অভিনন্দনের প্রত্যাবর্তন উত্তেজনা কমছে
পাকিস্তানে
আটক ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমান ভারতে ফিরে গেছেন। তার আটক হওয়া নিয়ে
তীব্র উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পর অবশেষে আনন্দ-উল্লাসে মেতেছেন ভারতীয়রা।
পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাবও তুলনামূলক
কমে এসেছে। অভিনন্দনকে বিকালে হস্তান্তরের কথা থাকলেও সকাল থেকেই ওয়াঘা
সীমান্তে জড়ো হতে থাকেন ভারতীয়রা। তারা হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে, চেহারায়
পতাকা অঙ্কন করে অধীর আগ্রহে অভিনন্দনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। ভারতের
পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন তারা। কয়েক সপ্তাহের যুদ্ধাবস্থার অবসান
ঘটাতে ‘শান্তির ইঙ্গিত’ হিসেবে অভিনন্দনকে ফেরত পাঠায় পাকিস্তান। সন্ধ্যা
ছয়টায় অভিনন্দনকে হস্তান্তর করার কথা থাকলেও আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে খানিকটা
বিলম্ব হয়।
ভারতে অভিনন্দনকে উষ্ণ অভ্যর্থনা: শুক্রবার সন্ধ্যায় অভিনন্দনকে নিয়ে কনভয় এসে পৌঁছায় ওয়াঘা-আটারি সীমান্তের চেকপোস্টে। পরে পাকিস্তান ‘বিটিং দ্য রিট্রিট সিরিমনির’ পরই অভিনন্দনকে তুলে দেয় ভারতের হাতে। ভারত অবশ্য এদিন এই ‘বিটিং দ্য রিট্রিট সিরিমনি’ বাতিল করে দেয়। প্রথমে পাকিস্তান সীমান্তে শুল্ক ও অভিবাসনের কাজ শেষ করে অভিনন্দন প্রবেশ করেন ভারতীয় ভূমিতে। সেখানেও একদফা শুল্ক ও অভিবাসনের কাজ শেষ হওয়ার পর উইং কমান্ডার অভিনন্দনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন সেনা চিকিৎসকরা। ভারত সীমান্তে অভিনন্দনকে স্বাগত জানান এয়ার ভাইস মার্শাল আর জি কে কাপুর সহ ভারতীয় বিমান সেনার শীর্ষ কর্মকর্তারা। অভিনন্দন বর্তমান ভারতের মাটিতে পা দেয়ার খবর প্রকাশের পরই সীমান্তে উপস্থিত মানুষ উন্মাদনায় ফেটে পড়েন। অনেকে ঢাকঢোল বাজিয়ে অভিনন্দনকে বীরের অভ্যর্থনা জানান।
‘ভারত মাতা কি জয়’, ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল সীমান্ত এলাকা। এরা বৃহস্পতিবার রাত এবং শুক্রবার সকাল থেকেই অপেক্ষা করছিলেন অভিনন্দনকে স্বাগত জানাতে। তবে সবচেয়ে আবেগঘন পরিস্থিতি তৈরি হয় যখন অভিনন্দন তার পিতা ও মাতার সঙ্গে মিলিত হয়েছেন। তারা গতকাল রাতেই চেন্নাই থেকে নয়া দিল্লি এসে পৌঁছেছিলেন। গতকাল দুপুরেই তারা পৌঁছান অমৃতসর। সেখান থেকে সীমান্তে। অভিনন্দনের আগমন উপলক্ষে সীমান্তে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সদ্য মুক্তি পাওয়া পাইলট ওয়াগা সীমান্তে ছিলেন। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে সীমান্ত থেকে বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা ও পাইলটের পিতা-মাতাসহ অভিনন্দনকে অমৃতসরে নেয়া হবে। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হবে নয়া দিল্লিতে।
বৃহস্পতিবার বিকালে পাক প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তান সংসদের যৌথ অধিবেশনে ঘোষণা করেন যে, শান্তির পদক্ষেপ হিসেবে শুক্রবারই অভিনন্দনকে মুক্তি দিয়ে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হবে। ভারত অবশ্য মুক্তি পাওয়া পাইলটকে সরাসরি বিমানে উড়িয়ে নয়া দিল্লি নিয়ে আসার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান সরকার তা নাকচ করে দিয়ে জানায়, ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত দিয়েই ভারতীয় পাইলটকে ফেরত দেওয়া হবে।
