'বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী, রোহিঙ্গাদের প্রতি করুণা দেখাচ্ছে মমতার সরকার'

বেআইনি অনুপ্রবেশ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে তীব্র আক্রমণ করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৃহস্পতিবার লোকসভায় অভিবাসন ও বিদেশি বিল, ২০২৫-এর জবাবি ভাষণে অমিত শাহ দাবি করেন, জমি সমস্যার জেরেই পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে বেড়া দেয়া যাচ্ছে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের দিকে আঙুল তুলে শাহ বলেন, ‘আমরা প্রায় ২২০০ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বেড়া দিচ্ছি, বেড়া দেয়ার জন্য মাত্র ৪৫০ কিলোমিটার এলাকা বাকি আছে এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার বেড়ার জন্য জমি দিচ্ছে না। আমরা ১১টি চিঠি লিখেছি এবং রাজ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাত দফা আলোচনা করেছি, কিন্তু তারা এখনও জমি দিচ্ছে না। ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা গুন্ডামিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা দিয়েই সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশ হচ্ছে।’

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘তৃণমূল সরকার অবৈধ অভিবাসীদের তাদের আধার কার্ড সরবরাহ করে করুণা দেখাচ্ছে। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হোক বা রোহিঙ্গা, আগে কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীন তারা আসাম দিয়ে ভারতে প্রবেশ করত। এখন তারা পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে যেখানে তৃণমূল ক্ষমতায় রয়েছে।’

শাহের কথায়, ‘২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সরকার গঠন করবে এবং আমরা এটির অবসান ঘটাব।’

তিনি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কঠোর আইন এবং সুরক্ষার জন্য নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানান। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘গত দশ বছরে ভারত পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে ভারত একটি উজ্জ্বল স্থান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ভারত উৎপাদনের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে এবং সারা বিশ্বের মানুষের ভারতে আসা স্বাভাবিক। ব্যক্তিগত লাভের জন্য এবং দেশকে অনিরাপদ করে তোলার জন্য ভারতে আশ্রয় নেয়া মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। রোহিঙ্গা হোক বা বাংলাদেশি, যদি তারা অস্থিরতা তৈরি করতে ভারতে আসে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

অভিবাসন এবং বিদেশি বিলের পক্ষে  শাহ বলেন যে, ‘এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয়। অভিবাসন কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। ভারতের নিরাপত্তার জন্য আমাদের অবশ্যই জানতে হবে কারা আমাদের দেশে প্রবেশ করছে, কতদিনের জন্য এবং কী কারণে।’

এই বিলের মাধ্যমে বিদেশিদের ওপর নজরদারির জন্য একটি কাঠামোগত ব্যবস্থা চালু করা হবে। আশ্রয় প্রদানে ভারতের অতীত ভূমিকার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে শাহ বলেন, ‘ভারত একটি ভূ-সাংস্কৃতিক জাতি, ভূ-রাজনৈতিক জাতি নয়। পার্সিয়ানরা ভারতে এসেছিল এবং আজ এই দেশে তারা নিরাপদ। বিশ্বের ক্ষুদ্রতম সংখ্যালঘু সম্প্রদায় শুধুমাত্র ভারতেই নিরাপদ। ইহুদিরা ইসরায়েল থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদির  আমলে, প্রতিবেশী দেশ থেকে ছয়টি নিপীড়িত সম্প্রদায়ের মানুষ সিএএ-র মাধ্যমে দেশে আশ্রয় নিচ্ছেন।’

শাহ এটাও স্পষ্ট করেছেন যে, জাতীয় নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। যারা দেশের নিরাপত্তাকে বিপন্ন করবে তাদের উপর আমরা কড়া নজর রাখব। কারণ দেশ কোনও ‘ধর্মশালা’ নয়। যদিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিযোগগুলোকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন লোকসভার তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। সাংসদ বলছেন, ‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা। সীমান্তে বেড়া লাগানোয় দেরির দায় কেন্দ্রীয় সরকারের। কেন্দ্র এর জন্য আমাদের দোষ দিতে পারে না।’ সেইসঙ্গে জোর দিয়ে এই তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘আগামী ১০০ বছরেও পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসবে না বিজেপি’।

সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া

mzamin

No comments

Powered by Blogger.