দ্বৈত শাসনে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্বের আশঙ্কা

অধস্তন
আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি প্রকাশের পর আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিচার
বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে একক শাসনের প্রয়োজন। ১৯৭২ সালের
সংবিধানেই শুধু সুপ্রিমকোর্টের হাতে ক্ষমতা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। একক শাসন
না থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তারা বলেন, সদ্য
প্রকাশিত শৃঙ্খলাবিধিতে একক শাসন প্রতিষ্ঠা হয়নি। বিধিমালায় বিচার বিভাগের
স্বাধীনতা বলে কিছু নেই। বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের মৃত্যু ঘটেছে। তবে এ
বিধিমালা সংবিধান অনুযায়ী করা হয়েছে বলে অনেকেই মন্তব্য করেন। তবে
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও
আচরণবিধি প্রণয়নের মধ্য দিয়ে সুপ্রিমকোর্টের ক্ষমতা আরও বেড়েছে। কিন্তু ‘না
বুঝে’ অনেকেই এ বিধিমালার সমালোচনা করছেন। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের সঙ্গে
আলাপ-আলোচনা করেই বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। আমার মনে হয়, এতে
সুপ্রিমকোর্টের ক্ষমতা কোথাও ক্ষুণ্ণ করা হয়নি। সোমবার রাতে বহুল আলোচিত
শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশ হয়। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে দেশের রাজনীতিক এবং
বিচারাঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিধিতে রাষ্ট্রপতি এবং আইন মন্ত্রণালয়কে
অধস্তন আদালতের বিচারকদের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ হিসেবেও নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে এ বিধি প্রকাশের পর আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এর ফলে বিচার বিভাগের
স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে। নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ সংক্রান্ত
মামলার বাদী মাসদার হোসেন। তিনি বলেছেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত
করতে হলে ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে ফিরে যেতে হবে। একক শাসন প্রতিষ্ঠা করতে
হবে। ১৯৭২ সালের সংবিধানে ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা ছিল, বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত
ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ
(কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলা বিধান
সুপ্রিমকোর্টের ওপর ন্যস্ত থাকবে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১১ সালে
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ’৭২-এর সংবিধানের চার মূলনীতি ফিরিয়ে আনে। কিন্তু
১১৬ অনুচ্ছেদে বাহাত্তরের বিধান আর ফেরেনি। জারি করা বিধিমালায় বলা হয়েছে
অধস্তন আদালতের বিচারকদের ‘নিয়োগকারী’ কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি
এবং আইন মন্ত্রণালয়কে অধস্তন আদালতের বিচারকদের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ হিসাবেও
নির্ধারণ করা হয়েছে। বিধিমালায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলে কিছু থাকল না
বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলাম। সাবেক
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার সফিক আহমেদ বলেছেন, বিচার বিভাগের জন্য পৃথক
সচিবালয় করা হলে এ নিয়ে আর কোনো বিতর্ক থাকবে না। এ বিধির ফলে বিচার বিভাগ
পৃথকীকরণের মৃত্যু ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার
মওদুদ আহমদ।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলে কিছু থাকল না- ব্যারিস্টার
আমীর-উল ইসলাম : অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির আচরণ ও শৃঙ্খলাবিধির
গেজেট যে প্রক্রিয়ায় হয়েছে তাতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে কিছু থাকল না
বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম।