সে অনুসারে, শুক্রবার সকালে পাইলট অভিনন্দনকে প্রথমে রাওয়ালপিন্ডি থেকে লাহোরে আনা হয়। সেখানে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেড ক্রস (আইসিআরসি)-এর হাতে তুলে দেয়া হয় বিমান বাহিনীর এই উইং কমান্ডারকে। সেসময় উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানে ভারতীয় হাইকমিশনের প্রতিনিধিরাও। তার পরে সন্ধ্যা নাগাদ তাকে নিয়ে আসা হয় ওয়াঘা-আটারি সীমান্তে। পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রকের এক সূত্র ডন টিভি নিউজ-কে জানিয়েছে, ভারতীয় হাইকমিশনের অ্যাটাশে জে টি ক্যুরিয়েন অভিনন্দনের সঙ্গে রয়েছেন। এর আগে কার্গিল যুদ্ধের সময়ও ভারতীয় পাইলট নচিকেতাকে পাকিস্তান রেডক্রসের মাধ্যমেই ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিল ঘটনার আটদিনের মাথায়। ভারত অবশ্য দাবি করেছে, আন্তর্জাতিক স্তরে প্রবল চাপ ও জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ীই পাকিস্তান পাইলটকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। বিজেপির সভাপতি শুক্রবার পাইলটের মুক্তিকে ভারতের কূটনৈতিক সাফল্য বলে বর্ণনা করেছেন।
পাকিস্তানে যেভাবে আটক হন অভিনন্দন: গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি সকালে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে প্রায় সাত কিলোমিটার ভারতের আকাশসীমায় ঢুকে পড়েছিল পাক ফাইটারগুলো।
তাদের মোকাবিলায় আকাশে ওড়ে ভারতের দু’টি জেট। তারই একটির ককপিটে ছিলেন অভিনন্দন। সূত্রের খবর, নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় থাকা পাক ফাইটারকে টার্গেট ‘লক ইন’ করে অভিনন্দনের বাইসন জেট। সেকেন্ডের মধ্যে মিগ-২১ থেকে আর-৭৩ এয়ার টু এয়ার মিসাইল আঘাত করে পাক ফাইটারকে। কিন্তু তার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই অভিনন্দনের মিগে আঘাত করে পাক জেটের গুলি। বিমান নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে রেডিও বার্তা দিয়েই ‘ইজেক্ট’ করে বিমানের বাইরে চলে আসেন তিনি। কিন্তু হাওয়ার গতি উল্টো দিকে থাকায় অভিনন্দনকে নিয়ে প্যারাশুট ভেসে যায় পাক অধিকৃত কাশ্মীরের দিকে। তার পরই পাক সেনারা তাকে আটক করেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে দু’জন প্রত্যক্ষদর্শীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, বিমান থেকে পাকিস্তানি ভূ-খণ্ডে পড়ার পর অভিনন্দন ভারতের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। কিন্তু যখন বুঝতে পারেন যে, তিনি এখন শত্রুর ভূ-খণ্ডে, তখন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পাকিস্তানি গ্রামবাসী তাকে দেখে ফেলে, ধাওয়া করতে থাকে। তাদের ভয় দেখানোর জন্য অভিনন্দন শূন্যে গুলি করতে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ রাজ্জাক চৌধুরি বলেন, আধা কিলোমিটার দৌড়ানোর পর, সে শূন্যে আরো গুলি করতে থাকে। কিন্তু এতে গ্রামবাসীর মনে ভয় ধরাতে না পেরে সে একটি ছোট নদীতে লাফ দেয়। পরে পালানো সম্ভব না এটা বুঝতে পেরে ইউনিফর্ম থেকে কিছু দলিল ও মানচিত্র বের করে গিলে ফেলার চেষ্টা করে, বাকিগুলো পানিতে ভাসিয়ে দেয়। আব্দুল মজিদ নামের আরেক প্রত্যক্ষ্যদর্শী জানান, ভারতীয় পাইলটকে মারধর করা ও পাথর নিক্ষেপকারী গ্রামবাসীদের মধ্যে তিনিও একজন ছিলেন। তিনি বলেন, নদী থেকে সে যখন আবারো তার রিভলবার আমাদের দিকে তাক করে, সরাসরি গুলি করতে পারে ভেবে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। পরে গ্রামবাসী তাকে ধরে ফেলে। কেউ কেউ তাকে মারধরও করে। কেননা আমাদেরকে কঠিন ভোগান্তিতে ফেলেছিল সে। কিন্তু পরে আমরা তাকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করি।
