বাংলাদেশ: ছোট আকারের হামলার হুমকি by জাস্টিন রোওল্যাট
বাংলাদেশে
সাম্প্রতিক দুই বিদেশী হত্যাকাণ্ডে দেখিয়েছে, ছোটখাট আকারের হামলা ভয়
ছড়ানো ও দৈনন্দিন জীবন বিপর্যস্ত করতে কতটা কার্যকরী হতে পারে। ২৮ই
সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায়, ৫০ বছর বয়সী ইতালিয়ান সহায়তাকর্মী সিজার তাভেলা ঢাকার
গুলশান এলাকায় রাস্তার পাশ ঘেঁষে জগিং করছিলেন। গুলশান বাংলাদেশের রাজধানী
ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত এলাকা। এখানেই দূতাবাস, অভিজাত হোটেল ও রেস্তোরাঁর
দেখা মিলে। মোটরসাইকেলে চেপে তিন ব্যাক্তি তাভেলাকে পেছন দিক দিয়ে খুব কাছ
থেকে ৩ বার গুলি করে। গুলি করেই রাতের আঁধারে মিলিয়ে যায় খুনীরা। তাভেলা
মারা যান। ৫ দিন পর, আরেক বিদেশীকে টার্গেট করা হয়। ওই ব্যাক্তির নাম কুনিও
হোশি। জাপানি নাগরিক হোশি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুরে একটি কৃষি
প্রকল্প পরিচালনা করতেন। রিকসায় করে যাওয়ার সময় তাকে গুলি করে হত্যা করে
কয়েকজন মুখোস-পরিহিত মোটরসাইকেল আরোহী।
ব্যাপকভাবে বলা হচ্ছে যে, জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস দাবি করেছে তারা হামলা চালিয়েছে। যদিও এ দাবির সত্যতা এখনও যাচাই করা যায়নি। কিন্তু উগ্রপন্থী ইসলামী গোষ্ঠিগুলোর সাম্প্রতিক এ উত্থান মোকাবিলায় বাংলাদেশ বহুদিন ধরে লড়ছে। এ বছর নৃশংস কায়দায় হত্যা করা হয় চার বাংলাদেশী ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগারকে। কিন্তু সর্বশেষে দুই বিদেশীর ওপর হামলার ঘটনা বাংলাদেশের অর্থনীতির আরও অনেক বেশি ক্ষতি করতে পারে। কেননা, এবার যথেচ্ছভাবে নিশানা তাক করা হয়েছে বিদেশীদের দিকে। এর অর্থ হলো, যে-ই বাংলাদেশ ভ্রমণে যাবে, তারই টার্গেটে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নিশ্চিতভাবেই, তাভেলার ওপর হামলার কয়েক ঘন্টা পরই বিদেশী দূতাবাসগুলো উচ্চ সতর্কাবস্থায় চলে যায় এবং ভ্রমণ সতর্কতা জারি করা হয়।
প্রতিবেদন রয়েছে, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ পর্যটকের বুকিং বাতিল করা হয়েছে। এনজিওগুলোও নিজেদের কর্মীদের চলাচলে বাধানিষেধ আরোপ করেছে। সম্ভবত সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ গার্মেন্ট বাণিজ্যের বিদেশী ক্রেতারা ভীষণ আতঙ্কে পড়ে গেছে। অনেকেই বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছে। তবে এ সব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দলের পরিকল্পিত বাংলাদেশ সফর বাতিল করার বিষয়টি।
আতঙ্ক আরও বৃদ্ধি পেয়েছিল ৫ই অক্টোবর, যখন তৃতীয় হামলার খবর এল। তবে খুব সম্ভবত ওই হামলার সঙ্গে আগের ২ বিদেশীর ওপর হামলার স¤পর্ক নেই। তিন ব্যাক্তি পাবনায় এক ব্যাপ্টিস্ট পাস্তুরের গলা কেটে দেয়ার চেষ্টা চালায়। লুক সরকার নামে ওই ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান গুরুতরভাবে আহত হলেও প্রাণে বেঁচে গেছেন, তার স্ত্রী চিৎকার শুরু করায়। পুলিশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠনের এক সদস্যকে হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করেছে।
বড় ও সুপরিকল্পিত হামলার চেয়ে ছোট কমান্ডো-স্টাইলে অভিযান চালানোর যে প্রবণতা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে দেখা যাচ্ছে, তার সঙ্গে মিল দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের হত্যাকা- দু’টিতে। চিন্তা করুন ফরাসি বিদ্রƒপাত্মক ম্যাগাজিন চার্লি এদবো কার্যালয়ে হামলার ঘটনাটি। অথবা লন্ডনের ফুসিলিয়ের লি রিগবির হামলাটি। সারাবিশ্বের সরকারগুলোই এ ধরণের হামলা বৃদ্ধির ঘটনা দেখতে পাচ্ছে। চার্লি এদবোর ঘটনার পর, বৃটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআইফাইভ সতর্ক করে দেয় যে, ‘প্যারিস স্টাইলে’ হামলা হওয়ার অনেক বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বৃটেন।
