আসিফের আক্ষেপ ও আশা
‘সুযোগের অভাবে অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণ জিততে পারিনি। সেই আক্ষেপ ঘোচাতে চাই স্বর্ণজয়ী শুটার তৈরি করে’, বললেন আসিফ হোসেন খান। ২০০২ ম্যানচেস্টার কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণজয়ী এই শুটারের সময় এখন ভালো যাচ্ছে না। শুটিং অনেকটা ছেড়েই দিয়েছেন। কালেভদ্রে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে রাইফেল হাতে তুলে নেন। বৃহস্পতিবারও রাইফেল তুলে পদক না জিতলেও স্কোর খারাপ করেননি।
শুটিংয়ের চেয়ে কোচিংয়ের দিকেই মনোযোগ এখন আসিফের। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) খণ্ডকালীন কোচিংয়ের দায়িত্বে রয়েছেন সাফ গেমসে স্বর্ণজয়ী এই শুটার। তবে চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় কিছুটা হতাশায় আচ্ছন্ন আসিফ। ২০০২ সালের ৩১ জুলাই। বাংলাদেশের শুটিং ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দিন। ম্যানচেষ্টার কমনওয়েলথ গেমসে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে ভারতের তারকা শুটার অভিনব বিন্দ্রাকে হারিয়ে স্বর্ণ জেতেন আসিফ হোসেন খান। সেদিন বিসলের (ইংল্যান্ড) শুটিং রেঞ্জে লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে আসিফ যেন উড়ছিলেন। আসিফ আরও ওপরে উড়তে চেয়েছিলেন। অলিম্পিকে বাংলাদেশের পতাকা ওড়াতে চেয়েছিলেন।। ২০০৪ সালেও ইসলামাবাদ এসএ গেমসে বিন্দ্রাকে হারিয়ে স্বর্ণ জেতেন আসিফ। অথচ সেই বিন্দ্রাই ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিক গেমসে ভারতকে স্বর্ণ এনে দিয়েছিলেন। বিন্দ্রার জন্য ভারত সরকার কোটি কোটি রুপি খরচ করেছে। অথচ আসিফ পাননি ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা। ২০০৬ মেলবোর্ন কমনওয়েলথ গেমসে হারিয়ে গেছে ম্যানচেষ্টারে পাওয়া স্বর্ণ। আসিফের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের সুযোগ-সুবিধা তো করা হয়নি। উল্টো ২০০৬ সালে দোহা এশিয়াডের আগে গুলশান শুটিং কমপ্লেক্সে আসিফদের ওপর চালানো হয় পুলিশের বর্বরোচিত হামলা। পুলিশের হামলায় আসিফের কব্জি ও মাংসপেশিতে সমস্যার দেখা দেয়। সেই থেকে পারফরম্যান্সের ঘাটতি। এসএ গেমস, ইন্দো-বাংলাদেশ বাংলা গেমস এবং অন্যান্য গেমসে স্বর্ণ জিতলেও দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি আর পেরোতে পারেননি আসিফ। তার সঙ্গে যুক্ত হয় আর্থিক অনিশ্চয়তা। শিক্ষা জীবনটাও বেশিদূর এগোয়নি তার।
ছিলেন শুটার। তাই অন্য কোনো কাজ শেখা হয়নি। একটা চাকরির প্রয়োজনে অনেক ঘুরেছেন। কিন্তু কোথাও চাকরি মেলেনি। শেষ পর্যন্ত বিকেএসপি আসিফের পাশে দাঁড়ায়। প্রকল্পের আওতায় খণ্ডকালীন চাকরি পান আসিফ। কিন্তু বছরের কিছু সময় তাকে বেকার থাকতে হয় প্রকল্প না থাকায়। ২০১১ সালে বিকেএসপির শুটারদের কোচের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন আসিফ। ওই বছর বিয়ে করেন নাদিরা আক্তারকে। পাবনার মেয়ে নাদিরা। ১৬ অক্টোবর আসিফ ও নাদিরা ছেলের বাবা-মা হন। নাম রাখা হয় আলী বিন আসিফ খান। নাদিরা বিকেএসপি কলেজের চারুকলা বিভাগে শিক্ষকতা করছেন। আসিফ চান সবকিছু ঝেড়ে ফেলে শুটার তৈরিতে মন দিতে। নিজে শুটার থাকাকালে যে সুযোগ-সুবিধা পাননি, সেই সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আগামীর অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণজয়ী শুটার তৈরি করতে চান আসিফ। বৃহস্পতিবার শুটিং রেঞ্জে ছেলেকে কোলে নিয়ে ঘুরেফিরে দেখছিলেন। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আসিফ বলেন, ‘আমি বিকেএসপির কাছে কৃতজ্ঞ। আমাকে শুটিং কোচের দায়িত্ব দেয়ায়। তবে চাকরিটা যদি স্থায়ী হতো, তাহলে আমি কোচিংয়ে আরও বেশি মনোযোগী হতে পারতাম। আমার স্বপ্ন ছিল, অলিম্পিকে স্বর্ণ জেতা। নিজের স্বপ্ন পূরণ না হলেও আমার কোচিংয়ে বাংলাদেশের কোনো এক শুটার সেই স্বপ্ন পূরণ করবে সেই প্রহর গুনছি আমি।’
No comments