উন্নতি নেই কূটনৈতিক সম্পর্কে: অভিনন্দনের ফেরত পাঠানোকে কেন্দ্র করে দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমলেও কূটনৈতিক সম্পর্কে কোনো অগ্রগতি আসেনি। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মোহাম্মদ কোরেশি জানিয়ে দিয়েছেন, ভারতীয় পক্ষকে আমন্ত্রণ জানানোর কারণে এ সপ্তাহে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিতব্য ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না তিনি। পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো জানান, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের বার্তা নিয়ে শিগগিরই ইসলামাবাদ সফর করবেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাধুবাদ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ইতিমধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের নেতৃত্বকে আলোচনা ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই সংঘর্ষ থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছে। অভিনন্দনকে ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনাকে সাধুবাদও জানিয়েছেন তারা। ইতিমধ্যেই জাতিসংঘ ইমরান খানের বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে। এ ছাড়া, জর্দান ও রাশিয়া প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে। এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে ইতিমধ্যেই ট্রেন্ডিং হয়েছে যুদ্ধবিরোধী হ্যাশট্যাগ ‘সে নো টু ওয়ার’। ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের নাগরিকরাই আওয়াজ তুলছেন শান্তির পক্ষে। অন্যদিকে পিছিয়ে নেই ‘ওয়েলকাম হোম অভিনন্দন’ শিরোনামের টুইটও।
ভারতে অভিনন্দনকে উষ্ণ অভ্যর্থনা: শুক্রবার সন্ধ্যায় অভিনন্দনকে নিয়ে কনভয় এসে পৌঁছায় ওয়াঘা-আটারি সীমান্তের চেকপোস্টে। পরে পাকিস্তান ‘বিটিং দ্য রিট্রিট সিরিমনির’ পরই অভিনন্দনকে তুলে দেয় ভারতের হাতে। ভারত অবশ্য এদিন এই ‘বিটিং দ্য রিট্রিট সিরিমনি’ বাতিল করে দেয়। প্রথমে পাকিস্তান সীমান্তে শুল্ক ও অভিবাসনের কাজ শেষ করে অভিনন্দন প্রবেশ করেন ভারতীয় ভূমিতে। সেখানেও একদফা শুল্ক ও অভিবাসনের কাজ শেষ হওয়ার পর উইং কমান্ডার অভিনন্দনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন সেনা চিকিৎসকরা। ভারত সীমান্তে অভিনন্দনকে স্বাগত জানান এয়ার ভাইস মার্শাল আর জি কে কাপুর সহ ভারতীয় বিমান সেনার শীর্ষ কর্মকর্তারা। অভিনন্দন বর্তমান ভারতের মাটিতে পা দেয়ার খবর প্রকাশের পরই সীমান্তে উপস্থিত মানুষ উন্মাদনায় ফেটে পড়েন। অনেকে ঢাকঢোল বাজিয়ে অভিনন্দনকে বীরের অভ্যর্থনা জানান।