এ বিষয়টি বিশ্বজুড়ে কর্তৃপক্ষের জন্য বড় ধরণের এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ধরণের হামলা ঠেকানো অনেক বেশি কঠিন। কেননা, এসব হামলা চালানো খুবই সোজা। যে লোকগুলো লি রিগবিকে হামলা চালিয়েছিল, তারা বন্দুকের বদলে ছুরি ব্যবহার করেছিল। তাদের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনগুলোর সরাসরি কোনো স¤পর্কও ছিল না। সবচেয়ে বড় বিষয় যেটি বাংলাদেশে দেখা গেছে তা হলো, হামলাকারীরা ‘শহীদ’ হতে চায়নি। কাজ সেরেই সোজা রাতের আঁধারে পালিয়ে গেছে। হয়তো আরও হামলা চালানোর পরিকল্পনা আঁটতে।
প্রমাণ রয়েছে, কমান্ডো স্টাইলে হামলা আরও সাধারণ হয়ে উঠছে। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, আফগানিস্তানের সংঘাতে বেসামরিক নাগরিক হতাহতের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রধান কারণ হলো, তালিবান বড় আকারে বোমা হামলা চালানো থেকে দূরে সরে এসেছে। তার পরিবর্তে তারা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বন্দুকযুদ্ধ বাঁধিয়ে হামলা চালাচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার দেশটিতে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস-এর উপস্থিতি অস্বীকার করেছে। বরং যুক্তি দেখিয়েছে যে, ওই হত্যাকা-ের সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠীটির সংযোগ প্রমাণিত নয়। কিন্তু যে-ই এসবের জন্য দায়ী হয়ে থাকুক, ওই হামলাগুলো বাংলাদেশের সুনামের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্ম-নিরপেক্ষ দেশ বাংলাদেশ। এ বছরের আগ পর্যন্ত জঙ্গিবাদী সহিংসতা থেকে অনেকটাই দূরে ছিল দেশটি। শঙ্কা আছে দেশটিকে এখন থেকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো বিবেচনা করা শুরু হবে। দেশটির বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির জন্য এর প্রভাব হবে মারাত্মক।
তবে পরিষ্কার হওয়া যাক, কমান্ডো স্টাইলের যে হামলার ঘটনা ঘটছে, তা কেবল বাংলাদেশের সমস্যা নয়। এটা এমন একটি জিনিস, যা নিয়ে আমাদের সবারই উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। ঝুঁকিটা হলো, বাংলাদেশে এসব ছোট আকারের হামলার কার্যকরিতা কেমন ছিল, তা পর্যবেক্ষণ করবে অনেকে। এরপর একই ধরণের হামলা ছড়িয়ে দেবে বিশ্বব্যাপী।
[লেখক: জাস্টিন রোওল্যাট সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি।]
ব্যাপকভাবে বলা হচ্ছে যে, জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস দাবি করেছে তারা হামলা চালিয়েছে। যদিও এ দাবির সত্যতা এখনও যাচাই করা যায়নি। কিন্তু উগ্রপন্থী ইসলামী গোষ্ঠিগুলোর সাম্প্রতিক এ উত্থান মোকাবিলায় বাংলাদেশ বহুদিন ধরে লড়ছে। এ বছর নৃশংস কায়দায় হত্যা করা হয় চার বাংলাদেশী ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগারকে। কিন্তু সর্বশেষে দুই বিদেশীর ওপর হামলার ঘটনা বাংলাদেশের অর্থনীতির আরও অনেক বেশি ক্ষতি করতে পারে। কেননা, এবার যথেচ্ছভাবে নিশানা তাক করা হয়েছে বিদেশীদের দিকে। এর অর্থ হলো, যে-ই বাংলাদেশ ভ্রমণে যাবে, তারই টার্গেটে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নিশ্চিতভাবেই, তাভেলার ওপর হামলার কয়েক ঘন্টা পরই বিদেশী দূতাবাসগুলো উচ্চ সতর্কাবস্থায় চলে যায় এবং ভ্রমণ সতর্কতা জারি করা হয়।
প্রতিবেদন রয়েছে, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ পর্যটকের বুকিং বাতিল করা হয়েছে। এনজিওগুলোও নিজেদের কর্মীদের চলাচলে বাধানিষেধ আরোপ করেছে। সম্ভবত সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ গার্মেন্ট বাণিজ্যের বিদেশী ক্রেতারা ভীষণ আতঙ্কে পড়ে গেছে। অনেকেই বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছে। তবে এ সব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দলের পরিকল্পিত বাংলাদেশ সফর বাতিল করার বিষয়টি।
