দ্বার খুললে বিনিয়োগ আসবে -সাক্ষাৎকারে জাহিদ হোসেন
সম্প্রতি
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অনুমোদন হয়েছে। ট্রান্স প্যাসিফিক
পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তিও হলো। এ দুটি বিষয়ের সঙ্গেই বাংলাদেশ
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে। একদিকে এসডিজি বাস্তবায়নের সক্ষমতার
প্রশ্ন, অন্যদিকে রপ্তানি-বাণিজ্যের জন্য ঝুঁকি। এ অবস্থায় বাংলাদেশের
করণীয় কী? এসব নিয়ে কথা বলেছেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন
প্রথম আলো: সম্প্রতি এসডিজি অনুমোদন হলো। এ বৈশ্বিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে?
জাহিদ হোসেন: এসডিজিতে আকাঙ্ক্ষা অনেক বেড়ে গেছে। এখানে ১৭টি লক্ষ্য রয়েছে, আর এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য রয়েছে ১৬৯টি সুনির্দিষ্ট টার্গেট। সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যে (এমডিজি) দারিদ্র্য বিমোচনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। আর এসডিজিতে বলা হচ্ছে, দারিদ্র্য বিমোচনই যথেষ্ট নয়। তাই নতুন কর্মসূচিতে প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এসডিজি বাস্তবায়নে সরকারকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। তাই বাস্তবায়নের সক্ষমতাই আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের মতো সামাজিক খাতগুলোর উন্নয়নে দক্ষতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। এ দেশে যোগ্য লোকের অভাব নেই। তবে সমস্যা হলো, যোগ্য লোককে ব্যবহার করা হয় না। উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে, প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ে নিবন্ধন হার, নারী-পুরুষের বৈষম্য হ্রাসের মতো প্রাথমিক কাজগুলো হয়ে গেছে। এখন শিক্ষার মানের দিকে নজর দিতে হবে। গ্রাম-শহরের মধ্যে ব্যবধান কমাতে হবে। এ ছাড়া শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় বাড়াতে হবে। কাজটি করতে বেসরকারি সংস্থাকে (এনজিও) সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। এখন বহু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালাচ্ছে ব্র্যাক। তারা ভালোও করছে।
প্রথম আলো: এসডিজি বাস্তবায়নে অর্থ দিেত উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি নেই। তাহলে অর্থায়নের বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত হবে?
জাহিদ হোসেন: শুধু সাহায্যের বা অফিশিয়াল এইড-এর ওপর নির্ভর করলে চলবে না। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে শুনছি, উন্নত দেশগুলো তাদের মোট জাতীয় আয়ের (জিএনআই) শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ দরিদ্র দেশগুলোকে দেবে। এখন পর্যন্ত শূন্য দশমিক ৩ শতাংশের বেশি পাওয়া যায়নি। উন্নত দেশগুলোর যে পরিমাণ সম্পদ আছে, তা থেকে ওরা আমাদের তেমন কিছু দিতে পারবে না। কারণ, অন্য অনেক ক্ষেত্রে তাদের সম্পদ দিতে হয়। এর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ চাহিদাও রয়েছে। এ ছাড়া ইরাকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে, সিরিয়ায় ড্রোন পাঠাতে হচ্ছে। সেগুলো ওদের উন্নয়নে কাজে আসছে না, কিন্তু ভূ-রাজনৈতিক ক্ষমতার ভারসাম্যের জন্য করতে হচ্ছে। তাই এসডিজি বাস্তবায়নে আমাদের মতো দেশকে সাহায্যনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) মতো ব্যাংককে এসডিজি বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত করা উচিত। এ ছাড়া উদ্ভাবনী উপায়ে বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে ক্যাটালিস্টের ভূমিকা পালন করতে পারে বিশ্বব্যাংকসহ দাতারা। প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়িয়ে ও দুর্নীতি কমিয়ে বাংলাদেশে রাজস্ব আয় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
প্রথম আলো: বিশ্বব্যাংক এখানে কীভাবে সহায়তা করবে?