‘ভারত মাতা কি জয়’, ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল সীমান্ত এলাকা। এরা বৃহস্পতিবার রাত এবং শুক্রবার সকাল থেকেই অপেক্ষা করছিলেন অভিনন্দনকে স্বাগত জানাতে। তবে সবচেয়ে আবেগঘন পরিস্থিতি তৈরি হয় যখন অভিনন্দন তার পিতা ও মাতার সঙ্গে মিলিত হয়েছেন। তারা গতকাল রাতেই চেন্নাই থেকে নয়া দিল্লি এসে পৌঁছেছিলেন। গতকাল দুপুরেই তারা পৌঁছান অমৃতসর। সেখান থেকে সীমান্তে। অভিনন্দনের আগমন উপলক্ষে সীমান্তে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সদ্য মুক্তি পাওয়া পাইলট ওয়াগা সীমান্তে ছিলেন। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে সীমান্ত থেকে বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা ও পাইলটের পিতা-মাতাসহ অভিনন্দনকে অমৃতসরে নেয়া হবে। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হবে নয়া দিল্লিতে।
বৃহস্পতিবার বিকালে পাক প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তান সংসদের যৌথ অধিবেশনে ঘোষণা করেন যে, শান্তির পদক্ষেপ হিসেবে শুক্রবারই অভিনন্দনকে মুক্তি দিয়ে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হবে। ভারত অবশ্য মুক্তি পাওয়া পাইলটকে সরাসরি বিমানে উড়িয়ে নয়া দিল্লি নিয়ে আসার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান সরকার তা নাকচ করে দিয়ে জানায়, ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত দিয়েই ভারতীয় পাইলটকে ফেরত দেওয়া হবে।
সে অনুসারে, শুক্রবার সকালে পাইলট অভিনন্দনকে প্রথমে রাওয়ালপিন্ডি থেকে লাহোরে আনা হয়। সেখানে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেড ক্রস (আইসিআরসি)-এর হাতে তুলে দেয়া হয় বিমান বাহিনীর এই উইং কমান্ডারকে। সেসময় উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানে ভারতীয় হাইকমিশনের প্রতিনিধিরাও। তার পরে সন্ধ্যা নাগাদ তাকে নিয়ে আসা হয় ওয়াঘা-আটারি সীমান্তে। পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রকের এক সূত্র ডন টিভি নিউজ-কে জানিয়েছে, ভারতীয় হাইকমিশনের অ্যাটাশে জে টি ক্যুরিয়েন অভিনন্দনের সঙ্গে রয়েছেন। এর আগে কার্গিল যুদ্ধের সময়ও ভারতীয় পাইলট নচিকেতাকে পাকিস্তান রেডক্রসের মাধ্যমেই ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিল ঘটনার আটদিনের মাথায়। ভারত অবশ্য দাবি করেছে, আন্তর্জাতিক স্তরে প্রবল চাপ ও জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ীই পাকিস্তান পাইলটকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। বিজেপির সভাপতি শুক্রবার পাইলটের মুক্তিকে ভারতের কূটনৈতিক সাফল্য বলে বর্ণনা করেছেন।
পাকিস্তানে যেভাবে আটক হন অভিনন্দন: গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি সকালে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে প্রায় সাত কিলোমিটার ভারতের আকাশসীমায় ঢুকে পড়েছিল পাক ফাইটারগুলো।
তাদের মোকাবিলায় আকাশে ওড়ে ভারতের দু’টি জেট। তারই একটির ককপিটে ছিলেন অভিনন্দন। সূত্রের খবর, নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় থাকা পাক ফাইটারকে টার্গেট ‘লক ইন’ করে অভিনন্দনের বাইসন জেট। সেকেন্ডের মধ্যে মিগ-২১ থেকে আর-৭৩ এয়ার টু এয়ার মিসাইল আঘাত করে পাক ফাইটারকে। কিন্তু তার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই অভিনন্দনের মিগে আঘাত করে পাক জেটের গুলি। বিমান নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে রেডিও বার্তা দিয়েই ‘ইজেক্ট’ করে বিমানের বাইরে চলে আসেন তিনি। কিন্তু হাওয়ার গতি