মেরে পা ভেঙে দিয়েছেন শাহাদাত
মাহফুজা আকতার |
১১
বছর বয়সী গৃহকর্মী মাহফুজা আকতারের পা এবং হাতের আঙুল ভেঙে দিয়েছেন
ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেন ও তাঁর স্ত্রী জেসমিন জাহান। শিশুটি বাসা থেকে
যাতে পালাতে না পারে, সে জন্য এক বছর ধরে তাকে বাথরুমে ঘুমাতে বাধ্য করেছেন
তাঁরা। গতকাল শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নির্যাতিত
শিশুটি প্রথম আলোর কাছে এমন অভিযোগ করে। এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকার
মহানগর হাকিম স্নিগ্ধা রানী চক্রবর্তীর কাছে জবানবন্দি দিয়ে একই কথা জানায়
ওই শিশু।
নির্যাতনের শিকার শিশুটি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি রয়েছে। সেন্টারের সমন্বয়ক বিলকিস বেগম প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটিকে সেখানে আনার পর তাঁরা এক্স-রে করেন। তাতে দেখা যায়, তার বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ ভাঙা। হাতের একটা আঙুল ভাঙা। তার পিঠে, হাতে-পায়ে, মুখে—সব জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। শিশুটির দুই চোখের আঘাত ছিল গুরুতর।
নির্যাতিত শিশুটি গতকাল প্রথম আলোকে বলে, এক বছর আগে সে ক্রিকেটার শাহাদাতের বাসায় কাজ শুরু করে। কাজে ভুল হলে প্রথম দিকে তাকে ধমক দেওয়া হতো। আস্তে আস্তে থাপড়, ঘুষি মারা শুরু হয়। সে জানায়, একজন তাকে ধরে রাখতেন, আরেকজন পেটাতেন। কখনো লাঠি দিয়ে, কখনো রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে মারতেন। সে বলে, ‘একজন বলত, তুমি বাবুকে ধরো, আমি ওকে পেটাই।’
এদিকে বিচারকের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে শিশুটি বলেছে, ‘...মারতে মারতে চার-পাঁচটি ডাল ঘুটনি ভেঙেছে। ভাতের চামচ দিয়েও মারত। প্লাস্টিকের চামচও ভেঙেছে কয়েকটা। এমনকি প্রায় আমাকে রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে মারত। একদিন আমি ওটা লুকিয়ে রেখেছিলাম। তখন ওরা আমাকে বলে, আরও একটা বেলুন কিনে আনছে। শাহাদাত হোসেনের বউ কাঠের খুন্তি গরম তেল থেকে তুলে আমার হাঁটুতে ছ্যাঁকা দিত।’
নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত ৬ সেপ্টেম্বর শাহাদাতের বাসা থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয় নির্যাতনের শিকার ওই শিশুটি। পরবর্তী সময়ে খন্দকার মোজাম্মেল হক নামের এক সাংবাদিক বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় শাহাদাত ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় শাহাদাত রিমান্ডে এবং তাঁর স্ত্রী কারাগারে আছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শাহাদাতকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, কেন শিশুটিকে নির্যাতন করেছেন। কীভাবে নির্যাতন করেছেন। যেসব জিনিস (বেলুন, খুন্তি ও লাঠি) দিয়ে শিশুটিকে নির্যাতন করা হয়েছে, তা মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা হবে।
মাহফুজা প্রথম আলোকে বলে, ‘আমাকে খুব জোরে গলা টিপে ধরত শাহাদাত। মারা যাওয়ার উপক্রম হইতাম। আমার চোখমুখ ঘোলা হয়ে আসত। তখন জোরে শ্বাস নিতে থাকতাম। এভাবে শ্বাস নেওয়ার কারণেও থাপড় দিত শাহাদাত। এখনো আমার গলায় দাগ আছে। তার স্ত্রীও আমাকে গলা টিপে ধরত। ওরা আমাকে মেরে পা ভেঙে দিয়েছে। আমার বাঁ হাতের একটা আঙুলও ভাঙা।’
নির্যাতিত ওই শিশু আরও বলে, ‘আমাকে মারার পর ওরা ভয় পাইত, আমি যদি গেট খুলে পালাই। এ জন্য বাথরুমে ছিটকিনি আটকায় রেখে বাথরুমে রাতে ঘুমাইতে দিত। আর সারা দিন আমাকে গান গাইতে বলত, যাতে মানুষজন বুঝতে পারে, আমি ঘরে আছি। প্রায় এক বছর আমাকে বাথরুমে ঘুমাইতে হইছে।’