জাহিদ হোসেন: অনেকে বলছে, বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (আইডিএ) থেকে চাহিদা অনুযায়ী তহবিল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আইডিএ প্লাস নামে নতুন ধারণা আসছে। আমাদের মতো দেশ আইডিএ থেকে অর্থ নেওয়ার বিপরীতে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করছে। সেই অর্থকে সিকিউরিটাইজ করে বাজারে বন্ড ছাড়তে পারে বিশ্বব্যাংক। সেখান থেকে এসডিজি বাস্তবায়নে তহবিল আসতে পারে।
প্রথম আলো: এসডিজিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা গুরুত্ব পেয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে এটা কীভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব?
জাহিদ হোসেন: দুর্নীতি কমবেশি পৃথিবীর সব দেশেই রয়েছে। দুর্নীতি একেবারে নির্মূল করাও সম্ভব না। কিন্তু আমাদের দুর্নীতি হলো ফটকাবাজি। টাকা দিয়েও কাজ হয় না। ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার মতো দেশে সার্ভিস-ডেলিভারি ভালো থাকায় বাংলাদেশের মতো এত দুর্নীতি নেই। তাই বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে জবাবদিহি ও নজরদারি বাড়াতে হবে।
প্রথম আলো: টিপিপি চুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনাম বাংলাদেশের জন্য হুমকি হেত পারে বলে ধারণা করছেন কেউ কেউ। এটি আপনি কীভাবে দেখছেন?
জাহিদ হোসেন: টিপিপি বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন হুমকি। অবকাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে ভিয়েতনাম। টিপিপি বাস্তবায়িত হলে ভিয়েতনামের প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা আরও বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্তভাবে ভিয়েতনামের তৈরি পোশাক ঢুকতে পারবে। তবে ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশে শ্রম সস্তা। কিন্তু টিপিপির কারণে বাংলাদেশের সস্তা শ্রমের সুবিধাটি শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে পুষিয়ে নেবে ভিয়েতনাম। তবে আশার কথা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন পর্যন্ত কেউই চুক্তিটি সমর্থন করছেন না। এ ছাড়া চাকরি হারানোর আশঙ্কা করে টিপিপি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক সংগঠনগুলো আপত্তি করে আসছে। তাই মার্কিন কংগ্রেসে এ চুক্তি পাস করাতে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই বছর লাগবে। এ সময়ে অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা (জিএসপি) ফিরে পাওয়া, তৈরি পোশাকে শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করতে পারে বাংলাদেশ।
প্রথম আলো: সম্প্রতি বিনিয়োগ নিয়ে আপনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেটি সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?
জাহিদ হোসেন: স্ট্যাটাসটি এমন—মুরগি আগে, না ডিম? বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনটি আগে? ‘খোলো খোলো দ্বার’, নাকি ‘দাও সাড়া দাও’? সাড়া পেলে দ্বার খুলবে, নাকি দ্বার খুললে সাড়া মিলবে? দ্বার বলতে বোঝায় ব্যবসায় পরিবেশ, সাড়া হলো বিনিয়োগ। অনেকেই বলে, ‘ইফ ইউ বিল্ড, দে উইল কাম’, আবার কেউ বলে, ‘দে উইল বিল্ড, ইফ ইউ কাম’। এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত, দ্বার খুললেই বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসবে। দ্বার খুললে সাড়া আসে, এর প্রমাণ ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া। ভিয়েতনামের অনেক জায়গায় দেখা যায়, বিনিয়োগকারীরা আসার আগেই বিদ্যুতের অবকাঠামো ও বিশাল বিশাল রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। শিল্পপ্লটগুলো খালি রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি ও সাড়া পাওয়ার জন্যই আগেভাগে এ অবকাঠামো তৈরি করে রেখেছে ভিয়েতনাম। তাই বিনিয়োগকারীদের চাহিদা পূরণ করতে পারলে, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার মধ্যেও বিনিয়োগ আসবে। এ ছাড়া বিনিয়োগকারীদের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, তা যদি বদলে যায়, তবে আস্থা নষ্ট হয়। চট্টগ্রামের কোরিয়া ইপিজেডে জমিসংক্রান্ত জটিলতার কারণে স্যামসাং বিনিয়োগ করতে পারেনি। তাই বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট দূর করতে হবে।
(সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জাহাঙ্গীর শাহ)
প্রথম আলো: সম্প্রতি এসডিজি অনুমোদন হলো। এ বৈশ্বিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে?