উল্টো দিকে থাকায় অভিনন্দনকে নিয়ে প্যারাশুট ভেসে যায় পাক অধিকৃত কাশ্মীরের দিকে। তার পরই পাক সেনারা তাকে আটক করেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে দু’জন প্রত্যক্ষদর্শীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, বিমান থেকে পাকিস্তানি ভূ-খণ্ডে পড়ার পর অভিনন্দন ভারতের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। কিন্তু যখন বুঝতে পারেন যে, তিনি এখন শত্রুর ভূ-খণ্ডে, তখন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পাকিস্তানি গ্রামবাসী তাকে দেখে ফেলে, ধাওয়া করতে থাকে। তাদের ভয় দেখানোর জন্য অভিনন্দন শূন্যে গুলি করতে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ রাজ্জাক চৌধুরি বলেন, আধা কিলোমিটার দৌড়ানোর পর, সে শূন্যে আরো গুলি করতে থাকে। কিন্তু এতে গ্রামবাসীর মনে ভয় ধরাতে না পেরে সে একটি ছোট নদীতে লাফ দেয়। পরে পালানো সম্ভব না এটা বুঝতে পেরে ইউনিফর্ম থেকে কিছু দলিল ও মানচিত্র বের করে গিলে ফেলার চেষ্টা করে, বাকিগুলো পানিতে ভাসিয়ে দেয়। আব্দুল মজিদ নামের আরেক প্রত্যক্ষ্যদর্শী জানান, ভারতীয় পাইলটকে মারধর করা ও পাথর নিক্ষেপকারী গ্রামবাসীদের মধ্যে তিনিও একজন ছিলেন। তিনি বলেন, নদী থেকে সে যখন আবারো তার রিভলবার আমাদের দিকে তাক করে, সরাসরি গুলি করতে পারে ভেবে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। পরে গ্রামবাসী তাকে ধরে ফেলে। কেউ কেউ তাকে মারধরও করে। কেননা আমাদেরকে কঠিন ভোগান্তিতে ফেলেছিল সে। কিন্তু পরে আমরা তাকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করি।
উন্নতি নেই কূটনৈতিক সম্পর্কে: অভিনন্দনের ফেরত পাঠানোকে কেন্দ্র করে দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমলেও কূটনৈতিক সম্পর্কে কোনো অগ্রগতি আসেনি। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মোহাম্মদ কোরেশি জানিয়ে দিয়েছেন, ভারতীয় পক্ষকে আমন্ত্রণ জানানোর কারণে এ সপ্তাহে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিতব্য ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না তিনি। পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো জানান, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের বার্তা নিয়ে শিগগিরই ইসলামাবাদ সফর করবেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাধুবাদ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ইতিমধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের নেতৃত্বকে আলোচনা ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই সংঘর্ষ থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছে। অভিনন্দনকে ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনাকে সাধুবাদও জানিয়েছেন তারা। ইতিমধ্যেই জাতিসংঘ ইমরান খানের বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে। এ ছাড়া, জর্দান ও রাশিয়া প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে। এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে ইতিমধ্যেই ট্রেন্ডিং হয়েছে যুদ্ধবিরোধী হ্যাশট্যাগ ‘সে নো টু ওয়ার’। ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের নাগরিকরাই আওয়াজ তুলছেন শান্তির পক্ষে। অন্যদিকে পিছিয়ে নেই ‘ওয়েলকাম হোম অভিনন্দন’ শিরোনামের টুইটও।
No comments