আতঙ্ক আরও বৃদ্ধি পেয়েছিল ৫ই অক্টোবর, যখন তৃতীয় হামলার খবর এল। তবে খুব সম্ভবত ওই হামলার সঙ্গে আগের ২ বিদেশীর ওপর হামলার স¤পর্ক নেই। তিন ব্যাক্তি পাবনায় এক ব্যাপ্টিস্ট পাস্তুরের গলা কেটে দেয়ার চেষ্টা চালায়। লুক সরকার নামে ওই ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান গুরুতরভাবে আহত হলেও প্রাণে বেঁচে গেছেন, তার স্ত্রী চিৎকার শুরু করায়। পুলিশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠনের এক সদস্যকে হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করেছে।
বড় ও সুপরিকল্পিত হামলার চেয়ে ছোট কমান্ডো-স্টাইলে অভিযান চালানোর যে প্রবণতা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে দেখা যাচ্ছে, তার সঙ্গে মিল দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের হত্যাকা- দু’টিতে। চিন্তা করুন ফরাসি বিদ্রƒপাত্মক ম্যাগাজিন চার্লি এদবো কার্যালয়ে হামলার ঘটনাটি। অথবা লন্ডনের ফুসিলিয়ের লি রিগবির হামলাটি। সারাবিশ্বের সরকারগুলোই এ ধরণের হামলা বৃদ্ধির ঘটনা দেখতে পাচ্ছে। চার্লি এদবোর ঘটনার পর, বৃটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআইফাইভ সতর্ক করে দেয় যে, ‘প্যারিস স্টাইলে’ হামলা হওয়ার অনেক বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বৃটেন।
এ বিষয়টি বিশ্বজুড়ে কর্তৃপক্ষের জন্য বড় ধরণের এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ধরণের হামলা ঠেকানো অনেক বেশি কঠিন। কেননা, এসব হামলা চালানো খুবই সোজা। যে লোকগুলো লি রিগবিকে হামলা চালিয়েছিল, তারা বন্দুকের বদলে ছুরি ব্যবহার করেছিল। তাদের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনগুলোর সরাসরি কোনো স¤পর্কও ছিল না। সবচেয়ে বড় বিষয় যেটি বাংলাদেশে দেখা গেছে তা হলো, হামলাকারীরা ‘শহীদ’ হতে চায়নি। কাজ সেরেই সোজা রাতের আঁধারে পালিয়ে গেছে। হয়তো আরও হামলা চালানোর পরিকল্পনা আঁটতে।
প্রমাণ রয়েছে, কমান্ডো স্টাইলে হামলা আরও সাধারণ হয়ে উঠছে। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, আফগানিস্তানের সংঘাতে বেসামরিক নাগরিক হতাহতের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রধান কারণ হলো, তালিবান বড় আকারে বোমা হামলা চালানো থেকে দূরে সরে এসেছে। তার পরিবর্তে তারা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বন্দুকযুদ্ধ বাঁধিয়ে হামলা চালাচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার দেশটিতে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস-এর উপস্থিতি অস্বীকার করেছে। বরং যুক্তি দেখিয়েছে যে, ওই হত্যাকা-ের সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠীটির সংযোগ প্রমাণিত নয়। কিন্তু যে-ই এসবের জন্য দায়ী হয়ে থাকুক, ওই হামলাগুলো বাংলাদেশের সুনামের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্ম-নিরপেক্ষ দেশ বাংলাদেশ। এ বছরের আগ পর্যন্ত জঙ্গিবাদী সহিংসতা থেকে অনেকটাই দূরে ছিল দেশটি। শঙ্কা আছে দেশটিকে এখন থেকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো বিবেচনা করা শুরু হবে। দেশটির বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির জন্য এর প্রভাব হবে মারাত্মক।
তবে পরিষ্কার হওয়া যাক, কমান্ডো স্টাইলের যে হামলার ঘটনা ঘটছে, তা কেবল বাংলাদেশের সমস্যা নয়। এটা এমন একটি জিনিস, যা নিয়ে আমাদের সবারই উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। ঝুঁকিটা হলো, বাংলাদেশে এসব ছোট আকারের হামলার কার্যকরিতা কেমন ছিল, তা পর্যবেক্ষণ করবে অনেকে। এরপর একই ধরণের হামলা ছড়িয়ে দেবে বিশ্বব্যাপী।
[লেখক: জাস্টিন রোওল্যাট সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি।]
No comments