জাহিদ হোসেন: এসডিজিতে আকাঙ্ক্ষা অনেক বেড়ে গেছে। এখানে ১৭টি লক্ষ্য রয়েছে, আর এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য রয়েছে ১৬৯টি সুনির্দিষ্ট টার্গেট। সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যে (এমডিজি) দারিদ্র্য বিমোচনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। আর এসডিজিতে বলা হচ্ছে, দারিদ্র্য বিমোচনই যথেষ্ট নয়। তাই নতুন কর্মসূচিতে প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এসডিজি বাস্তবায়নে সরকারকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। তাই বাস্তবায়নের সক্ষমতাই আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের মতো সামাজিক খাতগুলোর উন্নয়নে দক্ষতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। এ দেশে যোগ্য লোকের অভাব নেই। তবে সমস্যা হলো, যোগ্য লোককে ব্যবহার করা হয় না। উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে, প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ে নিবন্ধন হার, নারী-পুরুষের বৈষম্য হ্রাসের মতো প্রাথমিক কাজগুলো হয়ে গেছে। এখন শিক্ষার মানের দিকে নজর দিতে হবে। গ্রাম-শহরের মধ্যে ব্যবধান কমাতে হবে। এ ছাড়া শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় বাড়াতে হবে। কাজটি করতে বেসরকারি সংস্থাকে (এনজিও) সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। এখন বহু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালাচ্ছে ব্র্যাক। তারা ভালোও করছে।
প্রথম আলো: এসডিজি বাস্তবায়নে অর্থ দিেত উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি নেই। তাহলে অর্থায়নের বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত হবে?
জাহিদ হোসেন: শুধু সাহায্যের বা অফিশিয়াল এইড-এর ওপর নির্ভর করলে চলবে না। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে শুনছি, উন্নত দেশগুলো তাদের মোট জাতীয় আয়ের (জিএনআই) শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ দরিদ্র দেশগুলোকে দেবে। এখন পর্যন্ত শূন্য দশমিক ৩ শতাংশের বেশি পাওয়া যায়নি। উন্নত দেশগুলোর যে পরিমাণ সম্পদ আছে, তা থেকে ওরা আমাদের তেমন কিছু দিতে পারবে না। কারণ, অন্য অনেক ক্ষেত্রে তাদের সম্পদ দিতে হয়। এর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ চাহিদাও রয়েছে। এ ছাড়া ইরাকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে, সিরিয়ায় ড্রোন পাঠাতে হচ্ছে। সেগুলো ওদের উন্নয়নে কাজে আসছে না, কিন্তু ভূ-রাজনৈতিক ক্ষমতার ভারসাম্যের জন্য করতে হচ্ছে। তাই এসডিজি বাস্তবায়নে আমাদের মতো দেশকে সাহায্যনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) মতো ব্যাংককে এসডিজি বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত করা উচিত। এ ছাড়া উদ্ভাবনী উপায়ে বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে ক্যাটালিস্টের ভূমিকা পালন করতে পারে বিশ্বব্যাংকসহ দাতারা। প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়িয়ে ও দুর্নীতি কমিয়ে বাংলাদেশে রাজস্ব আয় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
প্রথম আলো: বিশ্বব্যাংক এখানে কীভাবে সহায়তা করবে?