নির্যাতনের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে মাহফুজা বলে, ‘একদিন বাচ্চার (শাহাদাত দম্পতির নয় মাস বয়সী একটা শিশু আছে) সুজি রান্না করছিলাম। কিন্তু দেরি হয়েছে বলে শাহাদাতের বউ আমাকে মারতে শুরু করে। আর শাহাদাত রুটি বানানোর বেলুন নিয়ে এসে আমাকে মারধর শুরু করে। ডান পায়ের হাঁটুর নিচে বেলুনের লাঠির অংশ লেগে গর্ত হয়। রক্ত বের হয়। তারপর সেখানে ন্যাকড়া বেঁধে তাদের বাসায় কাজ করতে থাকি। এ ছাড়া শাহাদাত আমার চোখে ঘুষি দিত।’
শিশুটি জবানবন্দিতে বলে, ‘তাদের নির্যাতনে আমার বাঁ চোখ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। শাহাদাতের বউ আমাকে মুখ চেপে ধরে মারত। তারা আমাকে ঠিকমতো খেতে দিত না। তাদের খাওয়া শেষে উচ্ছিষ্টগুলো আমাকে খেতে দিত। শেষ ঘটনার কয়েক দিন আগে শাহাদাতের দেশের বাড়িতে যাই। শাহাদাতের মায়ের কাছে নালিশ করি। তার মা আমাকে মারতে নিষেধ করে। নালিশ করার কারণে ঢাকায় আসার পথে শাহাদাত হোসেনের বউ আমাকে পানির বোতল দিয়ে মারে। গাড়িতে আমাকে মারার জন্য তিন-চারটা লাঠি ছিল। আমাকে পাড়া দিয়ে ধরেছিল শাহাদাতের বউ। আমি চিৎকার করি। শাহাদাতও পাড়া দিয়েছিল। তাদের মারের কারণে আমার বাঁ হাতের আঙুল ভেঙে গেছে।’
নির্যাতনের ভয়ে বাসা থেকে পালিয়ে আসে বলে শিশুটি বিচারকের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছে। জবানবন্দিতে সে বলে, ‘প্রায় দুই সপ্তাহ আগে একদিন দুপুরের দিকে বাচ্চার সুজির রং হলুদের কারণ জিজ্ঞাসা করে শাহাদাতের বউ। আমি ভয়ে মিথ্যা বলি। বলি, সুজিতে হলুদ মিশাইছি। শাহাদাত তখন প্র্যাকটিসে ছিল। তার বউ আমাকে পেটে ঘুষি মারে। সুজির ঘটনা ফোন করে জানায়। আমাকে মারার জন্য লাঠি কিনে আনতে বলে। ভয়ে আমি বাসার গেট খুলতে গিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসি।’
শিশুটিকে আইনগত সহায়তা দিচ্ছেন জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ফাহমিদা আক্তার। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, পৈশাচিক কায়দায় শিশুটিকে নির্যাতন করেছেন আসামি শাহাদাত ও তাঁর স্ত্রী। শাহাদাত দম্পতির আইনজীবী কাজী নজিবুল্লাহ আদালতকে বলেন, শিশুটির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে শাহাদাত নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন।
নির্যাতনের শিকার শিশুটি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি রয়েছে। সেন্টারের সমন্বয়ক বিলকিস বেগম প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটিকে সেখানে আনার পর তাঁরা এক্স-রে করেন। তাতে দেখা যায়, তার বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ ভাঙা। হাতের একটা আঙুল ভাঙা। তার পিঠে, হাতে-পায়ে, মুখে—সব জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। শিশুটির দুই চোখের আঘাত ছিল গুরুতর।
নির্যাতিত শিশুটি গতকাল প্রথম আলোকে বলে, এক বছর আগে সে ক্রিকেটার শাহাদাতের বাসায় কাজ শুরু করে। কাজে ভুল হলে প্রথম দিকে তাকে ধমক দেওয়া হতো। আস্তে আস্তে থাপড়, ঘুষি মারা শুরু হয়। সে জানায়, একজন তাকে ধরে রাখতেন, আরেকজন পেটাতেন। কখনো লাঠি দিয়ে, কখনো রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে মারতেন। সে বলে, ‘একজন বলত, তুমি বাবুকে ধরো, আমি ওকে পেটাই।’
এদিকে বিচারকের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে শিশুটি বলেছে, ‘...মারতে মারতে চার-পাঁচটি ডাল ঘুটনি ভেঙেছে। ভাতের চামচ দিয়েও মারত। প্লাস্টিকের চামচও ভেঙেছে কয়েকটা। এমনকি প্রায় আমাকে রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে মারত। একদিন আমি ওটা লুকিয়ে রেখেছিলাম। তখন ওরা আমাকে বলে, আরও একটা বেলুন কিনে আনছে। শাহাদাত হোসেনের বউ কাঠের খুন্তি গরম তেল থেকে তুলে আমার হাঁটুতে ছ্যাঁকা দিত।’
নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত ৬ সেপ্টেম্বর শাহাদাতের বাসা থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয় নির্যাতনের শিকার ওই শিশুটি। পরবর্তী সময়ে খন্দকার মোজাম্মেল হক নামের এক সাংবাদিক বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় শাহাদাত ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় শাহাদাত রিমান্ডে এবং তাঁর স্ত্রী কারাগারে আছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শাহাদাতকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, কেন শিশুটিকে নির্যাতন করেছেন। কীভাবে নির্যাতন করেছেন। যেসব জিনিস (বেলুন, খুন্তি ও লাঠি) দিয়ে শিশুটিকে নির্যাতন করা হয়েছে, তা মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা হবে।
মাহফুজা প্রথম আলোকে বলে, ‘আমাকে খুব জোরে গলা টিপে ধরত শাহাদাত। মারা যাওয়ার উপক্রম হইতাম। আমার চোখমুখ ঘোলা হয়ে আসত। তখন জোরে শ্বাস নিতে থাকতাম। এভাবে শ্বাস নেওয়ার কারণেও থাপড় দিত শাহাদাত। এখনো আমার গলায় দাগ আছে। তার স্ত্রীও আমাকে গলা টিপে ধরত। ওরা আমাকে মেরে পা ভেঙে দিয়েছে। আমার বাঁ হাতের একটা আঙুলও ভাঙা।’
নির্যাতিত ওই শিশু আরও বলে, ‘আমাকে মারার পর ওরা ভয় পাইত, আমি যদি গেট খুলে পালাই। এ জন্য বাথরুমে ছিটকিনি আটকায় রেখে বাথরুমে রাতে ঘুমাইতে দিত। আর সারা দিন আমাকে গান গাইতে বলত, যাতে মানুষজন বুঝতে পারে, আমি ঘরে আছি। প্রায় এক বছর আমাকে বাথরুমে ঘুমাইতে হইছে।’
নির্যাতনের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে মাহফুজা বলে, ‘একদিন বাচ্চার (শাহাদাত দম্পতির নয় মাস বয়সী একটা শিশু আছে) সুজি রান্না করছিলাম। কিন্তু দেরি হয়েছে বলে শাহাদাতের বউ আমাকে মারতে শুরু করে। আর শাহাদাত রুটি বানানোর বেলুন নিয়ে এসে আমাকে মারধর শুরু করে। ডান পায়ের হাঁটুর নিচে বেলুনের লাঠির অংশ লেগে গর্ত হয়। রক্ত বের হয়। তারপর সেখানে ন্যাকড়া বেঁধে তাদের বাসায় কাজ করতে থাকি। এ ছাড়া শাহাদাত আমার চোখে ঘুষি দিত।’
শিশুটি জবানবন্দিতে বলে, ‘তাদের নির্যাতনে আমার বাঁ চোখ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। শাহাদাতের বউ আমাকে মুখ চেপে ধরে মারত। তারা আমাকে ঠিকমতো খেতে দিত না। তাদের খাওয়া শেষে উচ্ছিষ্টগুলো আমাকে খেতে দিত। শেষ ঘটনার কয়েক দিন আগে শাহাদাতের দেশের বাড়িতে যাই। শাহাদাতের মায়ের কাছে নালিশ করি। তার মা আমাকে মারতে নিষেধ করে। নালিশ করার কারণে ঢাকায় আসার পথে শাহাদাত হোসেনের বউ আমাকে পানির বোতল দিয়ে মারে। গাড়িতে আমাকে মারার জন্য তিন-চারটা লাঠি ছিল। আমাকে পাড়া দিয়ে ধরেছিল শাহাদাতের বউ। আমি চিৎকার করি। শাহাদাতও পাড়া দিয়েছিল। তাদের মারের কারণে আমার বাঁ হাতের আঙুল ভেঙে গেছে।’
নির্যাতনের ভয়ে বাসা থেকে পালিয়ে আসে বলে শিশুটি বিচারকের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছে। জবানবন্দিতে সে বলে, ‘প্রায় দুই সপ্তাহ আগে একদিন দুপুরের দিকে বাচ্চার সুজির রং হলুদের কারণ জিজ্ঞাসা করে শাহাদাতের বউ। আমি ভয়ে মিথ্যা বলি। বলি, সুজিতে হলুদ মিশাইছি। শাহাদাত তখন প্র্যাকটিসে ছিল। তার বউ আমাকে পেটে ঘুষি মারে। সুজির ঘটনা ফোন করে জানায়। আমাকে মারার জন্য লাঠি কিনে আনতে বলে। ভয়ে আমি বাসার গেট খুলতে গিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসি।’
শিশুটিকে আইনগত সহায়তা দিচ্ছেন জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ফাহমিদা আক্তার। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, পৈশাচিক কায়দায় শিশুটিকে নির্যাতন করেছেন আসামি শাহাদাত ও তাঁর স্ত্রী। শাহাদাত দম্পতির আইনজীবী কাজী নজিবুল্লাহ আদালতকে বলেন, শিশুটির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে শাহাদাত নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন।
No comments