয়েকবার। এ রকম সময়গুলো প্রগতিশীল বাম হিন্দু রাজনীতিকের জন্য কী রকম প্রতিকূল ছিল, তা ভুক্তভোগীমাত্রই জানেন। এসব প্রতিকূলতা ও পরীক্ষা তাঁকে কাবু করতে পারেনি। কারণ, তাঁর দেশপ্রেম আর মানবপ্রেম ছিল খাঁটি।
ডা. চক্রবর্তী পরিণত বয়সে পৌঁছে নিজ গ্রাম, নিজ পেশা ও নিজের সংসার ছেড়ে দূরে যাননি। এই তিন অবলম্বনকে ঘিরে তাঁর বিচরণ ও বিকাশ। রাজনীতি কিংবা সমাজকর্ম ধীরে ধীরে মানুষের বৃত্ত প্রসারিত করে গ্রাম ছাড়িয়ে জেলা, জেলা ছাপিয়ে বিভাগ, বিভাগ থেকে দেশ—এভাবে কেউ কেউ বড় নেতা হন, ক্ষমতাবান হন। কিন্তু ডা. মনীন্দ্রলাল চক্রবর্তী যেন সহজাতভাবে গাঁয়ের মানুষ, খাঁটি মানুষ, আপন মানুষ। গাঁ ছেড়ে শহুরে হতে চাননি তিনি, বড় জীবনের মেকি কালচার তিনি সহ্য করেননি, আর ঘনিষ্ঠ আপনজনদের ছেড়ে দূরের কেউ হতে চাননি। তাঁর জীবনে বিভিন্ন সময়ে নিশ্চয় নানা রকম সুযোগ এসেছিল, যা তাঁকে গ্রামের বাইরে, ক্ষমতাবিত্তের আলগা সংস্কৃতির মোড়কে এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কাগুজে সম্পর্কে অভ্যস্ত করে ফেলত। কিন্তু তিনি সে সুযোগ নিতে আগ্রহ বোধ করেননি।
প্রতিষ্ঠা ও প্রচার যেন পরস্পর নির্ভরশীল, একে অন্যকে সাহায্য করে। কিন্তু স্বদেশি চেতনায় অনুপ্রাণিত মনীন্দ্রবাবু সহজাতভাবে প্রচারবিমুখ, মনে হয় প্রতিষ্ঠাবিমুখও ছিলেন।
ফিরে দেখা বইটি ঠিক তাঁর আত্মজীবনী নয়, স্মৃতিকথা; এবং তারও চেয়ে বেশি কিছু, অভিজ্ঞতার কথা। স্কুলে থাকতেই তিনি গোপন বিপ্লবী দলে যোগ দিয়েছিলেন। বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হলেও তাঁর মধ্যে গৃহীসত্তা সজাগ ছিল। সংসারের দায়, মা-বাবার প্রতি কর্তব্য, ভাইবোন ও সন্তানদের প্রতি দায়িত্ব তিনি অস্বীকার করার মানুষ নন। প্রথম জীবনের তারুণ্যের ভাবাবেগে নিশ্চয় তাঁর দুই প্রবণতায় টানাপোড়েন চলেছে, কিন্তু বরাবর তিনি দুইয়ের সমন্বয়ের চেষ্টা করে গেছেন। তরুণ বয়সে স্বভাবতই বিপ্লব পন্থার দিকেই টান ছিল প্রবল। এ সময়ে তিনি কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হন। শেষে কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচরে গৃহবন্দী হন, যা প্রায় আড়াই বছর স্থায়ী হয়েছিল।
মনীন্দ্রবাবু কলকাতা থেকে আয়ুর্বেদশাস্ত্র পড়ে বাবার পেশায় যোগ দেন, তাঁরই কর্মক্ষেত্র বার্মার মংডু, ভুথিডং ও রাথিডং—এই তিন মহকুমায় মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করেন।
তারপর মায়ের মৃত্যু, বাবার বার্ধক্য, বিবাহ এবং পেশার উত্তরোত্তর সাফল্য তাঁর ভবিষ্যৎ জীবনের যাত্রাপথ নির্ধারিত করে দিতে থাকে। পেশার সাফল্যের সঙ্গে সংসারের কলেবর বৃদ্ধি স্বভাবতই ডা. মনীন্দ্রকে সাংসারিক দায়িত্বে ক্রমেই বেঁধেছে।
কিন্তু প্রথম জীবনে যিনি দেশ ও মানুষের কল্যাণের ব্রত ধারণ করেছিলেন, তাঁর পক্ষে কি সম্ভব সম্পূর্ণ সংসারে নিমজ্জিত হওয়া? সম্ভব নয়। ফলে সংসার সচল থাকল, ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখে দেশের ও মানুষের কাজে যুক্ত থেকে বড় হলো, আর তিনি নেপথ্যে বটবৃক্ষের মতো সবাইকে আশ্রয় ও ছায়া দিয়ে গেলেন। বটবৃক্ষ তিনিই হন, যিনি আপন ক্ষুদ্র গণ্ডি ছাড়িয়ে বৃহত্তর পরিসরে ভূমিকা রাখেন। তাই ছায়া তিনি কেবল আপন সংসারকে দিলেন, তা নয়; গ্রামবাসী, এলাকাবাসীকেও দিলেন। ইউনিয়ন বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন ছাড়া বরাবর এলাকাবাসীর সুখে-দুঃখে অভিভাবকের ভূমিকায় ছিলেন।
বটবৃক্ষ তো মহীরুহ, তাই নিজ গ্রামে কর্মময় জীবনের সিংহ ভাগ ব্যয় করলেও তার বারতা দেশের সমমনা ও সমদর্শী মানুষের কাছে পৌঁছেছে। তাঁদের পক্ষ থেকে শতবর্ষের এই পুণ্যলগ্নে তাঁকে স্মরণ করা এবং সেই সূত্রে দেশবাসীর সামনে একজন সৎ দেশপ্রেমিকের জীবন ও কর্ম তুলে ধরার এই সুযোগ হাতছাড়া করা সম্ভব নয়। কেননা, এ দেশ আমাদের, এবং এই দেশকে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিতে হলে অতীত থেকে প্রেরণা নিতে হবে ও দিশারি মানুষদের চিনতে হবে। ডা. মনীন্দ্রলাল চক্রবর্তী এক অনুপ্রেরণাদায়ী চরিত্র এবং সমাজের একজন দিশারি মানুষ।
No comments