জাহিদ হোসেন: অনেকে বলছে, বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (আইডিএ) থেকে চাহিদা অনুযায়ী তহবিল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আইডিএ প্লাস নামে নতুন ধারণা আসছে। আমাদের মতো দেশ আইডিএ থেকে অর্থ নেওয়ার বিপরীতে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করছে। সেই অর্থকে সিকিউরিটাইজ করে বাজারে বন্ড ছাড়তে পারে বিশ্বব্যাংক। সেখান থেকে এসডিজি বাস্তবায়নে তহবিল আসতে পারে।
প্রথম আলো: এসডিজিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা গুরুত্ব পেয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে এটা কীভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব?
জাহিদ হোসেন: দুর্নীতি কমবেশি পৃথিবীর সব দেশেই রয়েছে। দুর্নীতি একেবারে নির্মূল করাও সম্ভব না। কিন্তু আমাদের দুর্নীতি হলো ফটকাবাজি। টাকা দিয়েও কাজ হয় না। ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার মতো দেশে সার্ভিস-ডেলিভারি ভালো থাকায় বাংলাদেশের মতো এত দুর্নীতি নেই। তাই বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে জবাবদিহি ও নজরদারি বাড়াতে হবে।
প্রথম আলো: টিপিপি চুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনাম বাংলাদেশের জন্য হুমকি হেত পারে বলে ধারণা করছেন কেউ কেউ। এটি আপনি কীভাবে দেখছেন?
জাহিদ হোসেন: টিপিপি বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন হুমকি। অবকাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে ভিয়েতনাম। টিপিপি বাস্তবায়িত হলে ভিয়েতনামের প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা আরও বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্তভাবে ভিয়েতনামের তৈরি পোশাক ঢুকতে পারবে। তবে ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশে শ্রম সস্তা। কিন্তু টিপিপির কারণে বাংলাদেশের সস্তা শ্রমের সুবিধাটি শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে পুষিয়ে নেবে ভিয়েতনাম। তবে আশার কথা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন পর্যন্ত কেউই চুক্তিটি সমর্থন করছেন না। এ ছাড়া চাকরি হারানোর আশঙ্কা করে টিপিপি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক সংগঠনগুলো আপত্তি করে আসছে। তাই মার্কিন কংগ্রেসে এ চুক্তি পাস করাতে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই বছর লাগবে। এ সময়ে অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা (জিএসপি) ফিরে পাওয়া, তৈরি পোশাকে শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করতে পারে বাংলাদেশ।
প্রথম আলো: সম্প্রতি বিনিয়োগ নিয়ে আপনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেটি সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?
জাহিদ হোসেন: স্ট্যাটাসটি এমন—মুরগি আগে, না ডিম? বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনটি আগে? ‘খোলো খোলো দ্বার’, নাকি ‘দাও সাড়া দাও’? সাড়া পেলে দ্বার খুলবে, নাকি দ্বার খুললে সাড়া মিলবে? দ্বার বলতে বোঝায় ব্যবসায় পরিবেশ, সাড়া হলো বিনিয়োগ। অনেকেই বলে, ‘ইফ ইউ বিল্ড, দে উইল কাম’, আবার কেউ বলে, ‘দে উইল বিল্ড, ইফ ইউ কাম’। এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত, দ্বার খুললেই বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসবে। দ্বার খুললে সাড়া আসে, এর প্রমাণ ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া। ভিয়েতনামের অনেক জায়গায় দেখা যায়, বিনিয়োগকারীরা আসার আগেই বিদ্যুতের অবকাঠামো ও বিশাল বিশাল রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। শিল্পপ্লটগুলো খালি রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি ও সাড়া পাওয়ার জন্যই আগেভাগে এ অবকাঠামো তৈরি করে রেখেছে ভিয়েতনাম। তাই বিনিয়োগকারীদের চাহিদা পূরণ করতে পারলে, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার মধ্যেও বিনিয়োগ আসবে। এ ছাড়া বিনিয়োগকারীদের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, তা যদি বদলে যায়, তবে আস্থা নষ্ট হয়। চট্টগ্রামের কোরিয়া ইপিজেডে জমিসংক্রান্ত জটিলতার কারণে স্যামসাং বিনিয়োগ করতে পারেনি। তাই বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট দূর করতে হবে।
(সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জাহাঙ্গীর শাহ)
No comments