মঙ্গলবার তিনি যুগান্তরকে বলেন, এই বিধির ফলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা
বিঘ্নিত হবে। এই গেজেট মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী উল্লেখ করে তিনি
বলেন, রায়ে বলা ছিল তেল এবং পানি একসঙ্গে মিলবে না। কিন্তু এই বিধিতে তেল
এবং পানিকে একসঙ্গে মেলানো হয়েছে। সরকারও দেখবে আবার সুপ্রিমকোর্টও দেখবে।
এটা তো হওয়ার কথা ছিল না। এর ফলে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি বলেন, ‘সংবিধান যে ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত করেছে সেই জায়গায়
রাষ্ট্রপতির স্থানে আইন মন্ত্রণালয় প্রতিস্থাপিত হতে পারে না। রাষ্ট্রপতির
ভূমিকা আইন মন্ত্রণালয় পালন করতে পারে না। এই বিধিমালা করতে গিয়ে আইন
মন্ত্রণালয় অধস্তন আদালতের বিচারকদের নির্বাহী বিভাগের অধীনস্থ করে
ফেলেছেন। বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে
সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম মঙ্গলবার
সুপ্রিমকোর্টে তার নিজ চেম্বারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি
বলেন, জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনকে সরকার আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে যাওয়ার
ঘটনায় আমি অবাক হয়েছি। যদিও এটা করা উচিত ছিল সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ
অনুযায়ী। কিন্তু তা না করে ১৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিধি করা হয়েছে। এই ১৩৩
(অনুচ্ছেদ) বিধি প্রযোজ্য হয় প্রজাতন্ত্রের সরকারি কর্মচারীদের জন্য। তিনি
আরও বলেন, ‘বিচারিক আদালত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাদের সরকারি
গণপ্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা সঠিক হয়নি।’ আমীর-উল
ইসলাম বলেন, ‘মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে এবং সংবিধান অনুযায়ী বিচার
বিভাগের স্বাধীনতা, স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিচারিক আদালতকে নিয়ন্ত্রণের
জন্য রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে
রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু এ গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে সে জায়গা থেকে
সরে গেছে সরকার। এর মাধ্যমে বিচারিক আদালতের নিয়ন্ত্রণ আইন মন্ত্রণালয়ের
অধীনে থেকে গেছে।’
বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের মৃত্যু ঘটেছে- ব্যারিস্টার মওদুদ
আহমদ : সাবেক আইনমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন
অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধিমালা ‘অসাংবিধানিক অর্থহীন এবং
আত্মঘাতী। সদ্য জারিকৃত বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধির সমালোচনা করে তিনি এ কথা
বলেন। তিনি বলেন, এর মধ্যে প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণের মৃত্যু
ঘটেছে। এই বিধি মাসদার হোসেন মামলায় বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণ নিয়ে
সুপ্রিমকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল তার পরিপন্থী। তিনি বলেন, সরকার নিম্ন
আদালতের বিচারকদের চাকরির যে শৃঙ্খলাবিধি তৈরি করেছে তাতে নিম্ন আদালতের
বিচারকরা সম্পূর্ণভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেল। এখন আর বলা যাবে না যে,
বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক একটি প্রতিষ্ঠান। এই শৃঙ্খলাবিধি
সংবিধানের ২২ অুনচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছে। ২২ অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে লেখা আছে,
বিচার বিভাগ হবে একটি স্বাধীন অঙ্গ এবং বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ
সম্পূর্ণভাবে পৃথকীকরণ করা হবে। সেজন্য আইনও পাস করা হয়েছে। আজকে এই
শৃঙ্খলাবিধির মাধ্যমে প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণের মৃত্যু ঘটেছে।
অর্থাৎ বাংলাদেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দূরে থাক, এটা সম্পূর্ণভাবে
সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। মাসদার হোসেন মামলার প্রসঙ্গ টেনে সাবেক এই
আইনমন্ত্রী বলেন, ওই মামলায় বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ সম্পর্কে সুপ্রিমকোর্টের
যে নির্দেশ ছিল তার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। অর্থাৎ এই বিধি একটি অসাংবিধানিক
বিধিমালা।
বিচারকদের জন্য পৃথক সচিবালয় দরকার- ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ :
সাবেক আইনমন্ত্রী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন,
গ্যাজেটে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ হিসেবে রাষ্ট্রপতি ও আইন মন্ত্রণালয়কে বোঝানো
হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতের সঙ্গে আলোচনা করে
সিদ্ধান্ত নেবেন। এর ফলে এই গেজেটে দ্বৈত শাসনের কোনো সুযোগ নেই। বহুল
প্রতীক্ষিত গেজেটের বিষয়ে ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, আমি মনে
করি গেজেট ঠিকই আছে। অধস্তন আদালতের কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ
উত্থাপিত হয় তবে কিভাবে তদন্ত হবে সেই সিদ্ধান্ত নেবেন সুপ্রিমকোর্ট। তারপর
তারা তাদের তদন্তের ফলাফল রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। তিনি বলেন,
সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই গেজেট হয়েছে। তিনি বলেন,
অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত যে বিধি সরকার করেছে, তাতে
আপত্তি করার কিছু নেই। তবে আমার মনে হয়, বিতর্ক এড়াতে এবং বিচারকদের
স্বার্থে তাদের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় করা দরকার। এটা মাসদার হোসেন মামলার
চেতনার সঙ্গেও যায়। এটা করা হলে উচ্চ আদালতকে আইন মন্ত্রণালয়ের মুখাপেক্ষী
থাকতে হবে না। মঙ্গলবার যুগান্তরকে তিনি আরও বলেন, পৃথক সচিবালয় করা সম্ভব
হলে এখন আইন মন্ত্রণালয় যে কাজটি করছে, সে কাজটি ওই সচিবালয় করবে। এর জন্য
বিধিতে সামান্য কিছু সংশোধন আনতে হবে। এ গেজেট মাসদার হোসেন মামলার
পরিপন্থী কিনা- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার তো মনে হয় এটি ওই রায়ের পরিপন্থী
হয়নি। বরং বিধি করায় কিছুটা হলেও স্বস্তি এসেছে। তিনি বলেন, বিচারকদের
লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা, তাদের বদলি- সবই এখনও সুপ্রিমকোর্টের হাতে
আছে। জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন এখনও সুপ্রিমকোর্টের নিয়ন্ত্রণে। অবশ্য এটা
হয়েছে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে। ব্যারিস্টার শফিকবলেন, বিধি হয়েছে
শুধু শৃঙ্খলা সংক্রান্ত। নিন্ম আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে
সেটা সুপ্রিমকোর্টকে জানাতে হবে। পরে সুপ্রিমকোর্ট কাউকে নিয়োগ দিয়ে তদন্ত
প্রক্রিয়া শেষ করবে।
বিধি ’৭২-র সংবিধান অনুযায়ী হয়নি : মাসদার হোসেন
সাবেক জেলা জজ ও বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ মামলার বাদী মাসদার হোসেন বলেছেন, আমি মনে করি, আইন মন্ত্রণালয় যে বিধিমালা করেছে, সেটি ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী হয়নি। ’৭২-র সংবিধানে ফিরে গেলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বিচার বিভাগ পুরোপুরি স্বাধীন হতে হলে একক শাসন লাগবে। তিনি বলেন, দ্বৈত শাসনের ফলে বিচারকরা দ্বিগুণ সুরক্ষা পাবেন। ‘বিধিতে যা বলা হয়েছে, তাতে আপত্তি করার কিছু নেই। দ্বৈত শাসন থাকার ফলে বিচারকরা কোনো ক্ষতির মুখে পড়বেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, দ্বৈত শাসনের ফলে বিচারকরা দ্বিগুণ সুরক্ষা পাবেন। আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত নিন্ম আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির বিষয়ে মঙ্গলবার যুগান্তরের কাছে এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে মাসদার হোসেন। তিনি বলেন, ‘মাসদার হোসেন মামলার কোথায় লেখা আছে যে, অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সুপ্রিমকোর্টের হাতেই থাকতে হবে? আমার মামলার রায়ের ১২ দফার নির্দেশনায় বিষয়টি কোথাও নেই।’ তিনি বলেন, ‘সরকার নিন্ম আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির যে গেজেট প্রকাশ করেছে, তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী নয়।’ বিধি অনুযায়ী অধস্তন আদালতের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রপতি ও আইন মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে মাসদার হোসেন বলেন, ‘এটা ঠিকই আছে। সুপ্রিমকোর্টকে ‘হায়ার অথরিটি’ করে দেয়া সম্ভব নয়।’
বিধি ’৭২-র সংবিধান অনুযায়ী হয়নি : মাসদার হোসেন
সাবেক জেলা জজ ও বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ মামলার বাদী মাসদার হোসেন বলেছেন, আমি মনে করি, আইন মন্ত্রণালয় যে বিধিমালা করেছে, সেটি ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী হয়নি। ’৭২-র সংবিধানে ফিরে গেলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বিচার বিভাগ পুরোপুরি স্বাধীন হতে হলে একক শাসন লাগবে। তিনি বলেন, দ্বৈত শাসনের ফলে বিচারকরা দ্বিগুণ সুরক্ষা পাবেন। ‘বিধিতে যা বলা হয়েছে, তাতে আপত্তি করার কিছু নেই। দ্বৈত শাসন থাকার ফলে বিচারকরা কোনো ক্ষতির মুখে পড়বেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, দ্বৈত শাসনের ফলে বিচারকরা দ্বিগুণ সুরক্ষা পাবেন। আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত নিন্ম আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির বিষয়ে মঙ্গলবার যুগান্তরের কাছে এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে মাসদার হোসেন। তিনি বলেন, ‘মাসদার হোসেন মামলার কোথায় লেখা আছে যে, অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সুপ্রিমকোর্টের হাতেই থাকতে হবে? আমার মামলার রায়ের ১২ দফার নির্দেশনায় বিষয়টি কোথাও নেই।’ তিনি বলেন, ‘সরকার নিন্ম আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির যে গেজেট প্রকাশ করেছে, তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী নয়।’ বিধি অনুযায়ী অধস্তন আদালতের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রপতি ও আইন মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে মাসদার হোসেন বলেন, ‘এটা ঠিকই আছে। সুপ্রিমকোর্টকে ‘হায়ার অথরিটি’ করে দেয়া সম্ভব নয়।’
সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘এ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা
হয়েছে, নিন্ম আদালতের সার্বিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সুপ্রিমকোর্টের
নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ফলে সুপ্রিমকোর্টের যে ক্ষমতা নেই, তা তো নয়।’ সংবিধানের
১১৬ অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘সরকার বা রাষ্ট্রপতি যদি কোনো
সিদ্ধান্ত নিতে চান কিংবা নিন্ম আদালতের কোনো বিচারকের একদিনের ছুটিও যদি
দিতে হয়, তাহলেও সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে দিতে হবে। বিধিতে এ
বিষয়টি এসেছে। রাষ্ট্রপতি বা সরকার সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে
সিদ্ধান্ত নেবেন।’ বিধি প্রকাশে টানাপোড়েনের একপর্যায়ে আইনমন্ত্রী
বলেছিলেন, এসকে সিনহা (পদত্যাগকারী সাবেক প্রধান বিচারপতি) রাষ্ট্রপতির
ক্ষমতা নিয়ে নিতে চান। মাসদার হোসেন বলেন, ‘আইনমন্ত্রী যেটা বলেছেন, সেটাই
ঠিক। এসকে সিনহা রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। আমিও তাই মনে
করি। এসকে সিনহার নিয়ন্ত্রক কে হবেন, মূলত এটা নিয়েই তিনি আপত্তি জানিয়ে
আসছিলেন।’ গেজেট সঠিক হয়েছে বলে মন্তব্য করে মাসদার হোসেন আরও বলেন,
‘সংবিধানের ১০৯ ও ১১৬ অনুচ্ছেদ সুপ্রিমকোর্টের কাছে থাকায় চূড়ান্ত ঊর্ধ্বতন
নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (হেড অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অথরিটি) সুপ্রিমকোর্ট হওয়ার
আবশ্যকতা নেই। কারণ রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন বিচারকদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। ফলে
তিনি বিচারকদের নিয়ন্ত্রকও।’
No comments